আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
135 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (108 points)
দান করে খোটা প্রসংগে।

১,উপকার করে অথবা দান করে খোটা দেয়ার ব্যাপারটি কেমন একটু বিস্তারিত আলোচনা করবেন উদাহরণ সমেত?

২, যদি কোনো কাজ (পরপকার/দান) ইখলাসের সহিত আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় করি কোনো ব্যক্তির জন্য। পরে কোনোদিন যদি আমার প্রয়োজন দেখা দেয়,আমি তাকে সাহায্য কামনা করি এই নিয়তে যে তাকেত আমি সাহায্য করেছিলাম সেও করবে (কিন্তু আমি তাকে মৌখিক বা কর্মগত ভাবে খোটা দেইনি যে, ' আমিত তোমাকে দিয়েছিলাম এখন আমাকে দেও' এভাবে বলিনি) তাহল৩ উক্ত সাহায্য কামনা কি বৈধ হবে?

৩,নিকটাত্মীয়, বন্ধু বিশেষত স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান যখন অক্রিতজ্ঞ এর মত আচরণ করে তখন যদি তার জন্য কি করেছি তা স্মরণ করিয়ে দেই তা কি গুনাহ হবে? যেমন,তোমার জন্য কি না করেছি,এই এই করেছি অথচ তুমি আমাকে মূল্য দিলেনা এসব এসব প্রতিদান দিলে বা এসব করলে আমার প্রতি।

৪,অনেকসময় নেটোয়ার্কিং স্কিল বা কম্যুনিকেশান স্কিল বাড়াতে আমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হয় যাতে তাদের পরিচিতিতে তা আমার কোনো কায সিদ্ধি হয় অথবা চাকুরি পাওয়া ইজি হয় বা অন্য কাজ সমাধা হয়। এসব ক্ষেত্রে এভাবে পরিচিতি বাড়ানো,সখ্যতা বাড়ানো বা এসবের উদ্দ্যেশ্যে সুন্দর ব্যবহার করলে কি সওয়াব পাওয়া যাবে? কারণ এসব করে যেসব কাজ সমাধা করতে চাচ্ছি সেসব হালাল কাজ ক্ষেত্রবিশেষে আল্লাহর হুকুমের মধ্যে পড়ে(যেমন চাকুরি/রোজগার করা)

৫, আমার অনেক ইচ্ছা করে বড় বড় আবিষ্কার সেসব যেন আমি করি।বিজ্ঞানী হিসেবে। অন্য কেউ করে ফেললে হাল্কা মন খারাপ হয়। তবে তার মানে এই না যে কেউ সেসব করতে আমার থেকে সাহায্য চাইলে আমি করবনা বা করলেও ত্রুটি বা অবহেলা করব। যাস্ট নিজের করতে নিজের হাত দিয়ে সেসব হতে ভাল লাগে। ইচ্ছা করে নিজের নাম টাও ইতিহাসে থাকুক বা ছড়িয়ে যাক,এর মানে এই না যে আমি অহংকার করব, বা লোক দেখায়া বেড়াব। বরং অন্তরালে থেকেই এসব করতে ও শুনতে চাই। এমন চিন্তা ভাবনা বা নিয়ত কি গুনাহের? এতে কি সওয়াব বঞ্চিত হব?

৬,আপনাদের এখানে জেনেছি কেউ কারো উন্নতি দেখেক্ষতি কামনা করল্র তা হিংসা তবে ক্ষতি কামনা না করে নিজেরো উন্নতি কামনা চাইল্র তা হিংসা না।

এখন যদি এমন হয় যে আমার উন্নতি হলে তার ক্ষতি হতে হবে।এমন টা চাওয়া?

যেমন, আমাদের ক্লাসে, যে এখন ফার্স্ট বয় সে এমন ভাল রেজাল্ট করে যে শ্যধু আমাকে ভাল করলে হবেনা একইসাথে তারো ভুল/খারাপ করলে তখন আমি তার আগে যেতে পারব।এক্ষেত্রে নিজের ১ম হবার দুয়া করা কি হিংসার মধ্যে পড়বে?

আমি অবশ্য এভাব্র দুয়া করি,'আমাকে ১ম দিন করে দিন ইয়া রব্ব,আর তাকেও কল্যানের মাঝে রাখুন'

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


(০১)
খোঁটা দেওয়াকে কুরআন মাজীদে কাফের-বেঈমানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تُبْطِلُوْا صَدَقٰتِكُمْ بِالْمَنِّ وَ الْاَذٰی ۙ كَالَّذِیْ یُنْفِقُ مَالَهٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ فَمَثَلُهٗ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَیْهِ تُرَابٌ فَاَصَابَهٗ وَابِلٌ فَتَرَكَهٗ صَلْدًا ؕ لَا یَقْدِرُوْنَ عَلٰی شَیْءٍ مِّمَّا كَسَبُوْا ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْكٰفِرِیْنَ.

