জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
"ঈসালে ছওয়াব" এর আভিধানিক অর্থ হল সওয়াব পৌঁছানো। পরিভাষায় ঈসালে সওয়াব হল কোনো নেক আমল করে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করা।
,
শরীয়তের বিধান হলো কুরআন কারীম তেলাওয়াত করে বা ছদকাহ করে ঈসালে ছওয়াব করা যাবে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১/৩৭৫)
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]
عن معقل بن يسار، قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: اقرءوا يس على موتاكم.
মাকিল ইবনে ইয়াসার রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা তোমাদের মাইয়িতের জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩০০২; মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫৬৫)
عبد الرحمن بن العلاء بن اللجلاج، عن أبيه أنه قال لبنيه: إذا أدخلت القبر فضعوني في اللحد، وقولوا: بسم الله وعلى سنة رسول الله، وسنوا علي التراب سنا، واقرءوا عند رأسي أول البقرة وخاتمتها، فإني رأيت ابن عمر يستحب ذلك.
আবদুর রহমান ইবনে আলা ইবনে লাজলাজ থেকে বর্ণিত, তার পিতা সন্তানদেরকে বলেছেন, আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমাকে কবরে রাখবে এবং بسم الله وعلى سنة رسول الله বলে সুন্দরভাবে মাটি বিছিয়ে দিবে। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করবে। আমি ইবনে উমর রা.-কে তা পছন্দ করতে দেখেছি।
( -তারিখে ইবনে মায়ীন, দূরী সংকলিত ২/৩৭৯-৩৮০)
حدثنا حفص بن غياث، عن المجالد، عن الشعبي، قال: كانت الأنصار يقرؤون عند الميت بسورة البقرة.
শাবী থেকে বর্ণিত, আনসার (সাহাবীগণ) মাইয়িতের কাছে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৯৫৩
حدثنا وكيع، عن حسان بن إبراهيم، عن أمية الأزدي، عن جابر بن زيد، أنه كان يقرأ عند الميت سورة الرعد.
আবু উমায়্যা আযদী থেকে বর্ণিত, জাবির ইবনে যায়েদ রাহ. মাইয়িতের কাছে সূরা রা‘দ তিলাওয়াত করতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১০৯৫৭
,
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي، فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَى سِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ذَلِكَ
হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮]
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪]
উল্লেখিত হাদীস আছার দ্বারা সামগ্রিকভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন তিলাওয়াত মাইয়িতের উপকারে আসে।
والمعتمد فى المذاهب الاربعة ان ثواب القراءة يصل الى الاموات، لانه هبة ودعاء بالقرآن الذى تتنزل الرحمات عند تلاوته، وقد ثبت فى السنة النبوية وصول الدعاء والصدقة للميت، وذلك مجمع عليه
চার ইমামগণের নিকট যে কথাটি গ্রহণযোগ্য, তা হল, কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের সওয়াবও মৃতের কাছে পৌঁছে। কেননা, এটি কুরআনে কারীমের হাদিয়া এবং দুআ।যা তিলাওয়াতকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়। যেহেতু মাইয়্যেতের জন্য সদকা এবং তার জন্য দুআ করলে তা মৃতের কাছে পৌঁছার বিষয়টি হাদীসে নববী দ্বারা প্রমাণিত। এর উপরই উম্মতের ইজমা। [তাফসীরে মুনীর-১৪/১৪০, ডঃ ওহাবাতুজ জুহাইলী]
ইমাম ইবনে কুদামা রাহ. তিলাওয়াতের সওয়াব রেসানির বৈধতার দলীল আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
وأنه إجماع المسلمين، فإنهم في كل عصر ومصر يجتمعون ويقرؤون القرآن، ويهدون ثوابه إلى موتاهم، من غير نكير.
