আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
101 views
in পবিত্রতা (Purity) by (6 points)
আসসালামু আলাইকুম,
মুহতারাম মুফতি সাহেব,
কষ্ট করে নিচের বর্ণনাটি পড়ুন ।  পুরো বিষয়টি ভালোভাবে বুঝানোর জন্য বিস্তারিতভাবে লিখেছি ।
ঘটনাটি ২০১৬ সালের।  আমি তখন ঢাকায় আর আমার স্ত্রী লেখাপড়ার জন্য
দেশের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ।
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি যে আমার স্বপ্নদোষ হয়েছে । (রাতে যে শার্ট প্যান্ট পড়ে বাসায় এসেছিলাম  ক্লান্ত থাকার কারণে ঐ অবস্থায়ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ।) বলে রাখা ভালো যে, আমার স্বপ্নদোষ বিয়ের আগে থেকেও ঘন ঘন হত এবং পরনের জামা কাপড় আর বিছানাতে যেন নাপাক না লাগে আর যেন আমাকে কষ্ট করে বেশি কাপড়চোপড় ধুতে না হয় এজন্য নাপাকির বিস্তৃতি কমাতে আমি প্রতি রাতে আন্ডারওয়্যার এর নিচে সামনের দিকে সাদা/ গোলাপি রঙের টয়লেট টিস্যু 'মোটামোটি' মোটাভাবে দিয়ে ঘুমাতাম । যাই হোক, আমি পাক নাপাকি নিয়ে খুব চিন্তায় থাকতাম (এখনও থাকি) এবং ওয়াসওয়াসা রোগ থাকার কারণে কোথাও নাপাকী লাগার সম্ভাবনা নিয়ে মন স্থির না করতে পারলে অনেক চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতাম যে নাপাক লেগেছে ।
তো সেদিনের ঘটনায় আমি আমার শার্ট, প্যান্ট, অন্তর্বাস এগুলো বিনা দ্বিধায় নাপাক লেগেছে বলে ধুয়ে দেই ।
সমস্যাটা হল, স্যান্ডো গেঞ্জির নিচের অংশে নাপাক লেগেছে কি না তা প্রথম দেখাতে সুনিশ্চিতভাবে বুঝতে পারিনি । একটা জায়গা দেখে মনে হল এটা নাপাকের দাগ হতে পারে ।  ভালো ভাবে দেখে একবার মনে হল এটা নাপাকের দাগ, আবার মনে হল এটা কাপড়ের বুননের কারণেও হতে পারে ।  এটা নিশ্চিত যে প্রথম দেখাতে বিনা দ্বিধায় নাপাক এর দাগ বলে মনে হয়নি ।  অনেক চিন্তা করে দেখলাম যে নাপাক না হলে তো ভালো, কিন্তু নাপাক কে পাক মনে করার ফলে পুরো বাসা যদি পরে নাপাক হয়ে যায় তখন কী হবে?? তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে নাপাক লেগেছে ।  বিপত্তিটা হল যখন অন্য সব কাপড় ধোবার পরে গেঞ্জিটা ধুতে গেলাম দেখি যে অফিসের সময় হয়ে আসছে ।  গোসলের পানির ছিটা পড়ে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়া গেঞ্জি টা টয়লেটের বাইরে একটা স্টিলের র‍্যাকে রেখে দেই ।  ফরয গোসল করে অফিসে যাই আর অফিস থেকে এসে পরের দিন গেঞ্জিটা ধুয়ে দেই । কিন্তু গেঞ্জিটা যেই র‍্যাকের উপরে রেখেছিলাম ঐ র‍্যাকটা আর গড়িমসি করে ধোয়া হয়নি ।
এদিকে কয়েকদিন পরে আমার স্ত্রী আর আমার শ্বশুর ঢাকায় আসেন এবং আমার শ্বশুর গোসল করে ভেজা গামছাটা ঐ র‍্যাকের উপরে রাখেন ।  পরে ঐ ভেজা গামছাটা আবার আমাদের নতুন খাটের সামনের দিকের একটা শেল্ফের মত অংশে রাখেন ।  এখন আমি  বলতেও পারছি না যে, আপনার গামছা তো নাপাক (কারণ আমি নিজেও আমার গেঞ্জিটা নাপাক ধরেছিলাম যেন পরে মনে খুঁতখুঁত না লাগে) আবার গামছাটা পাক বলতেও পারছিলাম না কারণ আমি তো গেঞ্জিটাকে নাপাক ধরেই কাজ করেছিলাম ।
পরে সিদ্ধান্ত নিলাম যে,  খাট টা যেহেতু নতুন আর মসৃণ তাই ভেজা কাপড় দিয়ে ঐ গামছা রাখা জায়গাটা মুছে দিব ।  কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা করা হয়ে উঠেনি ।  এর মধ্যে ভাড়া বাসা পরিবর্তন করা হয় এবং খাটের ওই অংশটায়ই কিছু ফাটল/ চিড় ধরে ।  কোথাও পড়েছিলাম যে এরকম ফাটলের ক্ষেত্রে নাপাক কাঠ শুধু মুছলে পাক হবে না, ধুয়ে শুকাতে হবে ।
এখন এত মোটা খাট খুলে ধুয়ে কোথায় শুকাবো ঢাকা শহরে ! বিষয়টা আমার স্ত্রী  কে অনেক দিন পরে বললে তিনি বললেন যে আমি তো প্রায়ই ভেজা আর শুকনা কাপড় দিয়ে জায়গাটা মুছি । কিন্তু আমার মন মানে না (কোথাও যে ধুবার কথা পড়েছিলাম) ।
সমস্যা আরো বেড়ে যায় যখন আমার স্ত্রী  ঐ খাটের ঐ জায়গাটাতে পানির গ্লাস আর বোতল রাখতে শুরু করলেন ।  গ্লাস আর বোতলের বাইরে নিচে অনেক সময় পানি জমে যেত । মনে হত (এখনো মনে হয়) যে বোতল/ বাটি/ গ্লাস এগুলো নাপাক হয়ে যাচ্ছে।  বা কোন ভেজা গ্লাস / বাটি ঐ স্থানে রাখার পরে গ্লাস/ বাটি থেকে দুই এক ফোটা পানি গায়ে/ ঘরের মেঝেতে পড়লেও নাপাক ছড়িয়ে পড়ছে বলে মানসিক অশান্তিতে ভুগছি । এসব নিয়ে বিগত বছরগুলোতে  প্রায় ঝগড়াও  লেগেছে বাসাতে ।
এখন,
আমার প্রশ্ন হল:
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী :
সত্যিই কী স্যান্ডো গেঞ্জি তে নাপাক লাগার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা ঠিক ছিল?
 স্যান্ডোগেঞ্জি থেকে স্টিলের র‍্যাকে কী নাপাকী স্থানান্তর হয়েছিল?

