بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম সমগ্র-মানবতার জন্য পূর্ণাঙ্গ
আদর্শ, উন্নত অনুকরণীয় নমুনা। চিন্তা-চেতনা, স্বভাব-চরিত্র, গ্রহণ-বর্জন ও শত্রুতা-মিত্রতার চূড়ান্ত
ও পূর্ণাঙ্গতম মাপকাঠি। তাঁরা হয়ে থাকেন ঐশী করুণার অবতরণস্থল, তাঁর অপার মহিমা ও দানের কেন্দ্রবিন্দু।
তাঁদের আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র
ও জীবনের রীতি-নীতি আল্লাহর অতিপ্রিয় হয়ে থাকে। সকল জীবন-ধারার মাঝে তাঁদের জীবন-ধারা, সকলের স্বভাব-চরিত্রের মাঝে তাঁদের স্বভাব-চরিত্র
এবং মানুষের বিচিত্র আদত-অভ্যাসের মাঝে তাঁদের অভ্যাস ও আদতই আল্লাহর পছন্দের। তাঁরা
যে পথে চলেন তা আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়। অন্য সকল পথ ও পন্থার উপর প্রাধান্য পেয়ে যায়।
শুধু এই জন্য যে, নবীগণের
মুবারক কদম এতে পড়েছে। তাঁদের প্রিয় সকল বিষয় ও নিদর্শন এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল
বস্তু ও কর্মের সাথে আল্লাহর সন্তষ্টি যুক্ত হয়ে যায়। এ কারণেই এগুলো গ্রহণ করা এবং
নিজের মাঝে তাঁদের আখলাকের একটুখানি ঝলক সৃষ্টি করতে পারাও আল্লাহর মহব্বত ও সন্তুষ্টি
লাভের নিকটতম ও সহজতম উপায়। কে না জানে, বন্ধুর বন্ধুও বন্ধু আর শত্রুর বন্ধুও
শত্রু।
খাতামুন্নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে
কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ
فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ
তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ-খাতা মাফ করে দিবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১
পক্ষান্তরে জালিম অনাচারী ও কুফরীর পথ গ্রহণকারীদের প্রতি আকর্ষণ, তাদের জীবন যাপনের ধারা ও পদ্ধতিকে প্রাধান্য
দান, তাদের সাথে অন্তর-বাহিরের
সাদৃশ্য স্থাপন হচ্ছে এমন বিষয়, যা আল্লাহর ক্রোধ সঞ্চারকারী ও বান্দাকে আল্লাহ থেকে বিদূরিতকারী।
ইরশাদ হয়েছে-
وَ لَا تَرْكَنُوْۤا اِلَی الَّذِیْنَ
ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّار وَ مَا
لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِیَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ .
তোমরা ঝুঁকবে না ওদের প্রতি যারা জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করেছে। যদি
তা কর তবে তোমাদের স্পর্শ করবে জাহান্নামের আগুন। তোমাদের তো আল্লাহ ছাড়া কোনো বন্ধু
নেই। অতপর তোমরা আর সাহায্য পাবে না। -সূরা হূদ (১১) : ১১৩
আম্বিয়ায়ে কেরামের এই রীতি-নীতি ও আদত-অভ্যাস শরীয়তের পরিভাষায়
‘খিসালে ফিতরাত’ ও ‘সুনানুল হুদা’ নামে অভিহিত। ইসলাম এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করে।
জীবন ও কর্মে এই আদত-অভ্যাস, রীতি-নীতি গ্রহণের দ্বারা মানুষ নবীগণের
রঙে রঙিন হয়ে ওঠে, যে রঙ সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-
صِبْغَةَ
اللهِ وَ مَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ صِبْغَةً وَّ نَحْنُ لَهٗ عٰبِدُوْنَ
(বল, আমরা গ্রহণ করেছি) আল্লাহর রঙ, আর কার রঙ হবে আল্লাহর রঙের চেয়ে ভালো।
আমরা তো তাঁরই বন্দেগী করি। -সূরা বাকারা (২) : ১৩৮
ইসলামে এক রীতির উপর অন্য রীতির এবং এক জীবনধারার উপর অন্য জীবনধারার
শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্যের তাৎপর্য এখানেই নিহিত। একারণেই ইসলামী শরীয়তে আম্বিয়ায়ে কেরামের
রীতি-নীতিকে ঈমানদারের নিদর্শন ও স্বাভাবিকতার দাবি বলে অভিহিত করা হয়। পক্ষান্তরে
এর বিপরীত পথ ও পদ্ধতি চিহ্নিত হয় স্বাভাবিকতা-বিরুদ্ধ ও আহলে জাহিলিয়াতের নিদর্শন বলে। এই দুই পথের মাঝে পার্থক্য শুধু এই
যে, একটি আল্লাহর নবী ও প্রিয়
বান্দাদের গৃহীত পথ আর অপরটি এমন সব লোকের, যারা হেদায়েতের আলো ও আসমানী শিক্ষার রাহনুমায়ী
থেকে বঞ্চিত।
এই মৌলনীতি থেকেই বের হয়ে আসে পানাহারে ও অন্যান্য কাজে ডানহাত-বামহাত
ব্যবহারের পার্থক্য এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, বেশভূষা ও জীবনযাত্রার নানা ক্ষেত্রের
বহু নীতি ও আদব, যা সুন্নতে
নববী ও ফিকহে ইসলামীর এক বিরাট অধ্যায়।
তো দ্বীনের এই যে বৈশিষ্ট্য, নবী ও উম্মতের এই যে সম্পর্ক এ তো রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলায় আরো বেশি গুরুত্বের দাবিদার। তাঁর সঙ্গে নিছক
বিধিগত সম্পর্ক নয়, হতে হবে
আত্মা ও আবেগের সম্পর্ক, গভীর ও
স্থায়ী মুহাব্বতের সম্পর্ক, যা জান-মাল
পরিবার-পরিজনের ভালবাসার চেয়েও বেশি হবে। সহীহ হাদীসে আছে-
لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبّ
إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ، وَوَلَدِهِ، وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার প্রাণ অপেক্ষা
অধিক প্রিয় হই। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১২৮১৪
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن
رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ
হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ
৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
যে ব্যক্তি
যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি
ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে এজাতীয় খাবার যদি
হারাম কোন উপাদান থেকে তৈরী হয় তাহলে খাওয়াও হারাম হবে। তবে যদি তা হালাল উপাদান দিয়েই
তৈরী হয় তাহলে সেই খাবারকে সরাসরি হারাম বলা না গেলেও একজন মুসলমানের জন্য এজাতীয় খাবার
গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়। কারণ, একজন লজ্জাশীল, সভ্য ও রুচিশীল ব্যক্তির কখনো এমন খাবার গ্রহণ
করতে পারে না যেটি লজ্জাস্থানের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে। সুতরাং তাকওয়ার দাবী এই যে, প্রতিটি
মুসলমানের জন্য এজাতীয় খাবার তৈরী বা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।