মুহতারাম মুফতি সাহেব,
আসসালামু আলাইকুম,
মূল প্রশ্নে যাবার আগে কিছু তথ্য জানানো প্রয়োজন বলে মনে হল ।
বিগত ৩০শে মে, ২০২৩ তারিখে হজ্বে তামাত্তু করার উদ্দেশ্যে আমি ঢাকা থেকে সৌদি আরবে রওয়ানা দিই । মক্কা মুকাররমায় এসে তামাত্তু হজ্বের অংশ হিসেবে উমরাহ পালন করি ।
এরপরে ৫ই জুন আমরা মদীনা মুনাওয়ারাহতে এসে যাতায়াতসহ ১০ দিন অতিবাহিত করি ।
পরবর্তীতে ১৪ই জুন আমরা মক্কা নগরীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই ।
এবার মীকাত পার হবার সময় ইহরাম করব কী করব না, উমরাহ আবার পালন করা আবশ্যক কী না - এ নিয়ে চিন্তায় পরে যাই । উল্লেখ্য, আমাদের গ্রুপে কোন মুফতি সাহেব নেই, নেই কোন আলেম । মাস'আলা জানার জন্য আল্লাহর রহমতে আপনাদের ওয়েবসাইটটিই সবচেয়ে সহজ উপায় এ মূহুর্তে । আপনাদেরকে করা আমার ঠিক আগের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে আপনারা উত্তর দিয়েছেন । হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আপনাদের যথেষ্ট সময় ব্যয় হয় বিধায় আপনাদের উত্তর যখন আমি পেয়েছি তার আগেই আমাকে মীকাত অতিক্রম করতে হয়েছে (অনুগ্রহ করে আমাকে ভুল বুঝবেন না, আপনাদের সহায়তার জন্য আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ) । এ কারণে আমি ঢাকাস্থ একজন খতীব সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি (তিনিও একজন মুফতি) ।
তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন যে, ইহরাম ব্যতীত মীকাত পার হলে দম ওয়াজিব হবে । (যেহেতু উমরাহ করতে হলে ইহরাম করতেই হবে)। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন যে, যেহেতু আরেকটি উমরাহ করার সুযোগ আছে আপনি উমরাহ করেন ।
ফলে, আমি জুল হুলায়ফা-তে এসে নফল উমরাহ এর নিয়্যাত করে ইহরাম অবস্থায় প্রবেশ করি । (গ্রুপের অন্য সবাই আগে থেকেই উমরাহ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন)।
আমার এ নফল উমরাহ করতে এসে কতগুলো অবস্থার সম্মুখীন হই যার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো নিচে দেয়া হল:
১। আমার ইহরামের কাপড় হারিয়ে যাবার কারণে মদীনা মুনাওয়ারা থেকে নতুন করে যে কাপড় কিনেছিলাম তার বহর/ পানা এত বেশি ছিল যে ইহরামের উপরের চাদরটি সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছিল । তো চাদর অংশটিকে বারবার ঠিক করতে গিয়ে চাদরের একটা অংশ দিয়ে মাথা ঢাকা পড়ে । এভাবে (আধা ঘন্টার মধ্যে) মোট তিনবার ঘটেছে এবং তিনবারই অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটেছে এবং তিনবার মাথা ঢাকা পড়ার মোট সময়কাল ১৫ সেকেন্ডেরও কম হবে ।
এখন আমার উপরে কোন সাদাকাহ/ কাফফারা/ দম কিছু আবশ্যক হয়েছে কী না?
২। আমার দাতে দাত দিয়ে চাপ দেয়ার / খুটখুট করার বদ অভ্যাস নেই । কিন্তু, ঐ দিন ইহরাম অবস্থায় কী যে হল দুই চোয়াল একসাথে করে বিনা কারণেই কেমন যেন খুটখুট শব্দ করছিলাম । সমস্যাটা হল, দুই চোয়ালের দাতের ফাকে পড়ে ঠোঁটের ভেজা অংশ থেকে মনে হল যে সামান্য একটু অংশ ছিড়ে উঠেছে । ছিড়ে উঠা অংশটি সুজির একটা দানার মত বা তার থেকেও হয়ত কম হবে ।
এরকম হবার কারণে এখন আমার উপরে কোন সাদাকাহ/ কাফফারা/ দম কিছু আবশ্যক হয়েছে কী না?
