জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
কুরআনুল কারীমে নামাজীদের গুণাবলী উল্লেখ করে ইরশাদ হচ্ছে :
قد أفلح المؤمنون اللذين هم في صلواتهم خاشعون
অর্থাৎ-“ঐ মুমিনই সফলকাম যিনি স্বীয় নামাজে বিনয় ও দৈন্যতা প্রকাশ করে।” (সূরা মুমিনুন: রুকু-১)
খুশু শব্দটির আভিধানি অর্থ হচ্ছে এই যে,
(১) দেহ অবনমিত হওয়া,
(২) আওয়াজ স্তিমিত হওয়া,
(৩) দৃষ্টি নিম্নমুখী হওয়া। অর্থাৎ প্রতিটি অভিব্যক্তি দ্বারা দৈন্যতা, নম্রতা এবং বিনয়ভাব প্রকাশ পাওয়া। (লিসানুল আদব)
এজন্য নামাজ হচ্ছে আল্লাহর সামনে স্বীয় দৈন্যতা, অপারগতা ও একান্ত আনুগত্যের প্রকাশ। যদি এই অবস্থার সৃষ্টি না হয়, তাহলে বস্তুুত : নামাজের আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنِي الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا أَنَسٌ يَعْنِي ابْنَ عِيَاضٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ، - وَهَذَا لَفْظُ ابْنِ الْمُثَنَّى - حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَدَخَلَ رَجُلٌ فَصَلَّى ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم فَرَدَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِ السَّلَامَ وَقَالَ " ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ " . فَرَجَعَ الرَّجُلُ فَصَلَّى كَمَا كَانَ صَلَّى ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " وَعَلَيْكَ السَّلَامُ " . ثُمَّ قَالَ " ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ " . حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ ثَلَاثَ مِرَارٍ فَقَالَ الرَّجُلُ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أُحْسِنُ غَيْرَ هَذَا فَعَلِّمْنِي . قَالَ " إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَكَبِّرْ ثُمَّ اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ثُمَّ ارْفَعْ حَتَّى تَعْتَدِلَ قَائِمًا ثُمَّ اسْجُدْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ سَاجِدًا ثُمَّ اجْلِسْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ جَالِسًا ثُمَّ افْعَلْ ذَلِكَ فِي صَلَاتِكَ كُلِّهَا " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ الْقَعْنَبِيُّ عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَقَالَ فِي آخِرِهِ " فَإِذَا فَعَلْتَ هَذَا فَقَدْ تَمَّتْ صَلَاتُكَ وَمَا انْتَقَصْتَ مِنْ هَذَا شَيْئًا فَإِنَّمَا انْتَقَصْتَهُ مِنْ صَلَاتِكَ " . وَقَالَ فِيهِ " إِذَا قُمْتَ إِلَى الصَّلَاةِ فَأَسْبِغِ الْوُضُوءَ "
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাসজিদে প্রবেশ করলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে সলাত আদায় করলো এবং এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও এবং আবার সলাত আদায় করো, তুমি সলাত আদায় করোনি। লোকটি ফিরে গিয়ে আগের মত সলাত আদায় করে এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পুনরায় সালাম দিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সালামের জবাব দিয়ে বলেনঃ তুমি গিয়ে আবার সলাত আদায় করো, কারণ তুমি তো সলাত আদায় করোনি। এভাবে লোকটি তিনবার সলাত আদায় করলো। অতঃপর লোকটি বললো, ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি এর চাইতে উত্তমরূপে সলাত আদায় করতে পারি না। কাজেই আমাকে সলাতের পদ্ধতি শিখিয়ে দিন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি সলাতে দাঁড়ানোর সময় সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলবে। তারপর তোমার সুবিধানুযায়ী কুরআনের আয়াত পাঠ করবে, অতঃপর শান্তি ও স্থিরতার সাথে রুকূ‘ করবে, অতঃপর রুকূ‘ হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে সাজদাহ্ করবে। এরপর প্রশান্তির সাথে বসবে। এভাবেই তোমার পুরো সলাত আদায় করবে।
অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষে তাকে বললেনঃ তুমি এভাবে সলাত আদায় করলে তোমার সলাত পরিপূর্ণভাবে আদায় হবে। আর এর কোন অংশ আদায়ে ত্রুটি করলে তোমার সলাতও ত্রুটিপূর্ণ হবে। এতে আরো রয়েছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ তুমি সলাত আদায় করতে চাইলে প্রথমে উত্তমরূপে অযু করে নিবে।
বুখারী (অধ্যায় : আযান, অনুঃ সলাতসমূহে ইমাম ও মুক্তাদীর কুরআন পাঠ ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে, হাঃ ৭৫৭), মুসলিম (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ প্রত্যেক রাক‘আতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব), তিরমিযী (অধ্যায় : সলাত, অনুঃ সলাতের বৈশিষ্ট্য, হাঃ ৩০৩, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান ও সহীহ), নাসায়ী (অধ্যায় : সলাত আরম্ভ করা, অনুঃ প্রথম তাকবীর, হাঃ ৮৮৩)
,
খুশুর সহিত নামাজ পড়া মুমিনের একটি গুন,আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়।
তবে খুশু ছাড়া নামাজ পড়লে তাহা কবুল হবেনা, মর্মে কোনো হাদীস নেই।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ""খুশুর সাথে নামাজ আদায় করতে না শেখা পর্যন্ত নফল সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকা উচিত""
কথাটি ঠিক নয়।
বেশি বেশি নামাজ পড়তে পড়তেই নামাজে খুশু চলে আসবে।
যেমন বেশি বেশি সাইকেল চালাইলেই ভালো ভাবে সাইকেল চালানো শিখা যায়,ঠিক তেমনি বেশি বেশি সুন্দর করে নামাজ পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখলে ভালো ভাবে খুশুর সহিত নামাজ আদায় করা সম্ভব।
(উপরোক্ত হাদিস দ্বারা খুশুর সহিত নামাজ পড়তে আদেশ করা হয়েছে। )
.
(০২)
অর্থ না বূঝে অমনোযোগিতার সহিত যিকির করলেও ছওয়াব হয়।
তবে অমনোযোগিতার সহিত দোয়া করলে দোয়ার আদবের খেলাফ হওয়ার কারনে আল্লাহ তায়ালা সেই দোয়া সাধারনত কবুল করেননা।
তাই দোয়ার সময় অর্থ না বূঝলেও মনোযোগ রাখা দরকার।
তবে অর্থ বূঝলে আরো ভালো হবে।
,
(তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হল অর্থ না বূঝে যিকর করলে কোনো ছওয়াব নেই।)
(০৩)
নামাজে সুরা ফাতেহা ছাড়া আরো চারটি সূরা ছহীহ শুদ্ধভাবে পড়তে পারা,এবং তাহা মুখস্ত করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
,
এই প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে শুদ্ধ ভাবে পড়ে যদি সুরা ফাতেহা সহ আরো চারটি সুরা মুখস্ত করা হয়,তাহলে
কুরআন শেখার ফরজ আদায় করেছে বলে গন্য হবে।
আরো জানুনঃ