আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,477 views
in সালাত(Prayer) by (1 point)
ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে সরাসরি কোনো হাদীস আছে কিনা? আমি শুধু 'হাদীস' জানতে চাইছি এই দুই ব্যাপারে।
১। রাসুলুল্লাহ (স।) কি বলেছেন ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়ো না?

২। রাসুলুল্লাহ (স।) কি বলেছেন  ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়ো?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
স্পষ্ট এই শব্দে কোনো হাদীস নেই যে  রাসুলুল্লাহ (স।) বলেছেন যে ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়ো না।
,
তবে ইমামের পিছনে কেরাত না পড়া  সংক্রান্ত কুরআন হাদীস থেকে দলিলঃ
 
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ  
وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا لعلكم ترحمون ” يعني في الصلاة المفروضة

অর্থ : যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি করুণা করা হয় (ফরজ নামাজে)

হযরত ইবনে মাসঊদ রা. এর মতও তাই। তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে:

صلى ابن مسعود، فسمع أناسا يقرءون مع الامام، فلما انصرف، قال: أما آن لكم أن تفقهوا ؟ أما آن لكم أن تعقلوا ؟ وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا كما أمركم الله
অর্থাৎ হযরত ইবনে মাসঊদ রা. নামায পড়ছিলেন, তখন কতিপয় লোককে ইমামের সঙ্গে কেরাত পড়তে শুনলেন। নামায শেষে তিনি বললেন : তোমাদের কি অনুধাবন করার সময় আসেনি, তোমাদের কি বোঝার সময় হয় নি? যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং নীরব থাকবে, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ করেছেন। (৯ খ. ১০৩ পৃ.)

হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. বলেছেন,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إذا قرأ الإمام فأنصتوا، فإذا كان عند القعدة فليكن أوّل ذكر أحدكم التشهد. أخرجه مسلم (৪০৪) في باب التشهد في الصلاة، وأحمد في المسند ৪/৪১৫ (১৯৯৬১)، وأبو داود (৯৭৩) وابن ماجه (৮৪৭) واللفظ له. ؟

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যখন ইমাম কুরআন পড়বে,তোমরা তখন চুপ করে থাকবে। আর বৈঠকের সময় তাশাহহুদ-ই প্রথম পড়তে হবে।

(মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৪০৪; আবূ দাউদ, হাদীস নং ৯৭৩; ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৮৪৭; মুসনাদে আহমাদ, ৪খ, ৪১৫ পৃ, হাদীস নং ১৯৯৬১। ইমাম আহমদ, (দ্র. তামহীদ ১১/৩৪), ইমাম মুসলিম, ইবনুল মুনযির (দ্র. আল আওসাত, ৩/১০৫), ইমাম ইবনে জারীর তাবারী র. (দ্র. তাফসীরে তাবারী, ৯/১০৩) ও ইবনে হাযম জাহেরী (দ্র. আল মুহাল্লা, ২/২৭০) প্রমুখ এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।
,
হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেছেন যে, 

 مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ

যে ব্যক্তির ইমাম আছে তার ইমামের কেরাতই তার জন্য কেরাত বলে ধর্তব্য হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৭২৩, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১১৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১০৫০, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৮০০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৫৭৯, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ-৯৬, মুসনাদে ইমামে আজম-৬১)    
আরো জানুনঃ 
,
(০২)
স্পষ্ট এই শব্দে কোনো হাদীস নেই যে  রাসুলুল্লাহ (স।) বলেছেন যে ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়ো।
,
তবে ইমামের পিছনে সুরা ফাতেহা  পড়া  সংক্রান্ত যে হাদীস গুলো থেকে দলিল পেশ করা হয়,তার মধ্যে অন্যতম কিছু হাদীসঃ 

 عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

 উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না তার ছালাত হয় না’।
(ছহীহ বুখারী হা/৭৫৬, ১/১০৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭২০, ২/১০৯ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯৫; ছহীহ মুসলিম ১/১৬৯ পৃঃ, মুসলিম হা/৯০০, ৯০১, ৯০২, ৯০৪, ৯০৬, ৯০৭ (ইফাবা হা/৭৫৮, ৭৫৯, ৭৬০, ৭৬২); মিশকাত পৃঃ ৭৮, হা/৮২২ ও ৮২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৫, ৭৬৬, ২/২৭২ পৃঃ, ‘ছালাতে ক্বিরআত পাঠ করা’ অনুচ্ছেদ।)
,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ قَالَ مَنْ صَلَّى صَلاَةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهْىَ خِدَاجٌ ثَلاَثًا غَيْرُ تَمَامٍ فَقِيْلَ لأَبِىْ هُرَيْرَةَ إِنَّا نَكُوْنُ وَرَاءَ الإِمَامِ فَقَالَ اقْرَأْ بِهَا فِىْ نَفْسِكَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ تَعَالىَ قَسَمْتُ الصَّلَاةَ بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ نِصْفَيْنِ وَلِعَبدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ الْعَبْدُ اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ اللهُ حَمِدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيْمِ قَالَ اللهُ تَعَالى أََثْنَى عَلَىَّ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ قَالَ مَجَّدَنِىْ عَبْدِىْ وَإِذَا قَالَ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ قَالَ هَذَا بَيْنِيْ وَبَيْنَ عَبْدِيْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ فَإِذَا قَالَ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ قَالَ هذَا لِعَبْدِىْ وَلِعَبْدِىْ مَا سَأَلَ.

 আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন ছালাত আদায় করল অথচ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার ছালাত অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। তখন আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা যখন ইমামের পিছনে থাকি? উত্তরে তিনি বললেন, তুমি চুপে চুপে পড়। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি ছালাতকে আমার মাঝে ও আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। আমার বান্দার জন্য সেই অংশ যা সে চাইবে। বান্দা যখন বলে, ‘আল-হামদুলিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। বান্দা যখন বলে, ‘আর-রহমা-নির রহীম’ (যিনি করুণাময়, পরম দয়ালু)। তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার গুণগান করল। বান্দা যখন বলে, ‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দ্বীন’ (যিনি বিচার দিবসের মালিক) তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমাকে সম্মান প্রদর্শন করল। বান্দা যখন বলে, ইয়্যা-কানা‘বুদু ওয়া ইয়্যা-কানাসতাঈন (আমরা কেবল আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি)। তখন আল্লাহ বলেন, এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ (অর্থাৎ ইবাদত আমার জন্য আর প্রার্থনা বান্দার জন্য) এবং আমার বান্দার জন্য সেই অংশ রয়েছে, যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলে, ‘ইহদিনাছ ছিরাত্বাল মুস্তাক্বীম, ছিরা-ত্বল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলায়হিম, গয়রিল মাগযূবি ‘আলায়হিম ওয়ালায য-ল্লীন (আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের উপর আপনি রহম করেছেন। তাদের পথ নয় যারা অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্ট)। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা যা চেয়েছে তা তার জন্য’।
(ছহীহ মুসলিম হা/৯০৪, ১/১৬৯-৭০ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৬২), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত হা/৮২৩, পৃঃ ৭৮-৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৬৬, মিশকাত ২/২৭২ পৃঃ।)
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
১/এখন আমাদের করণীয় কি?
২/যে সালাতে ঈমাম জোরে কেরাত পড়ে তখন আমরাকি চুপথাকব?
৩/আর ঈমাম আস্তে কেরাত পড়লে
তখন আমাদের কেরাত পড়তে হবে?
by

নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করার ব্যাপারে বিদ্বানদের থেকে নিম্নরূপ মত পাওয়া যায়।

প্রথম মতঃ নামাযে কখনই সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব নয়। স্বরব, নীরব কোন নামাযেই ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- কারো জন্য পাঠ করা ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব হচ্ছে কুরআন থেকে সহজ যে কোন কিছু পাঠ করা। তাদের দলীল হচ্ছেঃ আল্লাহ্ বলেন, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْ الْقُرْآنِ “অতএব তোমরা কুরআন থেকে সহজ কোন কিছু পাঠ কর।” (সূরা মুযাম্মিল- ২০) তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেখাতে গিয়ে গ্রাম্য লোকটিকে বলেছিলেন, “কুরআন থেকে তোমার জন্য সহজ হয় এমন কিছু পাঠ করবে।”

দ্বিতীয় মতঃ স্বরব, নীরব সকল নামাযে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা অবশ্য কর্তব্য। অনুরূপভাবে মাসবূক এবং নামাযের প্রথম থেকে জামাআতে শামিল ব্যক্তির জন্যও রুকন।

তৃতীয় মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু স্বরব বা নীরব কোন নামাযেই মুক্তাদীর জন্য ওয়াজিব নয়।

চতুর্থ মতঃ ইমাম ও একাকী ব্যক্তির জন্য স্বরব বা নীরব নামাযে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন। কিন্তু মুক্তাদীর জন্য নীরবের নামাযে রুকন স্বরব নামাযে নয়।

