আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
207 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (15 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,

আমি ওসিডি বা এক প্রকার মানসিক রোগে আক্রান্ত। সবসময় মনে বিভিন্ন ধরনের আজে বাজে চিন্তা আসে। বিশেষ করে আল্লাহ, নবি(সা:), কোরআন ও তালাক নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা মনে আসে। ঈমানহারা হয়ে গেলাম ভেবে সবসময় সন্দেহ হতে থাকে। প্রতিদিন ঈমান নিয়ে কত প্রকার সন্দেহ ও প্রশ্ন আসে তার ঠিক নাই। একটার পর একটা সন্দেহ মনে আসতেই থাকে। কিছু উদাহারন : -

(১) একটা গল্পে "কষ্ট না  করলে" লেখা ছিল। কিন্তু শব্দটা পড়ার সময় আমার মনের ভিতর হচ্ছিল যে, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।
আমি গত কয়েকমাস আগে জেনেছিলাম যে, এমন কথা বলতে হয় না। এর আগে কত বলেছি ঠিক নাই। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?

(২) একটা ঘটনা পড়লাম এমন যে : একটা অমুসলিম মসজিদের পাস দিয়ে যাবার সময় তালিমের একটা মজলিস দেখতে পেলেন। সেখানে একজন লোক পড়ছিল। আর বাকিরা ঘুমাচ্ছিল। লোকটা সেখানে যাওয়ার পর পড়তে থাকা লোকটাকে জিগ্গাসা করলো যে, বাকিরা এত শান্তিতে কিভাবে ঘুমাচ্ছে? পড়তে থাকা লোকটি তাকে তালিম নিয়ে কিছু কথা বলার পর লোকটাও ওখানে ঘুমিয়ে গেল। এমন একটি ঘটনা। এই ঘটনা পড়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল যে, এটা বানোয়াট ঘটনা। এমন মনে হওয়াতে কি আমার ঈমানে কোন সমস্যা হবে?

(৩) মসজিদে বসে মনে মনে কল্পনা হচ্ছিল যে, আমার শশুর অন্য একজনকে দেখিয়ে বলছে যে, এটা আমার জামাই, এমন কল্পনা মনে আসার জন্য কি কোন সমস্যা হবে শায়েখ??

(৪) সাধারনত আমি নামাজে দাড়িয়ে মনে করি যে আমি কোন ওয়াক্তের কি নামাজ পড়ছি। কিন্তু আজ যোহরের নামাজে তাকবির তাহরিমা দিতে দিতে আমি মনে করতে পারছিলাম না যে, আমি কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়ছি, আমি যোহর শব্দটা মনে করতে পারছিলাম না, ফজরের কথা মনে আসছিল। ততোক্ষনে আমি হাত বেধে ফেলেছি। হাত বাধার পর আমার মনে আসলো যে, আমি যোহরের নামাজ পড়ছি। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে, আমি নিয়ত ঠিক করে নামাজ ভেংগে আবার শুরু করি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে, নামাজ ভেংগে ফেললে পাশের লোক কি ভাববে?
এমন চিন্তা মাথায় আসছিল, এবং আমি নামাজ চালিয়ে গেলাম। পুরা নামাজে আমার মনে কনফিউশন কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল আমার নামাজ হচ্ছে না।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে??

(৫) আমার এক বন্ধু চাদ দিখন্ডিত করা হয়েছে এই ব্যাপারে কথা বলছিল। কিন্তু কেন জানি আমি অন্তর থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। মুখে হুম হুম বলছিলাম। আমি অনেক আগে থেকে এই ঘটনা শুনে আসছি, কিন্তু সেভাবে কখনো কোরআন হাদিসের কোথায় এই ঘটনা আছে সেটা ভালভাবে দেখা হয়নি।