অর্থ : ‘হে মু’মিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না।’ (সূরা বাকারা (২) : ২৬৪)

অর্থাৎ খোঁটা দেওয়া কাফেরদেরই বৈশিষ্ট্য।
তারা যেহেতু আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাই ছওয়াবেরও কোনও আশা থাকে না। আশা থাকে কেবল নগদপ্রাপ্তি। হয় সে ব্যক্তি তাকে আরও বেশি দেবে, নয় তার অনুরূপ উপকার তারও করবে। অন্ততপক্ষে তার গুণগান করে তো বেড়াবেই। যখন এর কোনওটা পায় না, তখন মনে করে- বৃথাই টাকা-পয়সা নষ্ট করল। এভাবে সে হতাশার শিকার হয় আর নিমকহারাম, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি বলে গালাগাল করে। এখন মু’মিন-ব্যক্তিও যদি খোঁটা দিয়ে বসে, তবে তা কাফেরসুলভ আচরণই হল। এর দ্বারা প্রমাণ হবে- দান বা উপকার করার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি তার উদ্দেশ্য ছিল না। যেমন কাফের ব্যক্তির সেরকম উদ্দেশ্য থাকে না।

খোঁটা দেওয়া যে কত গর্হিত এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে কত ঘৃণ্য, হযরত আবূ যর (রাযি.)-এর একটি হাদীস দ্বারা তা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَ لَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ وَ لَا يُزَكِّيْهِمْ وَ لَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ فَقَرَأَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ ثَلَاثُ مِرَارٍ، قَالَ اَبُوْ ذَرٍّ : خَابُوْا وَ خَسِرُوْا، مَنْ هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ : اَلْمُسْبِلُ وَ الْمَنَّانُ وَ الْمُنْفِقُ سِلْعَتَه بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ.

‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যাদের সংগে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবূ যর (রাযি.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বললেন, (ক) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; (খ) যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং (গ) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়।’ 
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৬)

বস্তুত খোঁটাদানকারী নিজেকে মহানুভবতার উচ্চস্তর থেকে হীনতার গভীর খাদে নামিয়ে আনে। 
খোঁটা দেওয়া একরকম অহমিকাও বটে। কারণ এর দ্বারা সে যাকে উপকার করেছে, তাকে নিজ কৃপাধন্য মনে করে। তাকে হীন ও ছোট ভাবে। অথচ দান-উপকার করা চাই ব্যক্তির মান-সম্ভ্রমের প্রতি লক্ষ রেখেই। 

আসলে খোঁটা দেওয়া একরকম ধৃষ্টতা। কারণ মানুষ খোঁটা কেবল তখনই দেয়, যখন উপকার করতে পারাকে নিজ কৃতিত্ব গণ্য করে, আল্লাহর দান ও তাওফীকের দিকে দৃষ্টি না থাকে। কেবল সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকলেই তো উপকার করা যায় না। এর জন্য আল্লাহর তাওফীকের দরকার হয়। দান করার পরে খোঁটা দিলে সেই তাওফীকের অমর্যাদা করা হয় এবং করা হয় অকৃতজ্ঞতা। এই অকৃতজ্ঞতা ও ধৃষ্টতার কারণেই তো কিয়ামতের দিন সে আল্লাহ তা‘আলার সুদৃষ্টি, সুবাক্য ও পরিশোধন থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং তাকে ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি। 

খোঁটা দেওয়ার পরিণতি এই হয় যে, যার উপকার করা হয়, একসময় তার ও উপকারকারীর মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এটা এখন এমনই ব্যাপক যে, বলাই হয়ে থাকে- তুমি কারও উপকার করলে প্রস্তুত থেকো একদিন সে তোমার অপকার করবে। আসলে এটা উপকার করার দোষ নয়; বরং খোঁটা দেওয়া ও নিয়ত সহীহ না থাকার পরিণাম। নিয়ত সহীহ না থাকলে বিনিময়ের প্রত্যাশা থাকে। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই বিনিময় না পেলে খোঁটা দেওয়া হয়। যার পরিণামে সৃষ্টি হয় মনোমালিন্য। একপর্যায়ে তা শত্রুতায় গড়ায়। আর তখন ভাবা হয়, এটা সেই উপকার করার পরিণাম। অথচ সহীহ নিয়তে উপকার করলে শত্রুতা সৃষ্টির প্রশ্নই আসে না; বরং শত্রুর সংগেও ভালো ব্যবহার করলে, তার কোনও উপকার করলে এবং আদর-আপ্যায়ন করলে সে বন্ধুতে পরিণত হয়ে যায়। 

(০২)
হ্যাঁ, উক্ত সাহায্য কামনা বৈধ হবে। 

(০৩)
গুনাহ হবেনা।
তবে তিরস্কার উদ্দেশ্য হলে খোঁটা দেয়া হবে। 

(০৪)
এক্ষেত্রে ছওয়াব পাওয়া যাবেনা।

(০৫)
এমন চিন্তা ভাবনা বা নিয়ত গুনাহ নয়।
এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য না হলে শুধু নাম খ্যাতি উদ্দেশ্য হলে এতে সওয়াব বঞ্চিত হবেন।

(০৬)
এক্ষেত্রে নিজের ১ম হওয়ার দোয়া করা হিংসার মধ্যে পড়বেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...