بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
নির্দোষ ও নিরাপরাধ অমুসলিমরা
মুসলিম দেশে বসবাস করলে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ পাওয়া তাদের অধিকার। কোনো অবস্থাতেই তাদের জীবন
ও সম্পদের ক্ষতি করা যাবে না। সর্বাবস্থায় তাদের প্রতি মহানুভবতা দেখাতে হবে। ন্যায়বিচার
পাওয়া তাদের অধিকার।
আল্লাহ
তায়ালা বলেন,
لَّا
يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ
يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ
اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
‘দ্বিনের ব্যাপারে যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি এবং
তোমাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করেনি, তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন ও ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ
তোমাদের নিষেধ করেন না। আল্লাহ তো ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা: মুমতাহিনা,
আয়াত: ৮)
যেসব অমুসলিম মুসলিম দেশে
জিম্মি হিসেবে (মুসলিম রাষ্ট্রের আইন মেনে) বসবাস করে তাদের হত্যা করা যাবে না। তেমনি
যারা ভিসা নিয়ে মুসলিম দেশে আসে তাদের হত্যা করা যাবে না। তাদের জানমালের নিরাপত্তা
মুসলমানদের মতোই অপরিহার্য। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো অমুসলিম নাগরিককে হত্যা করল সে জান্নাতের
সুগন্ধিও পাবে না, অথচ
তার সুগন্ধি ৪০ বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়। ’ (বুখারি,
হাদিস: ৩১৬৬)
অমুসলিমদের উপাসনালয় রক্ষায়
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা.) একটি রাজকীয় ফরমান জারি করেছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাসের
খ্রিস্টানদের জন্য তিনি একটি সংবিধান রচনা করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল,
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
এটি একটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত চুক্তিনামা, যা মুসলমানদের আমির, আল্লাহর বান্দা ওমরের পক্ষ থেকে স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তিনামা
ইলিয়াবাসী তথা জেরুজালেমে বসবাসরত খ্রিস্টানদের জীবন ও সম্পদ,
গির্জা-ক্রুশ ও খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের
জন্য প্রযোজ্য। সুতরাং চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তাদের উপাসনালয়ে অন্য কেউ অবস্থান
করতে পারবে না। তাদের গির্জা ধ্বংস করা যাবে না এবং কোনো ধরনের ক্ষতি সাধন করা যাবে
না। তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো বস্তু, তাদের ধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ ও তাদের সম্পদের কোনো ধরনের ক্ষতি
সাধন বা হামলা করা যাবে না। (তারিখুর রাসুল ওয়াল মুলুক,
তারিখে তাবারি,
দ্বিতীয় খণ্ড,
পৃষ্ঠা ৪৪৯)
★★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই / বোন!
ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিমেদের
বিচার ফায়সালা যেমন ইসলামী
শরীআত অনুযায়ী হবে, ঠিক
তেমনই অমুসলিমদের বিচার ফায়ছালাও হবে ইসলামী শরীআত অনুযায়ী। কেননা আল্লাহ তাআলা তার
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ করে বলেন,
وَأَنِ
احْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ
‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন সেই অনুযায়ী আপনি তাদের মাঝে বিচার
করুন, আর
তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণ করবেন না’ (আল-মায়েদা, ৫/৪৯)। সুতরাং ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিমদের মধ্যেও
কেউ চুরি করলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তার হাত কেটে দেওয়া। যেসব অমুসলিম যিনা-ব্যাভিচার
বা পরকীয়ায় লিপ্ত হবে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান
তাদের উপর শরঈ হদ কায়েম করবে বা রজম কায়েম করবেন।
উল্লেখ্য যে,
অনেকেই দাবী করে,
এক ইয়াহূদী পুরুষ ও ইয়াহূদী মহিলা ব্যভিচার
করলে, নবী
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের তাওরাত অনুযায়ী তাদের মাঝে বিচার করেন (ছহীহ
বুখারী, হা/৬৮১৯;
ছহীহ মুসলিম,
হা/১৭০০)। কিন্তু আসলে বিষয়টি তেমন নয়।
বরং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে ইসলামী শরীআত মোতাবেকই বিচার করেছিলেন,
কিন্তু তাওরাত নিয়ে এসে তাদেরকে দেখানোর
উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে লাঞ্ছিত করা ও তাদের ওপর হুজ্জত কায়েম করা (হুকমুল জাহিলিয়্যাহ,
আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির,
৫৪ পৃ.)।