আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
201 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (58 points)
কিয়াম নিয়ে এক আলেমের সাথে কথা হল। উনি বলছিলেন -

আমরা তো নামাজে দাঁড়িয়ে নবীদের ও সালাম দিই। কুরানে আল্লাহ নবীদের সালাম দিয়েছেন। নামাজরত অবস্থ্যয় আমরা তা পাঠ করি। তবে নবীকে দাঁড়িয়ে সালাম জানানো কেন সঠিক হবেনা। এটা তো আদবের ব্যাপার।
আমি উনাকে একটা হাদিস দেখিয়ে ব্যাখ্যা চাইলাম। হাদিস টি নিম্নরূপ:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَفَّانُ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَكَانُوا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُومُوا لِمَا يَعْلَمُونَ مِنْ كَرَاهِيَتِهِ لِذَلِكَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, সাহাবীদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না।
সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (২৮৯), যঈফা ৩৪৬ নং হাদীসের অধীনে, মিশকাত (৪৬৯৮), নাকদুল কাত্তানী পৃষ্ঠা (৫১)।

ফুটনোটঃ
আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ, এই সূত্রে গারীব।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭৫৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD


ওই ভদ্রলোক আমাকে এই ব্যাখ্যা দিলেন:

এর অর্থ হলো সাহাবীগণ ‘আরবের রেওয়াজ ও নিয়ম অনুযায়ী অবনত মস্তকে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়ের সাথে মূর্তির মতো দাঁড়াতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নিয়মে দাঁড়াতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ফলে সাহাবীগণ সে নিয়মে দাঁড়ানো বর্জন করেছেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৪)


وهذا يعني أن الصحابة كانوا يقفون مثل الأصنام ورؤوسهم منحنية على عادات العرب وقواعدهم ، لذلك نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الوقوف على هذا النحو بصرامة.  ونتيجة لذلك رفض الصحابة التمسك بهذه القاعدة.  (تحفت الأحوازي المجلد 7 ح 2754)


আমি ওই ভদ্রলোককে জানালাম যে আপনারাও তো মূর্তির মত দাঁড়িয়ে সালাম দেন। উনি জানালেন - মূর্তি তো কেবল দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলেনা। আমরা তো দাঁড়িয়ে সালাম ও দিই।


এখন আমার প্রশ্ন হল:

১। আমরা কি আসলেই নামাজে দাঁড়িয়ে নবীদের সালাম দিই যেমন টা উনি বলছিলেন।
২। মূর্তির মত দাঁড়ানো মানে কি? আমার তো মনে হয় কিয়ামের সময় দাঁড়ানো মূর্তির ন্যায় ই। কিন্তু ওই ভদ্রলোক তো অন্য যুক্তি দেখাল।

৩। উনি হাদিসের যে ব্যাখ্যা দিলেন তা কি ঠিক আছে?
৪। একজন বললেন এক সাহাবি নাকি রাসুল (সা.) এর রক্ত পান করেছিলেন এবং রাসুল (সা.) এর দাত শহীদ হওয়ায় নিজের দাত ফেলে দিয়েছিলেন। এগুলো তো আমাদের জন্য হারাম তবুও রাসুল (সা.) বলেছিলেন ওই সাহাবির জন্য (যে রক্ত খেয়েছে) জাহান্নামের আগুন হারাম এবং রাসুল (সা) খুশি হয়েছিলেন। ঘটনা কতটুকু সত্যি?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ- 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 


(০১)
আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে নবীদের সালাম দেইনা। 
আমরা বসে নবী সাঃ এর উপর দরুদ পাঠ করি ও সালাম পৌছে দেই।

(০২)
https://ifatwa.info/7909/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
হাদীস শরীফে  এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَفَّانُ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَكَانُوا إِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُومُوا لِمَا يَعْلَمُونَ مِنْ كَرَاهِيَتِهِ لِذَلِكَ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সহাবায়ে কিরামের নিকট রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে অধিক প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিল না। কিন্তু তবুও তাদের অবস্থা এই ছিল যে, যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আগমন করতে দেখতেন তার সম্মানার্থে তাঁরা দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা পছন্দ করেন না।

(তিরমিযী ২৭৫৪, সিলসিলাতুয্ য‘ঈফাহ্ ৩৪৬ নং হাদীসের আলোচনা দ্রঃ, আল আদাবুল মুফরাদ ৯৪৬, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৩৭৮৪, আহমাদ ১২৩৭০, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৮৩, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৫৮।)
,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ أَبِي الْعَنْبَسِ، عَنْ أَبِي الْعَدَبَّسِ، عَنْ أَبِي مَرْزُوقٍ، عَنْ أَبِي غَالِبٍ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَوَكِّئًا عَلَى عَصًا فَقُمْنَا إِلَيْهِ فَقَالَ: لَا تَقُومُوا كَمَا تَقُومُ الْأَعَاجِمُ، يُعَظِّمُ بَعْضُهَا بَعْضًا 

