বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
দফের পরিচয়
الدف : بضم الدال ، آلة من آلات الموسيقى مستدبرة كالغربال ليس لها جلاجل يشد الجلد من أحدطرفيها)(الدف) الجنب من كمعجم لغة الفقهاء – (ج 1 / ص 251(
অর্থাৎ দফ বলা হয় ঐ বাদ্য যন্ত্রকে যার উপরের অংশ চালুনির মত, যাতে ঘন্টির মত আওয়াজ নেই, আর তার একাংশে থাকবে চামড়ার পর্দা। ( মু’জামু লুগাতিল ফুকাহা)
চার মাযহাব সম্ভলিত সর্ব বৃহৎ ফিকহি কিতাব “ আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ “ তে বর্ণিত রয়েছে।
الدُّفُّ فِي اللُّغَةِ: هُوَ الَّذِي يُلْعَبُ بِهِ ، وَقَدْ عَرَّفَهُ بَعْضُ الْفُقَهَاءِ بِالطَّارِ أَوِ الْغِرْبَال وَهُوَ الْمُغَشَّى بِجِلْدٍ مِنْ جِهَةٍ وَاحِدَةٍ، سُمِّيَ بِذَلِكَ لِتَدْفِيفِ الأَْصَابِعِ عَلَيْهِ، وَقَال بَعْضُ الْمَالِكِيَّةِ: الدُّفُّ هُوَ الْمُغَشَّى مِنْ جِهَةٍ وَاحِدَةٍ إِِذَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ أَوْتَارٌ وَلَا جَرَسٌ،
দুফ বলা হয়, যা দ্বারা খেল তামাশা করা হয়, কিছু সংখ্যক ফুকাহা বলেন, যার একদিকে চামড়া দিয়ে মুড়ানো থাকে, যেহেতু সেই চামড়ার মধ্যে হাতের আঙ্গুলকে লাগিয়ে বাজানো হয়, তাই তাকে দুফ বলা হয়ে থাকে। মালিকি মাযহাব মতে দুফ বলা হয়, যার একদিক চামড়া দ্বারা মুড়ানো থাকে, যাতে মিউজিক এবং ঘন্টার আওয়াজ থাকবে না।
وَقَدِ اخْتَلَفَ الْفُقَهَاءُ فِي حُكْمِ الدُّفِّ قَال الْحَنَفِيَّةُ: لَا بَأْسَ أَنْ يَكُونَ لَيْلَةَ الْعُرْسِ دُفٌّ يُضْرَبُ بِهِ لِيُعْلَنَ النِّكَاحُ، وَعَنِ السَّرَّاجِيَّةِ: أَنَّ هَذَا إِِذَا لَمْ يَكُنْ لَهُ جَلَاجِل وَلَمْ يُضْرَبْ عَلَى هَيْئَةِ التَّطَرُّبِ، قَال ابْنُ عَابِدِينَ: وَالدُّفُّ الَّذِي يُبَاحُ ضَرْبُهُ فِي الْعُرْسِ. احْتِرَازًا عَنِ الْمُصَنَّجِ، فَفِي النِّهَايَةِ عَنْ أَبِي اللَّيْثِ: يَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ مَكْرُوهًا.وَسُئِل أَبُو يُوسُفَ عَنِ الدُّفِّ: أَتَكْرَهُهُ فِي غَيْرِ الْعُرْسِ بِأَنْ تَضْرِبَ الْمَرْأَةُ فِي غَيْرِ فِسْقٍ لِلصَّبِيِّ؟ قَال: لَا أَكْرَهُهُ، وَلَا بَأْسَ بِضَرْبِ الدُّفِّ يَوْمَ الْعِيدِ، كَمَا فِي خِزَانَةِ الْمُفْتِينَ
«الموسوعة الفقهية الكويتية» (38/ 170)
দুফ বাজানো নিয়ে ফুকাহাদের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। হানাফি ফুকাহাগণ বলেন, বিবাহের প্রচারের জন্য দুফ বাজানোর রুখসত রয়েছে। তবে শর্ত হল, যদি তাতে গানের সূর এবং মিউজিক না থাকে, ইবনে আবেদিন শামি রাহ বলেন, বিবাহের ক্ষেত্রে যে দুফের অনুমোদন রয়েছে। তা মিউজিক হীন হতে হবে। নেহায়া কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, ফকিহ আবুল- লেইছ রাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে, দুফ বাজানো মাকরুহ। ইমাম আবু-ইউসুফ রাহ কে দুফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, আপনি কি বিবাহ ব্যতীত অন্য সময়ে দুফকে অপছন্দ করে থাকেন, যেমন মা তার বচ্ছাকে শান্ত করার জন্য দুফ বাজালো, জবাবে ইমাম আবু-ইউসুফ রাহ বলেন, আমি অপছন্দ করি না। এবং ঈদের দিন দুফ বাজানোতে কোনো সমস্যা নাই। যেমনটা খাযানাতুল মুফতিয়্যিন গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে।
