নতুন বাসায় উঠা উপলক্ষে দুয়ার আয়োজন

Question

আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের এলাকায় একটা প্রচলন আছে যে কেউ নতুন বাসায় উঠলে প্রথমে হুজুর ডেকে দোয়া-দরুদের আয়োজন করা হয়। তারপর হুজুরকে ভালো করে খাইয়ে কিছু টাকা হাদিয়া দেওয়া হয়। এরপর বাড়ির মালিক বাসায় থাকা শুরু করে।

আমার ছোটভাই একজন হাফেজ। কওমীতে পড়ছে। এ ধরণের অনুষ্ঠানে তাকে প্রায়ই ডাকা হয়। আজ সন্ধ্যায় দুজন মহিলা এসেছিল। তারা একটু জঙ্গলমতো এলাকায় বাসা করেছে। বাসায় উঠতে ভয় পাচ্ছে। হুজুর ডেকে দোয়া-দরুদ পড়িয়ে পরেই উঠতে চাচ্ছে। দুয়া করার পর খাওয়া-দাওয়া হবে। আমার ভাইকে তারা দাওয়াত দিতে এসেছে। না খেলেও অন্তত দুয়া যেন করে আসে। ও বলল, বাসায় যাওয়ার দরকার কি? আমি মসজিদে দুয়া করে দিব নে। কিন্তু উনারা নাছোড়বান্দা। বাসায়ই যেতে হবে। পরে আমি এই বলে মানা করেছি যে এটা বিদাত হবে। নবীজি ﷺ তো কখনো নতুন বাসায় উঠা উপলক্ষে দুয়ার আয়োজন করেননি। এমন কাজ করলে গুনাহ হবে। আমার কথা শুনে উনারা মনোক্ষুণ্ণ হয়ে চলে গিয়েছেন। আমার মাথায় এটাও ছিল আমার ভাই এই কাজটা করলে এ ধরণের প্রচলন আরো শক্তিশালী হবে। দেখাদেখি অন্যরাও করবে। আমি আজ যদি এটা থামাই তাহলে অনেকেই জানবে এটা করা ঠিক না। এভাবে হয়তো এসব দূর করা যাবে।

তারা চলে যাওয়ার পরে আমার ভাই বলল যে আমি কাজটা ঠিক করিনি। নতুন বাসায় উঠার জন্য কুরআন তিলাওয়াত, দুয়া করা হবে– এটা তো বিদাত না। মিলাদ তো আর পড়ানো হচ্ছে না। মানুষকে এভাবে সরাসরি না করা উচিত না।
১. চিন্তাধারা ঠিক? আমার নাকি আমার ভাইয়ের? আমার কি এভাবে নিষেধ করা উচিত হয়নি?

২. এই যে এভাবে বাসায় উঠা উপলক্ষে সম্মিলিত দুয়া, কুরআন তিলাওয়াত করিয়ে হুজুরদের খাওয়ানো হয়, টাকা দেওয়া হয় এটাকে কি মিলাদ বলা যায় না? মিলাদের সংজ্ঞা তাহলে কী?

৩. এ ধরণের কাজ কি বিদাত নয়? আমি কি উনাদের ভুল তথ্য দিলাম?

৪.কোনো হুজুর যদি শুধু দুয়া করে আসে, টাকা নেয় না কিংবা খায় না; তবে কি তার জন্য এমন অনুষ্ঠানে যাওয়া জায়েজ হবে? এখানে সে না খেয়ে চলে আসলেও অন্য হুজুর যারা আছে তারা খাবে।

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

হাদিস শরীফে এসেছে.......... 

وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ»

তরজমা- প্রত্যেক নবসৃষ্টই বিদআত(আবু-দাউদ হাদিস নং৪৬০৭-লম্বা হাদিসের অংশ বিশেষ) উক্ত হাদিসের ব্যখ্যায় বিদআতের আলোচনা করতেড়ড়ড় যেয়ে আব্দুর রহমান মোবারকপুরি রাহ বলেন

والمراد بالبدعة ما أحدث في الدين ما لا أصل له في الشريعة يدل عليه)مراعاة المفاتيح شرح مشكاة المصابيح -ج1ص264(

তরজমা- বিদআত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো জিনিষ নবআবিস্কৃত হওয়া,যাকে শরীয়তের মূলনীতি সমর্থন দেয়না।

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/10638

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

(১)

নতুন বাসাতে উঠতে কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। এটার প্রচলন হয়ে গেলে তখন সেটা বিদ'আত হয়ে যাবে। তবে যদি কেউ এটাকে দ্বীনের অংশ মনে না করে, বরং বরকত হাসিল করার নিমিত্বে এমনিতেই কুরআন তিলাওয়াত করানোর মনে ইচ্ছা জাগে, এবং সেই অনুযায়ী সে কুরআন তিলাওয়াত নিজে করে বা অন্যকে দিয়ে করায়, তাহলে বিদ'আত হবে না। এই বিষয়টা পড়নেওয়ালা এবং পড়ানেওয়ালা উভয়ের আকিদা বিশ্বাসে থাকলে তখন বিদ'আত হবে না।

(২) 

এভাবে বাসায় উঠা উপলক্ষে সম্মিলিত দুয়া, কুরআন তিলাওয়াত করিয়ে হুজুরদের খাওয়ানো হয়, টাকা দেওয়া হয় এটাকে কি মিলাদ বলা যাবে না। মিলাদ অর্থ হল, জন্মদিন বা বার্থডে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম' এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্টান করা।

(৩)

আকিদা বিশ্বাস বিশুদ্ধ থাকলে, এটা বিদ'আত হবে না।

(৪)

দু'আ ও করা যাবে,খাওয়াও যাবে, এবং টাকাও নেওয়া যাবে। তবে শর্ত হল, উক্ত অনুষ্টানের সবাইকে এই বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করতে হবে যে, এটা দ্বীনের কোনো অংশ নয়।

Comments

সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।