এতে মুসলমানদের ইজমা আছে। প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক শহরে তারা সমবেত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে সওয়াবরেসানি করেছে। এতে কেউ কোনো আপত্তি করেনি। -আলমুগনী ৩/৫২২
শাফেয়ী ফকীহদের মধ্যেও অনেক ফকীহের মত এটাই যে, কুরআন তিলাওয়াতের ঈসালে সওয়াব করা জায়েয। বিশেষত যদি আল্লাহর কাছে এই দুআ করা হয় যে, তিনি যেন এই সওয়াব মাইয়িতের কাছে পৌঁছে দেন। যাদের মধ্যে ইবনে আবী আসরূন রাহ. (৫৮৫হি.), ইবনে আবিদ দাম রাহ. (৬৪২হি.), ইবনুস সালাহ রাহ. (৬৪৩হি.), তাকীউদ্দীন সুবকী রাহ. (৭৫৬হি.), ইবনুল মুলাক্কীন রাহ. (৮০৪হি.), যাকারিয়া আনসারী রাহ. (৯২৬হি.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইমাম ইবনুস সালাহ রাহ.-এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কুরআন পড়ে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা সাধারণ মুসলমানকে সওয়াব পৌঁছানো যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন, এতে ফকীহদের মতভেদ আছে। তবে অধিকাংশ মানুষ তা জায়েয মনে করে। এক্ষেত্রে এই দুআ করা উচিত যে, হে আল্লাহ, আপনি এর সওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। -ফাতাওয়া ইবনুস সালাহ ১/১৯৩
أما قراءة القرآن ففيه خلاف بين الفقهاء، والذي عليه عمل أكثر الناس تجويز ذلك، وينبغي أن يقول إذا أراد ذلك: اللهم أوصل ثواب ما قرأته لفلان.
কুরআন তেলাওয়াত দ্বারা ঈসালে ছওয়াব করা যাবেন কিনা,এই ব্যপারে ফুকাহায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
অধিকাংশদের মত হলো জায়েজ আছে,,,,,,,।
(উজালাতুল মুহতাজ ইলা তাওজীহিল মিনহাজ ৩/১১০৪; ফাতহুল ওয়াহহাব বি শরহি মানহাজিত তুল্লাব ২/১৯; আসনাল মাতালিব ফী শরহি রাওযিত তালিব ২/৪১২; মুগনিল মুহতাজ ইলা মারিফাতি মাআনি আলফাযিল মিনহাজ ৩/৯১)
মালেকী ফকীহদেরও এক জামাত এই মত পোষণ করেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ইবনে রুশদ রাহ. (৫২০হি.), আবু বকর ইবনে আরাবী রাহ. (৫৪৩হি.), আবু আবদিল্লাহ কুরতুবী রাহ. (৬৭১হি.), আবু আবদিল্লাহ আলহাফফার রাহ. (৮১১হি.), আবুল কাসিম আবদূসী রাহ. (৮৪৯হি.), ইবনে হিলাল রাহ. (৯০৩হি.), আবদুল হাই কাত্তানী রাহ. (১৩৮২হি.) প্রমুখ।
ইমাম ইবনে রুশদ রাহ.-কে কুরআনের সওয়াবরেসানি জায়েয কি না জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
وإن قرأ الرجل ووهب ثواب قراءته لميت، جاز ذلك، وحصل للميت أجره، ووصل إليه نفعه، إن شاء الله.
