লি'আন মানে হচ্ছে অভিসম্পাত করা।
স্বামী,স্ত্রী একে অপরের উপর যেনার অভিশাপ দেয়া।
,
লি'আন করতে হয় কাজি বা বিচারকের মজলিসে।
এখানে লি‘আন প্রবর্তনের ঘটনা সম্পর্কিত হাদীছ উল্লেখ করা হ’ল।
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, উয়াইমির (রাঃ) আছিম ইবনু আদির নিকট আসলেন। তিনি ছিলেন আজলান গোত্রের সর্দার। উয়াইমির তাঁকে বললেন, তোমরা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে কি বল, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষ দেখতে পায়। সে কি তাকে হত্যা করবে? এরপর তো তোমরা তাকেই হত্যা করবে অথবা সে কি করবে? তুমি আমার পক্ষ হ’তে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস কর। তারপর আছিম নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল...। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের প্রশ্ন অপসন্দ করলেন। তারপর উয়াইমির (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের প্রশ্ন অপসন্দ করেছেন ও দূষণীয় মনে করেছেন। তখন উয়াইমির বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত হব না। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কোন পুরুষকে দেখতে পেলে সে কি তাকে হত্যা করবে? তখন তো আপনারা তাকে (কিছাছ স্বরূপ) হত্যা করে ফেলবেন। অন্যথা সে কি করবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার ও তোমার স্ত্রী সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন অবতীর্ণ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে লি‘আন করার নির্দেশ দিলেন; যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তারপর উয়াইমির তার স্ত্রীর সঙ্গে লি‘আন করলেন। এরপর বললেন, (এরপরও) যদি আমি তাকে রাখি, তবে তার প্রতি আমি যালিম হব। তারপর তিনি তাকে তালাক দিয়ে দিলেন। অতএব তাদের পরবর্তী লোকদের জন্য, যারা পরস্পর লি‘আন করে এটি সুন্নাতে পরিণত হ’ল। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, লক্ষ্য কর! যদি মহিলাটি একটি কালো ডাগর চক্ষু, বড় পাছা ও বড় পা ওয়ালা বাচ্চা জন্ম দেয়, তবে আমি মনে করব, উয়াইমিরই তার সম্পর্কে সত্য বলেছে এবং যদি সে লাল গিরগিটির মত একটি লাল বর্ণের সন্তান প্রসব করে তবে আমি মনে করব, উয়াইমির তার সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এরপর সে এমন একটি সন্তান প্রসব করল, যার গুণাবলী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উয়াইমির সত্যবাদী হওয়ার পক্ষে বলেছিলেন। তারপর সন্তানটিকে মায়ের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে পরিচয় দেয়া হ’ত (বুখারী হা/৪৭৪৫, ৫২৫৯)।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহল ইবনু সা‘দ সাঈদী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, উয়াইমির আজলানী (রাঃ) আছিম ইবনু আদী আনছারী (রাঃ)-এর কাছে এসে বললেন, হে আছিম! কী বল, যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে অপর লোককে (ব্যভিচার-রত অবস্থায়) পায়, তবে সে কি তাকে হত্যা করবে? আর এতে তোমরাও কি তাকে হত্যা করবে? যদি সে হত্যা না করে) তাহ’লে কি করবে? হে আছিম! তুমি আমার এ ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস কর। এরপর আছিম (রাঃ) এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ অপসন্দ করলেন এবং অশোভনীয় মনে করলেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে আছিম (রাঃ) যা শুনলেন, তাতে তার খুব খারাপ লাগল। আছিম (রাঃ) বাড়ি ফিরলে উয়াইমির এসে জিজ্ঞেস করল, হে আছিম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাকে কি উত্তর দিলেন? আছিম (রাঃ) উয়াইমিরকে বললেন, তুমি আমার কাছে কোন ভাল কাজ নিয়ে আসনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে অপসন্দ করেছেন, সে সম্বন্ধে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি। উয়াইমির (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস না করে ক্ষান্ত হব না। এরপর উয়াইমির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে লোকদের মাঝে পেলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কী বলেন, কেউ যদি তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য লোককে (ব্যভিচাররত) দেখতে পায়, সে কি তাকে হত্যা করবে? আর আপনারাও কি তাকে হত্যার বদলে হত্যা করবেন? অন্যথা সে কি করবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমার ও তোমার স্ত্রীর সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যাও তাকে নিয়ে এসো। সাহল (রাঃ) বলেন, তারা উভয়ে লি‘আন করল। যে সময় আমি লোকদের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে ছিলাম। উভয়ে লি‘আন করা শেষ করলে উয়াইমির বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি তাকে স্ত্রী হিসাবে রাখি, তবে আমি তার উপর মিথ্যারোপ করেছি বলে প্রমাণিত হব। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে নির্দেশ দেয়ার আগেই তিনি স্ত্রীকে তিন তালাক দিলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দেয়াই পরবর্তীতে লি‘আনকারীদ্বয়ের সম্পর্কিত বিধান প্রচলিত হয়ে গেল’ (বুখারী হা/৫৩০৮)।
লি'আন করলেই তালাক হয়না। বরং লি'আনের পর স্বামী তালাক দিলে তাহলে তালাক হয়। বা কাজী সাহেব তাদের মাঝে বিবাহ বিচ্ছিন্ন করে দিলে বায়েন তালাক পতিত হয়।