ফতোয়া:
https://ifatwa.info/67074/ প্রসঙ্গে
আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম শাইখ; আপনার সাথে বসে সমস্যা সমাধানের দিকে আগাতে পারছি না জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহর দুনিয়ায় কিছু মানুষ প্রচন্ড ছদ্মবেশী এবং কূটকৌশলের অধিকারী। কথার মারপেঁচে যারা দিনকে রাত বানায়। (আল্লাহ আমাকে সেসব মানুষ শয়তানের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করুন)। আমি এটুকুই বললাম উস্তায; বাকিটা আপনি বুঝে নিয়েন।
১. বিয়ের সময় বাবা মৌখিক শর্ত দিয়েছিলেন যে আমরা পড়া শেষ হতে আর ৬ মাস বাকি; তারপর সংসার করব। কিন্তু; বন্ধুর বউকে দিয়ে বারবার মেসেজ দেয়ায়ে আমাকে বাধ্য করেছিলো ৭ দিনের মাথায় বাসা ঠিক করতে।
কাবিনে স্পষ্ট লিখা থাকার পরও দীর্ঘ সময় আমার ভরণপোষণের খরচ দেয় নি।
সুবহান আল্লাহ; এখন সেই বিয়ের সময়ের কথা বলে ফতোয়া নিচ্ছে।
২. পারিবারিক অবস্থা: ওর মা প্রাইমারীর হেড মাস্টার আর বাবা দোকানদার। ওর পরিবারের সীদ্ধান্ত নেয় ওর মা।
আমার আব্বুর কিছু টুকটাক ব্যবসার পাশাপাশি হাই স্কুলের শিক্ষক। বাবা পরিবারের সাথে পরামর্শ করে সীদ্ধান্ত নেন।
বিয়ের ৬ মাসের মাথায় ওর বাবা-মার সাথে আমার বাবা-মা মিলে সীদ্ধান্ত নেন যে আমি শিক্ষকতা করতে পারি। কিন্তু সাংসারিক জীবনে যেয়ে লোকটা আমাকে ছলছাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বাবা-মাকে ঠকানোসহ আরো নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন করে। ফলে; ওর মায়ের দেয়া সীদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার বাবা আমাকে তার বাড়িতে ফেরত আনেন।
৩. আমার পরিবার দীর্ঘ ৮-৯ মাস চুপ থাকে। তখন সে আর তার মা কিছু শর্তের বিনিময়ে আমাকে ফেরত নেন।
ক. চাকরি করতে পারব।
খ. ছেলে বিদেশ গেলেও আমি দেশে থাকব।
গ. আমার মাস্টার্স করার আগ্রহ শুনে হাজবেন্ড বলেছিলো যে বুয়েট থেকে করতে পারব। কিংবা বিদেশ পরিস্থিতি সেরকম হলে ওখানে করা যাবে কি না ভেবে দেখবে।
ঘ. আমার সন্তান আসলে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
৪. ২০২১ এ আমার কিছু প্রয়োজন পূরণ না করেই সে চলে যায় করেই সে বিদেশ যায়। তার মা আমাদের বাড়িতে এসে আশ্বাস দিয়ে যায় যে দেশে তার ছেলে ৫০-৬০ হাজার ইনকাম করলে আমার জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই বিদেশে গেছে। পরবর্তীতে আবারও কথা দেয় যে "আমি যা চাইবো তাইই দেয়া হবে"।
৪ বছরের সংসার জীবনের বড় একটা সময় কোনো আর্থিক সাপোর্ট সে দেয় নি; জাকাত-কুরবানী নিজের টাকায় দিতে হয়েছে। যেই "২০ হাজার টাকা আমাকে দেয়" কথাটা উল্লেখ করেছে সেটা কেবল কয়েক মাস হলো।