আমার মতে প্রাধান্যযোগ্য মতটি হচ্ছেঃ স্বরব, নীরব সকল নামাযে ইমাম, মুক্তাদী, একাকী- সবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রুকন বা ফরয। তবে মাসবূক যদি ইমামের রুকূর সময় নামাযে শামিল হয়, তবে সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাধারণ বাণীঃ তিনি বলেন,

لاصَلاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ

“যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার নামায হবে না।”

তিনি আরো বলেন,

مَنْ صَلَّى صَلَاةً لَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَهِيَ خِدَاجٌ ثَلَاثًا غَيْرُ تَمَامٍ

“যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে অথচ তাতে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না তার ছালাত অসম্পূর্ণ- রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বলেছেন।” অর্থাৎ- তার নামায বাতিল।

উবাদা বিন ছামেত বর্ণিত হাদীছে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা ফজরের নামায শেষ করে ছাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেনঃ

لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ قُلْنَا نَعَمْ هَذًّا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا

“তোমরা কি ইমামের পিছনে কোন কিছু পাঠ কর? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্র রাসূল! দ্রুত পাঠ করে থাকি। তিনি বললেন, তোমরা এরূপ করো না। তবে উম্মুল কুরআন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি উহা পাঠ করবে না তার নামায হবে না।” স্বশব্দের নামাযের ক্ষেত্রে এটি সুস্পষ্ট দলীল যে, সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হবে না।

কিন্তু মাসবূকের জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। একথার দলীল হচ্ছেঃ আবু বাকরা (রাঃ) এর হাদীছ। তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রুকূ অবস্থায় পেলেন। তখন দ্রুতগতিতে কাতারে পৌঁছার আগেই তিনি রুকূ করলেন। এরপর ঐ অবস্থায় হেঁটে হেঁটে কাতারে প্রবেশ করলেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামায শেষ করে জিজ্ঞেস করলেন, কে এরূপ করেছে? আবু বাকরা বললেন, আমি হে আল্লাহ্র রাসূল! নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ  زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلَا تَعُدْ “আল্লাহ্ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এরূপ আর কখনো করিও না।” এ হাদীছে দেখা যায় আবু বাকরা যে রাকাআতটি ছুটে যাওয়ার ভয়ে তাড়াহুড়া করলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ঐ রাকাআতটি পুনরায় আদায় করার আদেশ করলেন না। এটা ওয়াজিব হলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে আদেশ করতেন। যেমনটি আদেশ করেছিলেন ঐ ব্যক্তিকে যে কিনা তাড়াহুড়া করে নামায আদায় করেছিল, আর নামাযের রুকন ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করছিল না। তখন নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নামায ফিরিয়ে পড়ার আদেশ করেছিলেন।

মাসবূকের সূরা ফাতিহা পাঠ রহিত হওয়ার যুক্তিগত দলীল হচ্ছেঃ এই মাসবূক তো কিরআত পাঠ করার জন্য দাঁড়ানোর সুযোগই পায়নি। অতএব সুযোগ না পেলে তার আবশ্যকতাও রহিত হয়ে যাবে। যেমন হাত কাটা ব্যক্তি ওযু করার সময় তার হাতের কাটা অংশের পরিবর্তে বাহু ধৌত করবে না। বরং ধৌত করার স্থান উপস্থিত না থাকার কারণে এ ফরয রহিত হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ইমামকে রুকূ অবস্থায় পেল তার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ করা রহিত হয়ে যাবে। কেননা ক্বিরআত পাঠ করার জন্য দন্ডায়মান হওয়ার সুযোগই সে পায়নি। আর ইমামের অনুসরণ করতে গিয়ে এখানে দন্ডায়মান হওয়াও রহিত হয়ে যাবে।

আমার দৃষ্টিতে এমতটিই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। পূর্বোল্লেখিত উবাদা বিন ছামেত (রাঃ) এর হাদীছটি- (ফজরের নামাযে ক্বিরআত পাঠ সংক্রান্ত হাদীছটি) যদি না থাকতো, তবে স্বরবে কিরাআত বিশিষ্ট নামাযে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক হতো না। আর সেটাই হতো প্রাধান্যযোগ্য মত। কেননা নীরবে শ্রবণকারী পাঠকের মতই ছাওয়াবের অধিকারী হয়। এজন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা মূসা (আঃ) কে বলেনঃ قَدْ أُجِيبَتْ دَعْوَتُكُمَا “তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৯) অথচ সে সময় দু’আ শুধু মাত্র মূসা (আঃ) এককভাবে করেছিলেন। আল্লাহ্ বলেনঃ

