بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
প্রদর্শনপ্রিয়তা
নিয়তের অসততা, যা
ইবাদতকে মূল্যহীন করে দেয়। নিয়ত ঠিক না হলে আল্লাহর কাছে বান্দার কোনো কাজই গ্রহণযোগ্য
নয়। নিয়ত শুদ্ধ হলে আল্লাহ জাগতিক কাজকে ইবাদতের মর্যাদা দেন। আবার নিয়ত শুদ্ধ না হলেও
ইবাদতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেন।
قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم إنما الأعمال
بالنيات
রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন, ‘নিশ্চয়
কাজের ফলাফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১)
মানুষের ভেতর প্রদর্শনপ্রিয়তা
বিচিত্র রূপে প্রকাশ পায়। কেউ ইবাদতের সময় প্রত্যাশা করে মানুষ তার ইবাদত দেখে প্রশংসা
করুক। কেউ আশা করে, মানুষ
বিস্মিত হোক। কারো ইচ্ছা থাকে মানুষ তার ইবাদত দেখে তাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করুক। কারো
উদ্দেশ্য থাকে ইবাদতের কারণে মানুষের ভেতর তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাক। প্রদর্শনের
উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, তার
পরিণতি ভয়াবহ। এমন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পরকালে এসব ইবাদত ব্যক্তির জন্য
বোঝা ও আক্ষেপের কারণ হবে।
মুসলিম শরিফে বর্ণিত
এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের দিন লোক-দেখানো আমলকারীদের বিচারের একটি
চিত্র তুলে ধরেছেন, যাতে
একজন শহীদ (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী), একজন কোরআনের শিক্ষক ও একজন দানবীরের আলোচনা এসেছে। যারা
খ্যাতি ও সুনামের মোহে জিহাদ, কোরআন শিক্ষা ও দান করত। তারা তাদের আমলের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত
হয়। আল্লাহ তাদের বলেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ পৃথিবীতে তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের কোনো প্রাপ্য নেই।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস
: ৩৫২৭)
অন্য আয়াতে যারা
লোক-দেখানো ইবাদত করে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে,
فويل للمصلين
اللذين هم عن صلواتهم ساهون اللذين هم يراؤن
‘ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য,
যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন,
যারা প্রদর্শন,
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া থেকে বিরত
থাকে।’ (সুরা : মাউন, আয়াত
: ৪-৭)
উল্লিখিত আয়াত
ও হাদিসের আলোকে ইসলামী জ্ঞানতাপসরা রিয়াকে কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) ও হারাম বলেছেন। আল্লামা
ইবনে কায়্যিম (রা.) কবিরা গুনাহের তালিকার প্রথমে রিয়ার আলোচনা করেছেন। ইমাম গাজ্জালি
(রহ.) বলেছেন, ‘জেনে রাখো, নিশ্চয়
প্রদর্শনপ্রিয়তা হারাম। প্রদর্শনকারী আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। আয়াত,
হাদিস ও পূর্ববর্তী আলেমদের বক্তব্য দ্বারা
তা প্রমাণিত।’ (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ২/৪৮০)
বান্দার আমলে রিয়া
যদি ইচ্ছাকৃত হয়, তবে
তা যত গৌণই হোক—সে আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘আমি শরিককারীদের শরিক থেকে
অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি কোনো আমল করল এবং তাতে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করল,
আমি তাকে ও যাকে সে শরিক করল তাকে প্রত্যাখ্যান
করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস
: ৩৫২৮)
তবে রিয়া যদি অনিচ্ছায়
হয়, বান্দা
তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে এবং এ জন্য অনুতপ্ত হয়,
তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো,
এমন ইবাদত আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত
হবে না। ব্যক্তি ইবাদতের দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে তার প্রতিদান কী হবে,
তা আল্লাহই ভালো জানেন।
★★★রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা থেকে আত্মরক্ষার জন্য উলামায়ে কেরামগন
কয়েকটি প্রচেষ্টার কথা বলেছেন,তা হলো—
১. ইবাদতের সময় আল্লাহর অস্তিত্বের স্মরণ করা। এটা
চিন্তা করা যে আল্লাহ আমার মনের খবর জানেন; আমি কেন করছি, কী করছি সব তিনি দেখছেন। হাদিসে যেমন বর্ণিত হয়েছে
ان تعبد الله
كأنك تراه فإن لم تكن تراه فإنه يراك
, ‘তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কোরো যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তা সম্ভব না হয়,
তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ বুখারি,
হাদিস : ১)
২. রিয়ার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা। প্রদর্শন আল্লাহর
ক্রোধের কারণ, তা
সব সময় মনে রাখা।
৩. রিয়ামুক্ত আমলের পুরস্কারের কথা স্মরণ করা এবং
তা অর্জনের প্রত্যয় গ্রহণ করা।
৪. আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা যাওয়া,
যেন তিনি অনুগ্রহ করে আমলটি কবুল করে নেন.
৫. রিয়ামুক্ত আমলের তাওফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য
প্রার্থনা করা।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে যদি আপনি উপরে নছীহাগুলি
মেনে চলতে পারেন তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে রিয়া থেকে হেফাজত
করবেন ইনশাআল্লাহ।