عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ , وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي , فَأَتَاهُ , فَقَرَعَ الْبَابَ , فَقَامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرْيَانًا , وَاللهِ مَا رَأَيْتُهُ عُرْيَانًا قَبْلَهُ ,فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ “
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত জায়েদ বিন হারেসা রাঃ মদীনায় এলেন। তখন রাসূল সাঃ আমার গৃহে ছিলেন। হযরত জায়েদ এসে রাসূল সাঃ এর দরজায় কড়া নাড়লেন। রাসূল সাঃ তখন বেরিয়ে গেলেন খালি গায়েই। আল্লাহর কসম আমি এর আগে কখনো রাসূল সাঃ কে খালি গায়ে দেখিনি। তারপর তিনি তার সাথে মুআনাকা করলেন এবং তাকে চুমু খেলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯০৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৩২, শরহুস সুন্নাহ, হাদীস নং-৩৩২৭}
ঈদের নামাযের পর বিশেষ কুলাকুলির বিধানঃ-
ইসলামী স্কলারগন বলেন,মূলত কোলাকুলির হুকুম হল, দীর্ঘদিন পর কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা হলে কুলাকুলি করবে। এখন ঈদের জামাতের পর যদি কোন কাছের মানুষের সাথে দেখা হয়, তাহলে সালাম বিনিময়ের পর কোলাকুলি করতে কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু এটিকে ঈদের নামাযের পরের সুন্নত মনে করা বিদআত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মাঝে এমন বিষয়ের নতুন চালু করে, যা এর অন্তর্ভূক্ত ছিল না, তাহলে সে কাজটি বর্জনীয়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮]
ব্যপক ভাবে সবার সাথেই ঈদের নামায শেষ হতেই কুলাকুলি শুরু করে দেয়া একটি রুসুম। সুন্নাত, মুস্তাহাব কিছুই নয়।
এটিকে সুন্নাত, মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করা বিদআত হবে।
★সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সাবেক সদস্য, বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ، ﻭﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻘﺔ ﻭﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﻌﺪ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﻴﺪ؟
الجواب: ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻬﺎ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻌﺎﺩﺓ، ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺣﺘﺮﺍﻡ، ﻭﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﺑﺎﻟﻨﻬﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻛﻤﺎ ﻗﻴﻞ : ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﺣﻞ، ﻭﻣﻨﻊ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺇﻻ ﺑﺈﺫﻥ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ.
প্রশ্ন: “ঈদের নামাজের পর করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদ জানানোর বিধান কী?”
উত্তর: “এগুলো করায় কোনো সমস্যা নেই। কেননা লোকেরা এগুলো ইবাদত বা আল্লাহ’র নৈকট্য অর্জনের জন্য করে না। বরং তারা এগুলো দেশাচারমূলক প্রথা হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার ব্যাপারে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৌলিক মান হলো বৈধতা। যেমন বলা হয়—‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৯; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,
ﻣﺎ ﻧﻌﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﻌﺎﻧﻖ ﺃﺻﻼ ﺇﻻ ﻋﺎﺩﺓ ﺟﺮﻯ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﺇﻧﻤﺎ ﺍﻟﻤﺴﻨﻮﻥ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﺇﺫﺍ ﻗﺎﺑﻞ ﺃﺧﺎﻩ ﻭﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﺑﺎﻟﻘﺒﻮﻝ ﻓﻬﺬﺍ ﻣﻦ ﻓﻌﻞ ﺍﻟﺴﻠﻒ، ﺃﻣﺎ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻘﺔ ﻷﺟﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺨﺼﻮﺹ ﻻ ﺃﻋﻠﻢ ﻟﻬﺎ ﺃﺻﻼً ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻠﻨﺎﺱ. ﻓﺎﻷﻓﻀﻞ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﻭﻳﻜﺘﻔﻰ ﺑﻬﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻘﺎﺀ، ﻳﺼﺎﻓﺢ ﺃﺧﺎﻩ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﻟﻪ : ﻫﻨﺄﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﺑﺎﺭﻙ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻚ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﺃﻭ ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻚ ﻭﻣﺎ ﺃﺷﺒﻪ ﺫﻟﻚ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ.
“লোকদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা ছাড়া কোলাকুলির কোনো ভিত্তি আছে বলে আমরা জানি না। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হলো, (ইবাদত) কবুল হওয়ার দু‘আ করা। যখন সে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তার জন্য (ইবাদত) কবুলের দু‘আ করবে। এটা সালাফদের কর্ম। পক্ষান্তরে এ উপলক্ষে কোলাকুলি করার ভিত্তি আমি জানি না। এটি লোকদের আচার বা প্রথা মাত্র। সবচেয়ে উত্তম হলো, সাক্ষাতে শুধু করমর্দন করা এবং এটাতেই ক্ষান্ত হওয়া। সে তার ভাইয়ের সাথে করমর্দন করবে এবং তাকে বলবে, ‘হান্নাআকাল্লাহু বি হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদের মাধ্যমে খুশি করুন)’, ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফী হাযাল ঈদ (আল্লাহ তোমাকে এই ঈদে বরকত দিন)’ অথবা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ তোমার ও আমার পক্ষ থেকে এই ঈদ কবুল করুন)’; কিংবা অনুরূপ কিছু বলবে। এতে কোনো অসুবিধা নাই।”
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
ঈদের নামাজের পর কোলাকুলি করার বিষয়টি কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে আনন্দ বা খুশি প্রকাশ করতে মানুষ সাধারণত কোলাকুলি করে থাকে। বিষয়টি সম্পূর্ণই সামাজিক রীতি নীতির অন্তর্ভুক্ত। আর সামাজিক রীতি নীতিতে যদি শরিয়ত বিরোধী কোনো বিষয় না থাকে তাহলে পালন করতে কোনো সমস্যা নেই।
সুতরাং লোকেরা যদি সামাজিক রীতি নীতি হিসেবে ঈদের নামাজের পর কোলাকুলি করে থাকে তাহলে এই কোলাকুলিতে কোনো সমস্যা নেই।
কিন্তু কেউ যদি শরিয়তের আবশ্যকীয় বিধানরূপে মনে করে তা পালন করে তাহলে তা বিদআত হবে। তখন আবার কোলাকুলি করা বৈধ হবে না।
আবার শরীয়তের আবশ্যকীয় বিধান পালন করা হতে পিতা মাতা নিষেধ করলে সেক্ষেত্রে পিতা মাতার আদেশ মানা জায়েজ নেই।
সুতরাং দাড়ি রাখা যেহেতু ওয়াজিব,তাই এক্ষেত্রে পিতা মাতা রাখতে নিষেধ করলে তাহা মানা জায়েজ হবেনা।
আপনি বলবেন যে এটি সুন্নাহ,আমার রাসুলুল্লাহ এভাবেই চুল রেখেছেন,এটিই বরাবর জবাব দিতে থাকবেন।