আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
270 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (25 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,
প্রশ্ন :
১/ হুজুর আমি মাঝে মধ্যে রাতে স্বপ্নে দেখি আমি সুরার বাকারার শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করছি। আমি সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত মুখস্থ করিনি কিন্তু ঘুমের মধ্যে আমি দেখি কুরআন মাজিদের আয়াত আমার সামনে আর আমি তিলাওয়াত করছি। আমি ঘুমের মধ্যেই উচ্চারণ করতে থাকি। এখন আমি আশংকা করি ঘুমের মধ্যে উচ্চারন করার কারণে আমার হয়তো ভুল কিন্তু এই ভুল ত আমি ইচ্ছে করে করি না।  এতে ক আমার গুনাহ হবে?

২/ হুজুর আমি যেই পানি খাই ওই পানিতে আমি ১ বার দুরুদ শরীফ + ১ বার সুরা ফাতিহা + ১ বার দুরুদ শরীফ  পড়ে ফু দিয়ে খাই। এরকম তা করি যখন আমার মন অনেক বেশি অস্থির থাকে তখন। এইভাবে পানি পড়ে খাওয়া যাবে কিনা?  এটা আমি নিজেই করি।
➡️এই পড়া পানি দিয়ে আমি হাত ধুয়ে বাইরে ফেলে দেই। এতে কি গুনাহ হবে?
➡️আর একদিন মনের  ভুলে আমি ঐ পড়া পানি নিয়ে বদনায় ঢেলে দেই এবং তা ইস্তিঞ্জার কাজে ব্যবহার করি।  এতে কি গুনাহ হবে?

৩/ হুজুর আমি পর্দা করি। বিয়ের জন্য ছেলের বাড়ির মহিলা সদস্য দেখতে আসলে তাদের সামনে কি বোরখা পড়ে যেতে হবে নাকি অন্য পোশাক যেমন সালোয়ার কামিজ পরে যেতে পারবো?
৪/বিয়ের উদ্দেশ্যে ছেলে যদি নিজে দেখতে আসে তখন তার সামনে কিভাবে যাবো? এক্ষেত্রে কিভাবে পর্দা করব? তার সামনে কি বোরখা পড়েই যাবো?
৫/ বিয়েতে ফাতেমি মোহর ধার্যকরা কি সুন্নাহ?  কারো যদি এর চেয়ে বেশি মোহরানা দেওয়ার সামর্থ্য থাকে তবে কোনটা উত্তম হবে ফাতেমি মোহর নাকি তার সামর্থ্য অনুযায়ী বেশি মোহরানা দেওয়া?
➡️বিয়ের সুন্নাহ কি কি?
➡️বিয়েতে গায়ে হলুদ দেওয়া কি বিদাআত?

৬/ হায়েজ অবস্থায় তাফসীরে কুরআনের আয়াত পড়া যাবে কি?
৭/ ওযু করার সময় কথা বললে ওযু হবে কিনা? ওযু করার সময় আযানের জবাব দেওয়া যাবে কিনা? ওযু করার সময় আযানের দোয়া এবং দুরুদ পাঠ করা যাবে কিনা?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
এতে আপনার গুনাহ হবেনা।

(০২)
এইভাবে পানি পড়ে খাওয়া যাবে।

★এই পড়া পানি দিয়ে আপনি যদি হাত ধুয়ে বাইরে ফেলে দেন, এতে গুনাহ হবেনা।

★ঐ পানি ইস্তিঞ্জার কাজে ব্যবহার করা আদবের খেলাফ। 
অনিচ্ছাকৃত হওয়ায় এতে গুনাহ হবেনা।

(০৩)
হ্যাঁ, তাদের সামনে অন্য পোশাক যেমন সালোয়ার কামিজ পরে যেতে পারবেন।

(০৪)
এক্ষেত্রে চেহারা ও হাত কবজি পর্যন্ত খোলা রেখে পুরো শরীর ঢেকে যাবেন।
হেজাব বা ওড়না পড়তে পারেন।

