আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
702 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আস সালামু আলাইকুম, আমি ইসলামী দ্বীন অনুযায়ী চলার চেষ্টা করেছি আলহামদুলিল্লাহ। প্রায় সকল প্রকার হারাম কাজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি কিন্তু একটু বিষয় বার বার ছাড়তে চেয়েও পারছি না। আমার ইসলাম সম্পর্কে জানার আগে একটি সম্পর্ক ছিলো যা এখনো বার বার চেষ্টা করে কিছু দিনপর পর আবার ফিরে চলে আসি। বার বার তওবা করেও থাকতে পারি না। তাই আমি চাচ্ছিলাম বিয়ে করে নিতে কিন্তু মেয়ের পরিবার আমাদের বিয়েতে সম্মত না। তাই আমরা চাই হারাম থেকে বেঁচে থাকতে বিয়ে করে নিতে। আমাদের বিয়ে কি জায়েজ হবে? আমরা যেহেতু বার বার সকল প্রকার যোগাযোগ চ্ছিন্ন করেও আবার ফিরে আসছি এই ক্ষেত্রে আমাদের কি করণীয়?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
edited by
বিসমিহি তা'আলা

বিবাহঃ সন্তানের পছন্দ/অপছন্দ এবং মাতা-পিতার বিধিনিষেধ


আলহামদুলিল্লাহ!

(এক)

মাতা-পিতা র বাধ্যতা ও অনুসরণ করা।

এ সম্পর্কে "চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ  "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়"(২৮/৩২৫) বিস্তারিত ফেকহী আলোচনা এভাবে বর্ণিত রয়েছে যে......

طاعة الوالدين:

٩ - طاعة الوالدين والإحسان إليهما فرض على الولد، قال تعالى
মাতা-পিতার বিধিনিষেধের বাধ্যতা ও অনুসরণ এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা সন্তানের উপর ফরয তথা ওয়াজিব।

এ সসম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻗَﻀَﻰ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻻَّ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﺍْ ﺇِﻻَّ ﺇِﻳَّﺎﻩُ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﺇِﻣَّﺎ ﻳَﺒْﻠُﻐَﻦَّ ﻋِﻨﺪَﻙَ ﺍﻟْﻜِﺒَﺮَ ﺃَﺣَﺪُﻫُﻤَﺎ ﺃَﻭْ ﻛِﻼَﻫُﻤَﺎ ﻓَﻼَ ﺗَﻘُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺂ ﺃُﻑٍّ ﻭَﻻَ ﺗَﻨْﻬَﺮْﻫُﻤَﺎ ﻭَﻗُﻞ ﻟَّﻬُﻤَﺎ ﻗَﻮْﻻً ﻛَﺮِﻳﻤًﺎ

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।

ﻭَﺍﺧْﻔِﺾْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺟَﻨَﺎﺡَ ﺍﻟﺬُّﻝِّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﻗُﻞ ﺭَّﺏِّ ﺍﺭْﺣَﻤْﻬُﻤَﺎ ﻛَﻤَﺎ ﺭَﺑَّﻴَﺎﻧِﻲ ﺻَﻐِﻴﺮًﺍ

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।

সূরা বনি ইসরাঈল-২৩-২৪

ইমাম কুরতুবী রাহ বলেন,

قال القرطبي: أمر الله سبحانه بعبادته وتوحيده وجعل بر الوالدين مقرونا بذلك كما قرن شكرهما بشكره فقال:

আল্লাহ তা'আলা বান্দাদেরকে তার ইবাদত এবং একত্বতাবাদ প্রকাশের আদেশ দিচ্ছেন।এবং সাথে সাথে মাতা-পিতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিচ্ছেন।

যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য এক আয়াতে উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সাথে সাথে মাতা-পিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিচ্ছেন।

যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

ﻭَﻗَﻀَﻰ ﺭَﺑُّﻚَ ﺃَﻻَّ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﺍْ ﺇِﻻَّ ﺇِﻳَّﺎﻩُ ﻭَﺑِﺎﻟْﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর।

সূরা বনি ইসরাঈল-২৩

ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺣَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻭَﻫْﻨًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻭَﻫْﻦٍ ﻭَﻓِﺼَﺎﻟُﻪُ ﻓِﻲ ﻋَﺎﻣَﻴْﻦِ ﺃَﻥِ ﺍﺷْﻜُﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।

