জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
যেকোনো ধরণের দিবস পালনে হুকুম সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
,
কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেন
দিবস পালনের মূল বিষয়টি এসেছে বিধর্মীদের থেকে। সুতরাং বলা যায় এর মূল জিনিসটিই ইসলামে প্রত্যাখ্যাত। তা যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)
,
★অন্যান্য উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে শরীয়ত সম্মত পন্থায় স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস ইত্যাদি পালন জায়েজ।
তবে যেই দিবস সরাসরি ইহুদি খ্রিস্টানদের থেকেই এসেছে,যেমন ভ্যালেন্টাইন্স ডে,থার্টি ফার্স্ট নাইট,পহেলা বৈশাখ,ইত্যাদি সেগুলো কোনো ভাবেই পালন করা জায়েজ নেই।
নবম হিজরীর মাহে রমযানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মক্কা-অভিমুখে রওনা হলেন। কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ান ইতিমধ্যে ইসলাম কবুল করেছেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে মুসলিম বাহিনীর যাত্রাপথে দাঁড় করিয়ে দিলেন, যেন ইসলামের শান-শওকত তাঁর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।
একের পর এক গোত্র অতিক্রম করে যাচ্ছে, আনসারীদের দলটি যখন অতিক্রম করছিল, যার পতাকা ছিল বিখ্যাত আনসারী সাহাবী সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-এর হাতে, কুরাইশের নেতা আবু সুফিয়ানকে দেখে তিনি বলে উঠলেন
"اليوم يوم الملحمة"
“আজ রক্তপাতের দিন।”
আবু সুফিয়ান রা. ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি সা‘দ ইবনে উবাদা রা.-কে নিষেধ করলেন এবং বললেন
"اليوم يوم المرحمة"
“আজ দয়া ও করুণার দিন।”
অন্য জাতির বিজয়-দিবস সাধারণত হয়ে থাকে ‘ইয়াওমুল মালহামাহ’ রক্তপাত দিবস আর মুসলিম জাতির বিজয়-দিবস হচ্ছে, ‘ইয়াওমুল মারহামাহ’ দয়া ও করুণার দিবস।
এই ক্ষমা ও করুণার ঘোষণাই তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছিলেন কাবার দরজায় দাঁড়িয়ে
"لا تثريب عليكم اليوم اذهبوا فأنتم الطلقاء
আজ তোমাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। যাও, তোমরা মুক্ত।
★সারা পৃথিবীতে দিবস পালনের ব্যাপক রেওয়াজ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবস পালিত হয়।
সব দিবস এক রকম নয়।
কিছু দিবস আছে সাধারণ সচেতনতামূলক। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাদানই ঐসব দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। কিছু দিবস আছে, যেগুলোতে কিছু সেবামূলক কার্যক্রমও হয়ে থাকে। যেমন পলিও টিকা দিবস। এই সব দিবসের আয়োজন-অনুষ্ঠানের কিছু সুফল আছে। পক্ষান্তরে কিছু দিবস আছে, যেগুলোর প্রতিপাদ্য বিষয়টি নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে সুফল পাওয়াটা নির্ভর করে নৈতিক ও আদর্শিক উন্নতির উপর। শুধু দিবস কেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় যা আশা করা বোকামি। এ ধরনের দিবসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, নারী-দিবস, শ্রমিক দিবস ইত্যাদি।
যদি কোনো দিবস এমন হয়ে থাকে, যে দিবসগুলো পালন করার মধ্যে অমুসলিমদের সঙ্গে বা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো কালচার, সংস্কৃতি, সভ্যতা অথবা অন্য কোনো জীবন বিধানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে এ ধরনের দিবস পালন করা ইসলামী শরিয়তের মধ্যে হারাম। ইসলামে এই দিবসগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন : থার্টিফার্স্ট নাইটের কথা আপনি বলেছেন। এটি ভিন্ন কালচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যেটা পারস্য সভ্যতা থেকে আমদানি হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর সময় এ ধরনের একটি দিবসও পালিত হতো না। নবী করিম (সা.), সাহাবা, সলফে সালেহিন এটাকে কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন।
কিছু দিবস রয়েছে, যেগুলো মানুষকে সচেতন করার জন্য বা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মেসেজ দেওয়ার জন্য পালন করা হয়ে থাকে। তবে ইবাদতের কোনো ফরম্যাট এর মধ্যে থাকতে পারবে না, তাহলে এই কাজটি বেদাত হয়ে যাবে।
ইমানদার ব্যক্তিগণ বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। এসব কাজে সময় নষ্ট করার সামান্যতম কোনো সুযোগ তাঁদের নেই। রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের প্রকৃত সৌন্দর্য হচ্ছে সেখানেই, সে এমন কাজ পরিহার করে চলবে, যেটা তার জন্য অপ্রয়োজনীয়।’
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّـهِ وَالْفَتْحُ – وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّـهِ أَفْوَاجًا – فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ ۚ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا
“যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন তখন আপনি তাসবীহ পাঠ তথা আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং ইস্তিগফার তথা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাকারী।” (সূরা নসর)
বিজয় অর্জিত হলে মনে করতে হবে, এই বিজয় আল্লাহ তাআলার সাহায্যেই সম্ভব হয়েছে। তাঁর সাহায্য ও শক্তি ছাড়া কখনোই তা সম্ভব ছিল না। তাই বেশি বেশি মহান রবের তাসবীহ ও ইস্তিগফার পাঠ করতে হবে এবং তাঁর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে।
★কোন বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান যদি শুধু শহীদদের কীর্তিগাঁথার আলোচনা ও দুআর অনুষ্ঠান হয়, তাহলে তাতে অংশ নিতে কোন সমস্যা নেই।
কিন্তু সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের নামে গান বাজনার অনুষ্ঠান হলে তাতে অংশ নেয়া বৈধ হবে না।
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কিছুতেই বৈধ নয়। কারণ তা হিন্দুয়ানী অনুষ্ঠান।
কোন মুসলমানের জন্য বিধর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে যোগদান বৈধ নয়।
لان طاعة الإمام فيما ليس بمعصية فرض، (الدر المختار مع الشامى-6/416)
সারমর্মঃ গুনাহের কাজে নেতা (সরকারের) আনুগত্য করা জায়েজ নেই।
وفى الشامية: طاعة الإمام فيما ليس بمعصة واجبة، (رد المحتار-3/53
সারমর্মঃ গুনাহের কাজ ব্যতিত মুবাহ কাজে সরকারের আদেয়াহ মানা ওয়াজিব।
,
(০২)
কিছু উলামায়ে কেরামদের মতে জায়েজ নেই।
তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের মতে ইসলাম বিরোধী না হলে জায়েজ আছে।