আসসালামু আলাইকুম।
হুজুর,
গত দুই তিন দিনের করা আমার প্রশ্নের লিংক। দেখার অনুরোধ করছি শায়েখকে। তাহলে আমার সমস্যাগুলি বুঝতে পারবেন ইনশা-আল্লাহ।
https://ifatwa.info/69559/
https://ifatwa.info/69429/
https://ifatwa.info/69620/
আমি ওয়াসওয়াসাগ্রস্ত এবং আমার ওসিডি (চিন্তার বাতিকগ্রস্ত) রোগ আছে। আমার ওয়াসওয়াসার মাএা খুবই বেশি। মানসিক ডাক্তার এর পেসক্রিপশন অনুযায়ী ১৫ দিন ঔষধ খেয়ে পরে আর যাওয়া হয়নি। আমি দ্বিনের পথে ফেরার চেষ্টা করছি, কিন্তু এই মারাত্তক আকারের ওয়াসওয়াসা আমার পথে প্রতিবন্ধগতা তৈরি করছে।
(১) উপরে "প্রতিবন্ধগতা সৃষ্টি করছে" লিখতে গেলাম। কিন্তু মনে হলো যে, "সৃষ্টি তো আল্লাহ করেন তাই সৃষ্টি শব্দ লেখা উচিত হবে না। এমন কথা মনে আসলো।
এতে কি আমার ঈমানের কোন ক্ষতি হবে শায়েখ?
না এগুলা কি ওয়াসওয়াসা?
(২) ওয়াশরুমে যাবার পর গত মাস দেড়েক আগের একটা ঘটনা মনে পড়লো। সহবাসের সময় আমার ওয়াইফের করা একটি কারনে আমার ব্যাথা লাগছিল। কিন্তু আজ ওয়াশরুমে এস্তেন্জা করার সময় আমার করা একটি কারনে আবার সেরকম ব্যাথা লাগায় তখন আমার আগের সেই ব্যাথা লাগার মূহুর্তের কথা মনে পড়ছিল। অনেকটা কল্পনা হবার মত। কিন্তু তখনি আমার মনে হলো আমি "তালাক" উচ্চারন করলাম মনে হয়। এমন সন্দেহ আসার পর আবার আমার মনে তালাক শব্দ আসলো। ওয়াশরুমে এমন তালাক শব্দ উচ্চারনের সন্দেহ আমার প্রায় সময়ই হয়।
আবার, কোন কারনে ওয়াইফের উপর হালকা রাগ হলেও মনে হচ্ছে মুখ দিয়ে " তালাক দিলাম" উচ্চারন হয়ে যাবে। যেমন : আমার ওয়াইফ আমাকে ফোনে বলছে যে : তোমার মেয়ে নাচছে। কথাটা শুনে আমার রাগ হলো। তখন আমি বললাম যে, কেউ জানো ওকে নাচতে না বলে। এসব বলছিলাম আর মনে হচ্ছিল আমি যেন " তালাক দিলাম " উচ্চারন করে ফেলবো।
এসমস্ত কারনে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(২) নামাজের ভিতরে আমার মনে আসলো যে, " আল্লাহ আমার সাথেই আছেন "।
আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন, এই কথাটি কি বলা যাবে?
বা সহিহ আকিদা কি হবে??
(৩) নামাজ শেষে আমার মনের ভিতর হলো যে, " আল্লাহ সর্বএ বিরাজমান"। এটা মনে আসার সাথে সাথে আমার হাসি চলে এসেছে। কারন আমার বিশ্বাস যে, " আল্লাহ আরশের উপর আছেন "।
হাসির আসার জন্য কি আমার ঈমানের কোন ক্ষতি হবে?
(৪) আমার বন্ধু একদিন একটা ব্যাবসা সম্পর্কে কথা বলার সময় বলছিল যে, "এই মেশিনটার দাম এত লক্ষ টাকা"।
গতকাল আমি তাকে বললাম যে, " মেশিনটার দাম এত টাকা এই ফোতোয়া আপনি পেয়েছেন কোথায় "??
ফোতোয়া শব্দ এভাবে বলার জন্য আমার ঈমানের ক্ষতি হবে শায়েখ??
(৫)" নবিদের সাথে তুলনা করা যাবে না "। এই কথাটি আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে আমি বলেছিলাম। এই কথাটি বললে কি কোন সমস্যা হবে?
(৬) ভাত খেতে খেতে খাওয়ার সুন্নাত নিয়ে মনে একটা খুব খারাপ গালি আসলো। অনেক সময় আল্লাহকে নিয়ে মনে বিভিন্ন প্রকারের গালি গালাজ আসে। মনে অনেক ধরনের শিরিকি কুফুরি চিন্তা আসে। এমনকি ঘুমের ঘোরেও বিভিন্ন আজে বাজে স্বপ্ন আসে, যেমন আমি পূজা করছি। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি শায়েখ। আমি ভাল কিছু চিন্তা করতে পারি না। মনে প্রতিটা বিষয় নিয়ে খারাপ কথা মনে আসে। যা খুবই নোংরা। মাঝে মাঝে মনের ভিতর হয় যে, আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না। এগুলার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(৭) খাটের চাদরে ও কোম্বলে বির্য লাগার পর তা শুকিয়ে গেলে, সেখানে শোয়া হলে কি শরিল ও জামা কাপড় পাক থাকবে?
