আসসালামু আলাইকুম।
আমার তালাকের ওয়াসওয়াসা আছে। সবসময় সন্দেহ আসতে থাকে।
(১) আমার এক বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে যাবার বিষয়ে কথা বলছিলাম। কথা বলতে বলতে হঠাৎ আমার মনের ভিতর আসলো যে,
-মন চাই সবাইকে ছেড়ে ছুড়ে কক্সবাজার চলে যায়।
এমন কথা মনে আসার পর তখনি মনে হচ্ছে এমন কথা মনে আসায় আমার ওয়াইফ তালাক হয়ে যাবে কিনা। আবার মনে হচ্ছে আমি মনে হয় আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দেবার কথা বললাম।
এজন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(২) গত কয়েক বছর আগে থেকে আমার ওয়াইফের জন্য সংসারে অশান্তি ছিল। এখন একটু ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু এখন এই ওয়াসওয়াসা রোগ হবার কারনে তখনকার সময়ের বিভিন্ন কথা মনে আসছে ও আমার মনে হচ্ছে ওই সময় এটা হয়েছিল ওটা হয়েছিল আমি এটা বলেছিলাম ওটা বলেছিলাম এমন অনেক কথা মনে আসছে আর আমি সন্দেহে ভুগছি। কিছুদিন ভাল থাকছি আবার আগের কোন না কথা মনে এসে সন্দেহ সৃষ্টি করছে। উদাহারনসরুপ :
সেসময় আমি ও আমার পরিবারের লোক চাইতাম যে, এমন কিছু করতে যার জন্য আমার ওয়াইফ নিজে থেকে যেন আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তাই সে কিছু চাইলে না দেওয়া অথবা তার সাথে খারাপ আচারন করা ইত্যাদি। এর জন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(৩) ওই সময় সংসারে অশান্তি থাকার কারনে আমার খালারা আমার বাসায় এসেছিল। কি সমস্যা হয় আমাদের মধ্যে জানার জন্য। তাই আমার মা ও খালারা ও আমার ওয়াইফ একসাথে বসে কথা বলছিলাম। তখন আমি বলেছিলাম যে,
(কেউ যদি আমাকে বলে, তুমি ৫ বছর জেল খাটবা, না তোমার ওয়াইফের সাথে সংসার করবা?
তখন আমি বলবো, আমি ৫ বছর জেল খাটবো। তবু সংসার করবো না। )
এই কথার মাধ্যমে আমি তালাক দিয়ে দিলাম এমন কোন নিয়তে বলিনি। মনে ওয়াইফের প্রতি রাগ ছিল তাই বলেছি। আগের এসব কথা এখন মনে আসছে আর আমার ওয়াসওয়াসা আরো বাড়ছে।
একথার জন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(৪) একবার সংসারে গন্ডোগোল হওয়াতে আমার চাচা চাচিরা আমার ওয়াইফের পক্ষ নেওয়াতে আমি বেশ কয়েকবার কিছু মানুষের সাথে বলেছিলাম যে,
(আমার ওয়াইফ তো আজ আছে কাল নেই। আমার চাচা চাচিদের কি উচিত হয়েছে তার সাপোর্ট করা।)
এই কথার জন্য কি তালাক পতিত হবে?
(৫) আমার বন্ধুর সাথে আমার খালাতো ভাই ডিলারশিপের ব্যাবসা ছাড়ছে না, বা ছেড়ে দিলে আর নিতে পারবে না সেসব বিষয়ে কথা বলছিলাম। কিন্ত এসব কথা বলার সময় আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন আমার ওয়াইফকে ছেড়ে দেবার কথা বলছি ও আমার ওয়াইফকে না নেবার কথা বলছি। এজন্য কি তালাক পতিত হবে শায়েখ?
(৬) আমার অতিরিক্ত ওয়াসওয়াসা থাকার কারনে সবসময় মনের ভিতর তালাক নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা বা তালাক দিয়ে দিলাম এমন কথা আসতে থাকে। সারাদিন এই তালাক নিয়ে চিন্তা ভাবনা আসতে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় তালাক উচ্চারন করে ফেলছি। যদিও আমি নিজের কানে স্পষ্ট ভাবে তালাক শব্দ শুনছি না। তারপরেও মনে হয় এই বুঝি উচ্চারন করলাম। যে কারো উপরে রাগ হলেও মনে হচ্ছে আমি তাকে তালাক বলে ফেলবো। ওয়াইফের সাথে ফোনে কথা বলতে গেলে ফোন ধরা মাএ আগে তালাক শব্দ মনে আসে। যতক্ষন কল না কাটি মনে হয় তালাক শব্দ উচ্চারন করে ফেলবো। কোন কারনে ওয়াইফের উপর সামান্য রাগ হলেও মনে হচ্ছে তালাক বলে ফেলবো। মাঝে মাঝে মনে হয় দেয়াল এর সাথে মাথা ঠুকি। ঘুমের ভিতরে তালাক নিয়ে বিভিন্ন আজে বাজে স্বপ্ন দেখি এবং ঘুম ভাংগার পর সাথে সাথে মনে হয় তালাক উচ্চারন করে ফেলছি। এমন সন্দেহ আমাকে মানসিকভাবে খুবই কষ্ট দিচ্ছে শায়েখ। এসব কারনে কি তালাক পতিত হবে শায়েখ??
(৭) আল্লাহকে নিয়ে অনেক আজে বাজে চিন্তা আসে। অনেক সময় মনে হয় আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না, এত হালাল হারামের চিন্তা করলে চলবে না, এছাড়া আরো অনেক শিরিকি ও কুফুরি কথা মনে আসে। আমি একটা এপ্সে এড দেখে সামান্য কিছু টাকা ইনকাম করার চেষ্টা করছি। আমি জানি এটা হারাম।এটা করা ঠিক না। কিন্তু তখনি আমার মনের ভিতর হচ্ছে আমি আল্লাহকে পরোয়া করি না। মাঝে মাঝে এই সমস্যা এত তিব্র হয় মনে হয় আমি এসব কথা উচ্চারন করে ফেলবো। এমনকি উচ্চারন করে ফেললাম কিনা ভেবেও সন্দেহ হয়। এতে কি আমার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে শায়েখ??
(৮) আমি এই মানসিক সমস্যার জন্য কিছুদিন ঔষধ খেয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। হয়তোবা আরো ভাল ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। এমন অবস্থায় আমার জন্য শরিয়তে কি ছাড় রয়েছে? ছাড় থাকলে সেটা কিরকম ছাড় জানাবেন শায়েখ।