জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রশ্নে উল্লেখিত ""এক মুহুর্তের ইনসাফ ৬০ বছরের ইবাদত থেকে উত্তম""
মর্মে কোনো হাদীস নেই।
,
তবে “কিছুক্ষণ আল্লাহর কুদরত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা এক বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম” মর্মে একটি কথা অনেকের কাছ থেকে শোনা যায়,আসলে সেটিও কোনো হাদীস নয়।
,
আল্লাহ পাকের অপার কুদরত,নেয়ামত ও অনুগ্রহরাজি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা একটি প্রসংশনীয় কাজ। এ বিষয়ে অনেক আয়াত ও হাদীস রয়েছে।ঠিক তেমনিভাবে দ্বীন নিয়ে চিন্তা-ফিকির করা একটি প্রসংশনীয় কাজ।
,
তবে কথাটি রাসূলের হাদীস হিসাবে প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,-
” وحديث تفكر ساعة خير من عبادة سبع أو سبعين أو سبعمائة سنة قال الحافظ ابن حجر هو من أوله إلى آخره لا أصل له؟
“কিছুক্ষণ (আল্লাহর কুদরত বা দ্বীন) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা সাত বা সত্তর কিংবা সাত শত বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম” কথাটির আগাগোড়াই রাসূলের হাদীস হিসাবে প্রমাণিত নয়।
«الفواكه الدوانى على رسالة ابن أبي زيد القيروانى»
[আরো দেখুন- ইবুনল যাওজী রহ.কৃত আল মাওযুআত ৩/১৪৪। মুনাবী কৃত ফয়জুল কাদীর, লামহাত মিন তারীখিস সুন্নাহ ওয়া উলুমিল হাদীস পৃ.৮৯,৯০। ]
তবে আল্লাহ পাকের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার গুরুত্বের বিষয়ে সিররী সাকতী রহ.এর একটি উক্তি রয়েছে। তিনি বলেন-
تفكر ساعة خير من عبادة سنة
অর্থাৎ “কিছুক্ষণ (আল্লাহর কুদরত বা দ্বীন) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা এক বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম”। মোল্লা আলী কারী রহ.বলেন এটি রাসূলের হাদীস নয় বরংএটি সিররী সাকতী রহ.এর বক্তব্য। (আল মাসনু ১/৮১)।
,
ইবনুল জাওযী রাহ. বলেন,
هذا حديث لا يصح ...
‘অর্থাৎ এটি সহীহ নয়।’ আহমদ গুমারীও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছেন।
দ্রষ্টব্য : কিতাবুল মাওযূআত : ৩/৩৮৬ (টীকাসহ);আল মুগীর,পৃ.৭৬;আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ, পৃ.২৪২-২৪৩
,
★ ‘তাফাক্কুর’ অর্থ চিন্তা-ভাবনা করা। এই চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। আল্লাহর বড়ত্ব-মহত্ব ও অসীম কুদরত নিয়ে চিন্তা করা। মানুষের জীবনের সূচনা-সমাপ্তি,হাশর-নশর,জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করা। নিজের ঈমান-আমলের উন্নতির ফিকির করা । আল্লাহর হক,মাখলুকের হক সম্পর্কে ফিকির করা। আত্মসমীক্ষা করা,আত্মসমালোচনা করা,আত্মসংশোধনের সম্ভাব্য পথ ও পন্থা সম্পর্কে চিন্তা-ফিকির করাও এর অন্তর্ভুক্ত। ‘ইলমী তাদাব্বুর’-ও (দ্বীনী ইলমের বিভিন্ন দিক নিয়ে চিন্তা-ভাবনা) এই ‘তাফাক্কুর’-এর অন্তর্ভুক্ত। এমনিভাবে দ্বীনের হেফাযত ও দ্বীন প্রচারের জন্য চিন্তা-ভাবনা করাও এর অন্তর্ভুক্ত।
,
,
★ইনছাফ এর সংজ্ঞাঃ
'আদল’ (ইনছাফ) আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হ’ল সুবিচার করা, সমান করা, নিরপেক্ষতা, বিনিময় প্রভৃতি। আদলের সমার্থক শব্দ হচ্ছে ‘ইনছাফ’ ও ‘কিসত’।
আদলের বাংলা প্রতিশব্দরূপে সুবিচার, ন্যায়বিচার ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়।
ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী জীবন বিধান অনুযায়ী যার যে হক বা অধিকার ও প্রাপ্য তা আদায়ের সুব্যবস্থাকেই আদল বলা হয়। বস্ত্তত মানুষের জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে তথা কাজ-কর্ম, চলাচল, আচার-আচরণ, লেনদেন, বেচা-কেনা, বিনিয়োগ ব্যবস্থা, সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনা, যুদ্ধ, সন্ধি, সঞ্চয়, ভোগ, বিচার ব্যবস্থায় ইনছাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার নামই আদল,তথা ইনছাফ।
আদল বা ইনছাফকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- ব্যক্তিগত ইনছাফ ও সামাজিক ইনছাফ।
ব্যক্তিগত ইনছাফ :
নিজের হক ও অধিকারকে পূর্ণরূপে আদায় করা এবং অন্যের প্রাপ্য ও অধিকারকে পূর্ণরূপে প্রদান করার নাম ব্যক্তিগত ইনছাফ। যেহেতু প্রত্যেক ব্যক্তি তার সমাজের একজন সদস্য, তাই সামাজিক প্রতিটি খাত থেকে তার উপকৃত হওয়ার অধিকার রয়েছে। সামাজিক খাত থেকে তার নিজের প্রাপ্য যথাযথভাবে বুঝে নেওয়া এবং অন্যের প্রাপ্য সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার নামই আদল বা ইনছাফ। এ কারণেই চুরি-ডাকাতি, হাইজ্যাক-ছিনতাই, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অত্যাচার বলে বিবেচিত। কেননা এতে অন্যকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। যে ব্যবসায়ী নির্ধারিত ওযনের চেয়ে মাপে কম দেয়, সে অত্যাচারী। কেননা সে অন্যের হক বিনষ্ট করে।
সামাজিক ইনছাফ :
সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে তার প্রাপ্য সামাজিকভাবে যথাযথভাবে প্রদান করাই হচ্ছে সামাজিক ইনছাফ। সুতরাং ইনছাফভিত্তিক সমাজ বলতে সে সমাজকে বুঝায় যার নিয়ম-নীতি ও আইন-কানূন এত সরল-সহজ যে, সমাজের প্রতেক ব্যক্তি নিজের যোগ্যতানুসারে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই নিজের ও সমাজের উন্নতি সাধন করতে পারে। সুতরাং কোন সমাজকে ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে সমাজে সকল শ্রেণীর মানুষের উন্নতির উপায়-উপকরণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান না থাকবে।