কুরআন তিলাওয়াত করে মাইয়িতকে সওয়াবরেসানি করা জায়েয, সে এর সওয়াব পাবে এবং এটা তার উপকারে আসবে ইনশাআল্লাহ। -নাওয়াযিলে ইবনে রুশদ পৃ. ১৪৪৬, আলমিয়ারুল মুরিব ১/৩২১, ৩৩১; সালওয়াতুল আনফাস ১/৩২
فللإنسان أن یجعل ثواب عملہ لغیرہ عند أہل السنۃ والجماعۃ، صلاۃً کان أو صوماً أو حجاً صدقۃً أو قرآء ۃً للقرآن أو الأذکار أو غیر ذٰلک من أنواع البر، ویصل ذٰلک إلی المیت وینفعہ۔ (مراقی الفلاح ۶۲۱-۶۲۲، البحر الرائق ۳؍۱۰۵، فتح القدیر ۳؍۱۴۲، شامی ۲؍۳۴۳ کراچی، ۳؍۱۵۱ زکریا)
যার সারমর্ম হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মত হলো নামাজ,রোযা,হজ,ছদকাহ,কুরআন তেলাওয়াত, যিকির আযকার,ইত্যাদি নেক আমল করে ঈসালে ছওয়াব করা জায়েজ আছে।
من صام أو صلی أو تصدق وجعل ثوابہ لغیرہ من الأموات والأحیاء جاز ویصل ثوابہا إلیہم عند أہل السنۃ والجماعۃ۔ (شامی زکریا ۳؍۱۵۲، مراقي الفلاح ۶۲۱ -۶۲۲، البحر الرائق ۳؍۱۰۵، فتح القدیر ۳؍۱۴۲ کوئٹہ)
কেহ যদি রোযা রাখে,নামাজ পড়ে,অথবা ছদকাহ করে,এবং এগুলোর ছওয়াব জীবিত বা মৃত দের জন্য রেসানী করে,তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মত হলো তারা ছওয়াব পাবে।
শায়েখ উসায়মীন লিখেছেন,
فإذا أراد شخص أن يصلي ويجعل ثوابها لميته، أو يتصدق، أو يحج، أو يقرأ القرآن، أو يصوم، ويجعل ثواب ذلك لميته فلا بأس به.
ৃوسائر العبادات كالصدقة إذ لا فرق بينهما.
والنبي صلى الله عليه وسلم لم يرد عنه نص يمنع مثل ثواب هذه للميت، حتى نقول: إننا نقتصر على ما ورد، فإذا جاءت السنة بجنس العبادات فإنه يكون المسكوت عنه مثل المنطوق به، لاسيما وأن هذا ليس بنطق من الرسول صلى الله عليه وسلم، بل إنه استفتاء في قضايا أعيان، وإفتاء الرسول صلى الله عليه وسلم بأنه يجوز أن يتصدق الإنسان عن أمه لا يدل على أن ما سواه ممنوع.
নামায পড়ে বা সদকা করে বা হজ্ব করে অথবা কুরআন তিলাওয়াত করে কিংবা রোযা রেখে এর সওয়াব মৃত ব্যক্তিকে দান করতে কোনো অসুবিধা নেই।
এরপর তিনি সদকা সংক্রান্ত দুটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, অন্যান্য ইবাদত সদকার মতই, উভয়ের মধ্যে কোনো ফারাক নেই।
আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এগুলোর ঈসালে সওয়াব অবৈধ হওয়ার সমর্থনে কোনো বক্তব্য নেই। এজন্য এ কথা বলা যাবে না যে, যে বিষয়গুলোর ঈসালে সওয়াবের কথা হাদীসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। সুন্নাহয় যেহেতু সাধারণ ইবাদতের কথা এসেছে তাই যেগুলো সম্পর্কে তা নীরব, সেগুলোর হুকুমও বর্ণিত বিষয়গুলোর মতই হবে। বিশেষত যখন এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ থেকে ইরশাদ করেননি। বরং তাঁর কাছে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার সমাধান জানতে চাওয়া হলে তিনি সমাধান দিয়েছেন। আর নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের সমাধান থেকে এটা কিছুতেই প্রমাণিত হয় না যে, এ ছাড়া অন্যগুলো অবৈধ। -মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েলে ইবনে উসায়মীন ১৭/২৫৮
আরো জানুনঃ
.
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মৃত ব্যক্তির জন্য কুরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ, তাহলীল আদায় করে ঈসালে সাওয়াব পৌঁছানোর আমাল বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত।
,
(তথ্য কিছু সংগ্রহ করা হয়েছে।)
,
(০২)
কবর যিয়ারতের সুন্নাহ পদ্ধতি সম্পর্কে জানুনঃ