সূরা লুকমান-১৪

বিশিষ্ট তাফসীরবিদ জাস্সাস রাহ বলেন,

وقضى ربك معناه:أمر ربك، وأمر بالوالدين إحسانا، وقيل معناه: وأوصى بالوالدين إحسانا، والمعنى واحد، لأن الوصية أمر، وقد أوصى الله تعالى ببر الوالدين والإحسان إليهما في غير موضع من كتابه وقال {ووصينا الإنسان بوالديه إحسانا}
সূরা বনী ইসরাঈল, ২৩ নং আয়াতে বর্ণিত وقضى ربك এর অর্থ হলো, আপনার রব নির্দেশ দিচ্ছেন।কেউ কেউ বলেন,আল্লাহ মাতা-পিতার সাথে অনুগ্রহ প্রকাশের ওসিয়ত করছেন।অর্থ একই।তথা এখানে ওসিয়ত নির্দেশ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।

আল্লাহ তা'আলা অসংখ্য স্থানে মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন-

ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺇِﺣْﺴَﺎﻧًﺎ ﺣَﻤَﻠَﺘْﻪُ ﺃُﻣُّﻪُ ﻛُﺮْﻫًﺎ ﻭَﻭَﺿَﻌَﺘْﻪُ ﻛُﺮْﻫًﺎ ﻭَﺣَﻤْﻠُﻪُ ﻭَﻓِﺼَﺎﻟُﻪُ ﺛَﻠَﺎﺛُﻮﻥَ ﺷَﻬْﺮًﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺇِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻎَ ﺃَﺷُﺪَّﻩُ ﻭَﺑَﻠَﻎَ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﺳَﻨَﺔً ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﺃَﻭْﺯِﻋْﻨِﻲ ﺃَﻥْ ﺃَﺷْﻜُﺮَ ﻧِﻌْﻤَﺘَﻚَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﻋَﻠَﻰ ﻭَﺍﻟِﺪَﻱَّ ﻭَﺃَﻥْ ﺃَﻋْﻤَﻞَ ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﺗَﺮْﺿَﺎﻩُ ﻭَﺃَﺻْﻠِﺢْ ﻟِﻲ ﻓِﻲ ﺫُﺭِّﻳَّﺘِﻲ ﺇِﻧِّﻲ ﺗُﺒْﺖُ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻭَﺇِﻧِّﻲ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থেøর বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এরূপ ভাগ্য দান কর, যাতে আমি তোমার নেয়ামতের শোকর করি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমার প্রতি তওবা করলাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম।(সূরা আহক্বাফ-১৫)

বিশিষ্ট তাফসীর ও ইতিহাসবিদ ইবনুল আরাবী রাহ বলেন,

لا يجوز أن يكون معنى قضى هاهنا إلا أمر (١) .

وعن أبي بكرة رضي الله تعالى عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ألا أنبئكم بأكبر الكبائر؟ قلنا: بلى يا رسول الله، قال: الإشراك بالله وعقوق الوالدين (٢) .

এখানে قضى অর্থ হচ্ছে নির্দেশ প্রদাণ করা।

হযরত আবু বাকরাহ রাযি বলেন,রাসূলুল্লাহ বলেছেন,আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ সম্পর্কে অবগত করবো ?আমরা বললাম জ্বি হ্যা,অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ সাঃ! তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা,এবং মাতা-পিতার সাথে অবাধ্যতা করা।(ফাতহুল বারী-১০/৪০৫)

হিশাম ইবনে উরওয়া রাহ, উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,

{واخفض لهما جناح الذل من الرحمة} : لا تمنعهما شيئا يريدانه

সূরা বনী ইসরাঈলের ২৪ নং আয়াত ﻭَﺍﺧْﻔِﺾْ ﻟَﻬُﻤَﺎ ﺟَﻨَﺎﺡَ ﺍﻟﺬُّﻝِّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ এর অর্থ হল,

মাতা-পিতা যা চায় বা যে জিনিষের ইচ্ছাপোষন করে সে বিষয়ে তুমি বিরোধিতা করো না।

মাতা-পিতার বাধ্যতা বা অনুসরণ করা কতক্ষণ পর্যন্ত ওয়াজিব ?

