ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
টাইম ভ্যালু অব মানি সম্পর্কে উলামাদের মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়।
- (এক) ইমাম আবু হানিফা রাহ এর মতে টাইম ভ্যালু অব মানি গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যার কাছে যত টাকা পাওনা ছিলো, যেভাবেই পাওনা থাকুক না কেন? যতদিন পরই পরিশোধ করা হোক না কেন? পরিশোধের সময় ঠিক তত টাকাই পরিশোধ করা হবে, অতিরিক্ত কিছুই পরিশোধ করা হবে না। এটা শাফেয়ী, হাম্বলী এবং মালিক মাযহাবের একাংশ উলামাদের সিদ্ধান্ত।
الدر المختار: (868/3، ط: سعید)
الدیون تُقضی بأمثالہا۔
بحوث فی قضایا معاصرۃ: (ص: 174، ط: مکتبة دار العلوم کراتشی)
والذي یتحقق في النظر في دلائل القرآن والسنۃ ومشاہدۃ معاملات الناس أن المثلیۃ المطلوبۃ في القرض ہي المثلیۃ في المقدار والکمیۃ، دون المثلیۃ في القیمۃ والمالیۃ۔
- (দুই) মালিকি মাযহাবের বিশিষ্ট আলেম আল্লামা রাহুতি রাহ এর মতে টাকা বাজার মূল্যে বেশী পরিবর্তন আসলে, কেবল তখনই বর্তমান বাজার মূল্য গ্রহণযোগ্য হবে নতুবা গ্রহণযোগ্য হবে না।
- (তিন) ইমাম আবু ইউসুফ রাহ এর মতে বর্তমান সময়ের বাজার মূল্য হিসেবে ঋণ বা পাওনা পরিশোধ করা হবে চায় বাজার মূল্যে পরিবর্তন বেশী হোক বা কম হোক।এটাই গ্রহণযোগ্য মতামত।
টাইম ভ্যালু অব মানি সম্পর্কে বিশিষ্ট গবেষক 'সালেহ আল মুনাজ্জিদ' বলেন,
ঋন বা পাওন কারো কাছে কয়েকভাবে থাকতে পারে।হয়তো চুরি, আত্মসাৎ ইত্যাদির কারণে কারো নিকট পাওন থাকতে পারে।আবার কারো নিকট পরস্পরের সম্মতিতে কোনো লেনদেনের বকেয়া অবশিষ্ট থাকতে পারে।যদি কারো কাছে চুরি ডাকাতি বাবৎ কোনো পাওনা থাকে,তাহলে হুকুম হল,ঐ টাকা বা জিনিষের বর্তমান মূল্য হিসেবে মালিককে ফিরিয়ে দিতে হবে।যদি কেউ কারো নিকট থেকে কোনো মালকে চুরি করে নেয়,এবং সেই নির্দিষ্ট মালের বর্তমান বাজারমূল্য কমে যায়,তাহলে সেই মালকেও ফিরত দিতে হবে,এবং সাথে সাথে যে পরিমাণ মূল্যহ্রাস হয়েছে,সেই পরিমাণ মূল্যকে ফিরিয়ে দিতে হবে।চুরি ইত্যাদি ব্যতীত অন্যান্য পাওনা সম্পর্কে বলা হবে,বর্তমান বাজার মূল্যে যদি তেমন কেনো কমবেশ না হয়,তথা এক তৃতীয়াংশ পরিমাণ কমবেশ না হয়,তাহলে ঐ টাকা বা জিনিষ বা এর মত কোনো জিনিষকে হুবহু ফিরিয়ে দিলেই চলবে।তখন বাজার মূল্যর দিকে দৃষ্টি দেয়া হবে না।কিন্তু যদি বর্তমান বাজার মূল্যে বেশী পরিবর্তন চলে আসে,এক তৃতীয়াংশর চেয়ে বেশী কমবেশ হয়ে যায়,তাহলে তখন উভয় লেনদেন কারীর মধ্যে আপসে বসে মীমাংসা মূলক সন্ধি করতে হবে।যাতেকরে কারো কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।সুতরাং বর্তমান বাজার মূল্যকে সামনে রেখে উভয়কে মধবর্তী একটি সিদ্ধান্তে পৌছতে হবে।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
রিবা বা সূদ কাকে বলে?
