আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
145 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)

১। কোনো ব্যক্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হয়ে কিংবা নিজে উপার্জন করে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত মোট যতটুকু সম্পদের মালিক হয়, সেটাকে তাঁর রিযক বলে নাকি ঐ ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত সেই সম্পদ থেকে যতটুকু নিজে ভোগ করতে পারে, সেটাকে তাঁর রিযক বলে? 

২। কোনো ব্যক্তি মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তাঁর রিযক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়- এই নির্ধারণকৃত রিযক দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর মালিকানায় থাকা মোট সম্পদের পরিমাণকে বোঝায় নাকি মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর নিজের ভোগ্য অংশটুকুকে বোঝায়? 

৩। ''আর আমি তোমাদের যে জীবিকা (রিযক) দিয়েছি তা থেকে ব্যয় কর মৃত্যু আসার আগে..'' [সূরা মুনাফিকুন] 

ব্যক্তির নিজের ভোগ্য অংশটুকু ছাড়া অবশিষ্ট সম্পত্তিকে যদি তাঁর রিযক বলা না হয়, তাহলে  নিজের ভোগের পর অবশিষ্ট থাকা সম্পদ থেকে সে সাদাকাহ করলে সেটা কার রিযক থেকে করছে বলে গণ্য হবে?  অর্থাৎ আমি আমার সম্পদ থেকে রহিমের পেছনে ১ হাজার টাকা ব্যয় করলে সেই ১ হাজার টাকাকে আমার রিযক বলা হবে নাকি রহিমের রিযক বলা হবে?  

৪। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, 'হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর। কেননা কোন ব্যক্তিই তার জন্য নির্ধারিত রিযিক পূর্ণরূপে না পাওয়া পর্যন্ত মরবে না, যদিও তার রিযিক প্রাপ্তিতে কিছু বিলম্ব হয়। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং উত্তম পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ কর, যা হালাল তাই গ্রহন কর এবং যা হারাম তা বর্জন কর।' [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২১৪৪]

প্রশ্ন করার সুবিধার্থে ধরে নিলাম, কেউ মৃত্যু পর্যন্ত হারাম উপায় অবলম্বন করে ১০ কোটি টাকা উপার্জন করেছে  কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত ৫ কোটি টাকা নিজে ভোগ করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, উপরের হাদিসের আলোকে নিচের কোন বাক্যকে সঠিক বলা হবে- 

i) সে সারাজীবন হালাল উপায় অবলম্বন করলেও সেই ১০ কোটি টাকা-ই উপার্জন করতে পারত এবং ৫ কোটি টাকা-ই ভোগ করতে পারত বলা হবে? 

ii) নাকি বলা হবে ১০ কোটি টাকা উপার্জন করতে না পারলেও হারাম উপায়ে মৃত্যু পর্যন্ত যেই ৫ কোটি টাকা ভোগ করতে পেরেছে, হালাল উপায় অবলম্বন করলেও মৃত্যু পর্যন্ত সেই ৫ কোটি টাকা-ই ভোগ করতে পারত?

৫) মায়ের পেটে থাকাকালীন রিযক নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বলতে কি বেশি পরিশ্রম করলেও নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি সম্পদ উপার্জনের সুযোগ নেই বুঝানোটা উদ্দেশ্য? নাকি বেশি পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বেশি সম্পদ লাভ করার সুযোগ রয়েছে কিন্তু নির্ধারিত অংশের চেয়ে বেশি ভোগ করার সুযোগ নেই বুঝানোটা উদ্দেশ্য?  

 

উস্তাযের নিকট বিনীত নিবেদন রইল প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর আলাদা আলাদা পয়েন্টে উল্লেখ করার জন্য। জাযাকাল্লাহু খাইরান। 

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اِنَّ اللّٰہَ ہُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الۡقُوَّۃِ الۡمَتِیۡنُ ﴿۵۸﴾ 

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রিজিক দান করেন এবং তিনি প্রবল পরাক্রান্ত’। (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৫৮)।

قَالَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ اللّٰہُمَّ رَبَّنَاۤ اَنۡزِلۡ عَلَیۡنَا مَآئِدَۃً مِّنَ السَّمَآءِ تَکُوۡنُ لَنَا عِیۡدًا لِّاَوَّلِنَا وَ اٰخِرِنَا وَ اٰیَۃً مِّنۡکَ ۚ وَ ارۡزُقۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ 

