আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
534 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (62 points)
পরিচিত এক বান্ধবী জ্বীনের যাদু সমস্যায় আক্রান্ত। খুব ছোটবেলা থেকেই তার শরীরে খোদাই করে করে যাদু করে রাখা হয়েছে। তার ব্রেইন প্রায়সময় ঐ জ্বীনদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জ্বীনদের দ্বারা পজেসড হয়ে স্বামী ও পরিবারের সবার সাথে অনেক এগ্রেসিভ বিহেইভ করতে থাকে। অনেকসময় নিজের সেন্স থেকেও করে। দুবার স্বামীকে থ্রেট দিয়ে বলেছিলো যে এখনি তালাক দাও নয়তো সুইসাইড করবো। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামী তালাক দেয়। এভাবে করে দুই তালাক হয়ে যায়। আরেক তালাক এখনো বাকি আছে। অনেকবার রুকইয়াহ করানো হয়েছিলো। তার অতীব খারাপ অবস্থার কারণে তার উপর পুরোদিন রাত ধরে রুকইয়াহ করানো হতো।
এখন, মুহতারামের কাছে প্রশ্ন, জ্বীনের রোগীরা যদি নিজের সেন্স থেকে কিংবা জ্বীন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে সুইসাইড করে ফেলে তাহলে কি তারা জাহান্নামী হবে?

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)

ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

প্রশ্নের বিবরণমতে আপনার বান্ধবীর স্বামীর উচিৎ,যেকোনো উপায়ে পরিস্থিতির মুকাবেলা করা এবং তালাক প্রদান না করা।যেহেতু আপনার বান্ধবীর স্বামী নিজ জ্ঞানে তালাক দিবেন,তাই উনার তালাক পতিত হয়ে যাবে।
তাই উনি তালাক না দিয়ে যেকোনো উপায়ে পরিস্থাতির মুকাবেলা করবেন।জ্বীন জাতির আছর সত্য।মানুষের উপর জ্বীন প্রভাব বিস্তার করে থাকে,মারুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে লোপ পাইয়ে দিয়ে থাকে।জ্বীনের আছরগ্রস্থ কোনো মানুষ আত্মহত্যা করে নিলে,উক্ত ব্যক্তি যেহেতু সজ্ঞানে আত্মহত্যা করছে না,তাই তার কোনো গোনাহ হবে না।

জ্বীনজাতি সম্পর্কে একটি তাত্বিক লিখা সংগৃহিত রয়েছে-নিম্নে সেই লিখাটিকে দিচ্ছি-
মানুষ সৃষ্টির প্রায় ২০০০ বছর আগে থেকে জিনরা পৃথিবীতে আছে বলে জানা যায়। জিনদের আদি পিতা সামুম। জিন তৈরি করে আল্লাহ সামুমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তুমি আমার কাছে কিছু কামনা করো। সামুম দুটি বিষয় কামনা করেছিলেন। এক. জিন মানুষকে দেখতে পারবে কিন্তু মানুষ জিনকে দেখতে পারবে না। দুই. জিনরা বৃদ্ধ বয়সে যুবক হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহপাক সামুমের দুটি চাওয়া পূরণ করেন। জিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য হলো এক. জিন অদৃশ্য এবং খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। দুই. পৃথিবী বাদে অন্য সব গ্রহ-নক্ষত্রে জিনরা চলাফেরা করতে সক্ষম। তিন. যেকোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। চার. জিনরা অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে। মানুষের চেয়ে জিনরা অনেক বেশি দিন বেঁচে থাকে। কারও কারও মতে প্রায় ৫০০ বছর। তবে ৩০০ বছর বয়সে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। জিনদের মধ্যে নারী জাতি রয়েছে, যাদের পরী বলা হয়ে থাকে। জায়েদ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এই জায়গাগুলোতে (শৌচাগার) জিন ও শয়তানরা অবাধে বিচরণ করে। তোমাদের মধ্যে যে এই স্থানগুলোতে যাবে, সে যেন বলে আমি আল্লাহর কাছে পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আহমেদ ইবনে হাম্বল : ৪/৩৬৯)

মহানবী (সা.) বলেছেন, তিন ধরনের জিন রয়েছে। একদল যারা সর্বদা আকাশে উড়ে বেড়ায়। আরেক দল যারা সাপ ও কুকুরের আকার ধারণ করে থাকে। তৃতীয় দল পৃথিবীবাসী, যারা কোনো এক স্থানে বাস করে বা ঘুরে বেড়ায়। (বায়হাকি ও তাবরানি)।জিনরা যেকোনো স্তন্যপায়ী প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। মানুষের রূপ ধরে মানুষের মধ্যে বসবাস করতে পারে। মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারে। সাধারণত খারাপ জিনরা কালো কুচকুচে সাপ বা কুকুরের রূপ ধারণ করে থাকে।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) কয়েকজন সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে উকাজ বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে নাখাল নামক স্থানে তিনি ফজরের নামাজের ইমামতি করেন। সে সময় একদল জিন ওই স্থান অতিক্রম করছিল। কোরআন তিলাওয়াতের শব্দ শুনে তারা থেমে যায়। গভীর মনোযোগসহকারে কোরআন শোনে।কাজী আবু আয়ালা (রহ.) বলেছেন, জিন মানুষের মতো খাওয়া-দাওয়া করে। এরা চিবিয়ে ও গিলে খায়। অনেক সময় মানুষের সঙ্গে বসে খায়। ভালো জিনরা মানুষের উপকার করে থাকে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুটি জিনিস অর্থাৎ হাড়-গোবর দিয়ে ইস্তেনজা করো না। কেননা, ওগুলো তোমাদের জিন ভাইদের খাদ্য।’ (তিরমিজি শরিফ)।

