ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
কসম দুই প্রকারঃ (১) আল্লাহ বা তার সিফাতের উল্লেখপূর্বক কসম করা (২) আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কিছু দ্বারা কসম করা। আর তা হচ্ছে, শর্ত ও জাযা ।
আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কিছু দ্বারা কসম করা আবার দুই প্রকার। যথাঃ (১) বাপ,দাদা ও নবী এবং নামায রোযা ইত্যাদির নাম উল্লেখপূর্বক কসম করা। এটা নাজায়েয। (২) শর্ত এবং জাযা উল্লেখপূর্বক কসম করা। তা আবার দুই প্রকার, যথা- (ক) যেখানে জাযা কোনো প্রকার ইবাদত থেকে হবে, যেমন যদি আমি ঐ কাজ করি, তাহলে আমার উপর রোযা ওয়াজিব। (খ) অথবা জাযা ইবাদতের মধ্য থেকে হবে না। যেমন, আমি যদি ঐ কাজ করি তাহলে আমার স্ত্রী তালাক বা আমার গোলাম আযাদ।
(وَأَمَّا رُكْنُ الْيَمِينِ بِاَللَّهِ) فَذِكْرُ اسْمِ اللَّهِ، أَوْ صِفَتِهِ، وَأَمَّا رُكْنُ الْيَمِينِ بِغَيْرِهِ فَذِكْرُ شَرْطٍ صَالِحٍ، وَجَزَاءٍ صَالِحٍ كَذَا فِي الْكَافِي
«الفتاوى الهندية» (2/ 51)
কসমের রুকুন হল, আল্লাহ শব্দ বা আল্লাহর কোনো সিফাত তাতে উল্লেখ থাকা। আর বিশুদ্ধ ও উপযোক্ত শর্ত এবং জাযা উপস্থিত থাকা। ( ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/৫১)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) যদি কেউ শপথ করা নিয়ে সন্দেগে ভুগে,মনে মনে করেছিল নাকি উচ্ছারণ করে করেছিলো, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারে, তাহলে কসম বলে গণ্য হবে না।
(২)আল্লাহর নাম মুখে উচ্চারণ করে কেউ যদি অমুক কাজটা না করার শপথ নেয়, তাহলে শপথ নেওয়ার কারনে ওই কাজটা তার জন্য হারাম হয়ে যাবে।ঐ কাজ ভবিষ্যতে করলে কাফফারা দিতে হবে। একবার কাফফারা দিয়ে দিলে সেই কাজ করা যাবে।
(৩)কেউ কোনো মেয়েকে বিয়া না করার শপথ নেয়, পরে ওই মেয়েটাকে বিয়া করে তাহলে তার কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হবে। কাফফারা আদায় করে নিলে ঐ মেয়েকে বিবাহ করা যাবে।
(৪)
আপনার বক্তব্য,
"পুর্বের কথা এখন আমার মনে নাই এবং নিশ্চিত হতে পারতেছিনা যে আমি পুর্বে কি মুয়াল্লাক তালাক দিয়ে রেখেছি, নাকি দেই নাই।এটা শিয়র যে তালাক দিয়ে রেখেছি কিন্তু মুখে উচ্চারণ করে দিয়েছি নাকি মনে মনে দিয়েছি সেটা নিশ্চিত না,যতোটুকু মনে আছে আমি মুখে উচ্চারণ করে দেইনি, আর যদিও মুখে উচ্চারণ করে দিয়ে থাকি কিন্তু আমার মনে নাই এর ফলে বিয়ার পরে স্ত্রী তালাক হবে নাকি? অথবা ভুলে উচ্চারণ করে তালাক দিয়েছিলাম,কিন্তু তালাক দেওয়ার নিয়ত ছিলোনা অর্থাৎ দিলামনা বলতে গিয়ে দিলাম বলেছি।"
এইসব বিবরণ দ্বারা তালাক হবে না।কেননা নিশ্চিত কোনো বিবরণ দ্বারা তালাক হয় না।
(৬) স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়তে কেউ যদি মেসেজে বা খাতায় লিখে যে, এটা করলে বউ তালাক, এরপর এই কাজটা করলে স্ত্রী তালাক হবে, তার এই লেখাটা লেখার সময় মুখে উচ্চারণ হওয়া জরুরী নয়।
الفتاویٰ الہندیۃ (6 / 442):
"ثم الکتابۃ علیٰ ثلاثۃ أوجہٍ : مستبین مرسوم أي معنون وہو یجري مجری النطق في الحاضر والغائب علیٰ ما قالوا ، ومستبین غیر مرسوم کالکتابۃ علی الجدار وأوراق الأشجار ، وہو لیس بحجۃ إلا بالبینۃ والبیان ، وغیر مستبین کالکتابۃ علی الہواء والماء وہو بمنزلۃ کلام غیر مسموع ، فلا یثبت بہ الحکم ."
(৭)
সন্দেহের উপরে ভিত্তি করে তালাক হয়না। এখন বিয়ের পরে সে মনে করতে সক্ষম হয়েছে যে, সে মুখে উচ্চারণ করেই তালাক দিয়েছিলো। সে যদি মু'আল্লক তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে বর্তমানে ঐ শর্ত পাওয়া গেলে তালাক হবে, নতুবা তালাক হবে না। আর স্বামী ওয়াসওয়াসার রোগী হলে কখনো তালাক হবে না।
(৮)কোনো কাজ না করার শপথ নিলে শপথ নেওয়ার পর থেকেই ওই কাজটা করা হারাম হয়ে যাবে।কাফফারা আদায় করার পর সেই কাজ হালাল হবে।
৯/আপনি যদি একটা মেয়েকে নির্দিষ্ট করে বিয়া না করার শপথ নেন, তাহলে সে মেয়েটাকে বিয়া করা আপনার জন্য হারাম হয়ে যাবে।যদি বিয়া করেন এবং কাফফারা আদায় না করেন, তাহলে বিয়ার পর সে মেয়েটা আপনার জন্য হারাম থাকবে না, তবে কাফফারা আদায় না করার গোনাহ অবশ্যই হবে।