عشر শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো جزء واحد من العشرة বা এক দশমাংশ। (হাশিয়ায়ে হিদায়া–আব্দুল হাই লাখনবি রহ.: ২/৫৭০)
পরিভাষায় عشر বলা হয় – احد اجزاء العشرة او نصفه يؤخذ من الارض العشرية (قواعد الفقه لعميم الاحسان/379)
সহজ ভাষায় ওশরী জমিনে উৎপাদিত শস্যের এক দশমাংস বা তার অর্ধেক গ্রহণ করাকে عشر বলা হয়।
যদি আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক পানি দ্বারা জমি আবাদ করে, তাহলে এক দশমাংশ, আর যদি নিজস্ব পানি দ্বারা আবাদ করে, তাহলে নিসফে উশর তথা বিশ ভাগের একভাগ দান করবে।
খরচ বাদ দিয়ে না খরচসহ দশমাংশ দিতে হবে?
ফসল করতে যা খরচ হয়েছে সেসব খরচ বাদ দিয়ে হিসেব করবে না। বরং জমিতে যতটুকু ফসল হয়েছে, যতটুকু উৎপাদিত হয়েছে তার মাঝে এক দশমাংশ দান করে দিতে হবে। এটাই বিধান। কর্মচারীর বেতন,গাড়ি ভাড়া ইত্যাদির জন্য ফসলের মূল্য বা ফসল বাদ দিয়ে দশমাংশ গণনা করবে না। বরং যা’ই উৎপন্ন হল এর মধ্য থেকে এক দশমাংশ বা বিশ ভাগের একভাগ দান করবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قوله تعالى { وآتوا حقه يوم حصاده } قال عامة أهل التأويل : إن الحق المذكور هو العشر ، أو نصف العشر (بدائع الصنائع:2/169)
অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, “কর্তনের দিবসেই এর হক আদায় করে দাও। আম ভাবে ফুকাহায়ে কেরাম আয়াতের দ্বারা উদ্দেশ্য عشر বা نصف عشر বলেছেন।
و قال ابن عباس حقه الزكاة المفروضة و قال مرة العشر و نصف العشر (المغنى لابن قدامة 2/547
অর্থাৎ, ইবনে আব্বাস রা. বলেন, হকটি হলো ফরজ যাকাত। আবার বলেন, ওশর ও নিসফে ওশর ।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن سالم بن عبد الله عن أبيه رضي الله عنه : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( فيما سقت السماء والعيون أو كان عثريا العشر وما سقي بالنضح نصف العشر ) (صحيح البخارى : كتاب الزكوة : باب العشر فيما يسقي من ماء السماء وبالماء الجاري : 1/201 برقم : 1453)
অর্থাৎ,আব্দুল্লাহ বিন ওমর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী স. বলেন, আসমানী বা নদীনালা অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক পানি সিঞ্চনে যা উৎপাদিত হয় তাতে ওশর আসবে। আর যা কৃত্রিম উপায়ের পানি দ্বারা সিঞ্চিত হবে তাতে অর্ধেক ওশর লাযেম হবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৬/১৬১,১৭৪,১৬৫,১৭৭)
এবং দারুল উলুম দেওবন্দ এর 66976 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে আমাদের দেশ উশরিও নয়,খারাজিও নয়।
এই জন্য এদেশের শষ্যাদির উপর ওশর অথবা ওশরের অর্ধেক কোনোটাই ওয়াজিব নয়।
কেহ যদি সন্তুষ্টি চিত্তে অংশ নির্দিষ্ট করা ব্যতিত কিছু দেয়,তাহলে কোনো ক্ষতি নেই।
অবশ্য কিছু বা পুরো শষ্য বিক্রয়ের পর নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলে যাকাত দিতে হবে।
আপনি যদি নিজ থেকেই কিছু ফসল/আম দান করতে চান,বা সমমুল্যের কোনো বস্তু দান করতে চান,সেটি আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার।
তবে আগে থেকে আপনার উপর যাকাত ফরজ থাকলে এই ফসল/আম বিক্রয়ের টাকার উপরেও যাকাত আসবে।
আগে থেকে আপনার উপর যাকাত ফরজ না হলে এই ফসল/আম বিক্রয়ের পর নেসাব পরিমান সম্পদ হলে এক বছর অতিক্রম করার পর যাকাত দিতে হবে।