আমার শ্বশুরের গামছা কী নাপাক হয়েছিল?
আমাদের খাট থেকে কী এখনো নাপাক ছড়াচ্ছে?

যদি আজ অবধি নাপাক বর্তমান থাকে খাটের মধ্যে তবে তা থেকে 'সহজে' স্থায়ী পরিত্রাণের উপায় কী?
মুহতারাম, মেহেরবানি  করে আমার প্রশ্নের ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে উত্তর জানিয়ে আমাকে বাধিত করবেন।

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


কাপড়ে নাপাকি লাগা সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে,কাপড়ে নাপাকির রঙ/গন্ধ কিছুই পাওয়া না গেলে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো কাপড়কে নাপাক বলার সুযোগ নেই।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، وَعَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم الرَّجُلُ يَجِدُ الشَّىْءَ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْهِ فَقَالَ " لَا يَنْفَتِلُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا " . - صحيح : 

‘আব্বাদ ইবনু তামীম হতে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার অযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, (বায়ু নির্গত হওয়ার) শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ছাড়বে না।

বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহ বশতঃ উযু করতে হবে না, হাঃ ১৩৭), মুসলিম ৩৬২ (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর উযু নষ্ট হওয়ার সন্দেহ হলেও ঐ অবস্থায় সালাত আদায় করা জায়িয,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৬)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেনঃ

ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ (حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَو يَجِدَ رِيْحًا) (যতক্ষণ না সে বায়ু বের হওয়ার শব্দ বা নির্গত বায়ুর গন্ধ পাবে ততক্ষণ নামাজ ছেড়ে আসবে না)। এর অর্থ হলো যতক্ষণ না সে শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া বা অন্য যে কোন পন্থায় তার বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করবে না বা ছেড়ে আসবে না। তবে এতে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়াটিই শর্ত নয়।

এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার অজু ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি স্যান্ডো গেঞ্জি তে নাপাক লাগার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা ঠিক ছিলোনা।

তাই টেনশনের কিছুই নেই,এক্ষেত্রে কোনো কিছুই নাপাক হয়নি।

সুতরাং আপনার শ্বশুরের গামছা নাপাক হয়েছিলোনা।
আপনাদের খাট থেকে নাপাক ছড়াচ্ছেনা।
তাতে নাপাকি নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

–1 vote
1 answer 98 views
...