আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
136 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (64 points)
আসসালামু আলাইকুম।

যেসব বোনেরা অনার্সের শেষের দিকে বা মাস্টার্সের পর দ্বীন মেনে চলা শুরু করে তাদের বিয়ের জন্য দ্বীনদার পাত্র খুঁজে পাওয়া যায়না আর পাওয়া গেলেও বয়সের জন্য পাত্ররা বিয়ে করতে রাজি হয়না। এভাবে দিন দিন বয়স আরও বাড়তে থাকে। এদিকে পরিবারের বাধা আর ভালো বেতনওয়ালা দুনিয়াদার পর্দা করাবেনা এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে চায়। সামাজিক ভাবেও নানা কটু কথা শুনতে হয়। মানুষ হাসাহাসি করে কানাঘুষা করে। এক্ষেত্রে এই বোনদের কি করা উচিত? ৩০ বছর বয়স এক দ্বীনি বোনের বিয়েতে খুব খুশি হয়ে খেতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি বোন বেপর্দা হয়ে বউ সেজে বসে আছে । কতগুলো ছেলে গিয়ে তার পাশে বসে ছবি তুলছে। সবাই বলছে খুব ভালো ছেলে পেয়েছে, অনেক ভালো চাকরি করে, অনেক বেতন পায়। তার জন্য অনেক বছর যাবত দ্বীনদার ছেলে খোঁজা হচ্ছিলো। এই অবস্থা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। দেখে কষ্টে চোখে পানি চলে এসেছিল। এই সমস্যার সমাধান কি?

1 Answer

0 votes
by (707,800 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
সমাধানঃ-
হাদীস শরীফে এসেছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন- 
لا طاعة في معصية إنما الطاعة في المعروف
গোনাহের কাজে কারো বশ্যতা স্বীকার করা যাবে না।(শরীয়ত যাদের বিধিনিষেধ মেনে চলার আদেশ দিয়েছে তাদের) আদেশ শুধুমাত্র বৈধ ও নেকীর কাজে মানা যাবে।(সহীহ বুখারী-৭২৫৭,সহীহ মুসলিম-১৮৪০)

অন্য এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,
لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ
আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো বিধিনিষেধ কে মান্য করা যাবে না।(মুসনাদে আহমাদ-১০৯৮)

চার মাযহাবের গ্রহণযোগ্য ফেকহী গ্রন্থ 'আল-মা'সুআতুল ফেকহীয়্যায়(২৮/৩২৭)' বর্ণিত রয়েছে,
"طاعة المخلوقين - ممّن تجب طاعتهم – كالوالدين ، والزّوج ، وولاة الأمر : فإنّ وجوب طاعتهم مقيّد بأن لا يكون في معصية ، إذ لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق" انتهى
শরীয়ত কর্তৃক যাদের বিধিনিষেধের অনুসরণ করা ওয়াজিব।যেমনঃ মাতাপিতা,স্বামী,এবং রাষ্ট্রীয় প্রধান বা তাদের আদেশপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ।তাদের বিধিনিষেধ আমলে নেয়া তখনই ওয়াজিব যখন তা শরীয়ত বিরোধী হবে না।কেননা 'সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীতে কোনো সৃষ্টজীবের অনুসরণ করা যায় না'(মর্মে হাদীসে বর্ণিত রয়েছে)

 
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا ، وَلِحَسَبِهَا ، وَلِجَمَالِهَا ، وَلِدِينِهَا ، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ) 
চারটি জিনিস দেখে মহিলাকে সাধারণত বিয়ে করা হয়,(১)সম্পদ(২)বংশ(৩)সুন্দর্য্য (৪)দ্বীনদারী
তুমি দ্বীনদারীকে অগ্রাধিকার দাও।{যদি তা না করো তবে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে(تَرِبَتْ يَدَاكَ এর অনেক ব্যাখার একটি ব্যাখা)}(সহীহ বুখারী-৪৮০২,সহীহ মুসলিম-১৪৬৬) বিস্তারিত জানুন-১৮


