আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
235 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আসসালাম'আলাইকুম শায়খ।

আমার স্বামী একটি মাদ্রাসায় চাকুরি করেন, শিক্ষক হিসাবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের পলিসি অনুযায়ী সকল এমপ্লয়ি বা শিক্ষকদের কাছ থেকে মেপে মেপে সময় এবং কাজ আদায় করে নেন। মাঝে মধ্যে শনিবারের ছুটিতেও তারা বিভিন্ন মিটিং, অনুষ্ঠান ইত্যাদির প্রয়োজনে শিক্ষকদের ব্যস্ত রাখেন বা সময় নেন। তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের বাড়িতে এসে মাদ্রাসার কাজ করার প্রয়োজন হয়। আমার প্রশ্ন হলো এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ন্যায়সঙ্গত? যেখানে বাড়িতে এসেও কাজের ফিকির করতে হয়...

দ্বিতীয় প্রশ্ন- শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরয, সুন্নাত বা নফল বিবেচনায়
স্ত্রী হিসাবে আমার স্বামীর কাছ থেকে কতটুকু সময় পাবার অধিকার রাখি?

আমার স্বামীকে পাশে পাবার চাহিদাটা যদি মানসিক শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য শরিয়াহর সীমা অথবা অন্যদের তুলনায় বেশি প্রয়োজন বলে মনে হয় তাহলে তা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে আমার ভুল?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


আল্লাহ তা'আলা স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে বসবাসের আদেশ দিয়েছেন-

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﻳَﺤِﻞُّ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥ ﺗَﺮِﺛُﻮﺍْ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻌْﻀُﻠُﻮﻫُﻦَّ ﻟِﺘَﺬْﻫَﺒُﻮﺍْ ﺑِﺒَﻌْﺾِ ﻣَﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻳَﺄْﺗِﻴﻦَ ﺑِﻔَﺎﺣِﺸَﺔٍ ﻣُّﺒَﻴِّﻨَﺔٍ ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻓَﺈِﻥ ﻛَﺮِﻫْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻓَﻌَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﺗَﻜْﺮَﻫُﻮﺍْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞَ ﺍﻟﻠّﻪُ ﻓِﻴﻪِ ﺧَﻴْﺮًﺍ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ

হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।(সূরা নিসা-১৯)

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে। তিনি বলেন,

حدثني عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما، قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «يا عبد الله، ألم أخبر أنك تصوم النهار، وتقوم الليل؟»، فقلت: بلى يا رسول الله قال: «فلا تفعل صم وأفطر، وقم ونم، فإن لجسدك عليك حقا، وإن لعينك عليك حقا، وإن لزوجك عليك حقا، وإن لزورك عليك حقا، وإن بحسبك أن تصوم كل شهر ثلاثة أيام، فإن لك بكل حسنة عشر أمثالها، فإن ذلك صيام الدهر كله»، فشددت، فشدد علي قلت: يا رسول الله إني أجد قوة قال: «فصم صيام نبي الله داود عليه السلام [ص: ٤٠] ، ولا تزد عليه»، قلت: وما كان صيام نبي الله داود عليه السلام؟ قال: «نصف الدهر»، فكان عبد الله يقول بعد ما كبر: يا ليتني قبلت رخصة النبي صلى الله عليه وسلم

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ! আমি এ সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি প্রতিদিন সওম পালন কর এবং সারা রাত সালাত আদায় করে থাক। আমি বললাম, ঠিক (শুনেছেন) হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ এরূপ করবে না (বরং মাঝে মাঝে) সওম পালন কর আবার ছেড়েও দাও। (রাতে) সালাত আদায় কর আবার ঘুমাও। কেননা তোমার উপর তোমার শরীরের হাক্ব রয়েছে, তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমার মেহমানের হাক্ব আছে। তোমার জন্য যথেষ্ট যে, তুমি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন কর। কেননা নেক ‘আমলের বদলে তোমার জন্য রয়েছে দশগুণ নেকী। এভাবে সারা বছরের সওম হয়ে যায়। আমি (বললাম) আমি এর চেয়েও কঠোর ‘আমল করতে সক্ষম। তখন আমাকে আরও কঠিন ‘আমলের অনুমতি দেয়া হল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আরো বেশি শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তবে আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ)-এর সওম পালন কর, এর হতে বেশি করতে যেয়ো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর নাবী দাঊদ (আঃ)-এর সওম কেমন? তিনি বললেনঃ অর্ধেক বছর। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বৃদ্ধ বয়সে বলতেন, আহা! আমি যদি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদত্ত রুখসত (সহজতর বিধান) কবূল করে নিতাম! সহীহ বোখারী(শামেলা)-১৯৭৫
(১১৩১, মুসলিম ১৩/৩৩৫, হাঃ ১১৫৯, আহমাদ ৬৭৭৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ১৮৪৮)

স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হকঃ
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের উপর অনেক হক রয়েছে।তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল,সহবাসের হক।
স্ত্রীর উপর স্বামীর সহবাস হক কতটুকু?
উত্তরঃ স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য তলব করলে স্ত্রীর জন্য তৎক্ষনাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব।শরয়ী উযর ব্যতীত জবাব না দেয়ার কোনো অপশন নেই।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত

عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে।(সহীহ বুখারী-৩২৩৭)

এখন সহসাই প্রশ্ন জাগে,
তাহলে স্বামীর নিকট স্ত্রীর সহবাস হক্ব কতটুকু?
এ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহঃ বলেন,

ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺝ ﻭﻁﺀ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺑﻘﺪﺭ ﻛﻔﺎﻳﺘﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻨﻬﻚ ﺑﺪﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﺸﻐﻠﻪ ﻋﻦ ﻣﻌﻴﺸﺘﻪ ، .. ﻓﺈﻥ ﺗﻨﺎﺯﻋﺎ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺿﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻛﺎﻟﻨﻔﻘﺔ ﻭﻛﻮﻃﺌﻪ ﺇﺫﺍ ﺯﺍﺩ "

স্ত্রীর সন্তুষ্টি পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব(অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র স্বামীকে সহবাস করতে হবে)।যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সহবাসের পরিমাণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে উচিৎ খোরপোষ ইত্যাদির মত সহবাসের পরিমাণকে বিচারক ঠিক করে দেবেন।(দৈনিক না সাপ্তাহিক? এইভাবে ঠিক করে দিবেন) ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৪৬

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে আপনার স্বামী যেহেতু চুক্তিবদ্ধ, সুতরাং এমন যদি কোনো কাজ দেন,যাহা বাসায় এসে করতে হয়,তাহলে তাহা নাজায়েজ হবেনা।

তবে অতিরিক্ত বাড়তি কাজ চাপিয়ে দিলে তাহা কোনো ভাবেই ন্যায়সঙ্গত হবেনা।

(০২)
যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে,ততক্ষন আপনি প্রয়োজন হিসেবে স্বামীকে কাছে চাইতে পারেন।

তবে স্বামীর ওযর থাকলে বা প্রয়োজনীয় কাজ থাকলে তাকে কাছে পাওয়ার জন্য তার অমতে তাকে বাধ্য করা যুক্তি সঙ্গত নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (8 points)
জাযাকাল্লাহু খায়রান শায়খ! 
এখানে সহবাসের ব্যাপারটা মূখ্য ছিলো না। কিন্তু বুঝতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! তার সাথে সময় কাটানোর ব্যাপারে দাবি ছিলো। মানসিক প্রশান্তির জন্যই মূলত তাকে পাশে খুজি। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...