ইজাব কবুল ও বিবাহ নিয়ে কিছু প্রশ্ন

Question

আসসালামু আলাইকুম শায়েখ
(1) কোন মেয়ে প্রেম করতো। মেয়েটার মা সেই ছেলেকে বলছে আমার মেয়েকে বৌ  বলে ডাকতে পারো না ছেলেটা বলছে যখন হবে তখন দেখবো। মেয়েটা এই সম্পর্কে কিছু জানতো না। মেয়েটা তার মাকে এমন কথা বলতে বলে নাই। পরে মেয়েটা তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পেরে সেদিনই ছেলেটাকে ম্যাসেজ করে বলে যে সে তার মাকে এমন কথা বলতে বলে নাই। যখন এমন কথা হইছে তখন কি কোন দুজন সাক্ষী ছিল বা কোন লোকজন ছিল সে ছেলেটা বলছে না সে একা ছিল রুমে আরও বলছে লোকজন রুমে থাকলে সে আমার কিংবা আমার মায়ের সাথে কথা বলে না। ছেলেটার কথা তো বিশ্বাস করা যাবে শায়েখ যে কোন দুজন সাক্ষী বা লোকজন ছিল না?
সে শতভাগ সত্যবাদী না। কিছু দিন আগেও ফোন দিয়ে আমার মাকে মিথ্যা বলছে যে তার সাথে আমার কথা হইছে তিন দিন আগে। কিন্তু আমার মা এর সাথে ঐ কথা নিয়ে সে কোন দাবি করে নাই যে লোক ছিল। তাকে জিজ্ঞেস করায় সে বলছিল কোন দুজন লোক বা সাক্ষী ছিল না।

(2)   1 নং প্রশ্নে তো কোন ইজাব কবুল হয় নাই?  যেখানে মেয়ে এমন কথা বলতে বলে নাই এমনকি এমন কথা হওয়ার সময় উপস্থিত ছিল না। এমনকি মেয়ে তার মাকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও এমন কথা বলে নাই। সে ঐ ছেলেকে পছন্দ করে তাই বলছিল। সে পরে জানছে তার মা তাকে বলছে। যা শুনে সে অনেক রাগ করছিল। এতে কোন ইজাব কবুল বা বিয়ে হয় নাই?

(3) ১ নং ও ২ নং প্রশ্নোউক্ত ক্ষেত্রে ছেলে টা হ্যা বা সম্মতিসূচক কিছু বলে নাই। আমি শিওর আমার বাবাকে ছেলের বিষয়ে এই ঘটনার পরে জানাইছিলাম। যে আমি একটা ছেলেকে পছন্দ করতাম সে চাকরি বাকরি কিছু করে না। বাবা বলছিল খবরদার ঐ ছেলের সাথে কথা বলবে না। আমি তোমাকে ঐ খানে বিয়ে দিবো না। তখন আমার বাবা না করে দিছিলেন যে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন না। কিন্তু বাবা আমার মাকে বলছিলেন ভাল ছেলে পেলে বিয়ে দিয়ে দাও মেয়েকে। আমি তো আমার মাকে বিয়ে দিয়ে দাও এমন কিছু বলি নাই। বাবার বিয়ে দিয়ে দাও বলার দ্বারা কি আমার মা আমার উকিল হবে? যেখানে আমি তাকে অনুমতি দেই নি।

(৪) আমার একটু সময় লাগছে মনে করতে যে এই ঘটনার পর নাকি আগে বাবা মাকে বলছে ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিতে। কিন্তু আমার মনে পড়ছে শিওর যে পরে বলছে।  আমার  মনে েপড়ছে আর অনেক আগের ঘটনা আমার মায়ের সব কথা সময় মনে পড়ে না। কিন্তু জিজ্ঞেস করছি সেও একই কথা বলছে। যা আমার মনে তাই সঠিক। তাহলে তো আমার সংসারে কোন সম্যসা নাই তাই তো শায়েখ? 

৫. আমার এখন অন্য একজনের সাথে বিয়ে হইছে আমার শুদ্ধ তাই তো শায়েখ? আমি নিশ্চিন্ত মনে সংসার করতে পারবো শায়েখ?  আমার কি এগুলো নিয়ে আর চিন্তা করা লাগবে?

(৬) আমি শিওর আমার মায়ের সাথে ঐ ছেলের এমন কথোপকথন এর পর আমার বাবা বলছে ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিতে।  জানার জন্য প্রশ্ন আমার বাবা তো সরাসরি ঐ ছেলের কথায় না বলে দিয়েছিল। যদি উক্ত কথোপকথন ুর আগে আমার মাকে বলতো ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও তাহলে কি আমার মা আমার উকিল হতো? আমি তো তাকে অনুমতি দেই নি।  উল্টো আমি ওকে বিয়ে করতে চাইতাম না।আমি শুধু বলছি একটা ছেলেকে পছন্দ করতাম কিন্তু চাকরি বাকরি করে না। আমি ওকে বিয়ে করার কথা কিছু বলি নাই। আর ঐ ছেলে যখন হবে তখন দেখবো সেটাই বলছে আমি শিওর। আমার মা ভুলে গেছিল এবং যখন হবে তখন ডাকাবো, যখন হবে তখন বলবো,  যখন হবে তখন দেখবো এই  তিনটার ভেতর কনফিউশান ছিল। কিন্তু আমার মা শিওর ছিল যে ছেলেটা কোন সম্মতি সূচক কিছু বলে নাই।  আর আমি ঐ দিনের ঘটনা ভুলে গেলেও আমার পরে শিওর মনে পড়ে যে আমি ঘুৃম থেকে উঠলে আমার মা আমাকে সব খুলে বলে  উক্ত কথোপকথন এর ব্যাপারে যখন হবে তখন দেখবো এটাই বলছিল।