ভালো জিনরা নির্জনে থাকতে পছন্দ করে। বিশেষ করে পাহাড়-পর্বতে। তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। খারাপ জিনরা থাকে ময়লা-আবর্জনা, গোসলখানা, পায়খানা ইত্যাদি স্থানে। বাথরুমে যাওয়ার আগে তাই দোয়া পড়ে যাওয়া উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, জিনরা নোংরা ও গন্ধময় জায়গায় থাকতে পছন্দ করে। যেখানে মানুষের ময়লা এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে রাখা হয়।

ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রা.)-কে কেউ প্রশ্ন করে, জিনরা কি পানাহার ও বিয়ে-শাদি করে মারা যায়? জবাবে তিনি বলেন, তারা কয়েক প্রকার। এদের কেউ কেউ বাতাসের মতো। জিনরা পরস্পর বিয়ে-শাদি করে এবং তাদের সন্তান-সন্ততিও জন্মায়। ছেলেমেয়ে মানুষের চেয়ে সংখ্যায় বেশি হয়ে থাকে।

ঘরে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত করলে সে ঘরে দুষ্ট জিন প্রবেশ করতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়, সে ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)

জিন নিয়ে আমাদের দেশে এক ধরনের ফকির-ওঝারা রমরমা ব্যবসা করে। মানুষ ঠকিয়ে এসব ব্যবসার বেশির ভাগই হয় প্রত্যন্ত গ্রামে। সহজ-সরল মানুষদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়। যিনি জিন হাজির করেন, তিনিই জিনের স্বরে কথা বলেন। এমনটা ধরা পড়েছে অনেকবার।

জিনের বাদশাহ ফোন করে। বিশেষ করে নিরীহ গৃহবধূদের কাছে। ছলে-বলে কৌশলে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়। জিনদের বশ করা ও তাদের মাধ্যমে কাজ করানো ইসলাম সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর এই যে মানুষের মধ্যে কিছু লোক জিন জাতির আশ্রয় নিত, ফলে ওরা তাদের পাপাচার বাড়িয়ে দিত।’ (সুরা জিন, আয়াত : ৬)

জিনরা গায়েবের খবর ও ভবিষ্যৎ জানে না। কোনোভাবেই মানুষের চেয়ে জিন জাতি শ্রেষ্ঠ নয়। মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন সব জীবের মধ্যে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবন উপকরণ দিয়েছি এবং তাদের অনেক সৃষ্ট বস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭০)

তবু কিছু অপরিণামদর্শী মানুষ জিনদের শরণাপন্ন হয়। তাদের কাছে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চায়। এটা শুধু একটা ভুল নয়; শিরকের মতো জঘন্য গুনাহ। জিনদের বুদ্ধিমত্তা কতটুকু এবং তারা ভবিষ্যৎ জানে কি না এর প্রমাণ সুলাইমান (আ.)-এর মৃত্যুর ঘটনায় দেখা যায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন আমি সুলাইমানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন জিনদের তার মৃত্যু-বিষয় জানাল শুধু মাটির পোকা (উইপোকা); যা সুলাইমানের লাঠি খাচ্ছিল। যখন সুলাইমান (আ.) পড়ে গেলেন তখন জিনরা বুঝতে পারল যে, তারা যদি অদৃশ্য বিষয় জানত, তাহলে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৪)

রাসুল (সা.) বলেছেন, মানুষের বাড়িঘরে জিনরা থাকে। এদের মধ্যে কাউকে তোমরা যখন দেখবে, তখন তিনবার তাকে বের করে দেবে। এতে যদি সে চলে যায়, তো ঠিক আছে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলবে। কারণ (যে জিন এমন করে) সে কাফির হয়ে থাকে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মদিনার কিছুসংখ্যক জিন মুসলমান হয়েছে। এদের (প্রাণী হিসেবে) যদি কেউ দেখো, তাহলে তিনবার সাবধান করবে। তারপরও আবার এলে সেই প্রাণীকে হত্যা করবে। (মুসলিম, হাদিস : ২২৩৬)

জিন তাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর দোয়া হলো আয়তুল কুরসি। জিনে আছরের ঘটনা হাদিসে পাওয়া যায়। হাদিসে আছে, ‘রাসুল (সা.) একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, যার ওপর জিনের ভর ছিল। রাসুল (সা.) ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন, ওহ আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। ওহ আল্লাহর শত্রু বের হয়ে আসো। তখন ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫৪৮, আহমদ, হাদিস : ৪/১৭১,১৭২)

জিনে প্রভাবিত ব্যক্তির স্বাভাবিক আচার-আচরণ বদলে যেতে পারে। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। আলো সহ্য করতে পারে না। আজানের সময় অস্থির হয়ে পড়তে পারে। রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এ রকম সময় আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আল-আরাফ, আয়াত : ২০০)। সুরা নাছ ও সুরা ফালাক সর্বোপরি কার্যকর।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...