আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
175 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)

আমার একজন ছোট ভাই ক্যালিফোর্নিয়া তে থাকে সেখান থেকে আমাকে দেখিয়েছে যে সে কিছু খাবার গুলোকে লিংগ এর মত করে সাজানো হয় অর্থাৎ দেখতে মানুষের লজ্জা স্থানের মত সে সেগুলো খায় আর বানায় এখন সে আমাকে বলল এগুলা ত আমি খাচ্ছি এখানে সমস্যা কি তাই সেই ক্ষেত্রে জুদিও এগুলা আমার কাছে ভাল মনে হচ্ছে না আসলে আমার কাছে কারন এভাবে অশ্লীল ভাবে খাবার পরিবেশন করা আর সেটা খাওয়া এখন এগুলা বানানো বা খাওয়া কি হালাল হবে নাকি হারাম হবে ? 

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম সমগ্র-মানবতার জন্য পূর্ণাঙ্গ আদর্শ, উন্নত অনুকরণীয় নমুনা। চিন্তা-চেতনা, স্বভাব-চরিত্র, গ্রহণ-বর্জন ও শত্রুতা-মিত্রতার চূড়ান্ত ও পূর্ণাঙ্গতম মাপকাঠি। তাঁরা হয়ে থাকেন ঐশী করুণার অবতরণস্থল, তাঁর অপার মহিমা ও দানের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁদের আচার-আচরণ, স্বভাব-চরিত্র ও জীবনের রীতি-নীতি আল্লাহর অতিপ্রিয় হয়ে থাকে। সকল জীবন-ধারার মাঝে তাঁদের জীবন-ধারা, সকলের স্বভাব-চরিত্রের মাঝে তাঁদের স্বভাব-চরিত্র এবং মানুষের বিচিত্র আদত-অভ্যাসের মাঝে তাঁদের অভ্যাস ও আদতই আল্লাহর পছন্দের। তাঁরা যে পথে চলেন তা আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়। অন্য সকল পথ ও পন্থার উপর প্রাধান্য পেয়ে যায়। শুধু এই জন্য যে, নবীগণের মুবারক কদম এতে পড়েছে। তাঁদের প্রিয় সকল বিষয় ও নিদর্শন এবং তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বস্তু ও কর্মের সাথে আল্লাহর সন্তষ্টি যুক্ত হয়ে যায়। এ কারণেই এগুলো গ্রহণ করা এবং নিজের মাঝে তাঁদের আখলাকের একটুখানি ঝলক সৃষ্টি করতে পারাও আল্লাহর মহব্বত ও সন্তুষ্টি লাভের নিকটতম ও সহজতম উপায়। কে না জানে, বন্ধুর বন্ধুও বন্ধু আর শত্রুর বন্ধুও শত্রু।

খাতামুন্নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ  وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ .

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ-খাতা মাফ করে দিবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

পক্ষান্তরে জালিম অনাচারী ও কুফরীর পথ গ্রহণকারীদের প্রতি আকর্ষণ, তাদের জীবন যাপনের ধারা ও পদ্ধতিকে প্রাধান্য দান, তাদের সাথে অন্তর-বাহিরের সাদৃশ্য স্থাপন হচ্ছে এমন বিষয়, যা আল্লাহর ক্রোধ সঞ্চারকারী ও বান্দাকে আল্লাহ থেকে বিদূরিতকারী। ইরশাদ হয়েছে-

وَ لَا تَرْكَنُوْۤا اِلَی الَّذِیْنَ ظَلَمُوْا فَتَمَسَّكُمُ النَّار  وَ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ مِنْ اَوْلِیَآءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُوْنَ .

তোমরা ঝুঁকবে না ওদের প্রতি যারা জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করেছে। যদি তা কর তবে তোমাদের স্পর্শ করবে জাহান্নামের আগুন। তোমাদের তো আল্লাহ ছাড়া কোনো বন্ধু নেই। অতপর তোমরা আর সাহায্য পাবে না। -সূরা হূদ (১১) : ১১৩

আম্বিয়ায়ে কেরামের এই রীতি-নীতি ও আদত-অভ্যাস শরীয়তের পরিভাষায় ‘খিসালে ফিতরাত’ ও ‘সুনানুল হুদা’ নামে অভিহিত। ইসলাম এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করে।

জীবন ও কর্মে এই আদত-অভ্যাস, রীতি-নীতি গ্রহণের দ্বারা মানুষ নবীগণের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে, যে রঙ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-

صِبْغَةَ اللهِ وَ مَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللهِ صِبْغَةً وَّ نَحْنُ لَهٗ عٰبِدُوْنَ

(বল, আমরা গ্রহণ করেছি) আল্লাহর রঙ, আর কার রঙ হবে আল্লাহর রঙের চেয়ে ভালো। আমরা তো তাঁরই বন্দেগী করি। -সূরা বাকারা (২) : ১৩৮

ইসলামে এক রীতির উপর অন্য রীতির এবং এক জীবনধারার উপর অন্য জীবনধারার শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রাধান্যের তাৎপর্য এখানেই নিহিত। একারণেই ইসলামী শরীয়তে আম্বিয়ায়ে কেরামের রীতি-নীতিকে ঈমানদারের নিদর্শন ও স্বাভাবিকতার দাবি বলে অভিহিত করা হয়। পক্ষান্তরে এর বিপরীত পথ ও পদ্ধতি চিহ্নিত হয় স্বাভাবিকতা-বিরুদ্ধ ও আহলে জাহিলিয়াতের  নিদর্শন বলে। এই দুই পথের মাঝে পার্থক্য শুধু এই যে, একটি আল্লাহর নবী ও প্রিয় বান্দাদের গৃহীত পথ আর অপরটি এমন  সব লোকের, যারা হেদায়েতের আলো ও আসমানী শিক্ষার রাহনুমায়ী থেকে বঞ্চিত।

এই মৌলনীতি থেকেই বের হয়ে আসে পানাহারে ও অন্যান্য কাজে ডানহাত-বামহাত ব্যবহারের পার্থক্য এবং পোশাক-পরিচ্ছদ, বেশভূষা ও জীবনযাত্রার নানা ক্ষেত্রের বহু নীতি ও আদব, যা সুন্নতে নববী ও ফিকহে ইসলামীর এক বিরাট অধ্যায়।

তো দ্বীনের এই যে বৈশিষ্ট্য, নবী ও উম্মতের এই যে সম্পর্ক এ তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেলায় আরো বেশি গুরুত্বের দাবিদার। তাঁর সঙ্গে নিছক বিধিগত সম্পর্ক নয়, হতে হবে আত্মা ও আবেগের সম্পর্ক, গভীর ও স্থায়ী মুহাব্বতের সম্পর্ক, যা জান-মাল পরিবার-পরিজনের ভালবাসার চেয়েও বেশি হবে। সহীহ হাদীসে আছে-

لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ، وَوَلَدِهِ، وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.

তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন  হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার প্রাণ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হই। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১২৮১৪

আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء

তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ ৩)

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে এজাতীয় খাবার যদি হারাম কোন উপাদান থেকে তৈরী হয় তাহলে খাওয়াও হারাম হবে। তবে যদি তা হালাল উপাদান দিয়েই তৈরী হয় তাহলে সেই খাবারকে সরাসরি হারাম বলা না গেলেও একজন মুসলমানের জন্য এজাতীয় খাবার গ্রহণ করা মোটেও উচিত নয়। কারণ, একজন লজ্জাশীল, সভ্য ও রুচিশীল ব্যক্তির কখনো এমন খাবার গ্রহণ করতে পারে না যেটি লজ্জাস্থানের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে। সুতরাং তাকওয়ার দাবী এই যে, প্রতিটি মুসলমানের জন্য এজাতীয় খাবার তৈরী বা খাওয়া থেকে বিরত থাকা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...