আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
278 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (28 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

একজন লোক তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিয়েছেন। এখন তারা আবার একত্র হতে চান। শরীয়তে তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হালাল করার যে পদ্ধতি, স্ত্রী সেটাতেও রাজি। কিন্তু সমস্যা হলো এটা সমাজে জানাজানি হলে তারা অনেক লজ্জায় পড়ে যাবেন। সেজন্য খুব গোপনে স্বামীর ছোট ভাই তার ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করবে, বাসর যাপন করবে। তারপর পরদিন সকালে আবার তালাক দিবে। এরপর ইদ্দত পালনের পর বড় ভাই সেই স্ত্রীকে আবার বিয়ে করবে। 

 

খুব গোপনে করা হবে বলে কোনো আলিমকে ডেকে বিয়ে পড়ানোর সুযোগ কম। তাই এ সংক্রান্ত সকল মাসআলা জানতে চাচ্ছি।

১. কিভাবে বিয়ে পড়াতে হবে? কোন জিনিসগুলো বিয়ে সহীহ হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক? 

২. মোহরানা কখন নির্ধারণ করতে হবে? বিয়ে পড়ানোর আগে, নাকি পরে?

৩. নতুন স্বামী কি বাসর যাপনের পরের দিনই তালাক দিতে পারবে?

৪. ইদ্দতের পরবর্তী খরচ কি নতুন স্বামীকেই বহন করতে হবে? অন্য কেউ দিলে হবে না?

৫. বিয়ের সাক্ষীকে কি নেককার হতে হবে? উল্লেখ্য, নেককার লোক খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। আর এমন পরিস্থিতিতে অসম্ভবের কাছাকাছি। 

৬. মহিলা কি বিয়ে পড়াতে পারবে?

৭. আমরা জানি যে হালাল করার নিয়তে চুক্তি করে বিয়ে পড়ানো জায়েজ নয়। বিয়ের আলাপ করার সময় চুক্তি করা হচ্ছে। বিয়ে পড়ানোর সময় এ ধরণের কিছু বলা হবে না। তাহলে কি জায়েজ হবে? 

৮. একজন আলিম ফতোয়া দিয়েছেন, স্ত্রী যদি পুনরায় বিবাহ বসে এবং নতুন স্বামী যদি সহবাস ব্যতীত তালাক দেয় তবু প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসা যাবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো, স্বামী-স্ত্রীর কারো মনেই সন্দেহ থাকা যাবে না যে বিয়ে হলো কিনা। একদম পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে যে তাদের বিয়ে সহীহ্ হয়েছে। এই পদ্ধতি কি জায়েজ?

৯. মোহরানা সর্বনিম্ন কত টাকা হতে হবে?

১০. কতদিন ইদ্দত পালন করতে হবে? এর মাঝে কী কাজ করা যাবে আর কী করা যাবে না? 

যতগুলো প্রশ্ন করা দরকার ততগুলো মনে হয় গুছিয়ে করতে পারলাম না। মোটকথা, ‘তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর দ্বিতীয়বার বিবাহ বসে ইদ্দত পালনের পর পুনরায় প্রথম স্বামীর কাছে বিবাহ বসা’ – এর মাঝে যতগুলো মাসআলা জানার দরকার আছে সবগুলো বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি। 

সম্মানিত মুফতী সাহেব, দয়া করে বিস্তারিত উত্তর দিবেন। মাসআলা জানার অভাবে বিয়ে যেন ফাসেদ না হয়। আল্লাহর দুজন বান্দা-বান্দীকে জিনার গুনাহ থেকে বাঁচতে সাহায্য করুন। অতিদ্রুত এর একটা বিহিত না করলে স্ত্রীকে হালাল না করেই স্বামী সংসার শুরু করে দিতে পারে। আমরা দুই-একজন মহিলা ছাড়া এসব ব্যাপারে কারোরই তেমন মাথাব্যথা নেই। সমাজ এটা মেনে নিয়েছে। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে হালাল না করেই মানুষ সংসার শুরু করে দেয়। 

দয়া করে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করুন যেন আমরা অন্তত তাদের জিনা থেকে বাঁচাতে পারি। 

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এর উপস্থিতিতে পাত্র কনেকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে,আর পাত্রী কবুল বলবে।

অথবা সেখানে পাত্ত্রী কনেকে বিবাহের প্রস্তাব দিবে,আর পাত্র কবুল বলবে।
আর উভয় সাক্ষী শুনবে,তাহলেই বিবাহ হয়ে যাবে। 

(০২)
মোহরানা বিয়ে পড়ানোর আগে নির্ধারণ করতে হবে।

(০৩)
নতুন স্বামী বাসর যাপনের পরের দিনই তালাক দিতে পারবে।

এক্ষেত্রে সহবাস হয়ে হবে, সহবাস না হলে ১ম স্বামীর সাথে উক্ত স্ত্রীর বিবাহ শুদ্ধ হবেনা।