وَقَالَ مُوسَى رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَنْ سَبِيلِكَ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّى يَرَوْا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ

“আর মূসা বললেন, হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় আপনি ফেরাউন ও তার সভাসদদের প্রদান করেছো দুনিয়ার জীবনের চাকচিক্য, সৌন্দর্য ও সম্পদ। হে আমাদের পালনকর্তা! ওরা আপনার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন, তাদের হৃদয় কঠোর করে দিন, যাতে তারা ঈমান না আনে। যাতে করে তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করতে পারে।” (সূরা ইউনূসঃ ৮৮) এখানে কি আল্লাহ্ হারূনের দু’আর কথা উল্লেখ করলেন? উত্তরঃ না। তারপরও আল্লাহ্ বললেনঃ “তোমাদের উভয়ের দু’আ কবূল করা হয়েছে।” বিদ্বানগণ বলেনঃ এক ব্যক্তি দু’আ করা সত্বেও দ্বিবচন শব্দ এখানে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, মূসা (আঃ) দু’আ করছিলেন আর হারূন (আঃ) আমীন বলছিলেন।

আর আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছ: (من كان له إمام، فقراءة الإمام له قراءة) “যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের ক্বিরাতই তার ক্বিরাত (হিসেবে যথেষ্ট)।” কিন্তু হাদীছের সনদ যঈফ (দুর্বল)।  কেননা তা মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হাফেয ইবনু কাছীর তাঁর তাফসীর গ্রনে’র ভূমিকায় বলেছেন। আরো কয়েকটি সূত্রে হাদীছটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোনটিই ছহীহ্ নয়। তারপরও হাদীছটি দ্বারা যারা দলীল নিয়ে থাকে তারা সাধারণভাবে বলেন না যে, কোন অবস্থাতেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে না। বরং তাদের মধ্যে অনেকে বলেনঃ নীরবের নামাযে মুক্তাদীকে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।

যদি প্রশ্ন করা হয়ঃ ইমাম যদি না থামেন (অর্থাৎ- ফাতিহা শেষ করার পর মুক্তাদীদের ফাতিহা পাঠ করার সুযোগ দেয়ার জন্য কিছু সময় নিরব না থাকেন।) তবে মুক্তাদী কখন সূরা ফাতিহা পাঠ করবে? উত্তর হচ্ছেঃ ইমামের পড়ার সময়ই মুক্তাদী পড়বে। কেননা ছাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পড়ার সাথে সাথেই পড়তেন। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ

(لَا تَفْعَلُوا إِلَّا بِأُمِّ الْقُرْآنِ فَإِنَّهُ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا)

“তোমরা উম্মুল কুরআন (সূরা ফাতিহা) ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করবে না। কেননা যে ব্যক্তি তা পাঠ করবে না তার নামায হবে না।”

 

 

সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম।
লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।

by (25 points)
গ্রুপে উত্তর দানের জন্য মুফতি সাহেবান রয়েছেন। তারা কুরআন সুন্নাহ অধ্যয়ন করে ফতোয়া দিয়ে থাকেন। উল্লেখ্য, মতভেদপূর্ণ বিষয়ে তারা হানাফি ফিকহের আলোকে ফতওয়া দেন।  যারা এই পদ্ধতি পছন্দ করেন না, তারা এই ওয়েবসাইটে প্রশ্নই করবেন না। কিন্তু নিজেই মুফতি সেজে বসা ও কোন পুস্তক থেকে কপি পেস্ট করাটা কাম্য নয়। 
by (10 points)
EHS আপনি বেশি বুঝেন। শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমীন (রহঃ) হলেন সৌদি আরবের,উনি বিশ্বের শীর্ষ মুফতি শাইখ আলেম উলামাদের মধ্যে একজন।তার ফতোয়া একজন তুলে ধরেছেন সবারই জানার জন্য।যে তুলে ধরেছে উনি মুফতি সেজে বসেনি। আপনার আলেম উলামাবিদ্বেষী হওয়াটা কাম্য নয়।

এই ওয়েবসাইটে চারটা (হানিফা,শাফি,মালিকি,হাম্বলি) ফিকহের আলোকেই উওর প্রদান করা হয়ে থাকে/আলোচনা হয়ে থাকে দেখা যায়।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...