সহবাস করার সময় বেশিরভাগ সময়ই চাদরে বির্য লেগে যায়। প্রতিদিন চাদর ধোয়াতো একটু কষ্টকর। তাই কি সাবধানতা মানলে চাদর না ধুলেও সমস্যা হবে না ?
"প্রতিদিন চাদর ধোয়া কষ্টকর" যখন আমি লিখছিলাম তখন আমার মনে রাগ হচ্ছিল।
এভাবে রাগ নিয়ে লেখার জন্য কি আমার ঈমানে চলে যাবে শায়েখ??
(৮) আমাদের এক হিন্দু স্যার আছে। স্যার একদিন সন্ধায় অফিসে আসার পর আমাদের নামাজে পড়তে যাবার কথা বলছিল। তাই আমি একজনকে আমাদের স্যারের ব্যাপারে বলছিলাম যে, " আমাদের স্যার হিন্দু কিন্তু তিনি নামাজকে শ্রদ্ধা করে "। একথা বলার পর তখনি আমার মনের ভিতর আসলো যে, " আমাদেরও হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত "।এমন কথা মনে আসলো।
তারপর থেকে কথাটি বারবার মাথায় আসছে, আর আমি বলছি যে, " একমাএ সত্য ধর্ম ইসলাম। হিন্দু ধর্ম মিথ্যা। মিথ্যা ধর্মের আবার শ্রদ্ধা কিসের? "।
এমন মনে মনে ভাবছি। কিন্তু আমার মন একবার কিছু মনে আনলে সেটা বার বার মনে করতেই থাকে। আর আমার মনে " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করা উচিত" মনে বার বার আসছে। রাতে বার বার মনে মনে বলছি যে, " হিন্দু ধর্মকে শ্রদ্ধা করি "।
-এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ?
-আমাদের ইসলাম ধর্ম অন্য ধর্মকে কি শ্রদ্ধা করার অনুমতি দেই?
(৯) আমার এক ভাইয়ের সাথে বিদেশি ভাইদের ইনকাম বেশি সেই বিষয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলার সময় আমি বললাম যে, " তাদের ইনকাম বেশি হবার কারন তারা অযথা সময় নষ্ট করে না "।
এই কথা বলার পর মনে হচ্ছে, " আমি মনে হয় অযথা সময় নষ্ট করা বলতে নামাজ পড়ার কথা বললাম "। এমন কথা মনে আসছে। এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১০) আমি দোকানে বসে কিছু খাচ্ছিলাম। তখন আমার বন্ধু আসছিল, তখন আমি আমার বন্ধু বাপ্পিকে বললাম যে, " বিল দেন "।
তখন আমার বন্ধু বাপ্পি দোকানদেরকে বললো বাকিটা লিখে রাখতে। এরপর আমি দোকান থেকে বেরোতো বেরোতো বাপ্পি টাকা দেবে এই উদ্দেশ্য করে দোকানদারকে বললাম যে, "বাপ্পির নামে"।
একথা বলার পর থেকে আমার মনে হতে থাকে যে, " আমি আমার বন্ধুর নামে খাচ্ছি বা আমি আমার বন্ধুকে রিযিকদাতা মনে করলাম মনে হয়। এমন কথা মনে আসতে থাকে। আর আমার খারাপ লাগতে শুরু হয়।
এতে কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১১) ওজু করতে করতে মসজিদের হুজুরকে দেখে মনে হচ্ছিল যে, " ওজু করতে করতে সালাম দেওয়া যায় আমি মানি, কিন্তু সালাম দিলে তারা মনে করবে আমি কিছু জানি না, বা ওজু করতে করতে সালাম দিতে হয়না বলে হয়তো ফিতনা হতে পারে "।
এমন অনেক কথা মনে আসছিল। এতে কি আমার রিয়া বা গুনাহ হবে?
(১২) আমাদের শহরে একজন ইন্টারনেট লাইন দেবার ব্যাবসা করে। আমি মসজিদে যাবার পর দুর থেকে তাকে দেখে মনে হলো সেই লোক মসজিদে বসে আছে। তাকে দেখে আমার মনে হচ্ছিল যে, "সে আগের থেকে ফর্সা হয়েছে। ইন্টারনেটের ব্যাবসা করে নামাজ পড়লে আবার চেহারা ভাল হয় কিভাবে? তাহলে নামাজ পড়লে চেহারা সুন্দর হয় এই কথাটা ভুল, আসলে বার বার মুখ ধোবার কারনে চেহারা ভাল হয়। আল্লাহ বলে কেউ নেই "। যদিও লোকটা অন্য লোক ছিল।
এমন আজে বাজে বা খারাপ ধারনা মনে আসছিল। এসব ভাবার পরে নামাজে দাড়ানোর পর নিজের মনটা খুব ছোট লাগছিল। খারাপ লাগছিল।নামাজে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। এতে কি আমার ঈমান চলে গেল শায়েখ??