وحق الطاعة للوالدين ليس مقصورا على الوالدين المسلمين، بل هو مكفول - أيضا - للوالدين المشركين، قال الجصاص في قوله تعالى {أن اشكر لي ولوالديك إلي المصير وإن جاهداك على أن تشرك بي ما ليس لك به علم فلا تطعهما وصاحبهما في الدنيا معروفا} (٤) . أمر بمصاحبة الوالدين المشركين بالمعروف مع النهي عن طاعتهما في الشرك، لأنه لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق (٥)
মাতা-পিতার আদেশের অনুসরণ শুধুমাত্র মাতা-পিতা মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে নয় বরং মাতা-পিতা মুশরিক হলেও তাদের অনুসরণ করতে হবে।এটা সন্তানের উপর মাতা-পিতার হক্ব।

ইমাম জাস্সাস রাহ সূরা লুকমানের ১৪ নং আয়াত

ﺃَﻥِ ﺍﺷْﻜُﺮْ ﻟِﻲ ﻭَﻟِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻚَ ﺇِﻟَﻲَّ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮ--الخ

এর ব্যখ্যা করতে যেয়ে বলেন,অত্র আয়াতে আল্লাহ তা'আলা কুফরিতে অনুসরণ ব্যতীত কাফির মাতা-পিতার অনুসরণ করতে ও নির্দেশ প্রদাণ করছেন।কেননা হাদীসে এসেছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো বশ্যতা স্বীকার করা যাবে না।

ইবনে হজর রাহ বলেন-

ﻭَﻭَﺻَّﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﺑِﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻪِ ﺣُﺴْﻨًﺎ ﻭَﺇِﻥ ﺟَﺎﻫَﺪَﺍﻙَ ﻟِﺘُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻲ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻟَﻚَ ﺑِﻪِ ﻋِﻠْﻢٌ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﻄِﻌْﻬُﻤَﺎ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣَﺮْﺟِﻌُﻜُﻢْ ﻓَﺄُﻧَﺒِّﺌُﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।

সূরা আনকাবুত-০৮

اقتضت الآية الوصية بالوالدين والأمر بطاعتهما ولو كانا كافرين، إلا إذا أمرا بالشرك فتجب معصيتهما في ذلك
উক্ত আয়াতে মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দেয়া হয়েছে।তারা কাফির হলেও তারা এর হক্বদার হবে।তবে যদি তারা শিরিকের আদেশ দেয় তবে এমতাবস্থায় তাদের বাধ্যতা ও অনুসরণ করা ওয়াজিব নয়।বরং এক্ষেত্রে অবাধ্যতাই ওয়াজিব।

 "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়"(২৮/৩২৫)

(দুই)

সন্তানের  বিবাহের ক্ষেত্রে মাতা-পিতা কর্তৃক বিধিনিষেধ কয়েকভাবে হতে পারে।

(১)সন্তান কর্তৃক জীবন সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়াই মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞা।
(২)সন্তান কর্তৃক জীবন সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শরয়ী কারণ বশত মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞা।

যেমন পাত্র/পাত্রী সম্পর্কে খবরাখবর অাশাব্যঞ্জক না হওয়া।অথবা পাত্র/পাত্রী মুসলমান না হওয়া।(কিতাবিদের সাথে বিয়ে করা যদিও মূলত জায়েয তবে বিভিন্ন হেকমতের ধরুণ তা নিরুৎসাহিত)

.

(৩)সন্তান কর্তৃক জীবন সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে

মাতা-পিতা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা শরয়ী কোনো কারণ নয় বরং দুনিয়াবি বা ব্যক্তিগত কোনো কারণে।যেমনঃ সুন্দর্য কম হওয়া,পেশা বা বংশ নিম্ন পর্যায়ের হওয়া।এবং পরিস্থিতিও এমন যে উক্ত জীবনসঙ্গীর প্রতি সন্তানের মন ও তেমন ধাবিত হয়নি।অর্থাৎ তাকে তাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে না পেলেও সন্তানের আপাতত কোনো কষ্ট হবে না, এবং কোনোপ্রকার ক্ষতির সম্মুখীন ও হতে হবে না।

(৪)তৃতীয় প্রকারের মতই।তবে এখানে নুতন একটি বিষয় রয়েছে,সেটি হলো,পরিস্থিতি এমন পর্যায়ের পৌছে যাওয় যে,উক্ত বাছাইকৃত জীবন সঙ্গীর প্রতি মন এমনভাবে ধাবিত হয়ে গিয়েছে যে,এখন যদি ঐ  বাছাইকৃত জীবনসঙ্গীকে  বিয়ে না করা হয়, তাহলে নিজের ব্যাপারে ফিতনার আশংকা রয়েছে।শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

 .

