আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,290 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
বর্তমানে আমাদের দেশে ৮টি পুর্নাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক এবং কিছু ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো আছে। ইসলামী ব্যাংকগুলো বলছে যে ইসলামী ব্যাংকগুলো ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ বোর্ডও রয়েছে। শরীয়াহ বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ব্যাংকগুলো পরিচালিত হচ্ছে।
এমতাবস্থায় ইসলামী ব্যাংক ব্যতীত অন্য কনভেনশনাল (সুদী) ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা (যেমন- বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট খুলে মুনাফা নেওয়া, কোন প্রতিষ্ঠানের নামে একাউন্ট খুলে এর মাধ্যমে সেবা নেওয়া ইত্যাদি) গ্রহণ করা যাবে কি এবং গ্রহণ করলে সুদী কারবার এর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে গুনাহগার হতে হবে কি?

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

  • (ক) বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশে কাগুজে কলমে নাম সর্বস্ব কিছু ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। বা ইসলামি ব্যংকিং শাখা রয়েছে।আমাদের অনুসন্ধান মতে এ সমস্ত ইসলামি ব্যাংক সমূহ নাম সর্বস্ব-ই। তাদের শরীয়া বোর্ড শুধুমাত্র লোকদেখানো।তারা তাদের শরীয়া বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনা করে না বললে অত্তুক্তিও হবে না।হয়তো দুয়েকটি ব্যতিক্রমীও থাকতে পারে।
তথাকথিত ইসলামি ব্যাংক গুলিকে দুটি প্রশ্ন করলে আপনি তাদের ইসলাম অনুসরণের ফরমালিটি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।যথা- আপনি তাদের কোনো ব্রাঞ্চে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
  1. আপনাদের ব্যাংকে বর্তমানে সেভিংস, এফ.ডি.আর, ডিপি.এস রেট কত? 
  2.  ঋণ বা লোনের মুনাফা রেট কত? 
  • উত্তর যদি ফিক্সড মুনাফা বা লোনে ফিক্সড লাভ আদান-প্রদাণ সম্পর্কীয় কিছু আসে। তাহলে বুঝে নিতে হবে যে,তারা শরীয়তকে ফলো করছে না। কেননা হাদীসে এসেছে. প্রত্যেক ঐ ঋণ যা কিছু মুনাফাকে নিয়ে আসবে তা সুদ।আর সুদ কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী হারাম। সুতরাং লাভ কখনো নির্দিষ্ট হতে পারে না।তাই এটা সুদ হবে। 
  • তবে হ্যা,মুদারাবা ব্যবসা! তথা একজনের টাকা অন্যজনের শ্রম, শরয়ী দৃষ্টিতে জায়েয।তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল মুনাফা শতকরা হিসেবে নির্দিষ্ট থাকতে হবে।এবং লাভে লোকসানে উভয়কে শরীক থাকতে হবে।সাথে সাথে ব্যবসার মেয়াদকালও উল্লেখ থাকতে হবে। হয়তো দুয়েকটি ব্যাংক পেতে পারেন যারা মুদারাবা ভিত্তিক ব্যবসা করে এবং বাস্তবে তাদের ব্যবসা পরিচালিত রয়েছে।অর্থাৎ যারা মুনাফাকে নির্দিষ্ট করে বলে না,সময়ে সময়ে তাদের মুনাফার পরিমাণ পরিবর্তন আসে।।এমন ব্যাংক পাওয়া গেলে সেটাতে মুদারাবা ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। 

  • (খ) সহসাই আমাদের সামনে আরো একটি প্রশ্ন চলে আসে,তা হলো যে, প্রচলিত ব্যাংক সমূহে একাউন্ট খোলা বা টাকা রাখা জায়েয আছে কি না? 
 প্রতিউত্তরে বলা যায়, শরয়ী নীতিমালার আলোকে পরিচালিত ইসলামী ব্যংক সমূহে একাউন্ট খোলা বা তাতে টাকা গচ্ছিত রাখা এবং তার সাথে মুদারাবা ব্যবসা করা,বা সেই ব্যাংক সমূহ থেকে বিনা সুদে ঋণ গ্রহণ করা, সবই জায়েয।এতে কোনো সন্দেহ নাই। কিন্তু যেই সমস্ত ব্যাংক শরয়ী নীতিমালার আলোকে পরিচালিত নয়,সে সকল ব্যাংকে মুদারাবা ব্যবসা কখনো জায়েয হবে না।এটা স্পষ্টত হারাম হবে।চায় তার নামে ইসলাম শব্দ থাকুক না কেন। 

