আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
72 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (17 points)

কুরানের ১০০ নম্বর সূরার ১ আয়াতে কি আল্লাহ ঘোড়ার কসম করেছেন । এই আয়াতে আসলে কি বুঝানো হয়েছে ?

??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

??????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

1 Answer

0 votes
by (677,120 points)
জবাবঃ- 
بسم الله الرحمن الرحيم


পবিত্র কুরআনের ১০০ নং সুরার এক নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا ۙ﴿۱﴾ 

শপথ উধৰ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির।
(সুরা আদিয়াত ০১)

 ضبح বলা হয় ঘোড়ার দৌড় দেয়ার সময় তার বক্ষ থেকে নিৰ্গত আওয়াজকে। কোন কোন গবেষকের মতে এখানে দৌড়ায় শব্দের মাধ্যমে ঘোড়া বা উট অথবা উভয়টিও উদ্দেশ্য হতে পারে। তবে ইমাম কুরতুবী ঘোড়াকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।

এর অর্থ হল ঊর্ধ্বশ্বাসে ধাবমান অশ্ব বা ঘোড়া। ضَبح শব্দের অর্থ হল হাঁপানো। 

কারো নিকট এর অর্থ হল, চিঁহি রব করা। উদ্দেশ্য সেই অশ্বরাজি; যেগুলি হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে অথবা চিঁহি রব করে (ঊর্ধ্বশ্বাসে) জিহাদে দ্রুত গতিতে শত্রুর দিকে ছুটে যায়।

ঘোড়া কেন?? এত কিছু থাকতে আল্লাহ, যিনি মহাবিশ্বের স্রষ্টা, তিনি কেন ঘোড়ার শপথ নিচ্ছেন এখানে?

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সেই সময়ের একজন আরবের কাছে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন জিনিসগুলো ছিল- সম্মান, বংশ-মর্যাদা, আভিজাত্য, গোত্র, বাহন(ঘোড়া), যুদ্ধ, ইত্যাদি। 

হাজার হাজার বছর ধরে আরব মরু বেদুইনরা বাহন ও যুদ্ধের জন্য আরবীয় ঘোড়াকে ব্রিডিং করে এসেছে। মরুর প্রচন্ড রুক্ষ কর্কশ ও বন্ধুর জলবায়ুতে টিকে থাকার জন্য আরবীয় ঘোড়াগুলোর ফুসফুসের আকার হত বিশালাকার ও স্ট্যামিনা ছিল অসাধারন। রুক্ষ পরিবেশে মানুষ ও ঘোড়াকে খাবার ও পানি শেয়ার করে চলতে হত, এমনকি কখনো একই তাবুতে থাকতে হত। মানুষের সাথে থাকতে থাকতে এই ঘোড়াটির মানুষের সাথে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক ডেভেলপ করে হাজার হাজার বছর ধরে। মূলত যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবেই এই ঘোড়া ব্যবহার করত আরব বেদুইনরা। আরব বেদুইনদের মরুর জীবনে ঘাত-সঙ্ঘাত লেগেই থাকত। যে যখন পারত আরেক কাফেলা দলকে লুটপাট করে নিত। ঝড়ের গতিতে হামলা চালিয়ে একদল বেদুইন দস্যু আরেকদলের উট, দুম্বা, ভেড়া, বকরির পাল লুঠ করে নিত। এ কাজ তারা শুধু তখনই করতে পারত যদি তাদের কাছে দ্রুতগতির কিছু ঘোড়া থাকত।

একজন আরব কয়টি ভাল ঘোড়ার মালিক সেটা দিয়ে তাদের সম্পদ ও মর্যাদা বিচার করা হত।

নাবি মুহাম্মাদ(স) তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন যেন তারা আরবি ঘোড়ার প্রতি যত্নবান ও দয়ালু হয়। তিনি আরো বলে গিয়েছিলেন যেন তারা মাদি ঘোড়াগুলোকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে যত্ন করে, কারন এদের উপরই বংশ নির্ভর করে।

আল্লাহ এখানে ঘোড়ার শপথ নিচ্ছেন। সাধারন কোন ঘোড়া নয়, আরবীয় ঘোড়া। সাধারন কোন আরবীয় ঘোড়া নয়, আরবীয় যুদ্ধের ঘোড়া। শুধু যুদ্ধের ঘোড়া বলেও আল্লাহ থামেননি, আল্লাহ বলেছেন- মাদী যুদ্ধের ঘোড়া। মাদী ঘোড়া পুরুষ ঘোড়ার চেয়ে জোরে ছুটতে পারে বলে যুদ্ধের জন্য সেটা আরবদের বেশি পছন্দ ছিল। একজন আরব বেদুইনের কাছে সবচেয়ে দামি সম্পদ ছিল তার মাদি ঘোড়া। ঘোড়া ছাড়া একজন আরব তার জীবন কল্পনা করতে পারত না তখন। 

আল্লাহ এখানে যেধরনের এলিট ঘোড়ার কথা বলছেন প্রতিটি আরব স্বপ্ন দেখত এমন একটি ঘোড়ার সৌভাগ্যবান মালিক হবার। পাহাড়ের মতন প্রকান্ড কালো চকচকে শক্তিশালী একটা ঘোড়া কে না চায়?
(সংগৃহিত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখন আমরা জেনে নেই যে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে কসম কেনো করেছনঃ-

