আসসালামু আলাইকুম হুজুর।
(১) আমি ইসলামিক বই পড়তে চাই। কিন্তু বই পড়তে গেলে মনে হয় -
আমার ভাষা যেন সুন্দর হয়, তাই আমি বই পড়ছি।
কথা বলার সময় আমি খুব সুন্দর সুন্দর বাক্য ব্যবহার করতে পারবো।
আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় আমি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবো, যা আমি বই থেকে শিখেছি, সে ভাববে আমি অনেক কিছু জানি।
এমন সব কথা মনে আসাতে আমি বই পড়া শুরু করতে পারছি না। এসব কথা মনে আসাতে এখন আমি বই পড়লে কি গুনাহ হবে??
(২) আমি বাম দিকে ঘুরে শুতে গেলে মনে হয় -আমি ডান দিকে ঘুরে শোয়াকে সুন্নাত মনে করি না, তাই বাম দিকে ঘুরে শুচ্ছি। এমন কথা মনে আসাতে আমি গত কয়েকদিন ধরে একইভাবে ডান দিকে ঘুরে শোয়াতে আল্লাহ আমাকে ডান হাত ও কাধ ব্যাথা করে দিয়েছেন।
এখন যে বাম দিকে ঘুরে শোবো কিন্তু আবার মনে হচ্ছে যে, আমি ডান দিকে ঘুরে শোয়াকে সুন্নাত মনে করি না।
তবু এখন যদি আমি বাম দিকে ঘুরে শুই তাহলে কি আমার ঈমানের ক্ষতি হবে??
সকল কিছুর মালিক ও সকল কিছু করার মালিক শুধুমাএ আল্লাহ। "আল্লাহ ব্যাথা করে দিয়েছেন " এভাবে বলা যাবে কি?
(৩) কারা হিদায়েত পায়না সেই বিষয়ে হুজুর কথা বলছিলেন। তখন এক শ্রেনীর লোকের কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন যে, যাদের নিজের বুদ্ধির চেয়ে শক্তিশালি কিছু পেলে তা গ্রহন করার মানসিকতা থাকে, এটা হেদায়েতপ্রাপ্ত মানুষের লক্ষন ।
এই কথাটি হুজুর সম্পূর্ন শেষ করার আগেই আমার মনে হচ্ছিল যে, হুজুর বলবেন এরা হেদায়েত পায়না। মনে হবার পাশাপাশি মুখেও "হুম" বলেছিলাম কিনা মনে পড়ছে না। এরুপ ভুল ভাবার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
(৪) ওজু করতে করতে মসজিদের হুজুরকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, " ওজু করতে করতে সালাম দেওয়া যায় আমি মানি, কিন্তু সালাম দিলে তারা মনে করবে আমি কিছু জানি না, বা ওজু করতে করতে সালাম দিতে হয়না বলে হয়তো ফিতনা হতে পারে "।
এমন অনেক কথা মনে আসছিল। এতে কি আমার রিয়া বা গুনাহ হবে?
(৫) আজ নামাজে সিজদায় গিয়ে মনে হচ্ছে আমি আমার বন্ধুকে সিজদা করছি। এমন ভাবনা আমার প্রায়ই আসে। তারপর আর নামাজে মনোযোগ দিতে পারি না। খুবই খারাপ লাগে। এছাড়াও নামাজের ভিতরে আমার অনেক শিরিকি চিন্তা ভাবনাও আসে। এসব খারাপ চিন্তা ভাবনা আসলেই আমি নামাজের ভিতর আনইউজুয়াল এ্যাকটিভিটি করি। সিজদায় গিয়ে হাতের আংগুল দিয়ে মাথায় চাপ দি। ডান হাত দিয়ে বাম হাতে চাপ দি। হাত মুঠো মেরে ফেলি। তাজবিহ পড়া জোরে হয়ে যায়। এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৬) আমার ওই বন্ধু কোথাও গেলে ফোন করে খোজ খবর করতেও ভয় লাগে, মনে হয় আমি তাকে আল্লাহ বলে বিশ্বাস করি। তাই ফোন করতে ভয় লাগে। মনে হয় আমার ঈমান চলে যাবে মনে হয়। এমন অনেক সাংঘাতিক রকমের আজে বাজে কথা আমার মাথায় আসে। আমি পাগলপ্রায় শায়েখ। দুপুরে এসব কথা মনে হওয়া সর্তেও আমি আমার বন্ধুকে ফোন করলাম। এসব কথা মনে আসাতে আমার ঈমান কি চলে যাবে শায়েখ??