(০৪)
ইদ্দতের পরবর্তী খরচ নতুন স্বামীকেই বহন করতে হবে। অন্য কেউ দিলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী রাজি থাকলে সেটিও হবে। 

(০৫)
মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হলেই হবে।
নেককার হতে হবেনা।

(০৬)
হ্যাঁ, পারবে।

তবে এক্ষেত্রে সে তার কন্ঠের পর্দা নষ্ট হওয়ায় সে গুনাহগার হবে।

(০৭)
জায়েজ হবেনা।
গুনাহ হবে।

তবে এভাবে বিবাহ হলে সহবাসের পর তালাক দিলে তালাক পরবর্তী  ইদ্দত পালনের পর উক্ত স্ত্রীকে ১ম স্বামী বিবাহ করতে হবে।

উল্লেখ্য, যে ১ম স্বামী কর্তৃক তিন তালাকের পর উক্ত স্ত্রী ইদ্দত পালন শেষে ২য় স্বামীর সাথে বিবাহ বসবে।

১ম স্বামী কর্তৃক তিন তালাকের পর উক্ত স্ত্রী ইদ্দত পালনের আগেই ২য় স্বামীর সাথে বিবাহ বসলে সেই বিবাহই শুদ্ধ হবেনা।

তখন পরবর্তী কোনো কাজই জায়েজ হবেনা।

(০৮)
এই পদ্ধতি জায়েজ নয়।

এটি স্পষ্ট হাদীস বিরোধী কথা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً طَلَّقَ امْرَأَتَه“ ثَلاَثًا فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ فَسُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَتَحِلُّ لِلأَوَّلِ قَالَ لاَ حَتّٰى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الأَوَّلُ.

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বরণিত, রাফায়ার স্ত্রী বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার স্বামী রাফায়া আমাকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছে? এরপর আমি আব্দুর রাহমানের সাথে বিবাহ করেছি। এখন রাফায়ার কাছে যেতে পারবো কিনা? নবীজী বললেন, আবদুর রহমান তোমার সাথে সহবাস করলে এরপর রাফায়ার নিকট যেতে পারবে। (সহীহ বুখারী ৫২৬১)

(০৯)
বিবাহের সর্বনিম্ন মহর দশ দিরহাম।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا- قَالَ: زَوَّجَ النَّبِيُّ - صلى الله عليه وسلم - رَجُلًا امْرَأَةً بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيدٍ.
وَعَنْ عَلَيٍّ - رضي الله عنه - قَالَ: «لَا يَكُونُ الْمَهْرُ أَقَلَّ مِنْ عَشَرَةِ دَرَاهِمَ». أَخْرَجَهُ الدَّارَقُطْنِيُّ

সাহল বিন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোহার আংটির বিনিময়ে একজন লোকের সাথে এক মহিলার বিবাহ দিয়েছিলেন। 

‘আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, মোহর (সাধারণত) দশ দিরহামের কমে হয় না।
(দারাকুতনী ৩য় খণ্ড ২০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৩৪৯ ও ৩য় খণ্ড ২৪৫ পৃষ্ঠা হাদীস নং ১৩.বুলুগুল মারাম ১০৩৪।)

০১ দিরহাম=৩.০৬১৮ গ্রাম।
১০*৩.০৬১৮= ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা।অর্থাৎ দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা। 

বর্তমানে প্রতি তোলা রূপার মূল্য ১২০০/- টাকা।
১০(১০*১২০০)দিরহামের মূল্য দাঁড়ায় ৩,১৫০/- টাকা।


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
এটা হলো প্রত্যেক মহিলার জন্য শরীয়তের পক্ষ্য থেকে সর্বশেষ নির্ধারিত মহর।যাকে শরীয়তের হক বলা হয়ে থাকে।এর চেয়ে কম মহর নির্ধারণ করা যাবে না।সুতরাং বর্তমান হিসেব অনুযায়ী ৩,১৫০ টাকা এর নিম্নে মহর নির্ধারণ করা যাবে না।

★উল্লেখ্য রুপার মূল্য এলাকা ভেদে কমবেশি হতে পারে।   

১০দিরহামের কম মহরের উপর স্ত্রী সন্তুষ্ট থাকলেও শরীয়ত মহিলার উপর মহরে মিছিল ওয়াজিব করবে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন 
এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩,১৫০ টাকা মোহরানা নির্ধারন করতে পারবে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(১০)
১ম স্বামী যে তিন তালাক দিয়েছিলো,সেক্ষেত্রে ২য় বিবাহের আগে তিন হায়েজ ইদ্দত পালন করতে হবে।তারপর ২য় স্বামীর সাথে বিবাহ বসবে।

২য় স্বামী তালাক প্রদানের পর এক্ষেত্রেও আবারো পূর্ণ তিন হায়েজ ইদ্দত পালন করতে হবে।
এ সময় উক্ত স্বামীর বাড়িতে থাকতে হবে,বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবেনা।
সাজ সজ্জা করা যাবেনা,অলংকার পড়া যাবেনা।

বিস্তারিত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...