আবূ উমামাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাঠিতে ভর দিয়ে আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়ালে তিনি বললেনঃ তোমরা দাঁড়াবে না, যেরূপ অনারবরা একে অপরকে সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়ায়।

(আবূ দাঊদ ৫২৩০, ইবনু মাজাহ ৩৮৩৬.মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৮১, মুসনাদে আহমাদ ২২১৮১, শু‘আবুল ঈমান ৮৯৩৭,) 
.
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلاَنَ، حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ، عَنْ أَبِي مِجْلَزٍ، قَالَ خَرَجَ مُعَاوِيَةُ فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ وَابْنُ صَفْوَانَ حِينَ رَأَوْهُ . فَقَالَ اجْلِسَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ "

আবূ মিজলায (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু'আবিয়াহ (রাযিঃ) বাইরে বের হলে তাকে দেখে আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর ও ইবনু সাফওয়ান দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা দু’জনেই বস। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ এতে যে লোক আনন্দিত হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকুক, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।

(আবূ দাঊদ ৫২২৯, তিরমিযী ২৭৫৫, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৬১৭৬, মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্ ২৫৫৮২, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৪২০৮, শু‘আবুল ঈমান ৮১৬০, আহমাদ ১৬৯১৮, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ৩৫৭, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৭১৭।)
.
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ سَعْدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ أَهْلَ قُرَيْظَةَ لَمَّا نَزَلُوا عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ أَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ أَقْمَرَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ أَوْ إِلَى خَيْرِكُمْ، فَجَاءَ حَتَّى قَعَدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘দ (রাঃ)-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বনূ কুরাইজার লোকেরা আত্মসমর্পন করলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট লোক পাঠালেন। সা‘দ (রাঃ) একটি সাদা বর্ণের গাধায় চড়ে আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতা বা তোমাদের মধ্যকার উত্তম ব্যক্তির আগমনে দাঁড়াও। অতঃপর সা‘দ (রাঃ) এসে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসলেন।
(আবু দাউদ ৫২১৫)
,
আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের মাধ্যমে বুঝা যায় যে, সহাবায়ি কিরামগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনে তাঁর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য দাঁড়াতেন না। পক্ষান্তরে আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারদেরকে সা‘দ (রাঃ)-এর জন্য দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং প্রকাশ্যভাবে হাদীসদ্বয়ে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তার সমাধান প্রদান করা হলো :

যদিও হাদীস দু’টিতে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়েছে, প্রকৃতপক্ষ উভয় হাদীসের মাঝে কোন দ্বন্দ্ব নেই। আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বানূ কুরায়যাকে উদ্দেশ্য করে সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)-এর জন্য যে দাঁড়ানোর আদেশ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছিলেন তাঁর কারণ ছিল সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) তখন আহত অবস্থায় গাধার পিঠে আরোহিত অবস্থায় পৌঁছেছিলেন তখন তাকে সাহায্য করার জন্য এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানোর আদেশ ছিল না, সেজন্য রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (قُومُوا إِلَى سيِّدكم) বলেছেন। 
আর আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে সাহাবীগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়ানো হতে নিষেধ করেছেন। এর অর্থ হলো সাহাবীগণ ‘আরবের রেওয়াজ ও নিয়ম অনুযায়ী অবনত মস্তকে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়ের সাথে মূর্তির মতো দাঁড়াতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ নিয়মে দাঁড়াতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। ফলে সাহাবীগণ সে নিয়মে দাঁড়ানো বর্জন করেছেন। (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৫৪)

যেহেতু এই ব্যপারে বিভিন্ন হাদীস এসেছে।

তাই সব গুলো হাদীসের আলোকে উমদাতুল কারী গ্রন্থে এ সংক্রান্ত আহকাম এসেছেঃ

"وَعَن أبي الْوَلِيد بن رشد: أَن الْقيام على أَرْبَعَة أوجه: الأول: مَحْظُور، وَهُوَ أَن يَقع لمن يُرِيد أَن يُقَام إِلَيْهِ تكبراً وتعاظماً على القائمين إِلَيْهِ. وَالثَّانِي: مَكْرُوه وَهُوَ أَن يَقع لمن لَا يتكبر وَلَا يتعاظم على القائمين، وَلَكِن يخْشَى أَن يدْخل نَفسه بِسَبَب ذَلِك مَا يحذر، وَلما فِيهِ من التَّشَبُّه بالجبابرة. وَالثَّالِث: جَائِز وَهُوَ أَن يَقع على سَبِيل الْبر وَالْإِكْرَام لمن لَايُرِيد ذَلِك، ويؤمن مَعَه التَّشَبُّه بالجبابرة. وَالرَّابِع: مَنْدُوب وَهُوَ أَن يقوم لمن قدم من سفر فَرحاً بقدومه ليسلم عَلَيْهِ أَو إِلَى من تَجَدَّدَتْ لَهُ نعْمَة فيهنيه بحصولها. أَو مُصِيبَة فيعزيه بِسَبَبِهَا". (عمدة القاري شرح صحيح البخاري (22 / 251)
۔
সারমর্মঃ এক্ষেত্রে হুকুম ৪ টি।
এক,নিষেধ।

এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো, যে অহংকারবশত নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে মনে করে, সবাই তার জন্য দাঁড়াক—এটা কামনা করে, এটি শরিয়তে নিষিদ্ধ। 
,
দুই, মাকরুহ।
যার জন্য দাড়ানো হবে,তার অন্তরে অহংকার নেই।
তবে যারা দাড়াবে,তারা যদি মনে করে যে না দাড়ানো হলে ক্ষতি হবে।
,
তিন,জায়েজ।
সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য দাড়ানো,যখন তাদের পক্ষ থেকে দাড়ানোর কোনো চাহিদা না থাকে।
,
চার, মুস্তাহসান,মানদুব।
মুস্তাহাবও বলা যায়।
কেহ সফর থেকে এসেছে,তার সাথে সালাম মুসাফাহার জন্য দাড়ানো
যখন সে ব্যক্তি নিজে তার প্রত্যাশী ও আগ্রহী নয়।
,
★অন্য কিছু কিতাবে এসেছেঃ

কোনো ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানোর কয়েকটি প্রকার রয়েছেঃ

এক. মজলিসের সর্দার উপবিষ্ট, আর বাকি উপস্থিত সবাই দাঁড়ানো। এটি নিঃসন্দেহে শরিয়তে নিষিদ্ধ। 
,
দুই. আগত এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো, যে অহংকারবশত নিজেকে সবার ঊর্ধ্বে মনে করে, সবাই তার জন্য দাঁড়াক—এটা কামনা করে, এটিও শরিয়তে নিষিদ্ধ। 

তিন. আগত এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো, যে অহংকারী নয়, তবে অন্তরে অহংকার আসার ভয় হয়, এমন ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো মাকরুহ। 

চার. সফর থেকে আগত ব্যক্তির জন্য তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ ও তাকে সালাম দেওয়ার উদ্দেশে দাঁড়ানো জায়েজ, বরং মুস্তাহাব। 

পাঁচ. কোনো ব্যক্তির সফলতার ওপর আনন্দিত হয়ে অভিনন্দনের জন্য দাঁড়ানোও মুস্তাহাব। (ফাতহুল মুলহিম : ৩/১২৭)

ছয়. কোনো ব্যক্তির বিপদে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাওয়াও মুস্তাহাব। (ফাতহুল মুলহিম : ৩/১২৭) 

সাত. আগত কোনো ব্যক্তিকে সম্মান ও একরাম করে দাঁড়ানো যে ব্যক্তি নিজে তার প্রত্যাশী ও আগ্রহী নয়, এর বিধান বর্ণনায় বিজ্ঞ আলেমগণের মতবিরোধ থাকলেও অগ্রগণ্য মতানুসারে তা জায়েজ। (ইলাউস সুনান : ১৭/৪২৯)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
মূর্তির মত দাঁড়ানো বলতে মস্তক অবনত করে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়ের সাথে নড়াচড়া করা ব্যাতিত দাঁড়িয়ে যাওয়া।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ভদ্রলোক যেই যুক্তিই দেখাক,এটি প্রমাণিত হবেনা যে রাসুলের জামানায় ছাহাবারা দাঁড়িয়ে দরুদ পড়তেন,বা বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনুপস্থিতিতে বা তার মারা যাওয়ার পর রাসুলের শানে ইয়া নাবী সালামু আলাইকা,,, বলে দাঁড়িয়ে সালাম করতেন।

সুতরাং এটি স্পষ্ট বিদ'আত।

প্রথম কারণ: আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-وَمَآ ءأتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا অর্থাৎ, রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা হাশর : ৭)

দ্বিতীয় কারণ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ  অর্থাৎ, যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করে যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (বুখারী ২৬৯৭; মুসলিম ১৭১৮)