তাফসীর গ্রন্থে দফের বিধান
حدثنا هلال بن أبي هلال، عن عطاء بن يسار، عن عبد الله بن عمرو قال: إن هذه الآية التي في القرآن: { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالأنْصَابُ وَالأزْلامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ } قال: هي في التوراة: “إن الله أنزل الحق ليذهب به الباطل، ويبطل به اللعب، والمزامير، والزَّفْن، والكِبَارات -يعني البرابط–والزمارات -يعني به الدف-والطنابير-والشعر، والخمر مرة لمن طعمها. أقسم الله بيمينه وعزة حَيْله من شربها بعد ما حرمتها لأعطشنه يوم القيامة، ومن تركها بعد ما حرمتها لأسقينه إياها في حظيرة القدس”.وهذا إسناد صحيح.)تفسير ابن كثير 3/187(
(
أخرج ابن أبي حاتم وأبو الشيخ والبيهقي في سننه عن عبد الله بن عمرو قال : إن هذه الآية التي في القرآن يا أيها الذين آمنوا إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجس من عمل الشيطان فاجتنبوه لعلكم تفلحون هي في التوراة إن الله أنزل الحق ليذهب به الباطل ويبطل به اللعب والزفن والمزامير والكبارات يعني البرابط والزمارات يعني الدف والطنابير والشعر والخمر مرة لمن طعمها وأقسم ربي بيمينه وعزة حيله لا يشربها عبد بعدما حرمتها عليه إلا عطشته يوم القيامة(الدر المنثور سورة الماءدة90- 3/163(
উল্লেখিত তাফসীরে আমরা দেখতে পাচ্ছি আল্লামা ইবনে কাসীর তার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থে সূরায়ে মায়েদার ৯০ নাম্বার আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে তাওরাতের উদ্বৃত দিয়ে তিনি বলেন “একই কথা তাওরাতে আল্লাহ তায়ালা এভাবে বলেছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ সত্য নাযিল করে এর দ্বারা বাতিলকে নির্মূল করেন”। আর বাতিলের অন্তর্ভূক্ত বিষয়ের মাঝে দফ বাজানোও শামিল। ঠিক একই তাফসীর আল্লামা সুয়ূতী রহ. প্রণীত আদ দুররুল মানসুর তাফসীর গ্রন্থেও দেখা যাচ্ছে।
উপসংহার
উল্লেখিত তাফসীর ,হাদিস ও ফুকাহাদের বক্তব্য থেকে একথা নির্ধিদ্বায় বলা যায়, হানাফীদের মতে দফ বাজানো পুরুষের জন্য জায়েজ নেই। সুস্পষ্ট হারাম। নিম্ন লিখিত কয়েকটি সঙ্গত কারণে বর্তমানে মহিলা ও পুরুষদের জন্য দফ বাজানো সম্পুর্ণ হারাম।
(১)অনেকেই দফ বাজানো জায়েজ একথা প্রমাণ করতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী তথা ‘বিয়েকে প্রকাশ করো যদিও দফের দ্বারা হয়’ এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করে اعلنو النكاح ولو باالدفবলে থাকেন যে, বিয়েতে দফ বাজানো জায়েজ কোন শর্ত ছাড়াই এবং এটা সুন্নত।