আসসালামু আলাইকুম হুজুর,
আমি ওসিডি বা এক প্রকার মানসিক রোগে আক্রান্ত। সবসময় মনে বিভিন্ন ধরনের আজে বাজে চিন্তা আসে। বিশেষ করে আল্লাহ, নবি(সা:), কোরআন ও তালাক নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা মনে আসে। ঈমানহারা হয়ে গেলাম ভেবে সবসময় সন্দেহ হতে থাকে। প্রতিদিন ঈমান নিয়ে কত প্রকার সন্দেহ ও প্রশ্ন আসে তার ঠিক নাই। একটার পর একটা সন্দেহ মনে আসতেই থাকে। কিছু উদাহারন : -
(১) একটা গল্পে "কষ্ট না করলে" লেখা ছিল। কিন্তু শব্দটা পড়ার সময় আমার মনের ভিতর হচ্ছিল যে, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না।
আমি গত কয়েকমাস আগে জেনেছিলাম যে, এমন কথা বলতে হয় না। এর আগে কত বলেছি ঠিক নাই। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
(২) একটা ঘটনা পড়লাম এমন যে : একটা অমুসলিম মসজিদের পাস দিয়ে যাবার সময় তালিমের একটা মজলিস দেখতে পেলেন। সেখানে একজন লোক পড়ছিল। আর বাকিরা ঘুমাচ্ছিল। লোকটা সেখানে যাওয়ার পর পড়তে থাকা লোকটাকে জিগ্গাসা করলো যে, বাকিরা এত শান্তিতে কিভাবে ঘুমাচ্ছে? পড়তে থাকা লোকটি তাকে তালিম নিয়ে কিছু কথা বলার পর লোকটাও ওখানে ঘুমিয়ে গেল। এমন একটি ঘটনা। এই ঘটনা পড়ার সময় আমার মনে হচ্ছিল যে, এটা বানোয়াট ঘটনা। এমন মনে হওয়াতে কি আমার ঈমানে কোন সমস্যা হবে?
(৩) মসজিদে বসে মনে মনে কল্পনা হচ্ছিল যে, আমার শশুর অন্য একজনকে দেখিয়ে বলছে যে, এটা আমার জামাই, এমন কল্পনা মনে আসার জন্য কি কোন সমস্যা হবে শায়েখ??
(৪) সাধারনত আমি নামাজে দাড়িয়ে মনে করি যে আমি কোন ওয়াক্তের কি নামাজ পড়ছি। কিন্তু আজ যোহরের নামাজে তাকবির তাহরিমা দিতে দিতে আমি মনে করতে পারছিলাম না যে, আমি কোন ওয়াক্তের নামাজ পড়ছি, আমি যোহর শব্দটা মনে করতে পারছিলাম না, ফজরের কথা মনে আসছিল। ততোক্ষনে আমি হাত বেধে ফেলেছি। হাত বাধার পর আমার মনে আসলো যে, আমি যোহরের নামাজ পড়ছি। তখন আমার মনে হচ্ছিল যে, আমি নিয়ত ঠিক করে নামাজ ভেংগে আবার শুরু করি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে, নামাজ ভেংগে ফেললে পাশের লোক কি ভাববে?
এমন চিন্তা মাথায় আসছিল, এবং আমি নামাজ চালিয়ে গেলাম। পুরা নামাজে আমার মনে কনফিউশন কাজ করছিল। মনে হচ্ছিল আমার নামাজ হচ্ছে না।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে??