তারপর, মসজিদে নামাজ পড়তে যাবার পর এই কথা নিয়ে বার বার ভাবছিলাম, আর মনে কনফিউশন কাজ করছিল। নামাজ পড়ে আসার পর আমি এই ব্যাপারে গুগলে সার্চ করলাম। করার পর সর্বপ্রথম যেই আর্টিকেলটা আসলো সেটা পড়ছিলাম। পড়ার শেষের দিকে যেয়ে বুঝতে পারলাম এটা কোন অমুসলিমের লেখা। তারপর কোরআনে দেখলাম যে, চাদ দিখন্ডিত হয়েছে ও অমুসলিমরা তাকে যাদু বলেছিল। এটা দেখার পর আমি বিশ্বাস করি হ্যা মহানবি (সা:) এর হাতের ইশারায় আল্লাহ চাদকে দিখন্ডিত করেছেন। তারপর আবার গুগলের করা সার্চ থেকে আরেকটা ওয়েব সাইটে এটা সম্পর্কে হাদিস দেখছিলাম। তখনি মনে হলো যে, আমি মনে হয় কোরআনকে যথেষ্ট মনে করছি না, তাই আবার হাদিস দেখছি। তারপর থেমে গেলাম।  এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??

(৬) আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে মনের ভিতর হচ্ছে যে, এখন আর নামাজে যাবো না, কাল অমক সময় থেকে আবার শুরু করবো। একথা মনে হবার সাথে সাথে আবার মনে হচ্ছে যে, আমি মনে হয় নামাজ না পড়লেও চলবে ভাবছি, নামাজ না পড়লে আমি কাফের হয়ে যাবো। এমন কথা মনে আসছে। আবার যোহরের সুন্নাত না পড়লে মনে হয় যে, এই সুন্নত না পড়লেও চলবে এমন মনে আসে। এজন্য আমি সুন্নাত পড়ার চেষ্টা করি। বিতের নামাজ আজ পড়বো না মনে আসলেই মনে হয় যে, আমি মনে হয় বেতের নামাজের গুরুত্ব দিচ্ছি না, এমন মনে হয়।
আজকে মনের ভিতর আসলো যে, আমি কাফের হয়ে যাবো সেই ভয়ে নামাজ পড়ছি। তাছাড়া আল্লাহকে খুশি করার জন্য পড়ছি না। এমন কথা মনে হচ্ছে। এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে??

(৭) নামাজে যেতে মনে আসলো যে, যে নামাজ পড়ে না সে কাফের। এটা মনে আসার সাথে সাথে আমি বলে ফেলেছি যে, অবশ্যই।
এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে?

(৮) একটা হুজুর দরুদ পড়া নিয়ে বলছিলেন যে, দরুদ পড়া হলো নবি (সা) এর উপর সলাতুস সালাম পেস করা, দোয়া করা,নবি  (সা) কে সালাম দেয়া।
আমার মনে হলো তিনি বলছেন যে, নবির নামে নামাজ,দোয়া ও সালাম পাঠাতে হবে। আমার বোঝার ভুল হলেও হতে পারে।

আমার প্রশ্ন হলো যে, দরুদ পড়ার মানে নবি (সা:) এর জন্য দোয়া করা ও সালাম দেওয়া। নামাজ তো শুধুমাএ আল্লাহর জন্য।
আমি কি সঠিক শায়েখ?
এখানে সঠিক বুঝটা কি হবে শায়েখ?
এই প্রশ্ন করাতে কি আমার ঈমানের কোন সমস্যা হবে শায়েখ?

(৯) নামাজ পড়তে যাবার উদ্দেশ্যে রাতে উঠলাম গোছল করার জন্য। ওয়াশরমে থাকা কালিন মনে আসলো যে, গেলে চলে যাও। তালাক।

একথা মনে আসা মাএ মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর গোছল করা হলো না, এবং নামাজেও যেতে পারলাম না। সকালে ভাবলাম দুপুর থেকে নামাজে যাবো। গোছল করার সময় মনে হলো লুংগির পানি ঘাড়ে পড়লো। তখন থেকে মন খুতমুত করতে শুরু হলো। দুপুরে মনে হলো রাত থেকে নামাজ শুরু করবো। তারপর আবার মনে হচ্ছে একবারে কাল রাএি থেকে নামাজ শুরু করবো। এতে কও আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??

