আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
213 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (50 points)
আসসালামু আলাইকুম

আমার বান্ধবীর যখন বিয়ে হয় তখন ওর জামাই কাবিনটা তৎক্ষণাৎ দিতে পারেনি। কিন্তু এখন উনি চাচ্ছেন টাকাটা দিয়ে দিতে। কিন্তু আমার বান্ধবী চাচ্ছে টাকাটা আপাতত ওর জামাইর কাছে থাকুক,ওর পরে যখন লাগবে তখন নিবে। এটা করা যাবে কিনা? এতে কি ওর জামাইর গুনাহ হবে?
আর এখন ঐ টাকার যাকাত কে দিবে?  ও নাকি ওর জামাই?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


https://ifatwa.info/3259/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে, 
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤] 

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪] 


فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤] 

অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪] 
,
★আলোচ্য আয়াত দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে যদি মোহরানা নির্ধারন হওয়ার পর স্ত্রী যদি (মোহরানা মাফ করে দেওয়া বা কম করে দেওয়া বা বাকি রেখে অন্য সময়ে দেওয়া) কোনো বিষয়ের উপর স্বামীর সাথে একমত হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।   
সুতরাং স্ত্রীর সম্মতিতে মোহরানা বাকি রাখা জায়েজ আছে।     
,
মোহরানা সংক্রান্ত আরো জানুনঃ 
শরীয়তের বিধান হলো দেনমোহর বিয়ের আকদের পর সহবাসের পূর্বে প্রদান করে দিতে হবে। কিন্তু স্ত্রী যদি দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই বা পুরোপুরি প্রদানের আগেই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। তবে স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। 
,
কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।

স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥] 

তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫] 

وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ  [٦٠:١٠] 

তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০] 
,
মোহরানার টাকা যদি না দিতে পারে,আর স্ত্রী যদি নিজ থেকে তা কমিয়ে বা মাফ করে দেয়,তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।

★আর যদি স্ত্রী তা কমিয়ে বা মাফ করে না দেয়,
তাহলে স্বামী তার স্ত্রীর কাছে ঋনি হয়ে থাকবে।

দুনিয়াতে যদি মোহরানা শোধ না করে,তাহলে আখেরাতে এর জন্য কঠিন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।  
,
★দিন-তারিখ উল্লেখ ব্যতীত মহরের কিছু অংশ বাকী রাখা জায়েয।

لَا خِلَافَ لِأَحَدٍ أَنَّ تَأْجِيلَ الْمَهْرِ إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ نَحْوَ شَهْرٍ أَوْ سَنَةٍ صَحِيحٌ وَإِنْ كَانَ لَا إلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ فَقَدْ اخْتَلَفَ الْمَشَايِخُ فِيهِ قَالَ بَعْضُهُمْ يَصِحُّ وَهُوَ الصَّحِيحُ وَهَذَا؛ لِأَنَّ الْغَايَةَ مَعْلُومَةٌ فِي نَفْسِهَا وَهُوَ الطَّلَاقُ أَوْ الْمَوْتُ أَلَا يَرَى أَنَّ تَأْجِيلَ الْبَعْضِ صَحِيحٌ، وَإِنْ لَمْ يَنُصَّا عَلَى غَايَةٍ مَعْلُومَةٍ، كَذَا فِي الْمُحِيطِ.

এ বিষয়ে কারো কোনো মতভেদ নেই যে,নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধযোগ্য সম্পূর্ণ মহরকে বাকী রাখা জায়েয।যেমনঃ- এক মাস বা এক বৎসর।কিন্তু যদি নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকে, তাহলে এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে,কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম জায়েয বলে থাকেন।এটাই বিশুদ্ধ মত।কেননা বাস্তবে একটি দিন-তারিখ অবশ্যই নির্দিষ্ট রয়েছে।আর ইহা হল,তালাক বা মৃত্যু।কেননা দিন-তারিখ উল্লেখ ব্যতীত মহরের কিছু অংশ বাকী রাখা জায়েয[মুহিত]
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩১৮)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শরীয়তের বিধান মতে বিয়ে-শাদিতে মোহরানার যে অংশ বাকি থাকে তা স্বামীর কাছে স্ত্রীর পাওনা। কিন্তু এই পাওনা স্বামীর ওপর যাকাত ফরয হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ যাকাতযোগ্য সম্পদের হিসাবের সময় এই ঋণ বাদ দেওয়া যাবে না; বরং সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। 
(রদ্দুল মুহতার ২/২৬১)

উল্লেখ্য যে, বিনা ওযরে মোহরানা আদায়ে বিলম্ব করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

★স্বামীর কাছে পাওনা মোহরানা নিসাব পরিমাণ হলেও তা স্ত্রীর হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাতে যাকাত ফরয হয় না। হস্তগত হওয়ার পর যদি আগে থেকেই ঐ মহিলার কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে এখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে এবং বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে।

★আর যদি স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার আগ থেকেই নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদের মালিক থেকে থাকে তাহলে এই সদ্যপ্রাপ্ত মোহরানা অন্যান্য টাকা-পয়সা বা সম্পদের সাথে যোগ হবে এবং সেই সব পুরানো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে।
(সংগৃহীত)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বান্ধবী যদি মোহরানার সেই টাকা তার স্বামীর কাছেই রাখে,সেক্ষেত্রে এটি জায়েজ আছে।

এক্ষেত্রে তার স্বামীর গুনাহ হবেনা।

তবে এক্ষেত্রে যাকাতের মাসয়ালা হলো যদি আপনার বান্ধবী টাকাটি নিজ হাতে নেয়ার পর স্বামীর কাছে রাখতে দেয়,সেক্ষেত্রে এই টাকার যাকাত আপনার বান্ধবীকে দিতে হবে।

আর যদি আপনার বান্ধবী টাকাটি নিজ হাতে না নেয়,সেক্ষেত্রে স্বামী এখনো মোহরানা শোধ করেনি বলে ধরা হবে।
এক্ষেত্রে এই টাকার যাকাত তার স্বামীকে দিতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...