(৭) যেসব কথায় ইনশা-আল্লাহ বলা উচিত, সেসব কথার পরে যদি আমি ইনশা-আল্লাহ না বলি তাহলে মনে হয় আমি মনে হয় এসব বিশ্বাস করি না। তাই বললাম না। এমন মনে হয়।
ওয়াশরুমে ঢোকার পর দোয়া পড়ার কথা মনে হবার পর মনে হলো,দোয়া পড়া লাগবে না। এসব উল্টা পাল্টা কথা মাথায় আসাতে ঈমান চলে যাবে এই ভয়ে আমি মানসিকভাবে খুবই কষ্ট পায় শায়েখ।
আবার,ওয়াশরুমে যাবার পর রাসুল (সা:) কে নিয়ে মনে হলো যে, তিনি ভন্ড নবি।
আবার, একটা ভিডিওতে নাস্তিকের একটি ঘটনা বলা হচ্ছিল। নাস্তিক বলছিল যে, আমরা আল্লাহকে হত্যা করেছি।
কিন্তু ওর কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল যে, ও অনুতপ্ত। হয়তো কোন ভাল কথা বলবে সেকথা ভাবছিলাম। এবং যে লোক ভিডিওতে ঘটনাটি বর্ননা করছিল তার কথা শুনে আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষন পরে বুঝতে পারলাম যে, না সে অনুতপ্তকারি নাস্তিকদের কথা বলছিল না। তাই এখন আমার মনে হচ্ছে যে, আমি তাকে অকারনে অনুতপ্ত ভাবছিলাম, ও আমরা আল্লাহকে হত্যা করেছি এমন কথা শুনে আমার গায়ের লোম দাড়িয়ে যাবার কারনে কি আমি ঈমানহারা হয়ে যাবো?
(৮) আজকে মনে হচ্ছিল আমি শুন্যে হাতের আংগুল ঘুরিয়ে তালাক লিখছি। যদিও পুরো বাক্য লিখিনি। আবার, হাতের একটা আংগুল একটু চাপার পর মনে হচ্ছিল যে, আমি টিপ সই দিয়ে তালাক দিলাম। এমন মনে হওয়াতে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(৯) ভাত খেতে খেতে খাওয়ার সুন্নাত নিয়ে মনে একটা খুব খারাপ গালি আসলো। অনেক সময় আল্লাহকে নিয়ে মনে বিভিন্ন প্রকারের গালি গালাজ আসে। মনে অনেক ধরনের শিরিকি কুফুরি চিন্তা আসে। এমনকি ঘুমের ঘোরেও বিভিন্ন আজে বাজে স্বপ্ন আসে, যেমন আমি পূজা করছি। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি শায়েখ। আমি ভাল কিছু চিন্তা করতে পারি না। মনে প্রতিটা বিষয় নিয়ে খারাপ কথা মনে আসে। যা খুবই নোংরা। মাঝে মাঝে মনের ভিতর হয় যে, আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না। আল্লাহ বলে কেউ নেই, এমন কথাও মনে আসে। এসব কথাগুলি উচ্চারন করে ফেলছি কিনা তাতেও মনে সন্দেহ লাগে। আবার, খাওয়ার সময় মনে হয় যে, সব ভাত খেলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে তাই সব খাওয়া যাবে না।
এগুলার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১০) খাটের চাদরে ও কোম্বলে বির্য লাগার পর তা শুকিয়ে গেলে, সেখানে শোয়া হলে কি শরিল ও জামা কাপড় পাক থাকবে?
