স্বামী-স্ত্রী এক অপরকে সম্মান সূচক নাম ব্যবহার করে ডাকবে। বিশেষ করে স্ত্রী তার স্বামীকে সর্বক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শন করবে।পরিবারের মধ্যে যেহেতু স্বামীর মর্যাদা স্ত্রীর চেয়ে একটু উপরে তাই স্ত্রী কখনো তার স্বামীর নাম ধরে ডাকবে না। কেননা এতে বেয়দবী মূলক আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটে।
এ সম্পর্কে ফাতাওয়া শামীতে বর্ণিত আছে।
( ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﻳﺪﻋﻮ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺃﺑﺎﻩ ﻭﺃﻥ ﺗﺪﻋﻮ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﺑﺎﺳﻤﻪ ) ﺍ ﻫـ ﺑﻠﻔﻈﻪ .
ছেলে কর্তৃক তার পিতাকে এবং স্ত্রী কর্তৃক তার স্বামীকে নাম ধরে ডাকা মাকরুহ।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ উক্ত বক্তব্যর সুস্পষ্ট ব্যখ্যা প্রদান করে বলেনঃ-
ﻗﻮﻟﻪ ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺃﻥ ﻳﺪﻋﻮ ﺇﻟﺦ ) ﺑﻞ ﻻ ﺑﺪ ﻣﻦ ﻟﻔﻆ ﻳﻔﻴﺪ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻛﻴﺎ ﺳﻴﺪﻱ ﻭﻧﺤﻮﻩ ﻟﻤﺰﻳﺪ ﺣﻘﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﻟﺪ ﻭﺍﻟﺰﻭﺟﺔ ، الخ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻹﺑﺎﺣﺔ » ﻓﺼﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺒﻴﻊ » ﻓﺮﻉ ﻳﻜﺮﻩ ﺇﻋﻄﺎﺀ ﺳﺎﺋﻞ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﻳﺘﺨﻂ ﺭﻗﺎﺏ ﺍﻟﻨﺎﺱ،٦/٤١٨.
★অবশ্য স্বামী যদি এতে মনে কষ্ট না পায় বা নিজের সম্মানহানী মনে না করে তাহলে নাম ধরে ডাকায় কোন সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন:
বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, যখন আল্লাহর রাসূল ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তার স্ত্রী হাজের এবং শিশু পুত্র ইসমাইলকে মক্কার জনমানবহীন প্রান্তরে রেখে চলে যাচ্ছিলেন তখন পেছন থেকে তার স্ত্রী তাকে ডেকেছিলেন।
বুখারী শরীফের দীর্ঘ এক হাদীসের শুরুর অংশঃ
وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: جَاءَ إِبرَاهِيمُ عليه السلام بِأُمِّ إِسْمَاعِيلَ وَبِابْنِهَا إِسْمَاعِيل وَهِيَ تُرْضِعُهُ، حَتَّى وَضَعهَا عِنْدَ البَيْتِ، عِنْدَ دَوْحَةٍ فَوقَ زَمْزَمَ فِي أَعْلَى المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ، فَوَضَعَهُمَا هُنَاكَ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَاباً فِيهِ تَمْرٌ، وَسِقَاءً فِيهِ مَاءٌ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقاً، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ فَقَالَتْ : يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الوَادِي الَّذِي لَيْسَ فِيهِ أَنِيسٌ وَلاَ شَيْءٌ ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ مِرَاراً، وَجَعَلَ لاَ يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، قَالَتْ لَهُ : آللهُ أَمَرَكَ بِهَذَا ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَتْ : إِذاً لاَ يُضَيِّعُنَا ؛ ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ إِبْرَاهِيمُ عليه السلام
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈলের মা [হাজার; যা বাংলায় প্রসিদ্ধ হাজেরা] ও তাঁর দুধের শিশু ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কা‘বা ঘরের নিকট এবং যমযমের উপরে একটি বড় গাছের তলে [বর্তমান] মসজিদের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় তাঁদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল জনমানব, না ছিল কোন পানি। সুতরাং সেখানেই তাদেরকে রেখে গেলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর আর একটি মশকে স্বল্প পরিমাণ পানি দিয়ে গেলেন।
তারপর ইব্রাহীম ফিরে যেতে লাগলেন। তখন ইসমাঈলের মা তাঁর পিছু পিছু ছুটে এসে বললেন, ‘হে ইব্রাহীম! আমাদেরকে এমন এক উপত্যকায় ছেড়ে দিয়ে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোন সঙ্গী-সাথী আর না আছে অন্য কিছু?’ তিনি বারংবার এ কথা বলতে থাকলেন। কিন্তু ইব্রাহীম সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করলেন না। তখন হাজেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে এর হুকুম দিয়েছেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘হ্যাঁ।’ উত্তর শুনে হাজেরা বললেন, ‘তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস ও বরবাদ করবেন না।’ অতঃপর হাজেরা ফিরে এলেন।
ইব্রাহীম আঃ চলে গেলেন।
সহীহুল বুখারী ২৩৬৮, ৩৩৬৩-৩৩৬৫, আহমাদ ২২৮৫, ৩২৪০, ৩৩৮০