  •  সুদী ব্যাংক সমূহে একাউন্ট খুলে টাকা গচ্ছিত রাখা যাবে কি না? 
এ সম্পর্কে বলা যায় যে,বর্তমান সময়ে বাসায় টাকা-পয়সা রাখা অনেকটা অনিরাপদ।অন্যদিকে সুদ হারাম,এবং সুদী কাজে সাহায্য করাও হারাম। তাই বলা যায় যে,এসমস্ত ব্যাংকে সেভিংস একাউন্টে টাকা রাখা যাবে না।কেননা তখন ব্যাংক কর্তৃত আইনগতভাবে উক্ত টাকা সুদী কারবারে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও ব্যাংক চাহিবামাত্র গ্রাহককে উক্ত টাকা দিতে বাধ্য থাকে। এজন্যই উলামায়ে কেরাম পরামর্শ দেন যে,উক্ত ব্যাংক সমূহে কারেন্ট একাউন্ট খুলে টাকা রাখতে হবে। কেননা কারেন্ট একাউন্টের টাকা আইনগতভাবে ব্যাংক ব্যবহার করতে পারেনা। যদি কোনো কারণে ঐ সব সুদী ব্যাংক সমূহে কারেন্ট একান্ট খুলা দুস্কর হয়ে যায়,তাহলে সুদ গ্রহণ না করার শর্তে তাতে সেভিংস একাউন্ট খুলে টাকা রাখা যাবে।উলামায়ে কেরাম এ অনুমোদন দিয়েছেন। 

সুদগ্রহণের নিয়্যাত ব্যতীত নিরাপত্তার স্বার্থে আজকাল ব্যাংকে একাউন্ট খুলে লেনদেন করা বৈধ রয়েছে।অর্থাৎ কারেন্ট একাউন্ট খুলে লেনদেন করা বৈধ রয়েছে।সেভিংস একাউন্ট বা ফিক্সড ডিপোজিট একাউন্ট খুলে তাতে লাভের আশায় লেনদেন করা বৈধ হবে না।কেউ যদি করে নেয় তাহলে সুদ গ্রহণ করবে না।কিন্তু যদি গ্রহণ করে নেয় তাহলে সে তা সওয়াবের নিয়্যাত ব্যতীত সদকা করে দিবে।(ফাতাওয়ায়ে উসমানী-৩/২৬৮)


 তথাকথিত ইসলামি ব্যাংক সমূহ, বাস্তবতার আলোকে শরয়ী নীতিমালায় পরিচালিত হোক বা নাম সর্বস্বই থাকুক? সুদ গ্রহণ না করার শর্তে তাতে লেনদেন করাই আমাদের কাম্য।কেননা অন্ততপক্ষে তার নামের মধ্যে ইসলাম শব্দটা রয়েছে।যা ইসলাম বিধ্বংসীদের উপর কিছুটা প্রভাব রচনা করবে। কিন্তু যেহেতু তথাকথিত ইসলামী ব্যাংক সমূহের অধিকাংশই নাম সর্বস্ব এবং অন্যান্য সুদী ব্যাংকের মতই তাতে নির্দ্বিধায সুদী লেনদেন পরিচালিত হয়।তাই ইসলামী ব্যাংক হোক বা সুদী ব্যাংক হোক সকল ব্যাংকে সুদ পরিহারের শর্তে লেনদেন করা যাবে।বিশেষ করে যদি সুদী ব্যাংক সমূহে এমন কিছু সার্ভিসিং সুযোগ-সুবিধা থাকে যা অন্যান্য ইসলামি ব্যাংক সমূহে থাকে না।যেমন কোনো ব্যাংক ২৪ঘন্টা খোলা থাকে,দেশের যেকোনো প্রান্তরে নির্ভয়য়ে অনায়াসে লেনদেন করা যায় ইত্যাদি।সেই সুযোগ সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইসলামি ব্যাংক সমূহের পরিবর্তে সুদী ব্যাংক সমূহের লেনদেন করার অবকাশ থাকবে। তবে এক্ষেত্রে পারমর্শ হলো,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো প্রকার ব্যাংকেই দীর্ঘ মেয়াদে টাকা গচ্ছিত রাখা যাবে না।এটাই তাকওয়ার সর্বাধিক নিকটবর্তী।যাতে আপনার পক্ষ্য থেকে সুদী লেনদেনে কোনো প্রকার সাহায্য সহায়তা না হয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...