আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
181 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (15 points)
ছোটবেলা থেকে দুটো ঘটনা শুনে আসছি:
১। রাসুল (সা.) এক ছেলে কে মিস্টি খাওয়া থেকে বারণ করার জন্য নিজে সাতদিন মিস্টি না খেয়ে ছিলেন যদিও তিনি মিস্টি অনেক পছন্দ করতেন।

এ দ্বারা আমাদের এই মেসেজ দেয়া হয়: কাউকে কোন কিছু থেকে বিরত রাখতে হলে নিজেকে আগে তা থেকে বিরত থাকতে হয় যেমন টা রাসুল (সা.) করেছেন।


২। ভাত যাতে নস্ট না করি তার জন্য বলা হয় প্রতিটা ভাত কবরে সাপ হয়ে কামড়াবে। রাসুল (সা.) একবার পায়খানায় ভাত পড়ে থাকতে দেখে তা উঠিয়ে পরিস্কার করে খেয়েছেন৷
একথা গুলো কি সত্যি?
আর যদি সত্যি না হয়ে থাকে তবে অনুরুপ মেসেজ সম্বলিত কোন ঘটনা বা হাদিস কি আছে যা দিয়ে সহীহ ভাবে এই মেসেজ গুলো দেয়া যায়। এই যেমন: নিজে বিরত থেকে আরেকজন কে বিরত রাখা, খাবার নস্ট না করা ইত্যাদি মেসেজ যা উপরে উল্লেখ করেছি।

1 Answer

0 votes
by (559,530 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
প্রচলিত ঘটনাটি হলোঃ
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের কাছে মদিনার এক ইহুদী আসে। সে ছিল গরিব, রুটি বানানোর কাজ করতো। তার ছেলে অধিক পরিমাণে মিষ্টি খেত। সে সময় আরবে মিষ্টি ছিল দামী খাবার। 
,
তাই ওই ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেন তার পুত্রকে কম মিষ্টি খাওয়ার নির্দেশ দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে বললেন তিনদিন পড়ে দেখা করতে।

তিনদিন পর আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম তার ছেলেকে মিষ্টি কম খাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ওই ব্যক্তি এবং উপস্থিত সাহাবীগণ বিস্মিত হয়ে রাসূলকে জিজ্ঞেস করলেন যে, রাসূল (সা.) কেন তিনদিন আগে তার ছেলেকে মিষ্টি খেতে নিষেধ করলেন না। 
,
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন যে, তিনি নিজেই মিষ্টি খাওয়া অত্যধিক পছন্দ করেন। তাই এই তিনদিন মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে ওই ব্যক্তির ছেলেকে মিষ্টি খাওয়া কমাতে বলেন। 

কোনো কাজের কথা অন্যকে বলতে হলে আগে নিজে আমল করা উচিত- এ বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য এ কিসসাটির অবতারণা করা হয়। অথচ এটি একটি বানোয়াট কিসসা; এর কোনোই ভিত্তি নেই। এর কোনো সনদ ও হাদীসের কিতাব থেকে সুত্রও পাওয়া যায় না। 
۔
(০২)
এটিও বানোয়াট ঘটনা
হাদীসের কিতাবে এমন কোনো ঘটনা খুজে পাওয়া যায়না।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কোনো বিষয়ে অন্যকে উপদেশ দেয়া বা নিষেধ করা আর নিজে সে অনুযায়ী আমল না করা বা বিরত না থাকা নিন্দনীয়। 
,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا لاَ تَفْعَلُوْنَ ‘
হে ঈমানদারগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না? আল্লাহর নিকট বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা, যা তোমরা কর না (ছফ ২-৩)।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسْرِىَ بِى رِجَالاً تُقْرَضُ شِفَاهُهُمْ بِمَقَارِيضَ مِنْ نَارٍ فَقُلْتُ يَا جِبْرِيلُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ خُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنْسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.

আনাস ইবনু মালিক বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে রাতে আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে রাতে কতগুলি লোককে দেখলাম, যাদের ঠোট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিবরাঈল! এরা কারা? তিনি বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, যারা মানুষকে ভাল কাজের আদেশ করত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। তারা কুরআন তেলাওয়াত করত, তারা কুরআন চর্চা করত না’ (ইবনু হিববান, তারগীব, হা/৩৩২৮)।

عَنْ جُنْدُبِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْأَزْدِي صَاحِبُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رضي الله عنه عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَثَلُ الَّذِي يُعَلِّمُ النَّاسَ الْخَيْرَ وَيَنْسَى نَفْسَهُ كَمَثَلِ السِّرَاجِ يُضِيءُ لِلنَّاسِ وَيُحْرِقُ نَفْسَهُ.

জুনদুব ইবনু আব্দুল্লাহ আযদী বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সে ব্যক্তি উদাহরণ যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের দাওয়াত দেয়, নিজে আমল করে না। সে সেই মোমবাতির মত, যে মোমবাতির মত। যে মোমবাতি মানুষকে আলো দেয় এবং নিজেকে জ্বালিয়ে দেয়’ (তাবারানী, তারগীব, হা/৩৩৩১)।
    
 وَعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ حَارِثَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ : يَا فُلانُ، مَا لَكَ ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ ؟ فَيقُولُ : بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

  আবু যায়দ উসামাহ ইবনে যায়দ ইবনে হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ [বুখারি৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২]

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
নিজে বিরত থেকে আরেকজন কে বিরত রাখা, এর উপর উপরোক্ত আয়াত হাদীস দিয়ে সহীহ ভাবে মেসেজ দিতে পারবেন।

খাবার নস্ট না করা,এর উপর অপচয়ের আয়াত দিয়ে সহীহ ভাবে মেসেজ দিতে পারবেন।

যেমন,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا، إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ، 

‘তুমি অপব্যয় করবে না, নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৬-২৭)।

অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ،

‘তোমরা এগুলির ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং এগুলির হক আদায় কর ফসল কাটার দিন। আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ (আন‘আম ৬/১৪১)।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...