(৫)মাতা-পিতা কর্তৃক পছন্দনীয় কোনো পাত্রপাত্রী সম্পর্কে সন্তানের উপর জোর প্রয়োগ করা।যদিও সন্তানের উপর উক্ত জবরদস্তি  রিশতা দ্বীনদার এবং সুন্দর হওয়ার কারণেই হোক না কেন?

এই সমস্ত পদ্ধতির হুকুম সম্পর্কে আমরা বলতে পারি।

দ্বিতীয় এ তৃতীয় প্রকারের হুকুম নিম্নরূপঃ

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সূরতে সন্তানের জন্য মাতা-পিতা আদেশকে মান্য করা ওয়াজিব।বিশেষকরে দ্বিতীয় সূরতে।কেননা এমতাবস্থায় সন্তানকে এমন দিকে অগ্রসর হতে হচ্ছে যা সন্তানের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ হতে পারে।যার প্রভাব এক সময় পরিবারের সবার উপর পড়তে পারে।তৃতীয় সূরতে বিবাহ করা মুবাহ অন্যদিকে মাতা-পিতা র অনুসরণ ওয়াজিব।সুতরাং ওয়াজিব হুকুমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

প্রথম প্রকার, চতুর্থ প্রকার এবং পঞ্চম প্রকারের হুকুমঃ

প্রথম ও চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রকার পদ্ধতিতে মাতা-পিতার বিধিনিষেধের অনুসরণ আপাতদৃষ্টিতে ওয়াজিব বলে মনে হচ্ছে না। জীবন সঙ্গী নির্বাচন সন্তানের একান্ত হক্ব।এটা মাতা-পিতা কোনো হক্বেরর আওতাধীন নয়। এ বিষয়ের কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাতা-পিতার অনুপ্রবেশ কে শরীয়ত অনুমোদন প্রদান করে থাকে।তবে সর্বক্ষেত্রে নয়।সুতরাং সন্তান কর্তৃক এমন কোনো জীবন সঙ্গী বাচাই করা যার ব্যাপারে দ্বীন-ইসলাম নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্তাপিত হয় না,সে পাত্রপাত্রী সম্পর্কে মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞার অনুসরণ সন্তানের উপর ওয়াজিব নয়।

তাছাড়া সন্তানের মন-মানষিকতা কারো জন্য যদি ব্যাকুল হয়ে যায়।তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে না পেলে নিজের জীবনের উপর কোনো ফিতনা বা ক্ষতির আশংকা থাকে, তাহলে এমতাবস্থায় মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞার অনুসরণ সন্তানের উপর কখনো ওয়াজিব হবে না।কেননা এমতাবস্থায় সন্তানের জীবনে ফিৎনা-ফাসাদ,দুঃখ কষ্ট চলে আসবে।অথচ শরীয়তের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের দুঃখ কষ্টকে দূর করা।

বিশেষ করে পঞ্চম পদ্ধতি -অর্থাৎ মাতা-পিতা কর্তৃক সন্তানের জন্য কোনো জীবনসঙ্গী নির্ধারণ করে দেয়া।এটাও এমন নয় যাতে সন্তানের জন্য মাতা-পিতার অনুসরণ ওয়াজিব। বরং ইহা খাদ্য এবং পানীয়র মত।যেভাবে সন্তান তার পছন্দানুযায়ী খাদ্য এবং পানীয়কে নির্বাচন করতে পারে।এ ব্যাপারে মাতা-পিতা কর্তৃক কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হতে পারে না,ঠিকতেমনি জীবনসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও মাতা-পিতা কর্তৃক কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হতে পারে না।

ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলী রাহ বলেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﻔﻠﺢ ﺍﻟﺤﻨﺒﻠﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ :

" ﻟﻴﺲ ﻟﻠﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ﺇﻟﺰﺍﻡ ﺍﻟﻮﻟﺪ ﺑﻨﻜﺎﺡ ﻣﻦ ﻻ ﻳﺮﻳﺪ ، ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺗﻘﻲ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ( ﺃﻱ : ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ) : ﺇﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻷﺣﺪ ﺍﻷﺑﻮﻳﻦ ﺃﻥ ﻳﻠﺰﻡ ﺍﻟﻮﻟﺪ ﺑﻨﻜﺎﺡ ﻣﻦ ﻻ ﻳﺮﻳﺪ ، ﻭﺇﻧﻪ ﺇﺫﺍ ﺍﻣﺘﻨﻊ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﺎﻗﺎ ، ﻭﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻷﺣﺪ ﺃﻥ ﻳﻠﺰﻣﻪ ﺑﺄﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﻨﻔﺮ ﻣﻨﻪ ﻣﻊ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻋﻠﻰ ﺃﻛﻞ ﻣﺎ ﺗﺸﺘﻬﻴﻪ ﻧﻔﺴﻪ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﻜﺎﺡ ﻛﺬﻟﻚ ، ﻭﺃﻭﻟﻰ ، ﻓﺈﻥ ﺃَﻛْﻞَ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻩ ﻣﺮﺍﺭﺓ ﺳﺎﻋﺔ ، ﻭﻋِﺸْﺮﺓ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﺰﻭﺟﻴﻦ ﻋﻠﻰ ﻃﻮﻝ ، ﺗﺆﺫﻱ ﺻﺎﺣﺒﻪ ، ﻭﻻ ﻳﻤﻜﻨﻪ ﻓﺮﺍﻗﻪ ."

মাতা-পিতা অধিকারে নেই যে তারা সন্তানকে এমন বিয়ের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করবে যাকে সন্তান জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করতে চায় না।শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ, বলেন,

নিশ্চয় সন্তানের পছন্দ নয় এমন কাউকে বিয়ের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা সন্তানের উপর মাতা-পিতা র হক্বের আওতাধীন নয়।এ ব্যাপারে সন্তান যখন মাতা-পিতা অবাধ্যতা করবে তখন সন্তান মাতা-পিতার অবাধ্যতাকারী হিসেবে গণ্য হবে না।

যেমন কারো পছন্দনীয় কিছু অবশিষ্ট থাকা সত্তেও অপছন্দনীয় কিছু ভক্ষণ করার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।বিবাহের বিষয়টাও ঠিক এমনি।এমনকি এ বিষয়টা অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে স্পর্শকাতর ও স্থায়ী হওয়ার ধরুণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অপছন্দনীয় জিনিষের ভক্ষণ কিছু সময়ের জন্য।অন্যদিকে অপছন্দনীয় জীবনসঙ্গী লম্বা সময়ের জন্য। যা উক্ত সন্তারের জন্য বেশ কষ্টদায়ক হবে।কেননা সে পৃথক হতে পারবে না।এবং পৃথক হতে হলেও তাকে অনেক খেসারত তাকে দিতে হবে।

(আল আদাবুশ শরইয়্যাহ-১/৪৪৭)

বিঃদ্রঃ

যে সকল স্থানে সন্তানের জন্য মাতা-পিতার নিষেধাজ্ঞা সত্তেও বিয়ে করা জায়েয বলা হয়েছে।

এবং যেসব ক্ষেত্রে মাতা-পিতার বিধিনিষেধর অনুসরণ ওয়াজিব নয় বলে ফাতাওয়া প্রদাণ করা হয়েছে।

সেখানে প্রথমে সন্তান মাতা-পিতা কে সন্তুষ্ট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।মাতা-পিতা কে সন্তুষ্ট করার জন্য পরিবারের এমন লোকদের দ্বারস্থ হবে যার কথা মাতা-পিতা সাধারণত ফেলে দিতে পারেন না।

সবরকম চেষ্টা করার পরও মাতা-পিতা সন্তুষ্ট না হলে সে তার পছন্দমত মাতা-পিতার অগোচরে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে নিতে পারবে।

এ ব্যাপারে সে মাতা-পিতা বদ-দু'আর কোনো তোয়াক্কা করবে না।কেননা মাতা-পিতা এমন দু'আ,  গোনাহ সম্বলিত দু'আ র সমপর্যায়ের, যা আল্লাহ তা'আলা কখনো কবুল করবেন না।

তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা।

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...