৩। মক্কা শরীফে আমরা যে হোটেলে আছি সেখানে রুমের মধ্যে রান্না করার একটা মৌন সম্মতি আছে । তো আমার খুব কাছের একজন আত্মীয় (তিনিও মুহরিম ছিলেন) কাঁচা পিঁয়াজ দিয়ে ডালের ভর্তা করেন । সফরে সারাদিন পানি ব্যতীত আর কিছু না খাওয়ার কারণে বলা যায় ভালই খিদে পেয়েছিল আর ভর্তার মধ্যে যে কাঁচা পিঁয়াজ থাকতে পারে তা মাথাতেই আসেনি । খাবার চিবানোর সময় টের পাই ৷ যতটুকু পেরেছি পিঁয়াজ বেছে খেয়েছি কিন্তু তারপরও কাঁচা পিঁয়াজ খেতে হয়েছে কারণ কিছু কিছু পিঁয়াজ কুচি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল । আমার মাথায় প্রশ্ন এলো, ইহরাম অবস্থায় কাঁচা পিঁয়াজ খাওয়া যাবে কী না? পিঁয়াজ তো সুগন্ধি না বরং দুর্গন্ধ । ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধি মাখা যায় না - এতো জানা আছে । কিন্তু, পিঁয়াজের দুর্গন্ধের ক্ষেত্রে কী হবে?
এভাবে পিঁয়াজ খাবার কারণে আমার উপরে দম বা সাদাকা কিছু কী আবশ্যক হয়েছে?
৪। আমার কাছে বেশ কিছু কিশমিশ আছে । ধুয়ে শুকিয়ে সাথে এনেছি যেন হাজ্বের দিনগুলোতে প্রয়োজনে খেতে পারি । কিশমিশের যেটুকু ঘ্রাণের মত পাওয়া যায় (খাবার সময়ে) তাতে কী ইহরামের ক্ষতি হবে?
৫। আমার আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরি -
হজ্বের ফরজ তাওয়াফের সাথে যেহেতু সাঈ আছে, এক্ষেত্রে তাওয়াফের মধ্যে রমল আর ইজতিবা -ও কী আছে?
১০ ই জিলহজ্ব এ কুরবানির পরে মাথা মুণ্ডন করে হালাল হবার পরে কেউ যদি ইহরামের কাপড় না পরে সাধারণ পোশাক পরেই ফরজ তাওয়াফ করেন তাহলে ইজতিবা না করলে কী সমস্যা হবে?
না কী ইজতিবা করার জন্য হালাল হবার পরেও ইহরামের কাপড় পরিধান করতে হবে ইজতিবা করার সুবিধার্থে?
৬। এ প্রশ্নটি পবিত্রতা সংক্রান্ত:
অনেক সময় দীর্ঘ সফরের পরে অথবা খুব বেশি পরিশ্রম করলে অথবা ভারী কোন কিছুকে ওঠা নামা করালে অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য হলে আমার প্রশ্রাব করার সময়ে প্রশ্রাব বের হবার আগে সাদা রঙের এক ফোঁটা বা কখনো দুই ফোঁটা তরল বের হয় । বর্তমানে সমস্যাটি কোষ্ঠকাঠিন্য আর সফরের সাথেই মূলত জড়িত বলা যায় ।
=> এ সাদা তরলটি (যখন বের হয়) প্রশ্রাবের আগেই বের হয়, প্রশ্রাবের পরে বের হয় না । ঘোলাটে সাদা রঙের তরল বলা যেতে পারে । পানিতে আটা ঘন করে মেশালে যেরকম রঙ হয় অনেকটা সেরকম ।
=> লিঙ্গ অনেকক্ষণ উত্তেজিত থাকার পরেও প্রশ্রাবের সময়ে যেমন এটা বের হতে দেখা গেছে তেমনি লিঙ্গ উত্তেজিত না থাকলেও প্রশ্রাবের সময়ে সাদা তরলটি বের হতে দেখা গেছে ।
=> এ তরলের কোন রকম গন্ধ আছে কী না তা আমি কখনো বুঝতে পারিনি ।
=> এ তরলটি বের হবার সময়ে কোন রকম আনন্দ অনুভূতি হয় না । তবে মুত্রনালিতে এক রকম সামান্য চাপ অনুভুত হয়, মনে হয় যেন ঘন কিছু একটা বের হবে এখন ।
এরকম হলে আমি চিন্তায় পড়ে যাই যে আমার উপরে গোসল ফর‍য হয়েছে কী না? কারণ, তরলটি বীর্য না কী অন্য কিছু তা আমি বুঝি না ।
এই তরলের ক্ষেত্রে শরীয়াতের হুকুম কী হবে আমার উপরে?
জাযাকুমুল্লাহু খইরান ।