ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাব
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنِ
ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَلَمْ يُوَقِّرْ كَبِيرَنَا
وَيَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদেরকে অনুগ্রহ করে না, আমাদের বড়দের
প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না,
ভালো কাজের আদেশ করে না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে না, সে আমাদের দলের
নয়। (তিরমিযী ১৯২১, য‘ঈফ আত্ তারগীব ১৩৯৩, য‘ঈফুল জামি‘ ৪৯৩৮।)
আল্লাহপাক বলেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের
সঙ্গে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলবে। (সূরা বাকারা
: আয়াত : ৮৩)।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে
বেশি প্রিয় এবং আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘ভালো কথা সদকাস্বরূপ’। (সুনানে বায়হাকি)।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী
আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহতায়ালা
ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’
(সুনানে তিরমিজি)।
তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে তা হলো আল্লাহতায়ালার
ভয় ও সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে তা হলো মুখ এবং
লজ্জাস্থান।’ (সুনানে তিরমিজি)। তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দর আচরণই
নেক আমল। (সহিহ মুসলিম)।
ভালো কাজ বলতে যা বোঝায় তা হলো সব কল্যাণকর কাজ। চাই কাজটি নিজের
হোক কিংবা পরের হোক। ইসলামে যে কোনো ভালো কাজকে সদকা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ প্রসঙ্গে
রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক ভালো কাজই সদকা’। (সহিহ বুখারি : হাদিস : ৬০২১, সুনানে তিরমিজি
: হাদিস : ১৯৭০)।
সব মানুষকে ভালো কাজ করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের
ওপর সদকা করা কর্তব্য। সাহাবিরা বললেন, যদি তার (আর্থিক) সামর্থ্য না থাকে। নবি করিম (সা.) বললেন, তাহলে সে নিজ
কর্মের মাধ্যমে নিজের এবং অপরের সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে এটি করতে
সক্ষম না হয় বা না করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অসহায় মুখাপেক্ষীকে সাহায্য করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না
করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে অন্যকে ভালো কাজের আদেশ করবে। তারা বললেন, যদি সে তা না
করে। তিনি (সা.) বললেন, তাহলে সে খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, এটিই
তার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (সহিহ বুখারি)।
গণমানুষের কল্যাণে অনেক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি এমন কিছু কাজ করেন, যা কেবল পার্থিব
জগতেই নয় বরং পরকালেও এর প্রতিদান পাওয়া যায়। মানুষের এমন সব কাজ সদকা হিসাবে বিবেচিত
হবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, মুমিনের ইন্তেকালের পরও তার যেসব নেক ‘আমল ও নেক কাজের সাওয়াব
তার কাছে সব সময় পৌঁছতে থাকবে,
তার মধ্যে-(১) ‘ইলম বা জ্ঞান-যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; (২) নেক সন্তান
যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; (৩) কুরআন যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; (৪) মসজিদ যা
সে নির্মাণ করে গেছে; (৫) মুসাফিরখানা যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; (৬) কূপ বা ঝরনা
যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং (৭) দান-খয়রাত যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায়
তার ধন-সম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সাওয়াব তার কাছে পৌঁছতে
থাকবে। (সুনানে ইবনু মাজাহ : হাদিস : ২৪২, সহিহ তারগিব : হাদিস : ৭৭)।
পরিশেষে মহান আল্লাহপাক আমাদের ভালো কাজ ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে
প্রাত্যহিক ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। (কপি)
★
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি তাদেরকে উত্তম আখলাকের সাথে পড়ানোর
চেষ্টা করবেন। তাদেরকে মারধর, খুব বেশী বকা, ভয় দেখানো ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবেন। তবে
পড়ানোর জন্য হালকা বকা (তবে এতো বেশী বকা দেওয়াও যাবে না যাতে করে তারা কান্না কাটি
করে বা শারিরিক ও মানসিক চাপে থাকে) দিতে পারবেন বা প্রয়োজনে তাদের পিতা মাতাকে জানিয়ে
তাদের মাধ্যমেও কিছু করতে পারেন যাতে করে তারা নিয়মিত পড়া দেয়।