কিন্তু ঠান্ডা মাথায় একবার চিন্তা করলেই একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উদ্যেশ্য এর দ্বারা কেবল প্রচারণার গুরুত্ব বুঝানো। কেননা তৎকালে কোন কিছু ‘ইলান’ করার জন্য দফে বাড়ি মারলে লোকজন একত্র হতো, তারপর ঘোষক তার বক্তব্য বলে সবাইকে শোনাতো। দেখুন হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর “বিয়ে শাদিতে বাজনা বাজনোর একটি বিরল তাহকীক” নামে লিখিত প্রবন্ধে ( যা মুফতী শফী রহ. এর ফতোয়া সংকলন জাওয়াহিরুল ফিক্বহ এর চতুর্থ খন্ডের ২০৮ নং পৃষ্ঠায় সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে) বুস্তানুল আরেফীন ও নিসাবুল ইহতিসাব এবং শরহে নুকায়া গ্রন্থের উদ্বৃতি দেন,
وفى شرح نقايه – قال التور بشتى انه حرام على قول اكثرالمشاءخ وما ورد من ضرب الدف فى العرس كناية من الاعلان
অর্থাৎ আল্লামা তুরে পেশতী রহ. বলেন, অধিকাংশ মাশায়েখে কেরামের মতে দফ বাজানো হারাম,তবে বিয়েতে দফ বাজানোর ক্ষেত্রে যেসব বর্ণনা এসেছে এর দ্বারা উদ্যেশ্য হচ্ছে প্রচারণা করা।
সুতরাং বুঝা গেলো বিয়েতে দফ বাজানোর কথা বলার দ্বারা মুরাদ হলো প্রচারণা করা, আসলেই দফ বাজানো নয়,যদি সত্যিই দফ বাজানোই উদ্দেশ্য থাকতো তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চার মেয়ের বিয়ের সময় কেন দফ বাজালেন না? এ ব্যাপারে একটি জাল রেওয়ায়েত ও কী আছে?যেই সাহাবারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন তাদের কারও বিয়েতে দফ বাজিয়েছেন বলেছেন বলে কোন বর্ণনা কী আছে?তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথাটির অর্থ কী এই দাঁড়াচ্ছেনা যে, এর দ্বারা কেবল প্রচারণা উদ্দেশ্য দফ বাজানো নয়।
(২) দফের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার উপর হাদিস সুস্পষ্ট যা উপরে বর্ণিত।
(৩) হানাফী ফুকাহায়ে কেরামের রায় ও সুস্পষ্ট প্রমাণ করছে দফ বাজানো জায়েজ নেই। দেখুন উপরে বর্ণিত ফুক্বাহায়ে কেরামের বক্তব্য।
(৪) হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর তাহকীক ও ফতোয়া প্রণিদান যোগ্য যা জাওয়াহিরুল ফিক্বহ এর চতুর্থ খন্ডে বিধৃত হয়েছে , যেখানে তিনি প্রমাণ করেছেন দফ বাজানো জায়েজ নেই। আর এক্ষেত্রে বিভিন্ন হানাফী ফিক্বহী কিতাবে ভুল বর্ণনা(যে দফ বাজানো হানাফীদের কাছে বিয়ে বা আনন্দ অনুষ্ঠানে জায়েজ) একজন থেকে আরেকজন করে গেছেন তাহকীক ছাড়াই, এমনটা বলেছেন পরিস্কার হাকিমুল উম্মত রহ.। (জাওয়াহিরুল ফিক্বহ ৪/২১২)
(৫) সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে ইবনে কাসীর ও আদ দুররুল মানসুরের বর্ণনা প্রমাণ করে দফ বাজানো কিছুতেই জায়েজ হতে পারেনা।
(৬) কতিপয় মুফতীর ফতোয়া দ্বারা কেবল এতটুকু প্রমাণিত হয় যে মহিলাদের জন্য দফ বাজানোর সুযোগ আছে, পুরুষের কোন সুযোগ নেই, কিন্তু একথাও উপরে বর্ণিত তাফসীর ও হাদিস এবং ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য দ্বারা বাতিল বলে সাব্যস্ত হয়।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সাধারণত বিয়ে ব্যতীত প্রচলিত দফ বাজানো জায়েয নয়,এবং গিটার বাজানোও জায়েয নয়।