আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
419 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
recategorized by
১. আল্লাহর আকার আছে নাকি নাই, দেহ আছে নাকি নাই?
২. চামড়ার মোজায় ফুটো ছিলো। চামড়া দিয়ে সেলাই করলে মাসেহ হবে?
৩. অযু করে চামড়ার মোজা পরার পর একদিনের মধ্য মোজা খুলে আবার পরলে মাসেহ করা যাবে?
৪. ইমাম সামিআল্লাহ হামিদা বলার সময় মুক্তাদী রব্বনা লাকাল হামদ বলবে। আবার দাড়ানো অবস্থায় ও বলবে। মোট দুইবার?

৫. উলের মোজার উপর চামড়ার মোজা পরলে মাসেহ হবে?

৬. তাবলীগে একটা হাদীস বলে আল্লাহর রাস্তায় ১ টাকা দান করলে ৭ লক্ষ টাকা দান করার সওয়াব এমন নির্ভরযোগ্য হাদীস রয়েছে?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
স্রষ্টা সৃষ্টির মত নন। তিনি তার মতই। তিনি সৃষ্টির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করেন না।
,
আল্লাহর আকার আছে নাকি নেই, ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা না করি । মন্তব্য না করি।
তিনি তার মতোই,তার কোনো কিছুই আমাদের মতো নয়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ                                                                                                     
তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।
ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]

আরো জানুনঃ 
,
আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করি না। মন্তব্য করি না।

(তবু  কিছু উলামায়ে কেরামগন এই ভাবে ব্যখ্যা করেছেন যে , আমাদের কান ও চোখ আমাদের মত। আর স্রষ্টার কান ও চোখ তার শান মুতাবিক।)
,
(০২) 
মোজার উপর মাসাহ বৈধ হবার জন্য মোজার মাঝে কয়েকটি বিষয় থাকা জরুরী। যথা-
মোজাটি এতটুকু মোটা হতে হবে যে, এর মাঝে পানি পড়লে তা পায়ে পৌঁছে না।
উক্ত মোজা এতটুকুই মোটা যে, মোজাকে কোন কিছু দিয়ে বাঁধা ছাড়াই শুধু মোজা পা দিয়ে চার মাইলের মত হাটা যাবে, কিন্তু মোজা ছিড়বে না
মোজার এতটুকু বড় হতে হবে যে, টাখনুসহ ঢাকা থাকতে হবে।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি সেলাই করার পরেও মোজা সেই পরিমান শক্তিশালী হয়,তাহলে তার উপর মাসাহ করা জায়েজ আছে।    


عَنْ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الْمَسْحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ لِلْمُسَافِرِ ثَلَاثَةُ أَيَّامٍ، وَلِلْمُقِيمِ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ»، (سنن ابى داود، رقم الحديث-157)
সারমর্মঃ মুসাফির তিন দিন তিন রাত আর মুকিম ব্যাক্তি এক দিন এক রাত মাসাহ করতে পারবে।

عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ، وَالنَّعْلَيْنِ (سنن ابى داود، رقم الحديث-159)
সারমর্মঃ রাসুল সাঃ জাওরাবাইন এবং চামড়ার মোজার উপর মাসাহ করতেন।
  
ولا يجوز المسح على الجوربين عند أبي حنيفة إلا أن يكونا مجلدين أو منعلين وقالا يجوز إذا كانا ثخينين لا يشفان “(هداية، كتاب الطهارة، باب المسح على الخفين-1/61)
সারমর্মঃ এমন মোটা হতে হবে,যেটি ফেটে যায়না। 

(০৩)
মোজার ওপর মাসেহ বাতিলকারী বিষয়সমূহর মধ্যে অন্যতম হলোঃ 
মাসেহ করার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া।
উভয় মোজা অথবা যেকোনো একটি খুলে ফেলা।
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মাসেহ বাতিল  হয়ে যাবে।
পুনরায় অযু করে মোজা পরিধান করতে হবে।
,
(০৪)
মুক্তাদি ইমামের সামিআল্লাহ লিমান হামিদা  বলার সাথে সাথেই রব্বানা লাকাল হামদ বলবেনা,বরং অল্প কিছু সময় দেড়ি করে পড়বে।
রুকু থেকে উঠতে উঠতে এটি পড়বে।
এটা একবারই পড়বে।
,
(০৫) উলের মোজার উপর চামড়ার মোজা পরলে,চামড়ার মোজা যদি উপরোক্ত শর্ত মোতাবেক হয়,তাহলে তার উপর মাসেহ হবে।
(০৬)
হাদীস শরীফে এসেছে  

عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبعمائة ضعف
অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪)

