জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
তওবার মাধ্যমে সকল গোনাহই ক্ষমা হয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣]
আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর,আর যদি মুখ ফেরাও,তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। [সূরা তওবা-৩]
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [বাকারা-২২২]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}
عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ»
হযরত ইবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহ করে নাই ব্যক্তির মত হয়ে যায়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেছেন যে,
سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول قال الله يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان فيك ولا أبالي يا ابن آدم لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني غفرت لك ولا أبالي يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا لأتيك بقرابها مغفرة
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন- হে আদম-সন্তান, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমার নিকট দোআ করতে থাকবে এবং আমার নিকট আশা করতে থাকবে তোমার যত গুণাহই হোক না কেন, আমি তা মাফ করে দিব এবং আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম-সন্তান, তোমার গুণাহ যদি আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত পৌছে যায়, অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও , তবে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। এবং আমি কারো পরোয়া করি না। হে আদম-সন্তান, তুমি যদি আমার নিকট এই পরিমাণ গুণাহ নিয়ে হাযির হও যা দ্বারা সমস্ত পৃথিবী ভরে যায়, কিন্তু তুমি আমার নিকট এই অবস্থায় আস যে, কউকেই আমার সাথে শরীক করো নাই, তবে আমি তোমাকে এই পরিমাণ ক্ষমা দান করব যা দ্বারা সমস্ত পৃথিবী ভরে যায়। (তিরমিযী শরীফ- হাদীস নং ৩৫৪০)
হযরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন –
إن العبد إذا اعترف ثم تاب تاب الله عليه
বান্দা নিজ কৃত গুনাহের কথা স্বীকার করে যদি তওবা করে তাহলে আল্লাহও তার তওবা কবুল করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
খাঁটিভাবে তাওবা করলে আল্লাহ্ তাআলা অতীতের ছোট বড় সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তবে বান্দার কোন হক নষ্ট করে থাকলে তাওবার পাশাপাশি তাকে তার হক তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বা মাফ চেয়ে নেওয়া জরুরী।
তাওবা তিনটি জিনিসের সমন্বয়-
(বান্দার হক থাকলে আগে সেটি আদায় করে আসতে হবে,বা তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আসতে হবে।)
এক. পূর্বের গোনাহের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। আর অপরের হক নষ্ট করলে তা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া বা মাফ চেয়ে নেওয়া।
দুই. ভবিষ্যতে গোনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা।
তিন. আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আর ইস্তেগফার হল শুধু মৌখিকভাবে আল্লাহ্ তাআলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
,
★তবে শুরুতে ২ রাকাত তাওবার নফল নামাজ পড়ার পর তওবা করা উত্তম,সুন্দর পদ্ধতি ,এটাই বুযুর্গানে দ্বীনদের বাতলিয়ে দেওয়া আমল।
আরো জানুনঃ
.
(০২)
পূর্ব জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করতে চাইলে করণীয়ঃ
উল্লেখিত নিয়মে তওবা করতে হবে।
,
তবে যদি কোনো বান্দার হক থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে আল্লাহ মাফ করবেননা।
এক্ষেত্রে মাফের দুই ছুরত।
,
বান্দার কোনো সম্পদের হক থাকলে সেটি আদায় করতে হবে,আদায় করার সামর্থ না রাখলে তার কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে নিয়ে আসতে হবে।
আর যদি অন্য প্রকারের হক হয়,যেমন গালি দেওয়া,গীবত করা,প্রহার করা,তাহলে তার কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে নিতে হবে।
যদি সে মারা যায়,তাহলে তার জন্য ইস্তেগফার করা,দোয়া করা।
(আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ১/২৮৯)