বর্ণিত রয়েছে এ ব্যপারে উলামায়ে কেরামগণ একমত যে, প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।যেমন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻔْﺺٌ، ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﻌَﺚَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻛُﻞُّ ﻗَﺮْﺽٍ ﺟَﺮَّ ﻣَﻨْﻔَﻌَﺔً، ﻓَﻬُﻮَ ﺭِﺑًﺎ » ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ
তরজমাঃ-প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ।(মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ-২০৬৯০)
মুনাফার শর্তে ঋণ দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত।তবে শর্ত ব্যতীত যদি ঋণদার ঋণ পরিশোধের সময় কিছুটা বেশী দিয়ে দিলে তা রিবার অন্তর্ভুক্ত হবে না।বরং তা বৈধ-ই হবে।
যেমন এক হাদীসে এসেছে
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত
عن ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﻟِﺮَﺟُﻞٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺳِﻦٌّ ﻣِﻦْ ﺍﻹِﺑِﻞِ ﻓَﺠَﺎﺀَﻩُ ﻳَﺘَﻘَﺎﺿَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﻓَﻄَﻠَﺒُﻮﺍ ﺳِﻨَّﻪُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺇِﻻ ﺳِﻨًّﺎ ﻓَﻮْﻗَﻬَﺎ ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ( ﺃَﻋْﻄُﻮﻩُ ، ﺇِﻥَّ ﺧِﻴَﺎﺭَﻛُﻢْ ﺃَﺣْﺴَﻨُﻜُﻢْ ﻗَﻀَﺎﺀً )
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে জনৈক ব্যক্তির একটি বাচ্ছা বয়সী উট পাওনা ছিলো,অতঃপর যখন সে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছে এসে তা চাইলো।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ উনার পাওনা উনাকে বুঝিয়ে দাও।সাহাবায়ে কেরাম (সদকার মালের মধ্যে খুজে)উক্ত ব্যক্তির পাওনা কমবয়সী উট পেলেন না।বরং তার থেকে একটু বেশী বয়সী উট পেলেন।তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেনঃ তোমরা তা তাকে দিয়ে দাও,কেননা তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ঋণ পরিশোধের সময় উদারতা প্রদর্শন করে।তথা অতিরিক্ত দিয়ে দেয়।(সহীহ বুখারী-২৩৯৩,সহীহ মুসলিম-১৬০০)
মুহতারাম প্রশ্নকর্তা দ্বীনী ভাই!
যেহেতু আপনারা কম বেশী কিছু অতিরিক্ত দেয়ার শর্তে ঋণ দেন,তাই কম হোক আর বেশী হোক যাই অতিরিক্ত উসূল করা হবে সবই রিবার অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম হবে।হ্যা যদি কাউকে কোনো প্রকার শর্তারোপ ছাড়া এমনিতেই ঋণ প্রদাণ করা হয়,অতঃপর ঐ বিচারা ঋণ পরিশোধের সময় অতিরিক্ত কিছু দিয়ে দেয় তাহলে তা বৈধ হবে, রিবা হবে না।বিস্তারিত জানুন-
4267
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যদি জোরজবরদস্তি করে বা চুরি করে কারো টাকাকে আত্মসাৎ করা হয়ে থাকে,তাহলে ঐ টাকার বর্তমান ভ্যালু অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।যেমন আপনার বিবরণ অনুযায়ী ১৯৪ টাকা পরিশোধ করতে হবে।তবে যদি পারস্পারিক সম্মতিতে অনুষ্টিত কোনো লেনদেন বা করযে হাসানার কোনো টাকা কারো নিকট বাকী থাকে,তাহলে বর্তমানে পরিশোধের সময়,উভয় লেনদেনকারী নিজ নিজ সম্মতিতে কমবেশ করে সমাধা করতে হবে।যেমন আপনার বিবরণ অনুযায়ী ১৪৫ বা তার চেয়ে কমবেশ করে উভয়ের সম্মতিতে পরিশোধ করতে হবে।কিন্তু যদি বেশকম এক তৃতীয়াংশের বেশী না হয়,অর্থাৎ ১০০টাকা টি ১৩৩ বা তার থেকে বেশী বাজারমূল্য না হয়,তাহলে পরিশোধের সময় হবহু সেই টাকাকে অর্থাৎ ১০০টাকাকে পরিশোধ করতে হবে।
বিঃদ্রঃ উক্ত শেষোক্ত মাযহাব ও ব্যখ্যা বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতির জন্য বেশ মাননসই মনে হচ্ছে।