عَنْ سَهْلِ بْنِ مُعَاذٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِنَّ الصَّلاَةَ وَالصِّيَامَ وَالذِّكْرَ تُضَاعَفُ عَلَى النَّفَقَةِ فِى سَبِيلِ اللَّهِ بِسَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় নামায, রোযা, এবং জিকিরের সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৫০০
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৮৩৫৫
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৮৯০৬
জামেউল আহাদীস নং-৬৪৮৮)

عن سهل بن معاذ عن أبيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الذكر في سبيل الله تعالى يضعف فوق النفقة بسبع مائة ضعف قال يحيى في حديثه بسبع مائة ألف ضعف
হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৮৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮)
,
নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দীনের রাস্তায় খরচ পাঠিয়ে দিল এবং নিজে শরীক হওয়ার সুযোগ পেল না, তাকে প্রতি দিরহামের বিনিময়ের সাত শত দিরহাম দান করার সওয়াব দেয়া হবে।”
 হাদীসে আরো আছে, “যে ব্যক্তি স্বয়ং আল্লাহর রাস্তায় বের হবে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে তার প্রতি দিরহামে সাত লক্ষ দিরহাম খরচ করার সাওয়াব হাসিল হবে।” উক্ত কথার প্রমাণ স্বরূপ হুজুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াত তিলাওয়াত করেন যার অর্থ: আল্লাহ তা’আলা যার জন্য ইচছা করেন তার (আমলের) সাওয়াবকে বর্ধিত করতে থাকেন। (সূরা বাকারা, ইবনে মাজা : ১৯৮)

অন্য এক হাদীসে আছে, দীনের রাস্তায় নামায, রোযা, জিকির অর্থাৎ শারীরিক ইবাদাত দীনের রাস্তায় পয়সা-কড়ি খরচ করা থেকে সাত শত গুণ বেশি সাওয়াবের কাজ । (আবু দাউদ শরীফ, ৩৩৮) ।

অন্য এক হাদীসে আছে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) যখন হযরত উসামা (রাঃ) কে জিহাদের জন্য বিদায় দিতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি পায়ে হেঁটে চলছিলেন এবং উসামা সাওয়ারীর পিঠে চড়ে চলতে ছিলেন । উসামা আরয করলেন, “হে আমীরুল মুমিনীন! হয়তঃ আপনিও আরোহণ করুন, নতূবা আমি নেমে আসব। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) বললেন: খোদার কসম! উসামা তূমি নেমো না। আর আমিও আরোহন করবো না। কিছুক্ষনের জন্য আল্লাহর রাস্তার ধুলাবালি আমার পায়ে লাগলে ক্ষতি কি? অথচ দীনের রাস্তায় চললে প্রতি কদমে সাত শত নেকী হাসিল হয় এবং জান্নাতের পথে সাত শত দরজা বৃদ্ধি পায় এবং তার আমলনামা থেকে সাত শত গুনাহ মুছে ফেলা হয়।

[ কানযুল উম্মাল, ৫:৩১৪/ আবু দাউদ শরীফ, ১:৩৩৮/ দূররে মানসুর, ২:২১৫/ ইবনে মাজাহ, ২:১১৮/ খাইরূল ফাতাওয়া ১:৩৭১-৩৭২]
,
,
★তব এসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে জিহাদের ফাজায়েল সম্পর্কে। 
তাই কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেন যে প্রচলিত তাবলীগের ব্যপারে এসব হাদীস দিয়ে দলিল দেওয়া যাবেনা।
তাই তাবলীগে উক্ত ফাজিলত বলা যাবেনা।
,  

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে, বর্তমান যামানায় দীনের প্রচার-প্রসার ও বে-দীনীর প্রতিরোধ তাবলীগের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর হচ্ছে। অন্যদিকে জিহাদের মূল উদ্দেশ্য হচেছ আল্লাহর কালিমা বূলন্দ করা এবং আল্লাহর দীন প্রতিষ্টা করা। কাফের হত্যা করা, বে-দীনের খতম করা জিহাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং তারা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের পথে বাধা, তাই বাধা দুর করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে তাদেরকে খতম করা ফরজ করা হয়েছে। 

সেই প্রেক্ষিতে জিহাদের যে মূল লক্ষ্য, দা‘ওয়াত ও তাবলীগের সেই একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। উক্ত লক্ষের বাস্তবায়নের জন্যই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী দীনের দা’ওয়াত নিয়ে তাবলীগের নামে সমগ্র বিশ্বে ঘোরাফেরা করা হচ্ছে। সে জন্য জিহাদের ব্যাপারে যে সব ফজীলত বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো তাবলীগের ব্যাপারেও প্রযোজ্য হবো।

 এখানে প্রশ্নে উল্লেখিত সওয়াব গুলো আসলে জিহাদের ফজীলতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, তথাপিও সেগুলো তাবলীগের ব্যাপারে বয়ান করতে কোন অসুবিধা নেই। এ ব্যাপারে হক্কানী উলামায়ে কিরাম ঐক্যমত পোষণ করেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...