সম্মাণিত ভার্সিটিয়ান দ্বীনী বোনগণ!
দ্বীনদার জীবনসঙ্গী-ই জীবনের অনেক বড় পাওয়া।নিজে নিজে পাত্র দেখে বিয়ে করাটা যদিও জায়েয।তবে তা অদ্য কোনো মুসলিম/ মুসলিমার জন্য সমুচিত হবে না।এক্ষেত্রে লজ্জার বিষয়টাও বিবেচ্য।হ্যা পরিবার সাধারণত যেরকম পাত্রর কথা বলে থাকে,সেরকম পাত্রকে বিয়ে করাটাও আবার নাজায়েয হবে না।কেননা শুধুমাত্র ঈমান এবং আক্বিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ থাকলেই তার সাথে বিয়েনশাদী বৈধ থাবে।যদিও তা উত্তমতার খেলাফ।

আপনারা ফ্যমিলির সদস্যবৃন্দকে বুঝাতে থাকবেন। এবং আল্লাহর কাছে দু'আ করতে থাকবেন।বলা তো যায় না কখন আপনার দু'আ আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যাবে।

হেকমত এবং নরম ভাষায় তাদের বুঝাতে থাকবেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ 
ﺍﺩْﻉُ ﺇِﻟِﻰ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﺤِﻜْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻮْﻋِﻈَﺔِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻭَﺟَﺎﺩِﻟْﻬُﻢ ﺑِﺎﻟَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﺇِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﻤَﻦ ﺿَﻞَّ ﻋَﻦ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺃَﻋْﻠَﻢُ ﺑِﺎﻟْﻤُﻬْﺘَﺪِﻳﻦَ
আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন হেকমত তথা জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও নরমভাবে উপদেশ শুনিয়ে, এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।(সূরা নাহল-১২৫)

আপনার বা আপনার পরিচিত কারো যদি কোনো দ্বীনদার পাত্র সম্পর্কে জানা থাকে তবে সেই পাত্রকে আপনার ফ্যামিলির নিকট পাঠাতে পারেন।বিশেষ করে এমন পরিবারের প্রত্যেক মেয়ের জন্য দ্বীনদার ভাল চাকুরীজীবী কোনো পাত্রকে নিজে নিজে লোকজন লাগিয়ে খুজে বের করে মাতাপিতার সামনে উপস্থাপন করাই উচিৎ।এবং কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দু'আ করা,যাতেকরে চেষ্টাপ্রচেষ্টা কবুল হয়।আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।

আল্লাহ তা'আলা বলেন
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻜُﻢُ ﺍﺩْﻋُﻮﻧِﻲ ﺃَﺳْﺘَﺠِﺐْ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺴْﺘَﻜْﺒِﺮُﻭﻥَ ﻋَﻦْ ﻋِﺒَﺎﺩَﺗِﻲ ﺳَﻴَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺩَﺍﺧِﺮِﻳﻦَ
তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে।(সূরা আল-মু'মিন-৬০)

নিতান্তই আপনি যদি চেষ্টা করে বিফল হয়ে যান তাহলে পাচঁ ওয়াক্ত নামায পড়ে এবং দাড়ী রয়েছে তবে আলেম নয়,এমন কারো কথা বললে মেনে নিতে পারেন।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
দ্বীনদার পাত্রকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা ও সাথে সাথে দু'আ করা।যদি কারো তাকদীরে দ্বীনদার পাত্র নসিব না হয়,তাহলে এমন দুনিয়াদ্বার পাত্রকে দ্বীনদার বানানোর প্রত্যয় নিয়ে সংসারে মনোযোগী হওয়াই উচিৎ।এবং একটি দ্বীনদ্বার সংসার বানানোর চেষ্টাকে আমৃত্যু অভ্যাহত রাখা উচিৎ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...