নিজের কোন কথা বিশ্বাস করানোর জন্য আল্লাহ তা’আলার কোন কসম করার প্রয়োজন নেই। নিজের কোন কথা সম্পর্কে কসম করা হতে তিনি বেনিয়ায। কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত, অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা। অনেক সময় এ দিকটার প্রতি লক্ষ্য থাকে যে, যেই জিনিসটার কসম করা হচ্ছে, তার কিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে তার পরবর্তীতে যে বক্তব্য আসছে তা তার সত্যতার প্রমান বহন করে।”
.
[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, মাকতাবাতুল আশরাফ, ৩/৪০৬]

মুফাসসিরগন বলেন, শপথ হচ্ছে আরবী ভাষালঙ্কারের একটি বিশেষ শৈলী। এর দ্বারা কথা শক্তিশালী হয়, কথায় আসর হয়”
.
[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৫৮]

সুরা সাফফাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
তরজমাঃ- শপথ তাদের যারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো, অতঃপর ধমকিয়ে ভীতি প্রদর্শনকারীদের, অতঃপর মুখস্থ আবৃত্তিকারীদের, নিশ্চয় তোমাদের মাবুদ এক। (সূরা সাফফাত ৩৭ঃ১-৪)
.
এই আয়াতে প্রথমেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কারো শপথ করা হচ্ছে; এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেন, তারা হলেন ফেরেশতারা।
.
[তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৫৮, তাফসীরে জালালাইন,৫/৩৯০]
.
এখানে ফেরেশতাদের শপথ করার কারন হিসেবে বলা যেতে পারে যে, মক্কার মুশরিকরা কেউ কেউ ফেরেশতাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার কন্যা বলে অভিহিত করত আবার কেউ কেউ তাদেরকেই ইবাদাত করত আবার কেউ কেউ তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করত(নাউযুবিল্লাহ), তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ফেরেশতাদের এইসব গুনাবলী তারা সারিবদ্ধভাবে আল্লাহর ইবাদাত করেন বা আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য সারিবদ্ধরুপ থাকেন, তারা শয়তাদের বিরুদ্ধে বাধা সৃষ্টি করে আর তারা আল্লাহর জিকরে ব্যস্ত থাকেন, যার মাধ্যমে প্রমান হয় যে, ফেরেশতারা আল্লাহর কন্যা নয় বা ফেরেশতাদের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই যে তাদের ইবাদাত করা যায় বরং তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একান্ত অনুগত দাস ছাড়া কিছু নয়। এর মাধ্যমে সূক্ষ্ণ শিরককে খন্ডন করা হয়েছে এর বিপরীতে ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে “ নিশ্চয়ই তোমাদের মাবুদ এক” অর্থাৎ প্রথম ৩ আয়াতে মুশরিকদের যুক্তি খন্ডন ও ফেরেশতাদের দাসত্বমনা প্রমান করে ৪ নং আয়াতে আল্লাহর তাওহীদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
.
[(তাফসীরে জালালাইন, ৫/৩৯২) তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/১৫৮-৫৯)]

সূরা ইনশিকাকের শপথের দিকে লক্ষ্য করা যাকঃ
.
আমি শপথ করি সন্ধ্যাকালীন লাল আভার , এবং রাত্রির, এবং তাতে যার সমাবেশ ঘটে, এবং চন্দ্রের, যখন তা পূর্ণরূপ লাভ করে, নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহণ করবে। (সূরা ইনশিকাক ৮৪ঃ১৬-১৯)
.
এখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এখানে রক্তিম লাল আভার, রাত্রি ও রাত্রি যা ধারন করে এবং চাদের শপথ করেছেন, এর রহস্য হিসেবে বলা যায় যে, সন্ধ্যাকে সাধারনত দিনের শেষ হিসেবে ধরা হয় যখন দিনের আভা নিষ্প্রভ হয়ে যায় আর তার স্থানে জায়গা নেয় সন্ধ্যা,আর রাতে যখন ওই আকাশে ওঠে চাঁদ যা তার সৌন্দর্যে ভুবন আলোকিত করে। এসবকিছুই আল্লাহর নির্দেশে নিজেদের নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের পরে নিষ্প্রভ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তেমনি মানুষ ও শুক্র থেকে কৈশোর, যৌবন, মধ্য ও বার্ধক্য ইত্যাদি নানা পর্যায়ের সম্মুখীন হয়। চাঁদ যেমন আল্লাহর অনুমতিতেই তার নির্দিষ্ট সময় রাতের পরে সূর্যকে জায়গা করে দেয় ভুবন আলোকিত করার জন্য তেমনি সূর্য ও দিনশেষে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তেমনি মানুষও তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায় শেষে আল্লাহর অনুমতিতে তার নিকটেই ফিরে যাবে।
[ (তাফসীরে জালালাইন, ৭/৪০১-০২), (তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন, ৩/৬৯২)
(কিছু তথ্য সংগৃহিত।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালার কসমের উদ্দেশ্য,তার কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত, অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা।  (কসম কৃত বস্তুর মর্যাদা গুরুত্ব মানুষের মনের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা,বা সেদিকে আকৃষ্ট করা)। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...