জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَلْقَمَةَ قَالَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ أَلاَ أُصَلِّى بِكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ قَالَ فَصَلَّى فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّة
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামায সম্পর্কে অবহিত করব না? এ কথা বলে তিনি নামায পড়ে দেখালেন এবং নামাযে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে’ ইয়াদাইন করলেন। নামাযে আর কোথাও তিনি রাফয়ে’ ইয়াদাইন করলেন না। (আবু দাউদ ৭৪৮, তিরমিযী ২৫৭, সুনানে দারেমী ১৩০৪, সুনানে নাসায়ী ৬৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা মুসনাদে আহমাদ ৩৬৮১)
রাফয়ে ইয়াদাইন এর ক্ষেত্রে তিন রকমের হাদীস এসেছেঃ
,
এক,
তাকবিরে তাহরিমা বাধা,রুকুতে যাওয়ার আগে তাকবির বলে,রুকু থেকে উঠার পর তাকবির বলে হাত উঠানো।
দুই,
তাকবিরে তাহরিমা বাধা,রুকুতে যাওয়ার আগে তাকবির বলে,রুকু থেকে উঠার পর,
তাকবির বলে,সেজদাতে যাওয়ার সময় তাকবির বলে, এবং সেজদা থেকে উঠার সময় তাকবির বলে হাত উঠানো।
তিন,
শুধু মাত্র নামাজের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় হাত উঠানো।
বাকি সময় আর না উঠানো।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ফিক্বহে হানাফী মতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাকি সময় হাত উঠানো এবং সূরা ফাতিহার পর জোরে আমীন বলা উত্তম নয়। এ বক্তব্যটিও সহীহ হাদীস এবং সাহাবাদের ফাতওয়া এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের আমলের সূত্র পরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাই এটি আমাদের নিকট উত্তম।
,
আবার অন্য ফকীহ,এবং কিছু ইসলামি স্কলারগন এর বিপরীত মত পোষণ করেন। এক্ষেত্রে এই পার্থক্যটুকু শুধু সুন্নাহ আদায়ের উত্তম ও অনুত্তম পদ্ধতি নিয়ে।
অর্থ্যাৎ চার মাযহাবই এ বিষয়ে একমত যে, রাফয়ে’ ইয়াদাইন করা হোক বা না হোক; এতে নামাযের কোনো ক্ষতি হবে না।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি হানাফি মাযহাবের অনুসারী হলে সমস্ত নামাজেই শুধুমাত্র তাকবিরে তাহরিমা বলার সময়েই হাত উঠাবেন।
প্রত্যেক বার আল্লাহু আকবার বলার পর হাত উঠাবেননা।
,
তবে আপনি শাফেয়ী বা আহলে হাদীস অনুসারী হলে তাদের মত অনুযায়ী সব নামাজেই রফয়ে ইয়াদাইন এর আমল করতে পারবেন।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
রফয়ে ইয়াদাইন সহ এরকম আরো মতবিরোধ পূর্ণ মাসয়ালায় একাধিক রকমের হাদীস পাওয়া যায়।
সবই রাসুলুল্লাহ সাঃ এ-র হাদীস।
কোনোটাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
ভূল বলারও সুযোগ নেই।
কেননা সবই রাসুলুল্লাহ সাঃ থেকে প্রমানিত।
,
ফিকহী ইমামগন কোনো মাসয়ালার ক্ষেত্রে এরকম একাধিক রকমের হাদীস পেলে তারা যেই হাদীসের মান সবচেয়ে শক্তিশালী, যেই হাদীস অনুপাতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শেষ জীবনের আমল ছিলো,যেই হাদীসের উপর আমল করলে কুরআনের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়,যেই রকমের হাদীসের আধিক্যতা হাদীসের কিতাবে আছে,ইত্যাদি আরো কতিপয় বিষয় লক্ষ্য করে একটি মতকে প্রাধান্য দেন।
