ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
(ক) কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।( সূরা আত-তাহরীম: ৬)
আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وولدِهِ وَهِي مسؤولةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنهُ أَلا فكلُّكُمْ راعٍ وكلكُمْ مسؤولٌ عَن رعيتِه»
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বাধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, রাষ্ট্রনেতা তার প্রজাদের সম্পর্কে দায়িত্বশীল আর তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, তাকে তাদের পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীলা, তাকে সেটার পরিচালনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। একজন পরিচারক তার মালিকের সম্পদের সংরক্ষক, আর তাকে সেটার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক কথায় তোমরা সবাই দায়িত্বশীল আর সবাই জিজ্ঞাসিত হবে সে দায়িত্ব সম্পর্কে”।[সহীহ বুখারী : ৭১৩৮; সহীহ মুসলিম ১৮২৯, আবূ দাঊদ ২৯২৮, তিরমিযী ১৭০৫, আহমাদ ৫১৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ১৯২২]
দাইয়ুস যে জান্নাতে যাবে না; এ মর্মে একাধিক হাদিস রয়েছে। যেমন, এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللهَ سُبْحَانَهُ وَتَعَالٰى لَمَّا خَلَقَ الْجَنَّةَ قَالَ : وَعِزَّتِيْ وَجَلاَلِيْ لَا يَدْخُلُكِ بَخِيْلٌ وَلَا كَذَّابٌ وَلَا دَيُّوْثٌ
নিশ্চয়ই সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু তাআ’লা যখন জান্নাত সৃষ্টি করেছেন তখন জান্নাতকে বলেছেন, আমার সম্মান-গৌরব ও পরাক্রমশালীর শপথ, কৃপণ (সম্পদে আল্লাহ তা‘আলার অধিকার বিনষ্টকারী), মিথ্যাবাদী (কোরআন-সুন্নাহকে মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী) এবং দাইয়ুস ব্যক্তি তোমার মধ্যে প্রবেশ করবে না। (নাসাঈ, যাকাত অনুচ্ছেদ ২৫৬২ মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৪)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন :
‘দাইউস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)! দাইউস কে? উত্তরে রাসুলূল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার পরিবারে আল্লাহ্র আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়নের ব্যাপারে কোন তৎপরতা অবলম্বন করে না বরং উপেক্ষা করে চলে।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ‘দাইউস হল সে, যে তার পরিবারে বেহায়পনার বাস্তবায়নে সন্তষ্ট ও পরিতুষ্ট।’ (মুসনাদে আহমদ)
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ثَلَاثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ: مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالنَّسَائِيّ
ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন শ্রেণীর লোকের জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সর্বদা মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূস (পাপাচারী কাজে পরিবারকে বাধা দেয় না)।(মিশকাত-৩৬৫৫, মুসনাদে আহমদ২/৬৯)
মুল্লা আলী কারী রাহ বলেন,
( والديوث ) بتشديد التحتية المضمومة (الذي يقر) بضم أوله أي يثبت بسكوته (على أهله) أي من امرأته أو جاريته أو قرابته (الخبث) أي الزنا أو مقدماته وفي معناه سائر المعاصي كشرب الخمر وترك غسل الجنابة ونحوهما، قال الطيبي: أي الذي يرى فيهن ما يسوءه ولا يغار عليهن ولا يمنعهن فيقر في أهله الخبث.
মর্মার্থ, যে ব্যক্তির পরিবারবর্গ তার জানা স্বত্বেও গোনাহে লিপ্ত তাকেই দাইয়ূস বলা হয়।
দাইয়ুসের পরিচয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
اَلدَّيُّوْثُ هُوَ الَّذِيْ لَا يُبَالِيْ مَنْ دَخَلَ عَلٰى أَهْلِهِ
দাইয়ুস হলো সে ব্যক্তি যে, তার পরিবারের নিকট কে প্রবেশ করল এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ করে না। (তাবরানি ১৩১৮০ আততারগিব ওয়াততারহিব ৩৪৭৬)
অপর হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ
ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে, তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ ৫৩৭২)
একারণে ইবনু হাজার হাইথামি রহ. বলেন,
قال العلماء : الديوث الذي لا غيرة له على أهل بيته
‘আলেমগণ বলেছেন, দাইয়ুস বলা হয়, যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।’ (আযযাওয়াজির ২/৩৪৭)
فی الشامیۃ : تحت (قولہ مرادف دیوث) قال الزیلعی ہو الذی یرٰی مع امرأتہٖ او محرمہٖ رجلًا فیدعہ ، خالیا بہا و قیل ہو المتسبب للجمع بین انثین لمعنی غیر ممدوح و قیل ہو الذی یبعث امرأتہ مع غلام بالغ او مع مزارعہ إلی الضیعۃ أو یأذن لہما بالدخول علیہا فی غیبتہٖ۔(ج۴، ص۷۰)۔
’’هومن یری في أهله ما یسوؤه ولایغار علیه ولا یمنعها‘‘
এই হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, স্ত্রী হারাম ও গোনাহে লিপ্ত থাকার পর স্বামী বাধা না দিলে, স্বামী দাইয়ূস হিসেবে বিবেচিত হবে।
وفي الحدیث : (( إن رجلاً أتی النبي ﷺ فقال :یارسول الله! إن امرأتي لاتدفع ید لامس! فقال علیه السلام: طلّقها، فقال: إني أحبها وهي جمیلة، فقال علیه السلام: استمتع بها ))
وفي روایة أبي داؤد والنسائي :’’ قال: إني أحبها، قال: فأمسکها إذاً: أی فاحفظها لئلاتفعل فاحشةً‘‘، وهذا الحدیث یدل علی أن تطلیق مثل هذه المرأة أولی‘‘. ( مرقاة شرح مشکاة، ص۵۵۰ج۳)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
দাইয়ুস সে ব্যক্তিকেই বলা হয়, যে তার পরিবার পরিজনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করেন না।
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-সন্তানদের বেপর্দা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার সুযোগ দেয় তাকেও দাইউস বলা হয়।
(খ) মা এবং বড় বোনের গার্জিয়ান যে হবে,সেই দাইয়্যুস হিসেবে সাব্যস্ত হবে।যদি পিতা জীবিত থাকেন,বা বড় ভাই জীবিত থাকেন,তাহলে অভিভাবকত্বের দায়িত্ব তাদের।তাই তারা দাইয়্যুস হিসেবে পরিগণিত হবেন।যদি তারা না থাকেন,তাহলে ছোট্ট ভাই তাদের অভিভাবক হবে।এবং সে দাইয়্যুস হিসেবে পরিগণিত হবে।