(৫) আমার এক বন্ধু চাদ দিখন্ডিত করা হয়েছে এই ব্যাপারে কথা বলছিল। কিন্তু কেন জানি আমি অন্তর থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। মুখে হুম হুম বলছিলাম। আমি অনেক আগে থেকে এই ঘটনা শুনে আসছি, কিন্তু সেভাবে কখনো কোরআন হাদিসের কোথায় এই ঘটনা আছে সেটা ভালভাবে দেখা হয়নি।
তারপর, মসজিদে নামাজ পড়তে যাবার পর এই কথা নিয়ে বার বার ভাবছিলাম, আর মনে কনফিউশন কাজ করছিল। নামাজ পড়ে আসার পর আমি এই ব্যাপারে গুগলে সার্চ করলাম। করার পর সর্বপ্রথম যেই আর্টিকেলটা আসলো সেটা পড়ছিলাম। পড়ার শেষের দিকে যেয়ে বুঝতে পারলাম এটা কোন অমুসলিমের লেখা। তারপর কোরআনে দেখলাম যে, চাদ দিখন্ডিত হয়েছে ও অমুসলিমরা তাকে যাদু বলেছিল। এটা দেখার পর আমি বিশ্বাস করি হ্যা মহানবি (সা:) এর হাতের ইশারায় আল্লাহ চাদকে দিখন্ডিত করেছেন। তারপর আবার গুগলের করা সার্চ থেকে আরেকটা ওয়েব সাইটে এটা সম্পর্কে হাদিস দেখছিলাম। তখনি মনে হলো যে, আমি মনে হয় কোরআনকে যথেষ্ট মনে করছি না, তাই আবার হাদিস দেখছি। তারপর থেমে গেলাম। এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৬) আমি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে মনের ভিতর হচ্ছে যে, এখন আর নামাজে যাবো না, কাল অমক সময় থেকে আবার শুরু করবো। একথা মনে হবার সাথে সাথে আবার মনে হচ্ছে যে, আমি মনে হয় নামাজ না পড়লেও চলবে ভাবছি, নামাজ না পড়লে আমি কাফের হয়ে যাবো। এমন কথা মনে আসছে। আবার যোহরের সুন্নাত না পড়লে মনে হয় যে, এই সুন্নত না পড়লেও চলবে এমন মনে আসে। এজন্য আমি সুন্নাত পড়ার চেষ্টা করি। বিতের নামাজ আজ পড়বো না মনে আসলেই মনে হয় যে, আমি মনে হয় বেতের নামাজের গুরুত্ব দিচ্ছি না, এমন মনে হয়।
আজকে মনের ভিতর আসলো যে, আমি কাফের হয়ে যাবো সেই ভয়ে নামাজ পড়ছি। তাছাড়া আল্লাহকে খুশি করার জন্য পড়ছি না। এমন কথা মনে হচ্ছে। এসবের জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে??
(৭) নামাজে যেতে মনে আসলো যে, যে নামাজ পড়ে না সে কাফের। এটা মনে আসার সাথে সাথে আমি বলে ফেলেছি যে, অবশ্যই।
এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে?
(৮) একটা হুজুর দরুদ পড়া নিয়ে বলছিলেন যে, দরুদ পড়া হলো নবি (সা) এর উপর সলাতুস সালাম পেস করা, দোয়া করা,নবি (সা) কে সালাম দেয়া।
আমার মনে হলো তিনি বলছেন যে, নবির নামে নামাজ,দোয়া ও সালাম পাঠাতে হবে। আমার বোঝার ভুল হলেও হতে পারে।
আমার প্রশ্ন হলো যে, দরুদ পড়ার মানে নবি (সা:) এর জন্য দোয়া করা ও সালাম দেওয়া। নামাজ তো শুধুমাএ আল্লাহর জন্য।
আমি কি সঠিক শায়েখ?
এখানে সঠিক বুঝটা কি হবে শায়েখ?
এই প্রশ্ন করাতে কি আমার ঈমানের কোন সমস্যা হবে শায়েখ?
(৯) নামাজ পড়তে যাবার উদ্দেশ্যে রাতে উঠলাম গোছল করার জন্য। ওয়াশরমে থাকা কালিন মনে আসলো যে, গেলে চলে যাও। তালাক।
একথা মনে আসা মাএ মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর গোছল করা হলো না, এবং নামাজেও যেতে পারলাম না। সকালে ভাবলাম দুপুর থেকে নামাজে যাবো। গোছল করার সময় মনে হলো লুংগির পানি ঘাড়ে পড়লো। তখন থেকে মন খুতমুত করতে শুরু হলো। দুপুরে মনে হলো রাত থেকে নামাজ শুরু করবো। তারপর আবার মনে হচ্ছে একবারে কাল রাএি থেকে নামাজ শুরু করবো। এতে কও আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??