(০৫)
বিবাহের সুন্নাহঃ-

১. মাসনূন বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হবে। যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গানবাদ্য, ভিডিও-অডিওমুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত থাকবে না।

আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا 

‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।’ (বনী ইসরাঈল ২৭)

★যৌতুকের আলোচনা বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত না থাকা; বরং মহরানা সামর্থ্যানুযায়ী ধার্য করা : কেননা, আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ : تَيْسِيرَ خِطْبَتِهَا ، وَتَيْسِيرَ صَدَاقِهَا ، وَتَيْسِيرَ رَحِمِهَا

কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া। (মুসনাদে আহমাদ ২৩৯৫৭)

অন্যত্র নবীজি ﷺ বলেছেন, خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرَه‘সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা।’ (বাইহাকী ১৪৭২১)

★সৎ ও খােদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিয়ের পয়গাম পাঠানাে। কোন সুযােগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানাের যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য।  

শাওয়াল মাসে বিবাহ সম্পাদন করা: আয়েশা রাযি. বলেন,
تَزَوّجَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي شَوّالٍ، وَبَنَى بِي فِي شَوّالٍ، فَأَيّ نِسَاءِ رَسُولِ اللهِ ﷺ كَانَ أَحْظَى عِنْدَهُ مِنِّي؟

‘রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার বাসর করেছেন। সুতরাং তার নিকটে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে?’ (সহীহ মুসলিম ১৪২৩)

উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে।

★বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লােকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। 
( বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৫১৪৭।)

বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দু’আ পড়া; 

اللهم إني أسألك من خيرها وخير ما جبلت عليه . وأعوذ بك من شرها وشر ما جبلت عليه 
( আবু দাউদ, হাদীস নং- ২১৬০।)

বাসর ঘরে স্ত্রীর সাথে কোমল আচরণ করা: আসমা বিনতে উমাইস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি ছিলাম আয়েশা রাযি. এর বান্ধবী। আমি আরও কিছু মহিলাকে সাথে নিয়ে তাকে রাসূল ﷺ-এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তাঁর ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। আসমা রাযি. বলেন ,আল্লাহর শপথ, আমরা তাঁর ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা রাযি.-কে দিলেন। অল্পবয়সী মেয়েটি লজ্জাবোধ করল। তখন আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূলের হাত ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ কর। তখন সে ইতস্তত করে হাতে নিল এবং সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রাসূল ﷺ বললেন, তোমার বান্ধবীদেরকে দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটোকে একত্র করো না। (মুসনাদে আহমাদ ২৬৯২৫)

স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তারপর যখনই সহবাস-এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দুআ পড়ে নেবে ; 
بسم الله اللهم جنبنا الشيطان وجنب الشيطان ما رزقتنا 
( মুসলিম, হাদীস নং-১৪৩৪।)

বাসর রাতের পর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরীব-মিসকিনদের সাধ্যনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানাের আয়ােজন করা। 

আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযি. যখন বিয়ে করেছেন তখন নবী ﷺ তাকে বলেন, أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালিমার আয়োজন কর।’  (বুখারী ও মুসলিম)
(সংগৃহীত)

বিবাহের ক্ষেত্রে করনীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৫)
সামর্থ্য অনুযায়ী মোহরানা ধার্য করাই উচিত।
মোহরে ফাতেমী সুন্নাত নয়।

★গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান না করে এমনিতেই একাকী গোসল খানার মধ্যে নিজে নিজে দিতে পারবেন।

(০৬)
কুরআনের আয়াত পড়া যাবেনা।
তবে শুধু তাফসীরের অংশ পড়া যাবে।

(০৭)
ওযু করার সময় কথা বললে ওযু হবে।

ওযু করার সময় আযানের জবাব দেওয়া যাবেনা।
ওযু করার সময় আযানের দোয়া পড়া যাবেনা।

দুরুদ পাঠ করলে সমস্যা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...