(১৩) নামাজের ভিতরে বিভিন্ন প্রকারের আজে বাজে চিন্তা আসে। সিজদা করার সময় মনে হয় আমি একজন ব্যাক্তিকে সিজদা করছি। আবার মনে হয় আমি এমন একজনকে সিজদা করছি যার হাত পা আছে। তার অবয়ব সিজদায় চোখের সামনে ঘুরতে থাকে। আবার নামজের ভিতরে মনে হয় আমি নামাজে আসতে পেরেছি আমার বন্ধুর জন্য। কারন সে আমাকে নামাজ পড়ার কথা বলতো তাই। এমন চিন্তা আসার পর আমি নামাজ শেষ করে আস্তে আস্তে বলতে থাকি যে, " হে আল্লাহ তুমি তাওফিক না দিলে আমি মসজিদে আসতে পারতাম না। তুমি আমাকে আমার বন্ধুকে দিয়ে বলিয়েছো। আর তুমি আমাকে তাওফিক দিয়েছো তাই আমি আসতে পেরেছি। এসব কথগুলো আমি উচ্চারন করে বলছিলাম। নামজের ভিতর যখন আমার এসব আজে বাজে কথা মনে আসে তখন আমি হাত মুঠো মারা মত করি, সেজদায় গিয়ে বৃদ্ধ আংগুল দিয়ে মাথার দুপাশে চাপ দিই।
নামাজে এসব কথা মনে আসায় ও এরকম আনইউজুয়াল এক্টিভিটি করার জন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে শায়েখ??
(১৪) আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার বন্ধু আমাকে নামাজের দাওয়াত দিয়েছিল। এবং আল্লাহর তাওফিকে আমি নামাজ পড়া শুরু করতে পেরেছি।
উপরের এই কথাটি লেখার আগে কি লিখবো ভাবতে গিয়ে এমন মনে হচ্ছিল যে, " আমার বন্ধু দাওয়াত দিয়েছে, তাই নামাজ পড়ছি "। এমন কথা মনে হচ্ছিল। এতে কি শিরিক হয়ে গেল শায়েখ?
(১৫) আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়া করিনি। রাতে বাসায় আসার পর মায়ের রান্না করা দেরি হওয়াতে আমি রাগ করে " এখন আর খাওয়া হবে নানে " বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুমে যাবার পর মনে হচ্ছিল যে, " নামাজ পড়তে যাবার কারনে খেতে পারবো না তাই আমি নামাজের উপর রাগ দেখালাম "।
তারপর, ওয়াশরুমে থাকা কালিন আমার মনে হচ্ছিল যে, খিদা পেটে নামাজ পড়া ঠিক না, নবি সা: নিষেধ করেছেন, আমার ওয়াসওয়াসা থাকার জন্য মনে আসছিল যে, এখন ভাত খেলে মনে হবে আমি নামাজের চেয়ে খাওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিলাম মনে হয়। কিন্তু নামাজের সাত মিনিট সময় বাকি থাকায় আমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম নামাজের উদ্দেশ্যে। নামাজ চলা কালিন আমার বার বার মনে হচ্ছিল যে, আমার নবিজি(সা:) এর হাদিস মানা হলো না,কারন আমি খিদে পেটে নামাজ পড়তে এসেছি। এর ভিতর এমন কথাও মনে আসছিল যে, " মানা লাগবে না "।
এভাবে মনে সংসয় ও খারাপ চিন্তা নিয়ে নামাজ শেষ করলাম।
এজন্য কি আমার ঈমান চলে যাবে??
(১৬) ওয়াসওয়াসা এতটায় তিব্র যে আমার সবসময় ঈমান হারানোর ভয় হচ্ছে। এমনকি পানি খাওয়ার সময় ভুলে পানিতে নিশ্বাস ছাড়ার পর আসতাগফিরুল্লাহ পড়ছি তাতেও ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে আমি নবি (সা:) এর কথা মত কাজ করে আল্লাহর কাছে আসতাগফিরুল্লাহ বললাম। নবি (সা:) এর কোন সুন্নাত মানলে মনে হচ্ছে আমি আল্লাহর সাথে শিরিক করে ফেললাম নাতো ! এমন এক খারাপ পরিস্থিতির ভিতরে যে আমি আছি তা আপনাকে বোঝাতে পারবো না। মাঝে মাঝে এসব শিরিকি ও কুফুরি বাক্য উচ্চারন করে ফেললাম কিনা তাতেও সন্দেহ হচ্ছে আমার।
আমার এসব কিছু মনে আসার কারনে কি শিরিক হবে শায়েখ??