যেই ইমাম তার সর্বোচ্চ মেহনতের পর যেই মতকে প্রাধান্য দেন,সেই মাযহাবের অনুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করবেন।
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন,
كان النبي صلى الله عليه و سلم يركع قبل الجمعة أربعا . لا يفصل في شيء منهن
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। মাঝে সালাম ফেরাতেন না। ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ১১২৯, তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং ১৬৪০।
হযরত আলী রা. বর্ণনা করেন,
كان رسول الله يصلي قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعا يجعل التسليم في آخرهن ركعة
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে পড়তেন চার রাকাত, পরে পড়তেন চার রাকাত। আর চার রাকাতের পরেই তিনি সালাম ফেরাতেন। তাবারানী, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং ১৬১৭; আবু সাঈদ ইবনুল আরাবী, (মৃত্যু ৩৪০ হি.) আল মুজাম, হাদীস নং ৮৭৪।
حدثنا علي بن سعيد الرازي قال نا سليمان بن عمر بن خالد الرقي قال نا عتاب بن بشير عن خصيف عن ابي عبيدة عن عبد الله عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه كان يصلي قبل الجمعة اربعا وبعدها أربعا
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআর পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত পড়তেন। (মু'জামুল আওসাত,হাদীস নং ৩৯৫৯)
বিস্তারিত জানুনঃ-
https://www.ifatwa.info/40384/
(০৪)
গোঁফ চেঁছে ফেলা এবং ছোট করে রাখা উভয়ই জায়েজ। উভয় সুরতই সুন্নতে রাসূল বলে প্রমানিত।
উলামাদের একটি দল গোঁফকে একেবারে মুণ্ডন করাকে উত্তম বলেছেন, আরেকটি দল গোঁফ মুণ্ডন না করে ছোট করে রাখাকে উত্তম বলেছেন।
তাই একবার চেঁছে একবার ছোট করে উভয় সুন্নতের উপর আমল করা যায়। তবে কোনটি উত্তম এ ব্যপারে মতবিরোধ আছে। এক্ষেত্রে সঠিক ফায়সালা হলো-যে ব্যক্তির গোঁফ যেভাবে কেটে রাখলে সুন্দর দেখায় সেভাবে কেটে রাখতে পারবে। প্রতি সপ্তাহে গোফ কাটা সুন্নাত।
তবে চল্লিশ দিনের বেশি সময় গোঁফ না কাটা মাকরুহ।
তাই চল্লিশ দিনের বেশি সময় গোঁফ না কেটে রাখা যাবেনা।
এতে সে শরীয়তের পক্ষ থেকে ধমকির হকদার হবে।
এ মর্মে সাহাবী আনাস রাযি. বলেন,
وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً
অর্থাৎ, গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। (মুসলিম ২৫৮)
গোফ কাঁটা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
(০৫)
উলামায়ে কেরামগন তাদের বাস্তবতা বোঝানোর বিষয় প্রয়োজন মনে করলে তারা চেষ্টা করবেন।
এট সাধারণ ব্যাক্তিদের কাজ নয়।
(০৬)
কথা বলা কমিয়ে দেয়া যাবে।
তবে এটি সমাধান নয়।
তারা যাদেরকে মানে,যেমন মসজিদের ইমাম সাহেব বা এলাকার অন্য কোনো মুরব্বি,তাদের মাধ্যমে আপনার মুরব্বিদের বুঝাতে পারেন।
(০৭)
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ-
পরিবারের সদস্যদের (যারা আপনার চেয়েও বড়) তাদের এই ব্যাপারে ঘাটতি মনে করলে
তাদের ব্যপারে সাবধান করা আপনার নৈতিক দায়ীত্ব।
বুঝানোর পর আপনার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। তারা না বুঝলে সেটি তাদের ব্যাপার।
(০৮)
বর্তমান সমাজে রাস্তাঘাটে গায়রে মাহরাম মানুষ চলাচলরত অবস্থায় এভাবে হাত ধরে চলাকে অনেকেই শালীনতার খেলাফ বলে থাকেন।
তাই এটি অনুচিত।