‘মারয়াম তনয় ঈসা (আঃ) বলল, হে আল্লাহ, আমাদের প্রতিপালক। আমাদের জন্য আসমান হতে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্জা দান করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকলের জন্য আনন্দ উৎসব এবং তোমার নিকট হতে নিদর্শনস্বরূপ হবে এবং আমাদেরকে রিযিক দান করুন আপনিই তো শ্রেষ্ঠ জীবিকা দানকারী। (সূরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)। 

وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡہَا مَعَایِشَ وَ مَنۡ لَّسۡتُمۡ لَہٗ بِرٰزِقِیۡنَ ﴿۲۰﴾ 

তোমাদের জন্য রিজিক বা জীবিকার ব্যবস্থা করেছি। আর তোমরা যাদের জীবিকদাতা নও তাদের জন্যও। (সূরা হিজর : আয়াত ২০)।


রিজিক কাকে বলে? এ সম্পর্কে কয়েকটি সংজ্ঞা রয়েছে। 

যথা- 
★মহান আল্লাহপাক তার সৃষ্টি জীবের প্রয়োজনে যেসকল বস্তুর ব্যবস্থা করেন, তারপর সৃষ্টিজীব তার দ্বারা উপকৃত হয়, তা-ই রিজিক। সুতরাং সকল সৃষ্টিই নিজ নিজ রিজিক গ্রহণ করে থাকে। (শারহুল মাকাসিদ : খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৩৫)। 

★কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন,, আল্লাহপাক তোমাদের জন্য যে সকল বস্তুর ব্যবস্থা করেন, অনন্তর প্রাণী তা গ্রহণ করে জীবন পরিচালনা করে তা-ই রিজিক। আর তা কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হালাল হয় এবং কখনো কিছু সৃষ্টির জন্য হারাম হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে, আপেক্ষিকভাবে যা হারাম, তা-ও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, সৃষ্টি বিশেষের জন্য হালাল করা হয়েছে। 

★কারো কারো মতে প্রাণী যা ভক্ষণ করে জীবন যাপন করে তাকে রিজিক বলে। তবে এ সংজ্ঞা হতে প্রথমোক্ত সংজ্ঞা উত্তম। কেননা, তৃতীয় সংজ্ঞায় রিজিকের সম্বন্ধ আল্লাহপাকের দিকে করা হয়নি। অথচ রিযিক বোঝাতে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ থাকা বিশেষ ধর্তব্য। (শারহুল আকাইদ : পৃষ্ঠা ৯৫)।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
ঐ ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত সেই সম্পদ থেকে যতটুকু নিজে ভোগ করতে পারে, সেটাকে তাঁর রিযক বলে।

(আর বাকি সম্পদ যাহা তার মালিকানায় ছিলো,সেটি মাজায অর্থাৎ রুপক অর্থে রিযক বলে।)

আরো জানুনঃ- 

(০২)
এই নির্ধারণকৃত রিযক দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর নিজের ভোগ্য অংশটুকুকে বুঝায়।

(০৩)
ব্যক্তির নিজের ভোগ্য অংশটুকু ছাড়া অবশিষ্ট সম্পত্তিকে প্রকৃত অর্থে রিযিক না বলা হলেও সেটিকে মাজায অর্থাৎ রুপক অর্থে রিযক বলে। আর মৃত্যু পর্যন্ত যেহেতু তারই মালিকানা থাকে,সুতরাং নিজের ভোগের পর অবশিষ্ট থাকা সম্পদ থেকে সে সাদাকাহ করলে সেটা নিজের রিযক থেকে করছে বলে গণ্য হবে।

(০৪)
সে সারাজীবন হালাল উপায় অবলম্বন করলেও সব শেষে সে হারাম উপায়ের দিকেই অগ্রসর হতো,হারাম উপায়ে সেই ১০ কোটি টাকা-ই উপার্জন করতে পারত এবং ৫ কোটি টাকা-ই ভোগ করতে পারত বলা হবে।

(০৫)
মায়ের পেটে থাকাকালীন রিযক নির্ধারণ করে দেওয়া হয় বলতে বেশি পরিশ্রম করলেও নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি সম্পদ উপার্জনের সুযোগ নেই বুঝানোটা উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য,  এখানে সে কতটুকু পরিশ্রম করতে পারবে,সেটিও নির্ধারিতই থাকে।
সুতরাং সেই নির্ধারিত অংশ চেয়ে বেশি পরিশ্রমও করতে পারবেনা।
সব কিছুই তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...