আসসালামু আ'লাইকুম মুহতারাম।আমি একটা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।আমার জেনারেল পড়াশোনা কোন দিকে কনটিনিউ করবো সেটা নিয়ে।আমার হাতে এখন দুইটা অপশন আছে, বেসরকারি মহিলা মেডিকেল কলেজ অথবা সহশিক্ষাযুক্ত পাবলিক ভার্সিটি।
আমার আবার বড় কিছু ফ্যাক্টর আছে। আমার সাদাস্রাব ও প্রস্রাব লিকেজ সংক্রান্ত সমস্যা আছে,যার কারণে কয়েক ঘণ্টা বাইরে থাকলে এরপর সরাসরি ওযু করে নিলেই আমি পবিত্র হতে পারি না। একই সাথে কাপড় ও অনেক সময় আমার কোনো করণীয় ছাড়াই নাপাক হয়ে যায়। তাই আমার আরো কিছু কাজ করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয় যেটা পাবলিক প্লেসে থাকাকালীন সম্ভব হয় না।
পাশাপাশি আমার আছে ওয়াসওয়াসা সমস্যা। আমি আলহামদুলিল্লাহ চেষ্টায় আছি ঠিক করতে,আগের থেকে ওয়াশ রুমে টাইম এখন কমানোর ট্রাই করছি,কমছেও আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু পুরোপুরি যায়নি। ওয়াসওয়াসা সমস্যা বললেই সবাই ফতোয়া দেয় পাত্তা দিবেন না, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয় যখন আমি নিশ্চিত ওয়াসওয়াসাই আসছে তখন পাত্তা দিলাম না। কিন্তু যখন মনে হচ্ছে আসলেও ঘটনাটা ঘটছে নাকি ওয়াসওয়াসা তখন পাত্তা না দিলে মনে হয় যদি আমার ইবাদতে ভুল হয়ে যায় তখন! এভাবে একটু গন্ডগোল হয়ে হয়ে যায়।
তাছাড়া পরিবারের সবাই পবিত্রতার বিষয়ে,যেকোনো ইবাদতের বিষয়েও একটু কেমন অসচেতন টাইপ, মানে মাসআলাই ওভাবে জানে না জানলেও পাত্তা দেয় না। তাই পবিত্রতা নিয়ে বেশি খুঁতখুঁতে লাগে।
আবার আমি মাঝে মাঝে সঠিক ও থাকি।যেমনটা ওপরে বলেছি সাদাস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা আছে,আমার পরিবারের কেউ সেটাকে সমস্যা হিসেবে মানতে নারাজ। বলে পাত্তা না দিয়ে ওভাবেই যেন নামাজ পড়ে ফেলি। নামাজ,পর্দা, পড়ালেখার সব সিদ্ধান্ত এই সমস্ত বিষয়ে যেমন ওরা মনে করে আমি বাড়াবাড়ি করছি,তেমন পবিত্রতা অর্জন এও ওদের মতো না করে মাসআলা অনুযায়ী করলেও ওরা বলে আমি বাড়াবাড়ি করছি,ভুল জানি,কোন হুজুরের কাছ থেকে জানছি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি হানাফী ফিকহ গ্রুপ,আইফতোয়ার ফতোয়া দেখালেও বলে এগুলা কোন নিষিদ্ধ গ্রুপ ওয়েবসাইটের পাল্লায় পড়েই আমি শেষ,এটা সেটা বলতেই থাকে আমাকে অভিযোগ করে।
এজন্যই সমস্যা হচ্ছে ওদের সাথে আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ। একদিকে ওরা নামাজ পর্দা সবকিছুতেই মোটামুটি ছাড় দিয়ে দিয়ে করে আর মনে করে আল্লাহ ক্ষমা করবেন,এদিকে আমি বেশি মাসআলা মাসআলা করতে করতে হয়তো কখনো কখনো বাড়াবাড়ি করেও ফেলি। আমি ঠিক বা ভুল যাই হই না কেন, ওরা মনে করে আমি ভুল। আমাকে কয়েকবার ওয়াশরুমে লক করে দিয়েছিলো‌। মারধরও করেছে। আমাকে আবাসিক মাদ্রাসায় দিবে বলে এটাও বলে যে ওখানে গেলে গণ ওয়াশরুম ইউজ করতে গিয়ে যেন শিক্ষা পাই। মাদ্রাসায় এমন ওয়াসওয়াসা থেকে আচরণ করলে টিচাররাও নাকি মারধর করবে।
তো বেসরকারি মেডিকেল সহশিক্ষামুক্ত হলেও ওখানে তো টিচাররা পুরুষই। সাথে আমার নামাজ পড়তে সমস্যার বিষয়, ওটি ড্রেস ইস্যু, ওয়ার্ডে পুরুষ পেশেন্ট, পুরুষদের প্রাইভেট পার্টসের পরীক্ষা,মর্গে উন্মুক্ত লাশ, বারো থেকে পনের ঘণ্টার ইন্টার্নি ডিউটি, বাসা থেকে ৪০/৪৫ মিনিটের(যাতায়াত মিলে ২ ঘণ্টা) জার্নি প্রতিদিন+ সিএনজিতে গেলেও পাশে ছেলে মানুষ বসে পরতে পারে... দ্বীন পালন কেমনে শতভাগ হবে! সাথে মেডিকেলের পড়াশোনার যে চাপ,আমি সব কীভাবে মেইনটেইন করবো সেটা নিয়ে চিন্তিত। আমি এমনিতেই সময় ব্যবস্থাপনায় একেবারেই কাঁচা। মাল্টিটাস্কিং পারি না।
এখন আমার পরিস্থিতি সাপেক্ষে আমার জন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনটা উপযুক্ত হবে? বেসরকারি মহিলা মেডিকেল নাকি সহশিক্ষাযুক্ত পাবলিক ভার্সিটি। ভার্সিটির জন্য আপাতত আমি নিজ শহরের একটা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আর পাশের শহর ময়মনসিংহে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কে ভাবছি যেহেতু এগুলো তুলনামূলক কাছে এবং সর্বোচ্চ নামকড়া র্ভাসিটি না,তাই ফিতনা একটু হলেও কম হতে পারে। ভার্সিটিতে হলে আমার জন্য মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে বিয়ের পরে, কিন্তু মেডিকেলে তা নেই,প্রাইভেট মেডিকেলে যেহেতু প্রচুর খরচ,তাই আমার বাবা মায়ের চাহিদা শেষ পর্যন্ত সার্টিফিকেট এনে দিতেই হবে।আমার এখন পড়াশোনা বাদ দেওয়ার‌ও কোনো সুযোগ নেই। বাসার পরিস্থিতি খারাপ‌ই হচ্ছে।তাই মন্দের ভালো হিসেবে কোনটা বেছে নিবো?