জমি-জমা সম্পর্কে।

Question

আসসালামু আলাইকুম
আমাদের ১৩ কানি বা ৩৯ শতকের একটি মাঠান জমি আছে। তবে জমিতে একটি সমস্যা আছে।

সমস্যার সূচনা হয়েছে আরো প্রায় ২০ বছর পূর্বে। আমার আব্বুর বিদেশে যাওয়ার জন্য আমার দাদা তাঁর ঐ মাঠান জমিটি একজনের কাছে দিয়ে ২৫/৩০ হাজার টাকা আব্বুকে দেয়। জমিটি আমার আব্বুর ভাগের। এই শর্তে দেয় যে, বছর খানিক সময়ের মধ্যে আব্বু টাকা ফেরত দিয়ে জমিটি ছাড়িয়ে নিবে। মানে এখানে ''জমি বন্ধক'' রাখার কোনো চুক্তি হয়নি। এই এক বছর তুমি জমি চাষ করো। আমরা এই এক বছরের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিবো।

এখন ঘটনাক্রমে আব্বু টাকা ফেরত দিতে পারেনি। যদিও তাঁর কাছে টাকা ছিল। তিনি ভেবেছিলেন পরে ছাড়িয়ে নিবেন। এর মধ্যে অনেক রোগ, অসুস্থতা পার হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ ২০১৭ সালে আব্বু ইন্তেকাল করেন। প্রায় ৭ বছর হতে চললো আব্বু মারা গিয়েছেন। এখনো সেই জমির কোনো ফয়সালা হয়নি।

এখন যার কাছে আমাদের সেই জমিটি রয়েছে তিনি আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে বলছেন, "জমি আমাকে লিখে দিতে হবে।" যদিও তিনি এই ২০ বছর জমিটি চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু আমার কাকুুরা, ফুফোজানরা এতে রাজি না একজন কাকু বাদে। তাঁদের কথা হলো, "জমিতো বন্ধক রাখা হয়নি যে লিখে দিতে হবে।" আমরা যদি জমি লিখে না দেই একসময় না একসময় জমি তাঁর ছেড়ে দেওয়াই লাগবে।

এখন, আমার একজন কাকু বলতেছেন যে, তাদের কাছ থেকে এক-দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে জমি তাদের লিখে দিতে। আবার, আরেকজন বলতেছেন ২/৩ কানি জমি তাদের লিখে দিয়ে বাকি জমিটুকু ছাড়িয়ে নিতে।

** মূলত মুদ্রাস্ফীতির দরুন সমস্যাটি এখন আরও জটিল হয়েছে। ১০/১৫ বছর পূর্বে যদি টাকা ফেরত দেওয়া হতো তাহলে হয়তো কোনো সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন সেই ২০ বছর পূর্বের ২৫/৩০ হাজার টাকার মূল্য আর বর্তমান সময়ের ২৫/৩০ হাজার টাকার মূল্য তো সমান না। এখন যদি তাকে সেই ২৫/৩০ হাজার টাকাই শুধু দেওয়া হয় তাহলে নাকি এটা জুলুম হবে। এটাই হলো মূল সমস্যা। (আমার একজন কাকুর বক্তব্য এরকম)

ঐ জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। এত টাকা দিয়ে জমিটি ক্রয় করার সামর্থ ঐ লোকটার নেই।

এখন যদি তাদের কিছু টাকা দিয়ে বা কিছু জমি লিখে দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নেওয়া হয় তাহলে কি শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো ভুল হবে?

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

ইসলাম এ প্রচলিত পদ্ধতি সম্পর্কে কি বলে?

আসুন কিছুটা সময় ব্যয় করে এ সম্পর্কে কিছু শরয়ী বিধি-বিধান জেনে নেই।যাতে ইহকাল ও পরকালের সঠিক রাস্তা অর্জন করতে সহায়ক হয়।

বন্ধকের সংজ্ঞা বর্ণনা করতে যেয়ে আল্লামা হাসক্বফী রাহ বলেনঃ

(هُوَ) لُغَةً: حَبْسُ الشَّيْءِ. 

وَشَرْعًا (حَبْسُ شَيْءٍ مَالِيٍّ) أَيْ جَعْلُهُ مَحْبُوسًا لِأَنَّ الْحَابِسَ هُوَ الْمُرْتَهِن(ُبِحَقٍّ يُمْكِنُ اسْتِيفَاؤُهُ)

তরজমাঃরেহেন(বন্ধক)এর শাব্দিক অর্থ কোনো কিছুকে বন্ধী করে রাখা।পারিভাষায় রেহেন বলা হয়,কোনো জিনিষকে হক্ব বা কোনো প্রাপ্তধনের মুকাবেলায় বন্ধী করে রাখা।যাতে পরিবর্তীতে তা দিয়ে নিজ প্রাপ্যকে উসূল করা যায়। (আদ-দুর্রুল মুখতার-৬/৪৭৭) বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- 

https://www.ifatwa.info/4958

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রথম কথা হল, প্রশ্নের বিবরণ মতে বন্ধক পদ্ধতিতে যিনি চাষাবাদ করে যাচ্ছেন, উনার জন্য সেই ফসল গ্রহণ করা জায়েয হবে না। 

দ্বিতীয় কথা হল, আপনারা দুইজন ন্যায়পরায়ন ব্যক্তির মধ্যস্থতায় কিছু কমবেশ করে ৩০/৩৫ এর চেয়ে কিছু বেশী টাকা পরিশোধ করে জমি ছাড়িয়ে নিবেন। যদি সবগুলো টাকা দেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে পূর্বের বন্ধক চুক্তি বাতিল করে নতুনকরে কিছু জমির উপর বন্ধক চুক্তি বাস্তবায়ন করে নিবেন।

টাইম ভ্যালু অফ মানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/7485