সহবাস করার সময় বেশিরভাগ সময়ই চাদরে বির্য লেগে যায়। প্রতিদিন চাদর ধোয়াতো একটু কষ্টকর। তাই কি সাবধানতা মানলে চাদর না ধুলেও সমস্যা হবে না ?
"প্রতিদিন চাদর ধোয়া কষ্টকর" যখন আমি লিখছিলাম তখন আমার মনে রাগ হচ্ছিল।
এভাবে রাগ নিয়ে লেখার জন্য কি আমার ঈমানে চলে যাবে শায়েখ??
(১১) আমাদের এক হিন্দু স্যার আছে। স্যার একদিন সন্ধায় অফিসে আসার পর আমাদের নামাজে পড়তে যাবার কথা বলছিল। তাই আমি একজনকে আমাদের স্যারের ব্যাপারে বলছিলাম যে, " আমাদের স্যার হিন্দু কিন্তু তিনি নামাজকে শ্রদ্ধা করে "। একথা বলার পর তখনি আমার মনের ভিতর আসলো যে, " আমাদেরও হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত "।এমন কথা মনে আসলো।
তারপর থেকে কথাটি বারবার মাথায় আসছে, আর আমি উচ্চারন করে বলছি যে, " একমাএ সত্য ধর্ম ইসলাম। হিন্দু ধর্ম মিথ্যা। মিথ্যা ধর্মের আবার শ্রদ্ধা কিসের? "।
এমন মনে মনে ভাবছি। কিন্তু আমার মনে একবার কিছু আসলে সেটা বার বার মনে করতেই থাকি। আর আমার মনে " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত" মনে বার বার আসছে। রাতে বার বার মনে মনে বলছি যে, " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করি "।
-এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
-আমাদের ইসলাম ধর্ম অন্য ধর্মকে কি শ্রদ্ধা করার অনুমতি দেই?
(১২) আমার এক ভাইয়ের সাথে বিদেশি ভাইদের ইনকাম বেশি সেই বিষয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলার সময় আমি বললাম যে, " তাদের ইনকাম বেশি হবার কারন তারা অযথা সময় নষ্ট করে না "।
এই কথা বলার পর মনে হচ্ছে, " আমি মনে হয় অযথা সময় নষ্ট করা বলতে নামাজ পড়ার কথা বললাম "। এমন কথা মনে আসছে। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১৩) আমি দোকানে বসে কিছু খাচ্ছিলাম। তখন আমার বন্ধু আসছিল, তখন আমি আমার বন্ধু বাপ্পিকে বললাম যে, " বিল দেন "।
তখন আমার বন্ধু বাপ্পি দোকানদেরকে বললো বাকিটা লিখে রাখতে। এরপর আমি দোকান থেকে বেরোতো বেরোতো বাপ্পি টাকা দেবে এই উদ্দেশ্য করে দোকানদারকে বললাম যে, "বাপ্পির নামে"।
একথা বলার পর থেকে আমার মনে হতে থাকে যে, " আমি আমার বন্ধুর নামে খাচ্ছি বা আমি আমার বন্ধুকে রিযিকদাতা মনে করলাম মনে হয়। এমন কথা মনে আসতে থাকে। আর আমার খারাপ লাগতে শুরু হয়।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১৪) একটা ওয়াজে হুজুর বললো যে, আল্লাহর গ্যানের বাইরে কি আমরা যেতে পারবো?
এটা শোনার পর আমি অত কিছু না বুঝে বললাম যে, হুম। কারন,আমি তখন মোবাইলে প্রশ্ন লিখছিলাম। তাই অতটা খেয়াল না করে "হুম" বলেছি।
এখন মনে হচ্ছে, আমি বললাম যে - আমরা আল্লাহর গ্যানের বাইরে যেতে পারবো বললাম। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে??