জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শিরক দুই প্রকার: এক. শিরকে জলী, দুই. শিরকে খফী। শিরকে জলী সবচেয়ে মারাত্মক।
আল্লাহর কাছে সবচে’ ঘৃণ্য ও জঘন্যতম পাপ হল শিরক। কুরআন মাজীদে পুত্রের প্রতি লুকমান হাকীমের ওসিয়তগুলো বিশেষ গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে তিনি নিজ পুত্রকে ওসিয়ত করে বলেন-
وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে নিজ পুত্রকে বলেছিল, বৎস! তুমি আল্লাহ্র সাথে শরীক করো না। কেননা র্শিক নিশ্চয় মারাত্মক অবিচার ও পাপ। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৩
বিস্তারিত জানুনঃ
শিরকে জলীর অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক, তাতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীক করা, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, উপায়-উপকরণকে উপায়-উপকরণের সৃষ্টিকর্তার মান দেওয়া, গাইরুল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতাধারী মনে করা ইত্যাদি। এ বিষয়গুলি এবং এ ধরনের আরো অনেক বিষয় শিরকে জলীর অন্তর্ভুক্ত। ‘তাকবিয়াতুল ঈমান’ গ্রন্থে দলীলসহ বিস্তারিতভাবে বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়েছে আর সংক্ষিপ্তাকারে ‘বেহেশতী জেওর’ প্রথম খণ্ডেও আলোচনা আছে। গ্রন্থদ্বয় দেখে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা, অতপর এগুলো থেকে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করা কর্তব্য।
,
(০২)
ভ্রান্ত আকীদা মানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের খেলাফ আকীদা পোষন করা।
এর দ্বারা কেউ ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়না,মুশরিক হয়না।
বিস্তারিত আকীদা জানুনঃ
,
আর শিরকি আকীদা সম্পর্কে উপরে আলোচনা হয়েছেন।
,
সুতরাং উভয়ের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
,
(০৩)
পূর্বের কিছু আলেমদের রচিত বই আছে,যেখানে কিছু ঘটনা ইত্যাদি আছে,যার ভিত্তিতে কিছি মানুষ দেওবন্দী আলেম নয়ে এসব কথা বলে থাকেন।
,
একথা স্পষ্ট যে উক্ত বিষয় গুলো দেওবন্দী কোনো আলেমের আকীদা নয়।
তারা যেটি লিখেছেন,সেগুলো ঘটনা হিসেবে,যাহা সত্য মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
,
সেটা নিছক ঘটনা মাত্র,যার উপর ভিত্তি করে কাউকে কাফের বলা যাবেনা।
এগুলো প্রায় বইয়ের টিকায় লেখা আছে যে বাস্তব চিত্তে এসব বিশ্বাস কুফরী।
,
(০৪)
না,কাফের বলা যাবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০৫) ওহদাতুল অজুদ সম্পদ হক্কানী উলামায়ে কেরামগন যেই ব্যাখ্যা করেছেন,সেটা মানলে কেহই কাফের হয়না।
হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী(রহ) ‘ওয়াহদাতুল অজুদ’ এর যে ব্যাখ্যা করেছেন তা সার সংক্ষেপ হল:
এ কথা স্পষ্ট যে, সমস্ত পূর্ণাঙ্গতা বা বৈশিষ্ট্য প্রকৃতপক্ষে একমাত্র আল্লাহ পাকের জন্যই সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে সৃষ্টজীবদের ভেতর যাকিছু ক্ষমতা বা গুণ দেখা যায়, তা তাদের নিজস্ব নয়, অন্যের নিকট হতে ধার করা। এধরণের সত্তাকে “ছায়া সত্তা” বলা হয়। সাবধান! এখানে ছায়া দ্বারা কেউ এমন ধারণা যেন না করে যে, আল্লাহ তা’আলা দেহবিশিষ্ট সত্তা, আর এই জগত তার ছায়া। এখানে ছায়া শব্দ রূপক অর্থে ব্যবহৃত করা হয়েছে যার অর্থ হল দান, আশ্রয়, কৃপা বা অনুগ্রহ। যেমন, “আমি তো হুজুরেই ছায়ায় বাস করি”। এর অর্থ ছায়া নয় আশ্রয়। এরূপে আমাদের অস্তিত্ব আল্লাহ তা’আলার মেহেরবানীর দৌলতেই বিদ্যমান। এ জন্য এটাকে ছায়া অস্তিত্ব বলা হয়। অতএব, এ বিষয়টি নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত হল যে, সৃষ্টির সত্তা প্রকৃত ও মৌল সত্তা নয়, অস্থায়ী ছায়া স্বরূপ। এখন যদি ছায়া সত্তাকে গণ্য করা না হয়, তবে একমাত্র প্রকৃত বা মূল সত্তার অস্তিত্বই প্রমাণিত হবে এবং সেই সত্তাকে একক সত্তা বলা যাবে। এটাই ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ।
এটার প্রকৃত উদাহরন হল- চন্দ্রের আলো সূর্যের আলো থেকে আসে। এখন যদি এই প্রতিফলিত জ্যোতিকে আলো বলে গণ্য করা না হয়, তবে সূর্য দীপ্তিময় ও চন্দ্রকে অন্ধকার বলতে হবে। এটা অহদাতুল ওজুদের উদাহরণ। আর যদি চন্দ্রের আলোকেও আলো বলে গণ্য করা হয় এবং বলা হয় যে, তার কিছু প্রভাবতো আছে, যদিও সূর্যকিরণ প্রতিভাত হওয়ার সময় উহা একেবারেই নিষ্প্রভ হয়ে যায়। এটা ওহদাতুশ শুহুদ তথা সব কিছুই আল্লাহ সত্তা বিদ্যমান সেটার স্বাক্ষ্য দেয়। মূলত ওহদাতুশ শুহুদ ও অহদাতুল ওজুদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। দু’টোরই শেষ ফল এক।
যখন মাখলুকের এই আরেযী ওজুদকে হিসেবে না ধরা হয়, তখন একমাত্র আল্লাহরই অজুদ (আস্তিত্ব) থাকে। একেই ওয়াহদাতুল ওজুদ বা ‘হামা-উস্ত’ (তিনিই সব) বা লা-মওজুদা ইল্লাল্লাহ ( আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো অস্তিত্ব নাই) বলে। অতএব, ‘তিনিই সব’ এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ, পশু, বৃক্ষ, পর্বত সবই খোদা বা খোদার বিশ্লেষণ ও অংশ বের হযে এইসব হয়েছে। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এই অর্থ সম্পূর্ণ ভুল। এই অর্থ নিয়েই অনেক লোক কাফির ও বেদ্বীন হয়ে গেছে। শুদ্ধ অর্থ এই যে, মানুষ, পশু, পর্বত ইত্যাদির অস্তিত্ব আসল নিজস্ব অস্তিত্ব নয়, আল্লাহর দান করা অস্হায়ী অস্তিত্ব মাত্র। (তা’লিমুদ্দীন :: দ্বিতীয় খন্ড)।
,
★তবে ইহা বাদ দিয়ে মানুষকেই খোদা বলা ইত্যাদির দ্বারা ব্যাক্তি কাফের হয়ে যাবে।
,
(০৬)
দ্বীনী ইলম না থাকার কারণে যদি কেউ মুর্তি বানানোকে বৈধ মনে করে থাকে,তাহলে তাকে কাফির বলা যাবে না।কেননা শরীয়তে উযর বিল জাহালত গ্রহণযোগ্য।
আরো জানুনঃ
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
হাদীসের অপব্যখ্যা করে কোনো কিছু বলা,সেই হিসেবে ভাস্কর্য কে মূর্তি না বলা,এবং সেই পক্ষ অবলম্বন করে আন্দোলন করার দ্বারা কেহই কাফের হবেনা।
,
তবে তারা গোমরাহ।