আগের প্রশ্নে আপনার জানতে চাওয়ার বিষয়গুলি যথাক্রমে এমন ছিলোঃ-
১)রমাযানে আমার প্রথম হায়েজের পবিত্রতা কততম রোযা থেকে ধরব তাহলে?
২) ২৭ রোযা থেকে যে রক্তস্রাবটা গেল সেটার ডিউরেশন আজকের হিসেবে দুদিনের কিছু বেশি কিন্তু তিনদিন নয়। এটা কি হায়েজ ছিল না ইস্তিহাযা?
৩) ২৭ রোযার আসর থেকে নামাযগুলো কি কাযা আদায় করতে হবে?
৪) আমাকে কি এখন ফরয গোসল করতে হবে? আমি যে মাগরিব পরলাম ফরয গোসল না করে এতে কি গুনাহ হবে?
৫) উপরে উল্লিখিত তথ্য অনুযায়ী আমার কোন কোন রোযা হয়নি? কয়টি রোযার কাযা আদায় করতে হবে?
৬) পবিত্রতার ১৫ তম দিনে রক্তস্রাব শুরু হয়ে তা যদি ১৬ তম দিন অতিক্রম করে ১৭ তম দিনে শেষ হয় তাহলে কি সেটা হায়েজ বলে গণ্য হবে না ইস্তিহাযা? আর যদি ১৭ তম দিনেও শেষ না হয় তাহলে কি হিসেবে গণ্য হবে?
৭) যদি শরীরের সর্বত্র পানি পৌছিয়ে গোসল করা হয় এবং গোসল শেষে বের হয়ে ততক্ষণাৎ বেসিন থেকে কুলি ও নাকে পানি দেওয়া হয় তাহলে কি ফরয গোসল হয়ে যাবে?
জবাবঃ- বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী হায়েযের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০দিন।
এ ১০দিনের ভিতর লাল,হলুদ,সবুজ,লাল মিশ্রিত কালো বা নিখুত কালো যে কালারের-ই পানি বের হোক না কেন তা হায়েয হিসেবেই গণ্য হবে।যতক্ষণ না নেপকিন সাদা নজরে আসবে। (বেহেশতী জেওর-১/২০৬)
উম্মে আলক্বামাহ তথা মার্জনা (مَوْلاَةِ عَائِشَةَ) হইতে বর্ণিত,
عن أم علقمة أَنَّهَا قَالَتْ : " كَانَ النِّسَاءُ يَبْعَثْنَ إِلَى عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ بِالدُّرْجَةِ فِيهَا الْكُرْسُفُ فِيهِ الصُّفْرَةُ مِنْ دَمِ الْحَيْضَةِ يَسْأَلْنَهَا عَنْ الصَّلَاةِ فَتَقُولُ لَهُنَّ لَا تَعْجَلْنَ حَتَّى تَرَيْنَ الْقَصَّةَ الْبَيْضَاءَ تُرِيدُ بِذَلِكَ الطُّهْرَ مِنْ الْحَيْضَةِ "
তিনি বলেনঃ (ঋতুমতী) স্ত্রীলোকেরা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট ঝোলা বা ডিবা (دُرْجَة) পাঠাইতেন, যাহাতে নেকড়া বা তুলা (كُرْسُفْ) থাকিত। উহাতে পাণ্ডুবৰ্ণ ঋতুর রক্ত লাগিয়া থাকিত। তাহারা এই অবস্থায় নামায পড়া সম্পর্কে তাহার নিকট জানিতে চাহিতেন। তিনি [আয়েশা (রাঃ)] তাহাদিগকে বলিতেনঃ তাড়াহুড়া করিও না, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ সাদা (বর্ণ) দেখিতে না পাও। তিনি ইহা দ্বারা ঋতু হইতে পবিত্রতা (طُهْر) বুঝাইতেন।(মুয়াত্তা মালিক-১২৭)
বিস্তারিত জানুনঃ
,
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তুহর তথা দুই হায়েজের মাঝে পবিত্রতার সর্বনিম্ন সীমা পনেরো দিন।
এই পনেরো দিনের মধ্যে কোনো রক্ত আসলে সেটি হায়েজ নয়,বরং সেটি ইস্তেহাজা তথা অসুস্থতা।
এই সময়ে নামাজ রোযা আদায় করতে হবে।
হজরত হান্নাদ [রহ] আম্মাজান আয়েশা [রা]-এর হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ফাতিমা বিনতে হুবাইশ নামক এক নারী একবার রাসুল [সা]-এর সমীপে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন ইস্তেহাযাগ্রস্ত মেয়ে। আমি তো পাক হই না। তাই আমি কি নামাজ পড়া ছেড়ে দেবো? রাসুল [সা] বললেন, না, কারণ এ রক্ত হায়েযের নয়; বরং এ হলো শিরা থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত। সুতরাং যখন তোমার হায়েযের নির্ধারিত দিনগুলি আসে তখন সে দিনগুলি নামাজ ছেড়ে দেবে। আর হায়েযের দিন চলে গেলে তোমার রক্ত ধুয়ে নেবে এবং নামাজ আদায় করবে। [তিরমিজি, হাদিস-১২৫]
لما قال الحصکفیؒ: واقل الطہر بین الحیضتین او النفاس والحیض خمسۃ عشر یومًا ولیالیھا اجماعًا۔ (الدرالمختارعلی صدر ردّالمحتار:ج؍۱،ص؍۲۸۵، باب الحیض)
সারমর্মঃ দুই হায়েজ বা নিফাস ও হায়েজের মধ্যে
পবিত্রতার সর্বনিম্ন সীমা সর্বসম্মতিক্রমে পনেরো দিন পনেরো রাত।
আরো জানুনঃ-
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
রমাযানে আপনার প্রথম হায়েজের পবিত্রতা ১৩ রোযা থেকে ধরবেন।
(০২)
এটি ইস্তেহাজা।
(০৩)
নামাজ গুলি আদায় না করে থাকলে কাজা আদায় করতে হবে।
(০৪)
যেহেতু ২৭ শে রমজান হতে আসা স্রাব ইস্তেহাজা।
এটি যেহেতু হায়েজ নয়,তাই আপনাকে ফরজ গোসল করতে হবেনা।
সুতরাং আপনি যে ফরজ গোসল না করেই মাগরিব নামাজ আদায় করেছেন,এতে আপনার গুনাহ হয়নি।
(০৫)
২৭.২৮.২৯ এই রোযা গুলির কোনো রোযা না রেখে থাকলে সেগুলোর কাজা আদায় করতে হবে।
৬-১২ এই ৭ দিন যেহেতু হায়েজ ছিলো,তাই এই রোযা গুলির কাজা আদায় করতে হবে।
(০৬)
এক্ষেত্রে যদি ১৬.১৭.১৮ এই দিন ধরেই চলে,সেক্ষেত্রে সেটি হায়েজ বলে গন্য।
এর আগেই বন্ধ হয়ে গেলে হায়েজের সর্বনিম্ন সময় সীমা (৩ দিন ৩ রাত পূর্ণ না হওয়ায়) এটি ইস্তেহাজা হিসেবে গন্য হবে। ।
(০৭)
হ্যাঁ, তাহলে ফরজ গোসল হয়ে যাবে।