1 Answer

0 votes
by (573,960 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহঃ তার বিখ্যাত ফাতওয়া গ্রন্থ ফাতওয়া শামীতে উল্লেখ করেন-

لا خلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام من حدوث العالم وحشر الأجساد ونفي العلم بالجزئيات وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات كما في شرح التحرير (رد المحمتار، كتاب الصلاة، باب الإمامة، مطلب البدعة خمسة أقسام -2/300)

 আহলে কিবলার মধ্য থেকে যে ব্যক্তি দীর্ঘ জীবন পর্যন্ত ইবাদত বন্দেগীর করার পরও যদি পৃথিবী সৃজিত, সশরীরে হাশরের ময়দানে উঠতে হবে, বা আল্লাহ তাআলার জ্ঞান সর্বত্র বিস্তৃত এরকম আবশ্যকীয় দ্বীনী বিষয়কে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যে, কাফের এতে কোন মতভেদ নেই। {ফাতওয়া শামী-২/৩০০} শরহে আকাইদে নাসাফিয়্যাহ এর ব্যখ্যাগ্রন্থ নিবরাস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

اهل القبلة فى اصطلاح المتكلمين من يصدق بضروريات الدين (الى قوله) فمن انكر شيئا من الضروريات (الى قوله) لم يكن من اهل القبلة، ولو كان مجاهد بالطاعات وكذالك من باشر شيئا من امارات التكذيب كسجدة الصنم ولاإهانة بامر شرعى والإستهزاء عليه فليس من اهل القبلة ان لا يكفر بارتكاب المعاصى ولا بانكار الامور الخفية غير المشهورة هذا ما حققه المحققون، 

আহলে কিবলা মুতাকাল্লিমীন তথা আক্বায়িদবীদতের পরিভাষায় ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি দ্বীনের আবশ্যকীয় সকল বিষয়কে বিশ্বাস স্বীকার করেন। জরুরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের কোন একটিকেও যদি অস্বিকার করে তাহলে সে আহলে কিবলা নয়। যদিও সে ইবাদত বন্দেগীতে খুবই তৎপর হয়। এমনিভাবে ঐ ব্যক্তি ও আহলে কিবলা নয়, যে কুফরী বা বাতিলের কোন একটি বিষয়ও করে থাকে, যেমন মুর্তিপূজা করা, অথবা শরয়ী কোন বিষয়কে ঠাট্টা করা, মজা করা, তাহলে এ ব্যক্তিও আহলে কিবলা নয়। আর আহলে কিবলাকে কাফির না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, গোনাহ করার কারণে কোন আহলে কিবলাকে কাফের বলা হবে না। সাথে এমন বিষয়কে অস্বিকার করলেও কাউকে কাফের বলা যাবে না যা জরূরিয়্যাতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। {নিবরাস} 

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
দ্বীনের অকাট্য বিষয়, যেগুলোর বিপক্ষে বললে/অস্বীকার করলে/ঠাট্রা করলে ইমানে সমস্যা হবে,তাহা হলো কুরআন দ্বারা প্রমানীত কোনো বিধান।

তবে এক্ষেত্রে কুরআনের যেকোনো আয়াত,যেকোনো হাদীস অস্বীকার করলে/ঠাট্রা করলে ইমানে সমস্যা হবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

 قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُوْلِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ، لاَ تَعْتَذِرُوْا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيْمَانِكُمْ 

‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, ঈমান আনার পর তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ’ (তওবা ৬৫-৬৬)। 

 فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ 

‘সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি’ (ইউনুস ১১)। 

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا-
‘আর কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)। 

আরো জানুনঃ- 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০২)
এমন মনে হওয়াতে আপনার ঈমানে কোন সমস্যা হবেনা।

(০৩)
এমন কল্পনা মনে আসার জন্য কোন সমস্যা হবেনা।

(০৪)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৫)
এসবের জন্য আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৬)
এসবের জন্য আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৭)
এজন্য আপনার ঈমান চলে যাবেনা।

(০৮)
আপনার বুঝ সঠিক।
এই প্রশ্ন করাতে আপনার ঈমানের কোন সমস্যা হবেনা।

(০৯)
এতে আপনার ঈমান চলে যাবেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...