আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,431 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
১)'সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন'  এই দরুদ টার অর্থ  কি?
২) একজন মেয়ে কিভাবে পরপুরুষ এর চেহারা দেখা থেকে নিজেকে বাচিয়ে চলবে?  স্কুলের শিক্ষক,  গাড়ি চালক, দোকানদার, এদের দিকে প্রয়োজনে তাকালেও কি গুনাহ হবে? চেষ্টা করার পরেও পরপুরুষের চেহারা দেখে ফেললে এবং অনিচ্ছাকৃত ভাবে একাধিক বার কারো চেহারা দেখে ফেললে  পাপ হবে কি?

1 Answer

+1 vote
by (644,610 points)
 জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ 
'সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন'  এই দরুদ টার অর্থ
(ইয়া আল্লাহ!) আপনি মুহাম্মদ সাঃ এর ওপর দুরুদ, রহমত, প্রশংসা  নাজিল করুন।
,
(০২)
শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের জন্য পর পুরুষের চেহারা দেখা,   যদি আকৃষ্ট হবার শংকা না থাকে,ফেতনার আশংকা না থাকে,  তাহলে জায়েজ আছে।

কিন্তু আকৃষ্ট হবার শংকা থাকলে জায়েজ নয়,হারাম।
তবে শংকা না থাকলেও দেখা অনুত্তম।

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ [٢٤:٣١
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। [সূরা নূর-৩১]

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم، فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ خَيْرٌ لِلْمَرْأَةِ؟ فَسَكَتُوا، فَلَمَّا رَجَعْتُ قُلْتُ لِفَاطِمَةَ: أَيُّ شَيْءٍ خَيْرٌ لِلنِّسَاءِ؟ قَالَتْ: أَلَّا يَرَاهُنَّ الرِّجَالُ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّمَا فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّي» رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবাগণকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মহিলাদের জন্য সবচে’ উত্তম কী? তখন সকলেই চুপ ছিল। তারপর যখন আমি বাড়ীতে ফিরলাম। তখন ফাতিমা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলামঃ মহিলাদের জন্য সবচে’ উত্তম কী? তখন ফাতিমা রাঃ বললেন, পর পুরুষকে না দেখা। তারপর এটি আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় ফাতিমা আমারী শরীরের অংশ। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫২৬]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ الْفَضْلُ رَدِيفَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَتْ امْرَأَةٌ مِنْ خَشْعَمَ فَجَعَلَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَتَنْظُرُ إِلَيْهِ وَجَعَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصْرِفُ وَجْهَ الْفَضْلِ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আববাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫১৩]

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ الْحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فَسَتَرَنِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَنْظُرُ فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتّٰى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ تَسْمَعُ اللَّهْوَ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন্ বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে। [বুখারী, হাদীস নং-৫১৯০]

نَظَرُ الْمَرْأَةِ إلَى الرَّجُلِ الْأَجْنَبِيِّ كَنَظَرِ الرَّجُلِ إلَى الرَّجُلِ تَنْظُرُ إلَى جَمِيعِ جَسَدِهِ إلَّا مَا بَيْنَ سُرَّتِهِ حَتَّى يُجَاوِزَ رُكْبَتَهُ، وَمَا ذَكَرْنَا مِنْ الْجَوَابِ فِيمَا إذَا كَانَتْ الْمَرْأَةُ تَعْلَمُ قَطْعًا وَيَقِينًا إنَّهَا لَوْ نَظَرَتْ إلَى بَعْضِ مَا ذَكَرْنَا مِنْ الرَّجُلِ لَا يَقَعُ فِي قَلْبِهَا شَهْوَةٌ، وَأَمَّا إذَا عَلِمَتْ أَنَّهُ تَقَعُ فِي قَلْبِهَا شَهْوَةٌ أَوْ شَكَّتْ وَمَعْنَى الشَّكِّ اسْتِوَاءُ الظَّنَّيْنِ فَأَحَبُّ إلَيَّ أَنْ تَغُضَّ بَصَرَهَا مِنْهُ، (الفتاوى الهندية-5/327)

(وكذا) تنظر المرأة (من الرجل) كنظر الرجل للرجل (إن أمنت شهوتها) فلو لم تأمن أو خافت أو شكت حرم استحسانا (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى النظر واللمس-9/533)
যার সারমর্ম হলো মহিলাদের জন্য পুরুষদের দিকে দৃষ্টিপাত করা, পুরুষের জন্য পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত করার বিধানের মতোই।

তবে যদি আকৃষ্ট হবার শংকা থাকে,ফেতনার আশংকা থাকে, তাহল হারাম।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬


★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ফেতনার আশংকা না থাকলে তো কোনো গুনাহই নেই,তবে অনুত্তম। 
আর ফেতনার আশংকা থাকলে চেষ্টা করার পরেও  অনিচ্ছায় চোখ গেলে কোনো কোনো গুনাহ্ নেই।
 
আলী রা.-কে নবীজী বলেছেন,
يَا عَلِيُّ لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ، فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ.
হে আলী! (হঠাৎ) দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বার তাকিয়ো না। কারণ, (হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত পড়ে যাওয়া) প্রথম দৃষ্টি তোমাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। জামে তিরমিযী, হাদীস ২৭৭৭
,
তবে ফেতনার আশংকা থাকার ছুরতে বার বার অনিচ্ছায় চোখ দেওয়া জায়েয নেই, হারাম।   
আর এই ছুরতে এক বার ইচ্ছাকৃতভাবে নজর দেওয়াও হারাম।
,
সুতরাং এখানে মূল বিষয় হলো ফেতনার আশংকা, আকৃষ্ট হবার শংকা থাকা।

★অনেক ফুকাহায়ে কেরামগন বলেছেন,মহিলারা যদি বাজারে যায় বা বাহিরে যায়,সেক্ষেত্রে চেহারা নত রাখবে।
গায়রে মাহরাম পুরুষদের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নজর দিবেনা।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নজর দেয়,সেক্ষেত্রে এর দরুন গুনাহ হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي نَبْهَانُ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدَهُ مَيْمُونَةُ فَأَقْبَلَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ وَذَلِكَ بَعْدَ أَنْ أُمِرْنَا بِالْحِجَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " احْتَجِبَا مِنْهُ " . فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ أَعْمَى لاَ يُبْصِرُنَا وَلاَ يَعْرِفُنَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا أَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهِ " .
মুহাম্মদ ইবন আলা (রহঃ) .... উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি এবং মায়মূনা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তখন সেখানে আবদুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতুম (রাঃ) আসেন। আর এটি ছিল পর্দার আয়াত নাযিলের পর। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জন এর থেকে পর্দা কর। তখন আমরা বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে পায়না, চিনতেও পারেনা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরাও কি অন্ধ, তোমরা দু’জন কি তাকে দেখছো না?
মিশকাত ৩১১৬, ইরওয়া ১৮০৬, আবু  দাউদ ৪০৬৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৭৭৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...