তৃতীয় কারণ: অন্যত্র তিনি বলেছেন-

فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

অর্থাৎ, তোমাদের জন্য আবশ্যক আমার ও আমার পরবর্তী হেদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরা যেভাবে দাঁত দিয়ে কোন জিনিস দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরা হয়। আর শরীয়তে নিত্য নতুন জিনিস আবিস্কার করা হতে বেঁচে থাক। কেননা সকল নবসৃষ্ট বস্তুই বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী। (আবু দাউদ ৪৬০৭)

মিলাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.কে হাজির-নাজির মনে করে কিয়াম করা তো রীতিমতো শিরক। হাজির-নাজির মনে না করলেও শরীয়তে এর ভিত্তি নেই।

তাই বিদ'আত।

(০৩)
ব্যাখ্যা ঠিক আছে।
তবে মূর্তীর মতো না দাঁড়িয়ে তারা স্বাভাবিক ভাবে পরেও তো আর দাড়াননি।
বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতিতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনুপস্থিতিতে বা তার মারা যাওয়ার পর রাসুলের শানে ইয়া নাবী সালামু আলাইকা,,, বলে দাঁড়িয়ে তারা সালাম করতেন মর্মে কোনো দলিল নাই।

সুতরাং ইহা স্পষ্ট বিদ'আত।

(০৪)
এ ধরনের হাদীস খুজে পাইনি। 

তবে কাছাকাছি অর্থের একটি হাদীস পেয়েছি।
তাহা নিম্নরূপ-

أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يَحْتَجِمُ، فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ، اذْهَبْ بِهَذَا الدَّمِ فَأَهْرِقْهُ حَيْثُ لَا يَرَاكَ أَحَدٌ ، فَلَمَّا بَرَزْتُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ عَمَدْتُ إِلَى الدَّمِ فَحَسَوْتُهُ، فَلَمَّا رَجَعْتُ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: مَا صَنَعْتَ يَا عَبْدَ اللَّهِ؟ قَالَ: جَعَلْتُهُ فِي مَكَانٍ ظَنَنْتُ أَنَّهُ خَافٍ عَلَى النَّاسِ، قَالَ: فَلَعَلَّكَ شَرِبْتَهُ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: وَمَنْ أَمَرَكَ أَنْ تَشْرَبَ الدَّمَ؟ وَيْلٌ لَكَ مِنَ النَّاسِ، وَوَيْلٌ لِلنَّاسِ مِنْكَ

আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাযি. বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসেছেন, তখন রাসুলুল্লাহﷺ শিঙ্গা দিচ্ছিলেন। যখন তিনি অবসর হলেন, তখন বললেন, হে আব্দুল্লাহ! রক্তগুলো নিয়ে যাও এবং এমনভাবে ঢেলে দাও, যাতে করে কেউ দেখতে না পায়। তারপর তিনি যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে দূরে আসলেন তখন ওই রক্তগুলো পান করে নিলেন। রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আব্দুল্লাহ! তুমি রক্তগুলো কী করেছ? তিনি উত্তর দিলেন, আমি সেখানেই লুকিয়ে রেখেছি, আমার ধারণা মতে, লোকেরা যেখানে তা দেখবে না। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, মনে হয়, তুমি রক্তগুলো পান করে নিয়েছ? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। তখন রাসুলুল্লাহ  ﷺবললেন, তোমাকে কে বলেছে রক্ত পান করতে? তোমার পক্ষ মানুষের জন্য আফসোস এবং মানুষের পক্ষ থেকে তোমার জন্য আফসোস।

হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইবন আসিম ‘আল আ-হাদ ওয়ালমাছানী (১/৪১৪)-তে, বাযযার তাঁর মুসনাদ (৬/১৬৯)-এ, হাকিম তাঁর মুসতাদরাক (৩/৬৩৮)-এ, বাইহাকী তাঁর সুনানুল কুবরা (৭/৬৭)-তে এবং ইবন আসাকির তাঁর তারিখে দামিশক (২৮/১৬৩)-এ। আর সকলেরই সনদে আছে, ‘হুনাইদ ইবনুল কাসিম আমির ইবন আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর থেকে, তিনি তাঁর বাবা থেকে…।’

হুনাইদ ইবনুল কাসিম সম্পর্কে তারিখে কবীর (৮/২৪৯) এবং আল জারহ ওয়াততা’দীল (৯/১২১) এসেছে, সেখানে তাঁর সমালোচনা কিংবা প্রশংসা কোনোটাই করা হয় নি। আর ইবন হিব্বান আসসিকাত গ্রন্থে (৫/৫১৫) উল্লেখ করেছেন যে, তাঁর থেকে মুসা ইবন ইসমাইল ছাড়া কেউ কোনো বর্ণনা করেন নি। আর এই ধরণের বর্ণনাকারীকে ‘মাজহুল’ বা অজ্ঞাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...