কেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ. قُلْنَا بِأَىِّ شَىْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ.
আবূ মা‘মার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাববাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও ‘আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কী করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়। (বুখারী শরীফ ৭৪৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭২৪)
,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]
,
★জোরে কেরাআতের নামাজে তো জোরেই কেরাত পড়তে হবে।
যাতে অন্যরাও শুনতে পারে।
আস্তে আস্তে কিরাআতের নামাজে সুরা সমূহ,এবং রুকু সেজদার তাসবিহ,রাব্বানা লাকাল হামদ,তাকবীরে তাহরিমা ইত্যাদির ক্ষেত্রে জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।
নামাজের কিরাআত, তাসবিহ,তাকবির,দরুদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে কমপক্ষে জিহবা ও ঠোট নাড়িয়ে আস্তে আওয়াজে উচ্চারণ করতে হবে।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
وأما حد القراءة فنقول تصحيح الحروف أمر لا بد منه فإن صحح الحروف بلسانه ولم يسمع نفسه لا يجوز وبه أخذ عامة المشايخ هكذا في المحيط وهو المختار. هكذا في السراجية وهو الصحيح. هكذا في النقاية
নামাযের তেলাওয়াতের জন্য হরফ গুলি পরিস্কার ভাবে উচ্ছারিত হওয়া শর্ত। যদি হরফগুলি উচ্ছারিত হয়,তবে নিজে না শুনে তাহলে সেই তেলাওয়াত/কেরাত নামায বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না।এটাই সাধারণ মাশায়েখগণের সিদ্ধান্ত।(মুহিত)এবং এটাই পছন্দনীয় মত।এমনটাই সিরাজিয়্যাহ নামক কিতাবে বর্ণিত রয়েছে।এবং এটাই বিশুদ্ধতম মত।(নুকায়া) অর্থাৎ নিজে শুনতে হবে,নতুবা নামায বিশুদ্ধ হবে না।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৬৯)
বিস্তারিত জানুনঃ-
উচ্ছস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,এক কাতার পরের লোক কর্তৃক শ্রবণ করা।আর উচ্ছস্বরের সর্বোচ্ছ কোনো পরিমাণ নেই।তবে যাতে অন্যর কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এবং নিম্নস্বরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হল,জবান নাড়িয়ে হরফকে উচ্ছারণ করা।আর সর্বোচ্ছ পরিমাণ হল নিজ কর্ণ দ্বারা শ্রবণ করা বা পাশের জন কর্তৃক শ্রবণ করা।এরচেয়ে কম বেশ করা যাবে না।
এতটুকু আওয়াজ হতে হবে,যে ফ্যান বা অন্যান্য আওয়াজ যদি সেখানে না থাকতো,তাহলে আস্তে হলেও নিজ কান পর্যন্ত সেই আওয়াজ আসতো।
ইমাম সাহেব যদি জাহরী (উচ্চস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ আস্তে পড়েন তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে সিররী ( নিন্মস্বরে কেরাত বিশিষ্ট) নামাযে বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ কেরাত যদি এতটা উঁচু আওয়াজে পড়েন যে, পিছনে দাঁড়ানো লোকজনও শুনতে পায় তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
(রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৫)