আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
144 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (11 points)

1. আমরা জানি যে, আমাদের শরীর কে আল্লাহ আমানত হিসেবে দিয়েছেন এবং আমার জানামতে আমাদের শরীরের কোনো অঙ্গ আমরা কাউকে দিতে পারবো না, যেহেতু রক্তও শরীরের একটি অংশ তাহলে কি রক্ত অন্য কাউকে দেওয়া জায়েজ হবে? 

2. আমরা বর্তমানে এমন এক অবস্থায় আছি,  চারিদিকে শুধু অশ্লীলতার ছড়াছড়ি,  নারীদের ছোট পোশাক পরিধান, পর্ণোগ্রাফি ইত্যাদি.  এই অবস্থায় একজন অবিবাহিত হিসেবে নিজেকে কিভাবে সংযত রাখতে পারি?  মাঝে মধ্যে কি হস্তমৈথুন করা জায়েজ হবে? উল্লেখ্য, বর্তমানে বিয়ে করার মতো সামর্থ্য নাই আর রোজা রাখলে নিজেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কন্ট্রোল করা যায় কিন্তু বাকি সময় পারি না.

 দোআ করবেন আমার জন্য যাতে করে আল্লাহ বিষয় গুলো কে আমার জন্য সহজ করে দেন এবং তাড়াতাড়ি রোজগার করার তৌফিক দেন 

1 Answer

+1 vote
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

১. **বিভিন্ন অসুবিধায় মানুষের রক্ত প্রদান-গ্রহণের প্রয়োজন হয়। ইসলামে এ ব্যাপারেও রয়েছে সুন্দর নির্দেশনা। স্বেচ্ছায় নিজের রক্ত অন্য কারও প্রয়োজনে দান করাই রক্তদান।

রক্ত দানকারীরা খুবই ভাগ্যবান। দুনিয়াতেও তাদের উপকার, আখেরাতেও তাদের উপকার। দুনিয়ার উপকারটা দুই ধরনের। একটি হলো ব্যক্তিগত উপকার আর অন্যটি হলো জনগণের উপকার। ব্যক্তিগত উপকারের কথা বলা হলে বলতে হবে যে, রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

রক্ত শরীরের ভেতরে থাকাবস্থায় পবিত্র। আর শরীর থেকে বের হয়ে গেলে অপবিত্র। এর আসল দাবি হলো, অন্যের শরীরে রক্ত দেওয়া হারাম হওয়া। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় (প্রয়োজন ও কারণ ছাড়া) একজনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা শরিয়তে নিষেধ। তাই রক্ত গ্রহণের বিকল্প নেই, এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির জীবননাশের আশঙ্কা দেখা দেয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত দেওয়া ব্যতীত বাঁচানোর কোনো পন্থা না থাকে, তখন রক্ত দিতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং এ ক্ষেত্রে ইসলাম আরও উৎসাহ দিয়েছে। ২. রক্ত দেওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বটে, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুঁকি বাড়ে অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়; এমন অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েজ ও জরুরি। ৩. যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দেয় না, বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে; তখন অযথা রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ৪. যখন জীবননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে, বরং শুধু শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্যে হয়; সে অবস্থায় ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক রক্তদান জায়েজ নয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি  ৫/৩৫৫; রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৮৯)

রক্তের ব্যাংক বা বিভিন্ন সংস্থা যেখানে লোকেরা স্বেচ্ছায় রক্ত দান করে এবং তারা ব্যাংকগুলো অভাবগ্রস্তকে বিনামূল্যে রক্ত সরবরাহ করে সেখানে মুসলমানদের জন্য রক্তদান করা জায়েজ। এটি মানব সেবার অন্তর্ভুক্ত। (কিতাবুন নাওয়াজিল : ১৬/২১৫)।

তবে যদি কোন সংস্থা সাধারণ মানুষ থেকে রক্ত নিয়ে অন্যের নিকট বিক্রি করে, তাহলে জেনে শুনে সেখানে রক্ত প্রদান করা জায়েয নেই।

আরো জানুন: https://ifatwa.info/58382/?show=58382#q58382

**২. https://ifatwa.info/63576/?show=63576#q63576 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হস্তমৈথুনের নিষেধাজ্ঞা যদিও সহীহ সনদে বর্ণিত কোনো হাদীসে সরাসরি আসেনি,তথাপিও তাকে শরীয়তের অন্যান্য দলিলপত্রাদি দ্বারা উলামাগণ হারাম সাব্যস্ত করে থাকেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা এক আয়াতে বিবাহবহির্ভূত এবং দাসী ব্যতীত সহবাসকে সীমালঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন -

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ * إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ * فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ

"এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালংঘনকারী হবে।" (সূরা-মু'মিনুন-৫-৭)

আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

عبد الله بن عمرو بن العاص عن النبي صلى الله عليه وسلم سبعة لا ينظر الله عز وجل إليهم يوم القيامة ولا يزكيهم ويقول : ادخلوا النار مع الداخلين : الفاعل والمفعول به ، والناكح يده ، وناكح البهيمة ، وناكح المرأة في دبرها ، وناكح المرأة وابنتها ، والزاني بحليلة جاره ،والمؤذي لجاره حتى يلعنه

সাত শ্রেণীর লোকের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেন, কিয়ামতের দিন এদের দিকে তাকাবেন না এবং এদেরকে জাহান্নামে প্রবেশের আদেশ দিবেন। এরা হলসমকামী, হস্তমৈথুনকারী, জীবজন্তুর সাথে সঙ্গমকারী, স্ত্রীর সঙ্গে পুংমৈথুনকারী, কোন মহিলা ও তার কন্যাকে একসাথে বিবাহকারী, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারকারী এবং প্রতিবেশীকে এমন কষ্টদানকারী যে, যার কারণে সে তাকে অভিশাপ দেয় । তবে এরা যদি তাওবা করে তাহলে তারা সবাই হয়ত ক্ষমা পেতে পারে।” (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান৭/৩২৯)

বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা রশিদ আহমদ রাহ বলেন, হস্তমৈথুন সম্পূর্ণ  হারাম ও নাজায়েয । তবে কেউ কেউ যেমন আল্লামা হাসক্বফী রাহ মনে করেন, যিনা-ব্যবিচার থেকে বাঁচতে কেউ হস্তমৈথুন করে ফেললে তাকে শাস্তি দেয়া হবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া-৮/২৪৯)

হস্তমৈথুনের বিধান সম্পর্কে জানুনঃ https://ifatwa.info/347/

হস্তমৈথুন থেকে বাঁচার বিস্তারিত আমল জানুনঃ https://ifatwa.info/9968/

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. নিঃসন্দেহে রক্তদান একটি বড় ইবাদত। আর ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের মহামূল্যবান জীবন ও দেহ সুরক্ষায় রক্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য তরল উপাদান। সুতরায় উপরে উল্লেখিত ছুরতগুলিতে রক্ত দান করা জায়েয আছে।

২. হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্তমৈথুন করা কোরআন সুন্নাহ ও সুস্থ বিবেকের নির্দেশ মতে হারাম ও কবিরা গুনাহ। কারো বিবাহ করার সামর্থ্য না থাকলে এবং লাগাতার রোজা রাখার পরও যদি কারো যৌনচাহিদা এমন পর্যায়ের থাকে যে, যেকোনো মুহুর্তে হারামে লিপ্ত থাকার প্রবল আশংকা থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় কেউ কেউ অনুমতি দিয়ে থাকেন। তাই প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে এমন কাজ সম্পাদিত না হওয়াই কাম্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...