আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
126 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (24 points)
edited by
বোন ভাইয়ের নিকট চার ভরি স্বর্ণ আমানত হিসেবে জমা রেখেছিল। সে ভাই অন্য আপন ভাইয়ের বিপদে সাহায্য করার জন্য সেই চার ভরি স্বর্ণ বিক্রি করে দিয়েছিল। বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ভাই বোনকে দুই ভরি স্বর্ণ ক্রয় করে পরিশোধ করেছিল কিন্তু বাকি দুই ভরি স্বর্ণ পরিশোধ করে নাই। এটা ৩৫ বছর আগের ঘটনা। ভাই মারা গেছে ২২ বছর হলো। সে ঘটনা ভাইয়ের ছেলে/ওয়ারিশরা জানত না। ৩৫ বছর পর জানতে পারছে।

বোন এখনো বেঁচে আছে। বোন ভাই বেঁচে থাকাকালীন সেই দুই ভরি স্বর্ণ কখনো ভাইয়ের কাছ থেকে দাবি করে নাই। সে যাই হোক, বর্তমানে বোন মৃত ভাইয়ের ওয়ারিশ অর্থাৎ পুত্রদের কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এসে বর্তমান মূল্যের দুই ভরি স্বর্ণ দাবি করছে। প্রশ্ন হল (১) ভাইয়ের ছেলেরা তাদের ফুফুর দাবিকৃত ২ ভরি স্বর্ণ তাদের ফুফুকে দিতে শরিয়ত অনুযায়ী বাধ্য কিনা? (২) যদি দিতে হয় তবে ভাইয়ের জীবদ্দশায় এবং তৎপরবর্তী ভাইয়ের মৃত্যুর ২২ বছর পরেও কোনরূপ দাবি না করা সেই স্বর্ণ বর্তমানে ভাইয়ের ছেলেরা তাদের পিতার নাজাতের কথা চিন্তা করে শরীয়ত সম্মতভাবে তাদের ফুফুর বর্তমানে দাবিকৃত দুই ভরি স্বর্ণ কিভাবে পরিশোধ করবে? বর্তমান দরের স্বর্ণ কিনে? নাকি অতীতের দুই ভরি স্বর্ণের দামের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে?  (৩) ফুফুর প্রাপ্ত স্বর্ণ বা অর্থের উপর বিগত ৩৫ বছরে কি পরিমাণ যাকাত ধার্য হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
(মুসলমান তারা) যারা আমানতের হেফাজত করে, অঙ্গীকারসমূহ রক্ষা করে। সূরা মুমিনূন ২৩/৮

নবীজী তার অধিকাংশ ভাষণে বলতেন,
لَا إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ، وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ
শুনে রাখো! যার ভিতর আমানতদারিতার গুণ নেই, তার ভিতর যেন ঈমানও নেই, যার ভিতর ওয়াদা রক্ষার বালাই নেই, তার ভিতর ধর্মের কোনো বৈশিষ্ট্যই নেই! মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১২৩৮৩

অন্য একটি হাদীসে নবীজী এরশাদ করেন,
آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ
মোনাফেকের আলামত তিনটি, মিথ্যা বলা, আমানতের খেয়ানত করা ও ওয়াদা করে খেলাপ করা। সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এক্ষেত্রে উক্ত ২ ভরি স্বর্ণ ভাইয়ের উপর ঋন হিসেবে আছে।
তাই ভাইয়ের ছেলেরা মাইয়্যিতের (তাদের বাবার) রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে তাদের ফুফুর দাবিকৃত ২ ভরি স্বর্ণ তাদের ফুফুকে দিতে শরিয়ত অনুযায়ী বাধ্য।

এক্ষেত্রে মাইয়্যিতের (তাদের বাবার) রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দ্বারা যদি ২ ভরি স্বর্ণ ক্রয় করা সম্ভব না হয়,সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা তারা নিজেদের পক্ষ থেকে দিলে সেটি মাইয়্যিতের (তাদের বাবার) উপর ইহসান ও দয়া হবে।

মাইয়্যিতের সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে অতিরিক্ত টাকা তারা নিজেদের পক্ষ থেকে দেয়া তাদের উপর আবশ্যক নয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,
 
 يُوصِيكُمُ اللّهُ فِي أَوْلاَدِكُمْ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الأُنثَيَيْنِ فَإِن كُنَّ نِسَاء فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ وَلأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلأُمِّهِ الثُّلُثُ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلأُمِّهِ السُّدُسُ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ آبَآؤُكُمْ وَأَبناؤُكُمْ لاَ تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعاً فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيما حَكِيمًا
 
আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরা নিসা-১১)       

(০২)
এক্ষেত্রে বর্তমান দরের স্বর্ণ কিনে দিতে হবে।
হ্যাঁ যদি তাদের ফুফু অতীতের দুই ভরি স্বর্ণের দামের সমপরিমাণ অর্থের উপর সন্তুষ্ট হয়,সেক্ষেত্রে অতীতের দুই ভরি স্বর্ণের দামের সমপরিমাণ অর্থ দিলেও হবে।

(০৩)
যদি এই ৩৫ বছর ধরেই উক্ত দুই ভরি স্বর্ণ ও তার কাছে থাকা বাকি স্বর্ণ মিলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ হয়,অথবা তার কাছে স্বর্ণের পাশাপাশি কোনো দৈনন্দিন প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকা থাকে,সেক্ষেত্রে ৩৫ বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রত্যেক বছর তার স্বর্ণের আনুমানিক একটি বাজার মূল্য নির্ধারন করে যাকাত দিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...