(৭)  https://ifatwa.info/40283/ এই লিংকে আপনার কমেন্ট আর আপনার কমেন্ট এই লিংক https://ifatwa.info/40336/ এ শায়েখ এর মাসআলা অনুযায়ী ও তো আমার সংসারে কোন সম্যসা নেই তাই তো শায়েখ? আমার বিয়ে তো শুদ্ধ। 

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

জবাবঃ- 

শরীয়তের বিধান মতে শুধুমাত্র বর বৌ ডাকলে বিয়ে হয় না।

বিবাহের ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ اسۡتَشۡہِدُوۡا شَہِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّہَدَآءِ اَنۡ تَضِلَّ اِحۡدٰىہُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىہُمَا الۡاُخۡرٰی

আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ, অতঃপর যদি দু’জন পুরুষ না হয় তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রীলোক যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর, যাতে স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুলে গেলে তাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

(সুরা বাকারা ২৮২)

হাদিস শরিফে এসেছে, 

قوله صلى الله عليه وسلم : ( لا نكاح إلا بولي وشاهدي عدل ) رواه البيهقي من حديث عمران وعائشة ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7557) 

বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।

★বাহরুর রায়েক গ্রন্থে আছেঃ-

وَتَمَامُهُ فِي الْفَصْلِ السَّابِعَ عَشَرَ فِي النِّكَاحِ بِالْكِتَابَةِ مِنْ الْخُلَاصَةِ، وَقَيَّدَ بِالْإِيجَابِ وَالْقَبُولِ؛ لِأَنَّهُ لَا يَنْعَقِدُ بِالْإِقْرَارِ فَلَوْ قَالَ بِحَضْرَةِ الشُّهُودِ: هِيَ امْرَأَتِي، وَأَنَا زَوْجُهَا، وَقَالَتْ: هُوَ زَوْجِي، وَأَنَا امْرَأَتُهُ لَمْ يَنْعَقِدْ النِّكَاحُ؛ لِأَنَّ الْإِقْرَارَ إظْهَارٌ لِمَا هُوَ ثَابِتٌ، وَلَيْسَ بِإِنْشَاءٍ 

সারমর্মঃ

ইজাব কবুলের সাথে বিবাহকে মুকায়্যাদ করা হয়েছে।কেননা ইজাব কবুল ব্যাতিত বিবাহ শুদ্ধ হয়না।

সুতরাং কেহ যদি সাক্ষীদের সামনে বলে যে সে আমার স্ত্রী আর আমি তার স্বামী,আর মহিলাটিও বলে যে সে আমার স্বামী আর আমি তার স্ত্রী,তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবেনা।

কেননা স্বীকারোক্তি বলা হয় যাহা আগে থেকে প্রমানিত, সেটি প্রকাশ করা,নতুন ভাবে কোনো কিছু হওয়া নয়।

(বাহরুর রায়েক-৩/৯০)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ

النكاح ينعقد بالإيجاب والقبول بلفظين يعبر بهما عن الماضي لأن الصيغة وإن كانت للإخبار وضعا فقد جعلت للإنشاء شرعا دفعا للحاجة وينعقد بلفظين يعبر بأحدهما عن الماضي وبالآخر عن المستقبل مثل أن يقول زوجني فيقول زوجتك لأن هذا توكيل بالنكاح والواحد يتولى طرفي النكاح الھدایۃ، ج:1، ص:185، ط:دار احياء التراث العربي - بيروت - لبنان

সারমর্মঃ

বিবাহ ইজাব কবুল দ্বারা সম্পন্ন হয়,দুটির একটি অতিতকাকাল সূচক বাক্য হবে,আরেকটি বর্তমান কাল বুঝায় এমন বাক্য হতে হবে।

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وینعقد بلفظ النکاح والتزویج والہبة والتملیک والصدقة )

সারমর্মঃ  

বিবাহ,তাযয়িজ,হিবা,তামলিক,সদকাহ এই জাতীয় বাক্য গুলি দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

https://ifatwa.info/40283/

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,

(০১)

প্রশ্নের বিবরণ মতে ইজাব কবুল হয়নি।

(০২)

এতে কোন ইজাব কবুল বা বিয়ে হয়নি 

(০৩)

আপনি যদি সেই সময়ে বালেগাহ হয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার মা উকিল হবেনা।

আর যদি আপনি সেই সময়ে নাবালেগাহ হয়ে থাকেন,সেক্ষেত্রে আপনার মা বাবার কথায় উকিল হবে।

তারপরেও এই বিবাহ হবেনা।

(০৪)

আপনার সংসারে কোন সমস্যা নেই। 

(০৫)

আপনার যে এখন অন্য একজনের সাথে বিয়ে হইছে আপনার বিবাহ শুদ্ধ।  আপনি নিশ্চিন্ত মনে সংসার করতে পারবেন।  আপনার এগুলো নিয়ে আর চিন্তা করা লাগবেনা।

(০৬)

৩ নং প্রশ্নের জবাব দ্রষ্টব্য।

(০৭)

আপনার সংসারে কোনো সমস্যা নেই। 

আপনার বিবাহ শুদ্ধ।