৫. নতুন সমস্যা: ছেলের ডাউন সিন্ড্রোম। পারিবারিক ভাবে আত্মীয়দের নিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশে হেসে-খেলে বেড়ে উঠলে বাচ্চাটার মানুষিক বিকাশ সম্ভব।
ওর বাড়িতে ওর মা ভাড়াটিয়া মহিলাকে সাথে নিয়ে আমার ছেলের শারীরিক কিছু ত্রুটি নিয়ে আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে। অথচ সেই ত্রুটি আমার ছেলের বাবারও আছে। এ চেয়ে বেশি ভেঙে বলা সম্ভব না হুজুর।
বিদেশের সেই মাটিতে অচেনা মানুষগুলো যে আসলেই আমার ছেলের জন্মগত এই সমস্যা গুলো পাশ কাটিয়ে ওর সাথে ভালো আচরণ করবে; এটার নিশ্চয়তা কোথায়? অনেকের আত্মীয়-স্বজনরা পর্যন্ত কটু কথা বলে।
৬. সে বিদেশ গেছে নিজের স্বার্থে। দ্বীন প্রচারের ফিরিস্তি গুলো দিয়েছে সেটাকে জায়েজ করার জন্য। প্রকৃত অবস্থা এটাই যে তার পাড়ার মসজিদ গুলোতে তালিম বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ আশেপাশের কেউ এসে বাংলায় কিতাব পড়ে দেয় না। পরিবারে ওর ভাই নিজেই নামাজ পড়ে না + বাড়িতে জোরে গান বাজায়। ওর মা পর্দা করে না+ কুরআন অশুদ্ধ। নিজের এলাকায় মেহনত করলে সেটা তো ফেছবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আনন্দ নেই হুজুর। বরং দেশে দ্বীন প্রচার করতেছি এরকম একটা ভাব ধরে থাকলে সমিহ পাওয়া যায় - আমার হাজবেন্ডেরও একই হালত।
৭. সে আমাদের বিদেশ নিতে চাওয়ার সাথে কিছু শর্ত এড করে। অন্য ব্যক্তিদের বিমানে টিকেট কেটে দেয়া, অন্যের গবেষণা করে দিবে ইত্যাদি। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারবো না যে সে আমাদের সময় দিচ্ছে না কেন। হুজুর; ঘরের মধ্যে হক আদায় করলে লোকে বাহবা দেয় না। যেসব কাজে লোকের বাহবা পাওয়া যায় সেগুলোতে তার আগ্রহ।
পরিশেষে; আমার বুদ্ধি বিবেচনা বলে যে এরকম দায়িত্ব জ্ঞানহীন এবং স্বার্থপর লোকের সাথে বিদেশ পাড়ি দেয়া 'আগুনে ঝাপ দেয়া'র সামিল। যেহেতু দ্বিতীয় কিস্তি সংসারের শর্ত অনুযায়ী আমি কখনো বিদেশ যেতে সম্মত হয় নি; আমাকে বাধ্য করার অবকাশ নেই। ছেলের বাবাকে প্রয়োজন; তাই নিজের প্রয়োজন সংক্ষিপ্ত করে অল্প আয়েও সংসার করার কথা বলছি।
আমার অনুরোধ: মুহতারাম, একজন মেয়ে কখনোই সরাসরি সবকিছু খুলে বলতে পারে না। তাই প্লিজ এসব জীবনঘনিষ্ঠ ফতোয়া গুলো আপনারা ২ জনের পক্ষ থেকে শোনার পর দিবেন।
আমার প্রশ্ন: আমি কি এই অবস্থাতেও বিদেশ যেতে বাধ্য?
বি.দ্র.: দেশে আমার পরিবারের সহায়তায় ছেলে খুব স্বাচ্ছন্দ্যে বড় হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। ওর বিকাশ অনেকটা স্বাভাবিক বাচ্চাদের কাছাকাছি। তবে ২-১ দিন বন্ধ ঘরে রাখলে বা বাইরে না নিলে চেহারায় অসুস্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।